মিনার্ভা থিয়েটার
খ্রিষ্টীয় ঊনবিংশ শতাব্দীর একটি নাট্যমঞ্চ

১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার ৬ নম্বর বিটন স্ট্রটে নাগেন্দ্রভূষণ মুখোপাধ্যায়ের অর্থায়নে এই মঞ্চটি তৈরি হয়েছিল। উল্লেখ্য, বিডন স্ট্রিটের এই স্থানে ছিল গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার। ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে ৬ অক্টোবর দুর্গাপূজা উপলক্ষে পঞ্চরং, আগমনী গান এবং ইয়াংবেঙ্গল নামক প্রহসন মঞ্চস্থ হওয়ার পর, গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার হয়ে গিয়েছিল। এরপর এই স্থানটি একরকম পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। এরপর এখানে গড়ে তোলা হয় মিনার্ভা থিয়েটার।

নাট্যদল তৈরি ও অভিনয়ের যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ। এঁর সাথে অভিনয় শিক্ষক হিসেবে যুক্ত ছিলেন অর্ধেন্দু শেখর। এছাড়া অভিনয় শিল্পী হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন- দানীবাবু, চুনিলাল দেব, নিখিল দেব, নীলমণি ঘোষ, কুমুদনাথ সরকার, অঘোরনাথ পাঠক, অনুকুল বটব্যাল, তিনকড়ি দাসী, প্রমদাসু্ন্দরী ও পরমাসুন্দরী। সঙ্গীত শিক্ষক যুক্ত হয়েছিলেন দেবকণ্ঠ বাগচী। স্টেজ ম্যানেজার ছিলেন ধর্মদাস সুর।

১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ জানুয়ারি, এর যাত্রা শুরু হয়েছিল শেক্সপিয়ারের '‌ম্যাকবেথ' নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার মধ্য দিয়ে। নাটকটি অনুবাদ করেছিলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ। মঞ্চের ড্রপসিন এঁকেছিলেন ইংরেজ চিত্রকর মি. উইলিয়ার্ড এবং দৃশ্যসজ্জায় ছিলেন পিমসাহেব। অভিনয়ে অংশগ্রহণ করেন গিরিশচন্দ্র (ম্যাকবেথ), তিনকড়ি দাসী (লেডি ম্যাকবেথ), দানীবাবু (ম্যালকম), কুমুদ সরকার বেঙ্কো), অঘোর পাঠক (ম্যাকডাফ), প্রমদাসুন্দরী (লেডি ম্যাকডাফ), অর্ধেনদুশেখর (দ্বারপাল, ডাস্তার, হত্যাকারী ও
ডাকিনি)। পত্রপত্রিকায় এই নাটকের অভিনয় দারুণ সুখ্যাতি লাভ করলেও, সাধারণ দর্শক এ নাটক সহজে গ্রহণ করতে পারে নি। ফলে এই নাটকের দর্শক হ্রাস কমে যেতে থাকে। ফলে দশ রাত অভিনয়ের পর এই নাটকের অভিনয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

এর পর গিরিশচন্দ্র ঘোষ পরিচালনায় মঞ্চস্থ হয়েছিল 'মুকুলমঞ্জুরা' ও 'আবুহোসেন'। এই দুটি নাটক ছিল নাচে গানে ভরপুর। ফলে নাটক দুটি সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এই সাফল্যের সূত্রে মিনার্ভা থিয়েটার বিপুল সুখ্যাতি লাভ করেছিল। এরপর এই মঞ্চে একের পর এক নাটক মঞ্চ-সফল নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। এর ভিতরে  উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো ছিল- উল্লেখযোগ্য। উল্লেখ্য যে 'বড়দিনের বখশিস' ও 'পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস' অভিনয়ের সময় ব্রিটিশ পুলিশ নাটকের অভিনয় বন্ধ করার চেষ্টা করে।

এর ভিতরে মিনার্ভা থিয়েটারের মালিক নাগেন্দ্রভুষণের সাথে  গিরিশচন্দ্র ঘোষ আর্থিক বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য শুরু হয়। এই কারণে ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে  গিরিশচন্দ্র ঘোষ মিনার্ভা ত্যাগ করেন। তবে অর্ধেন্দু মুস্তাফি মিনার্ভায় থেকে যান। এরপর মিনার্ভা থিয়েটার পরিচালনায় আসেন চুনীলাল দেব। তাঁর সময়ে দুর্গাদাস দে-র পৃষ্ঠপোষকতায় ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে মিনার্ভা থিয়েটারে নতুন যাত্রা শুরু হয়। ৩১শে জানু্য়ারি এই মঞ্চে প্রথম বায়োস্কোপ দেখানো হয়। এটি ছিল সুলিভানের ‘animatograph’ নামক বায়োস্কোপ দেখানো হয়।

