বিষয়:
নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম:
এবারের পূজা মাগো দশভূজা বড় দুর্গতিময়
মা-মা-মা-মা-মা-মাগো
এবারের পূজা মাগো দশভূজা বড় দুর্গতিময়।
পড়েছিস এ. বি. সি. ডি? বুঝিস ব্ল্যাক আউট কারে কয়?
ব্ল্যাক আউট মানে যত কালো ছিল বাহির হয়েছে মাগো
যত আলো ছিল যত ভালো ছিল, সকলেরে বলে ভাগো।
ডাইনে বাঁ ধারে ভীষণ আঁধারে হাঁটু কাঁপে আর হাঁটি
আমড়ার মত হয়ে আছি মাগো চামড়া এবং আঁটি।
নন্দী ভৃঙ্গী সিঙ্গি যাইলে তাহারাও ভয় পাবে
তাদের দিব্য দৃষ্টি লয়েও মাগো আঁধারে হোঁচট খাবে।
বলি বিগ্রহ তোর কে দেখিতে যাবে মা কুগ্রহের ফেরে
বিড়ি খেয়ে ফেরে গুণ্ডারা যদি দেয় মাগো ভুঁড়ি ফেড়ে।
মা তুই বর দেওয়ার আগেই বের্বরেরা এসে
ঠেসে ধরে নিয়ে যাবে চিত্রগুপ্তের দেশে।
চোঁয়া ঢেকুর ওঠে মা মেকুর ডাকিলে কেঁদে উঠি ওঙা ওঙা;
ঢেঁকির আওয়াজ শুনলে মাগো ভয়ে খাড়া হয়ে ওঠে রোঁয়া।
সত্য পথে চলিতে পারি না পথে কাদা রাখে ফেলে
উচিত কথা মাগো বলিতে পারি না চিৎ করে দেয় ফেলে।
এ চিতে শক্তি দে মা চিৎ করবো ভয়কে
বলবো এবার তোরে খাব দে মা মাগো মা॥
-
ভাবসন্ধান:
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের রচিত রঙ্গনাটক 'ব্ল্যাক আউট'
-এ এই গানটিতে পাওয়া যায় সমকালীন কলকাতার বিদ্যুত বিভ্রাটের নিপুণ চিত্র। এরই মাঝে
এসেছে শারদীয়া দুর্গাপূজা। দেবীর কাছে নগরবাসীর দুর্ভোগ উপস্থাপিত হয়েছে- রঙ্গার্থে।
গানটিতে কবি বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন নগরবাসীর প্রতিনিধি হয়ে।
গানের শুরুতেই দেবীকে বলা হয়েছে- এবারে পূজা হয়ে বড় দুর্গতিময়। ইতোপূর্বে দেবী মর্তে
এসে নগরকেন্দ্রিক কিছু প্রাথমিক জ্ঞান (এবিসিডি) হয়েছে তাঁর। কিন্তু এই পূজায়
বুঝবেন তিনি বিদ্যুৎ-বিহীন দশা তথা ব্ল্যাক আউটের যন্ত্রণা। আলো যত আলো ছিল- তত ভালো
ছিল। এবারের ব্ল্যাক আউটের ঠেলায় আলো নেই, ভালো নেই। এমন দশা থেকে সবাইকে বিদায়
জানানোর কথা বলা হয়েছে।
বিদ্যুৎ-বিহীন নগরীর চারিদক জমাটবাঁধা অন্ধকার। চলতে গেলে ভয়ে হাঁটু কাঁপে। সবাই ভয়ে
গুঁটিয়ে চামড়া আর আঁটি সর্বস্ব শুকনো আমড়ার মতো হয়ে গেছে। শিবের ভয়ঙ্কর যে
অনুচরদ্বয় নন্দী ভৃঙ্গী এবং শিঙ্গি (শিবের শক্তিরূপী তৃতীয় নয়ন বা শিঙ্গা, বা বিশেষ
অনুচর) যেতে ভয় পাবে। দিব্য দৃষ্টি নিয়ে চলতে গেলেও তাঁরা এই ঘোরতর অন্ধকারে হোচট
খাবেন। কবি এমন দশায় দেবীকে জানাচ্ছেন- তাঁর বিগ্রহ (প্রতিমা) কেউ দেখতে যাবে না।
কারণ পথে হয়তো বিড়ি খেয়ে ঘুরে বেড়ানো গুণ্ডারা তাদের ভুঁড়িতে ছুরি ঢুকিয়ে দেবে। তখন
দেবীর বর দেওয়ার আগেই বর্বররা তাকে পাঠিয়ে দেবে চিত্রগুপ্তের দেশে (যমপুরীতে)।
অজীর্ণ ভোগা নগরবাসীর অম্লরোগ অম্লঢেকুর ওঠে। মেকুর (বিড়াল) ডাকলেও ভয়ে তারা কেঁদে
উঠ শিশুর মতো- ওঙা ওঙা' রবে। ঢেঁকির আওয়াজ শুনলেও ভয়ে তাদের গায়ের রোম খাঁড়া
হয়ে যায়। এমন অবস্থায় সত্য পথে চলা দায়। কারণ সত্যাদর্শ ধরে চলার পথে ছড়িয়ে আছে
মিথ্যার পঙ্কিলতা। যদি উচিৎ কথা কেউ বলে, তাহলে অসত্যের দল চিৎ করে ফেলে দেয়। তাই
দেবীর কাছে প্রার্থনা, যেন তিনি তাদের চিত্তে চিৎ হওয়ার ভয়কে জয় করার শক্তি দান
করেন। যে শক্তির বলে বলীয়ান হয়ে ভক্তরা উল্টো বলতে পারে- 'এবার তোরে খাব'।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির
রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।
১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট (ভাদ্র
১৩৪৮), কলকাতার মিনার্ভা মঞ্চে
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের রচিত রঙ্গনাটক 'ব্ল্যাক আউট'
-এ এই গানটি প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪২ বৎসর ৩ মাস।
মঞ্চনাটক:
মিনার্ভা থিয়েটার। আগষ্ট
১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ (ভাদ্র ১৩৪৮)। ভূতেশ্বরের গান।
গ্রন্থ:
- ব্ল্যাক্-আউট। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। [ষ্ট্যান্ডার্ড বুক
কোম্পানী ২১৩, কর্ণওয়ালিশ ষ্ট্রীট্, কলকাতা] ভুতশ্বরের গান। পৃষ্ঠ: ১২
- নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয়
সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। গান সংখ্যা ৮৬০। তাল: ফের্তা (দ্রুত-দাদ্রা
ও কাহার্বা)]
রেকর্ড:
এইচএমভি ১৯৪১ অক্টোবর (আশ্বিন-কার্তিক)।
এন ২৭২০৬। রঞ্জিত রায়
পর্যায়:
- ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। শাক্ত। দুর্গা। দুর্গাপূজা। আগমনী। রঙ্গার্থ