১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জুন গিরিশ
ঘোষের 'মীরকাশিম' বিপুল জনপ্রিয়তা পায়।
১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি গিরিশ ঘোষের 'য্যায়সা
কা ত্যায়সা' ও ২রা জুন অভিনীত হয় প্রফুল্ল নাটক। জুলাই মাস থেকে পুনরায় মিনার্ভা
থিয়েটার আবার সঙ্কটে পড়ে। এই সময় গিরিশ ঘোষ, দানীবাবু, তিনকড়ি, কিরণবালা মিনার্ভা থিয়েটার ছেড়ে এসময় কোহিনূর
থিয়েটারে চলে যান। এই সময় থিয়েটার কর্তৃপক্ষ অমরেন্দ্রনাথকে মাসিক পাঁচশো টাকা বেতনে নিয়ে আসেন।
অমরেন্দ্রনাথের সঙ্গে আসেন সেই সময়ের প্রখ্যাত অভিনেত্রী কুসুমকুমারী। অমরেন্দ্রনাথকে নতুন ম্যানেজার
করা হয়। এই বছরে অমরেন্দ্রনাথের তত্ত্বাবধানে মঞ্চস্থ হয়েছিল ৪টি প্রখ্যাত নাটক।
এগুলো হলো-
১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসের ভিতরে উল্লেখযোগ্য অভিনীত নাটকগুলো ছিল বলিদান, নূরজাহান, নবীন তপস্বিনী,তুফানী ইত্যাদি। জুলাই মাসে গিরিশচন্দ্র পুনরায় মিনার্ভায় ফিরে আসেন। এই সময় অর্ধেন্দুশেখর মিনার্ভা ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন। এই বছরের গিরিশ ঘোষের তত্ত্বাবধানে মঞ্চস্থ হয়েছিল-
১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে গিরিশ
ঘোষের তত্ত্বাবধানে মঞ্চস্থ হয়েছিল
'সাজাহান, অশোক, বাঙ্গালার মসন্দ নাটক।
এরপর ধীরে ধীরে মিনার্ভা ধীরে ধীরে দর্শক হারাতে থাকে। মিনার্ভার মালিক প্রিয়নাথ দাস
শেষ পর্যন্ত মিনার্ভা বিক্রয় করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে মহেন্দ্রনাথ মিত্র বাইশ হাজার টাকায় মিনার্ভা থিয়েটার
ক্রয় করেন। এই বছরের ১৭ জুন থেকে নতুনভাবে নতুন মালিকের অধীনে মিনার্ভা থিয়েটার
চালু হয়। ১৫ জুলাই মনস্থ হয় গিরিশের বলিদান। মঞ্চে এটি ছিল
গিরিশের শেষ অভিনয়। এরপরেই গিরিশ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ৮
ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে মহেন্দ্রনাথ মিত্রের মৃত্যুর পর
মনোমোহন পাড়ে আবার মিনার্ভার মালিক হন। এই সময় খাসদখল, রঙ্গিলা, রুমেলা, ভীষ্ম ইত্যাদি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল
মিনার্ভা থিয়েটারে।
১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মিনার্ভার দায়িত্ব নেন উপেন্দ্রনাথ মিত্র। এই বছরের ২ অক্টোবর দ্বিজেন্দ্রলাল
রায়ের
'সিংহলবিজয় নাটক দিয়ে তিনি মিনার্ভার পুনরায় চালু হয়।
এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে মিনার্ভা পুনরায় দর্শক হারাতে থাকে। বিশ্বযুদ্ধ শেষে
১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত উপেন্দ্রনাথ মিত্রের পরিচালনায় মিনার্ভা সচল ছিল।
১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে এই মিনার্ভা
সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে এই থিয়েটারটিকে
নতুন করে তৈরি করা হয়েছিল।
১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে ৮ আগষ্ট মহাতাপ চন্দ্র ঘোষের আত্মদর্শন' নামক নাটকের মধ্য দিয়ে
মিনার্ভার নতুন যাত্রা শুরু হয়।