এই সময়ের উল্লেখযোগ্য নাটক ছিল- জুবিলি যজ্ঞ, আকবর, লক্ষ্মণবর্জন, ফটিকচাঁদ, আলিবাবা, পলাশীর যুদ্ধ ইত্যাদি। এতসব নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার পরও মিনার্ভা আরথিকভাবে লাভবান হতে ব্যর্থ হয়। এই কারণে নাগেন্দ্রভুষণ প্রকাশ্য নিলামে মিনার্ভা থিয়েটার বিক্রি করে দেন। ক্রয়সূত্রে এর মালিক হন শ্রীপুরের জমিদার নরেন্দ্রনাথ সরকার।

১৮৯৯ খ্রিষ্টব্দের ২৯ মে নতুন মালিকের তত্ত্বাবধানে দুর্গাদাস দে-র রচিত 'স্ত্রী' নাটক মঞ্চস্থ হয়। এছাড়া নরেন্দ্রভুষণের রচিত 'মদালসা' মঞ্চস্থ হয়েছিল। ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের মে মাস পর্যন্ত মিনার্ভা থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয়েছিল- কিশোরসাধন, জুলিয়া,
পলাশীর যুদ্ধ, বসন্তবিহার, বসন্তরায় ইত্যাদি নাটক। এসব নাটকের মাধ্যমে দর্শক সমাগম বৃদ্ধি না পাওয়ায় নরেন্দরাথ গিরিশচন্দ্রকে ফিরিয়ে আনেন। গিরিশ ঘোষের সাথে অর্ধেন্দুশেখর-সহ আরও অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী মিনার্ভায় যোগদান করেন।

১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন বঙ্কিচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সীতারাম উপন্যাসের কাহিনি অবলম্বনে রচিত গিরিশ ঘোষের নাটক মঞ্চস্থ হয়। এই নাটক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল এবং দর্শক পুনরায় মিনার্ভা থিয়েটার-অভিমুখী হতে থাকে। এরপর গিরিশের রচিত মণিহরণ গীতিনাট্য মঞ্চস্থ হয়। সেই সাথে গিরিশ ঘোষের  কিছু পুরোনো নাটক (প্রফুল্ল, বেললিকবাজার ইত্যাদি) মঞ্চস্থ হয়। এসকল নাটকের মাধ্যমে মিনার্ভা থিয়েটার আর্থিক দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়। কিন্তু এবারও  নরেন্দরনাথের সাথে গিরিশ ঘোষের মনোমালিন্য শুরু হয়। এবং তিনি মিনার্ভা ত্যাগ করে ক্লাসিক থিয়েটারে চলে গেলেন।

গিরিশ ঘোষের অবর্তমানে মিনার্ভা পুনরায় দর্শক সঙ্কটে পড়ে যায়। এবং শেষ পর্যন্ত নরেন্দ্রনাথ মিনার্ভা থিয়েটার জমিদার প্রিয়নাথ দাসের কাছে বিক্রয় করে দেন। এই সময় তাঁর সহযোগী ছিলেন বেণীভূষণ রায়। প্রিয়নাথ নাটক মঞ্চস্থ করে লাভের মুখ দেখতে পারবেন না বুঝতে পেরেছিলেন। তাই ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মে, প্রিয়নাথ নামক এক নাট্যপরিচালকের কাছে মাসিক পাঁচশো টাকায় তিন বছরের জন্য মিনার্ভা ভাড়া দেন।

১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দের ১০ নভেম্বর, ক্ষীরোদপ্রসাদের রচিত 'রঘুবীর' মঞ্চস্থ করে অমরেন্দ্রনাথ মিনার্ভা পুনরায় উদ্বোধন করেন। এরপর ১৫ নভেম্বর মঞ্চস্থ হয় বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠের নাট্যরূপ। এই দুই নাটক জনপ্রিয় না হ‌ওয়ায় অমরেনদ্নাথ ক্রমশ ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন। ফলে বাধ্য হয়ে অমরেন্দরনাথ মিনার্ভার চুক্তি ধনী ব্যবসায়ী মনোমোহন পাঁড়ের কাছে হস্তান্তর করেন। মনোমোহন পাঁড়ে আবার মাসিক সাতশো পঞ্চাশ টাকায় চুনীলাল দেবকে ভাড়া দেন।

চুনীলাল মনোমোহন গোস্বামীর সংসার নাটক দিয়ে শুরু করলেন। ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে আগস্ট এই মঞ্চে অভিনীত হয় নন্দবিদায়, লক্ষ্মণবর্জন, কুব্জ ও দর্জী নামক অকিঞ্জিৎকর তিনটি নাটক। এই নাটকের মাধ্যমে প্রচুর দর্শক সমাগম হতে শুরু করে। ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে অর্ধেন্দুশেখর মিনার্ভাতে ফিরে আসেন। এরপর পুনরায় গিরিশ ঘোষ ও তিনকড়ি মিনার্ভাতে ফিরে আসেন। এই সময় মিনার্ভাতে মঞ্চস্থ  হয় নীলদর্পণ, ঐন্দ্রিকা, প্রতাপাদিত্য ইত্যাদি নাটক।

১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে মিনার্ভার নাট্যদল প্রথমে কলকাতার বাইরে অভিনয় করতে যায়। তখন মালিক মনোমোহন পাঁড়ের সঙ্গে ভাড়াটে চুনীলালের মনোমালিন্য শুরু হয়। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি চুনীলাল মিনার্ভা ছেড়ে দেন। মনোমোহন পাঁড়ে তখন অপরেশ মুখোপাধ্যায়কে ম্যানেজার নিযুক্ত করেন।

১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে একের পর এক মঞ্চসফর নাটক মঞ্চস্থ হতে থাকে। এগুলোর ভিতরে উল্লেখযোগ্য ছিল

১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জুন গিরিশ ঘোষের 'মীরকাশিম' বিপুল জনপ্রিয়তা পায়।

১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি গিরিশ ঘোষের 'য্যায়সা কা ত্যায়সা' ও ২রা জুন অভিনীত হয় প্রফুল্ল নাটক। জুলাই মাস থেকে পুনরায় মিনার্ভা থিয়েটার আবার সঙ্কটে পড়ে। এই সময় গিরিশ ঘোষ, দানীবাবু, তিনকড়ি, কিরণবালা মিনার্ভা থিয়েটার ছেড়ে এসময় কোহিনূর থিয়েটারে চলে যান। এই সময় থিয়েটার কর্তৃপক্ষ অমরেন্দ্রনাথকে মাসিক পাঁচশো টাকা বেতনে নিয়ে আসেন। অমরেন্দ্রনাথের সঙ্গে আসেন সেই সময়ের প্রখ্যাত অভিনেত্রী কুসুমকুমারী। অমরেন্দ্রনাথকে নতুন ম্যানেজার করা হয়। এই বছরে অমরেন্দ্রনাথের তত্ত্বাবধানে মঞ্চস্থ হয়েছিল ৪টি প্রখ্যাত নাটক। এগুলো হলো-

১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসের ভিতরে উল্লেখযোগ্য অভিনীত নাটকগুলো ছিল বলিদান, নূরজাহান, নবীন তপস্বিনী,তুফানী ইত্যাদি। জুলাই মাসে গিরিশচন্দ্র পুনরায় মিনার্ভায় ফিরে আসেন। এই সময় অর্ধেন্দুশেখর মিনার্ভা ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন। এই বছরের গিরিশ ঘোষের তত্ত্বাবধানে মঞ্চস্থ হয়েছিল-

১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে গিরিশ ঘোষের তত্ত্বাবধানে মঞ্চস্থ হয়েছিল 'সাজাহান, অশোক, বাঙ্গালার মসন্‌দ নাটক। এরপর ধীরে ধীরে মিনার্ভা ধীরে ধীরে দর্শক হারাতে থাকে। মিনার্ভার মালিক প্রিয়নাথ দাস শেষ পর্যন্ত মিনার্ভা বিক্রয় করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে মহেন্দ্রনাথ মিত্র বাইশ হাজার টাকায় মিনার্ভা থিয়েটার ক্রয় করেন। এই বছরের ১৭ জুন থেকে নতুনভাবে নতুন মালিকের অধীনে মিনার্ভা থিয়েটার চালু হয়। ১৫ জুলাই মনস্থ হয় গিরিশের বলিদান। মঞ্চে এটি ছিল গিরিশের শেষ অভিনয়। এরপরেই গিরিশ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। 

১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে মহেন্দ্রনাথ মিত্রের মৃত্যুর পর মনোমোহন পাড়ে আবার মিনার্ভার মালিক হন। এই সময় খাসদখল, রঙ্গিলা, রুমেলা, ভীষ্ম ইত্যাদি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল মিনার্ভা থিয়েটারে।

১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মিনার্ভার দায়িত্ব নেন উপেন্দ্রনাথ মিত্র। এই বছরের ২ অক্টোবর দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের 'সিংহলবিজয় নাটক দিয়ে তিনি মিনার্ভার পুনরায় চালু হয়। এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে মিনার্ভা পুনরায় দর্শক হারাতে থাকে। বিশ্বযুদ্ধ শেষে ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত  উপেন্দ্রনাথ মিত্রের পরিচালনায় মিনার্ভা সচল ছিল। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে এই মিনার্ভা সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে এই থিয়েটারটিকে নতুন করে তৈরি করা হয়েছিল।