১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে মিনার্ভা চলে যায় নতুন পরিচালকমণ্ডলীর হাতে।
এই সময় দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, অমল বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তি
গুপ্তা, নীরদাসুন্দরী মিনার্ভায় যোগ দেন। ধীরে ধীরে এই থিয়েটারে যোগ দিয়েছিলেন
নির্মলেন্দু লাহিড়ী, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, সরযুবালা, ছবি বিশ্বাস, কমল মিত্র প্রমুখ।
১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ অক্টোবর ১৯৩৯ (বুধবার, ১
কার্ত্তিক ১৩৪৬),
মিনার্ভা থিয়েটার মঞ্চে মহেন্দ্র গুপ্তের
রচিত'
দেবী দুর্গা'
মঞ্চস্থ হয়েছিল।
এই নাটকের সত্বাধিকারী ছিলেন চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মহম্মদ
দেলোয়ার হোসেন। এই নাটকে ব্যবহৃত ১২টি গান ছিল কাজী নজরুল ইসলামের
রচিত ও সুরারোপিত।
১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে বেশ কিছু নতুন পুরানো নাটক মঞ্চস্থ হয়।
এর ভিতরে উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো ছিল-
১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট (ভাদ্র
১৩৪৮), কলকাতার মিনার্ভা মঞ্চে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র রচিত রঙ্গনাটক 'ব্ল্যাক আউট'
প্রথম মঞ্চস্থ হয়। এই নাটকে মোট ১৪টি গান ব্যবহার করা হয়েছিল।
এর ভিতরে দুটি হাসির গান রচনা করেন নজরুল। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের এই নাটকটি স্ট্যান্ডার্ড বুক কোম্পানী ২১৬, কর্নওয়ালিশ
স্ট্রিট থেকে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রকাশক ছিলেন শ্রীঅমূল্য কুমার
চট্টোপাধ্যায়। প্রকাশের সময় এই গ্রন্থে উল্লেখ নেই। নাটকটি উৎসর্গ করেছিলেন-
নট-ভাস্কর অহীন্দ্র চৌধুরীকে। নাট্যপরিচালক ছিলেন কালীপ্রসাদ ঘোষ, সঙ্গীত পরিচালক
রঞ্জিত রায়, নৃত্য পরিচালক রতন সেনগুপ্ত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে এই মঞ্চটি কিছুদিন বন্ধ ছিল। ১৯৪২ থেকে পুনরায় অভিনয় শুরু হয়।
১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দ
পর্যন্ত মিনার্ভার পরিচালনায় আসেন হেমেন্দ্র মজুমদার, দিলওয়ার হোসেন, চণ্ডীচরণ
ব্যানার্জী, এল.সি গুপ্ত, রাসবিহারী সরকার প্রমুখ।
১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে শম্ভু মিত্র মিনার্ভায় নাট্য প্রযোজনা করেন। ঐ বছর জুন মাসে উৎপল দত্ত তাঁর লিটল থিয়েটার গ্রুপ নিয়ে নিয়মিতভাবে পেশাদারি ভিত্তিতে নাট্য প্রযোজনা শুরু করলে মিনার্ভা থিয়েটারের আমূল পরিবর্তন ঘটে। দীর্ঘ এক দশক উৎপল দত্ত অনূদিত ও পরিচালিত শেক্সপীয়রের কয়েকটি নাটকসহ ছায়ানট, নীচের মহল, অঙ্গার, ফেরারী ফৌজ, ভি-আই-পি, তিতাস একটি নদীর নাম, কল্লোল, মানুষের অধিকার প্রভৃতি নাটক সাফল্যের সঙ্গে মঞ্চস্থ হয়।
১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে লিটল থিয়েটারের প্রস্থানের পর মিনার্ভায় এক অনিশ্চিত অবস্থার সৃষ্টি হয়।
বর্তমানে মিনার্ভা থিয়েটার ভবনটি ভগ্নপ্রায় দশায় চলে গেছে।