১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে ৮ আগষ্ট মহাতাপ চন্দ্র ঘোষের আত্মদর্শন' নামক নাটকের মধ্য দিয়ে মিনার্ভার নতুন যাত্রা শুরু হয়।

১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে মিনার্ভা চলে যায় নতুন পরিচালকমণ্ডলীর হাতে। এই সময় দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, অমল বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তি গুপ্তা, নীরদাসুন্দরী মিনার্ভায় যোগ দেন। ধীরে ধীরে এই থিয়েটারে যোগ দিয়েছিলেন নির্মলেন্দু লাহিড়ী, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, সরযুবালা, ছবি বিশ্বাস, কমল মিত্র প্রমুখ।

১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ অক্টোবর ১৯৩৯ (বুধবার, ১ কার্ত্তিক ১৩৪৬), মিনার্ভা থিয়েটার মঞ্চে মহেন্দ্র গুপ্তের রচিত' দেবী দুর্গা' মঞ্চস্থ হয়েছিল। এই নাটকের সত্বাধিকারী ছিলেন চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মহম্মদ দেলোয়ার হোসেন। এই নাটকে ব্যবহৃত ১২টি গান ছিল  কাজী নজরুল ইসলামের  রচিত ও সুরারোপিত।

১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে বেশ কিছু নতুন পুরানো নাটক মঞ্চস্থ হয়। এর ভিতরে উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো ছিল-

১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট (ভাদ্র ১৩৪৮), কলকাতার মিনার্ভা মঞ্চে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র রচিত রঙ্গনাটক 'ব্ল্যাক আউট' প্রথম মঞ্চস্থ হয়। এই নাটকে মোট ১৪টি গান ব্যবহার করা হয়েছিল। এর ভিতরে দুটি হাসির গান রচনা করেন নজরুল। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের এই নাটকটি স্ট্যান্ডার্ড বুক কোম্পানী ২১৬, কর্নওয়ালিশ স্ট্রিট থেকে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রকাশক ছিলেন শ্রীঅমূল্য কুমার চট্টোপাধ্যায়। প্রকাশের সময় এই গ্রন্থে উল্লেখ নেই। নাটকটি উৎসর্গ করেছিলেন- নট-ভাস্কর অহীন্দ্র চৌধুরীকে। নাট্যপরিচালক ছিলেন কালীপ্রসাদ ঘোষ, সঙ্গীত পরিচালক রঞ্জিত রায়, নৃত্য পরিচালক রতন সেনগুপ্ত।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে এই মঞ্চটি কিছুদিন বন্ধ ছিল। ১৯৪২ থেকে পুনরায় অভিনয় শুরু হয়।

১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মিনার্ভার পরিচালনায় আসেন হেমেন্দ্র মজুমদার, দিলওয়ার হোসেন, চণ্ডীচরণ ব্যানার্জী, এল.সি গুপ্ত, রাসবিহারী সরকার প্রমুখ।
 
১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে শম্ভু মিত্র মিনার্ভায় নাট্য প্রযোজনা করেন। ঐ বছর জুন মাসে উৎপল দত্ত তাঁর লিটল থিয়েটার গ্রুপ নিয়ে নিয়মিতভাবে পেশাদারি ভিত্তিতে নাট্য প্রযোজনা শুরু করলে মিনার্ভা থিয়েটারের আমূল পরিবর্তন ঘটে। দীর্ঘ এক দশক উৎপল দত্ত অনূদিত ও পরিচালিত শেক্সপীয়রের কয়েকটি নাটকসহ ছায়ানট, নীচের মহল, অঙ্গার, ফেরারী ফৌজ, ভি-আই-পি, তিতাস একটি নদীর নাম, কল্লোল, মানুষের অধিকার প্রভৃতি নাটক সাফল্যের সঙ্গে মঞ্চস্থ হয়।

১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে লিটল থিয়েটারের প্রস্থানের পর মিনার্ভায় এক অনিশ্চিত অবস্থার সৃষ্টি হয়। বর্তমানে মিনার্ভা থিয়েটার ভবনটি ভগ্নপ্রায় দশায় চলে গেছে।
 


সূত্র:
  • বঙ্গীয় নাট্যশঠালার ইতিহাস। ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ মন্দির, ১৩৪৬
  • বাংলা থিয়েটারের গান। শ্রীরাজ্যেশ্বর মিত্র। ইন্দিরা সংগীত-শিক্ষায়তন। ১৯৮২।
  • বাংলা থিয়েটারের পূর্বাপর। নৃপেন্দ্র সাহা। তূণ প্রকাশ। ১৯৯৯।
  • বাংলা নাটকের বিবর্তন। সুরেশচন্দ্র মৈত্র। মুক্তধারা। ১৯৭১