এর মাঝে ২১ সেপ্টেম্বর অমৃতলাল বসুর রচিত 'তিল-দর্পণ' অভিনীত
হয়েছিল। তবে এই নাটক ততটা জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। এরপর পুনরায়
গিরিশচন্দ্র পৌরাণিক গল্প অবলম্বনে রচনা করেছিলেন 'অভিমন্যু
বধ'। এই নাটকে যাঁরা অভিনয় করেছিলেন, তাঁরা হলেন-
গিরিশচন্দ্র (যুধিষ্ঠির ও দুর্যোধন), কেদার চৌধুরী (শ্রীকৃষ্ণ
ও দ্রোণাচার্য), অমৃত মিত্র (ভীম ও গর্গ), মহেন্দ্রলাল বসু (অর্জুন ও জয়দ্রথ),
অমৃতলাল মুখোপাধ্যায় (অভিমন্যু) এবং
বিনোদিনী
(উত্তরা)। তবে এই নাটকটি জনপ্রিয় হয় নি।
এই সময়ের সকল নাটক জনসমাদর না পেলেও-
বিনোদিনী ও কুসুমকুমারীর গান
দর্শকদের মাতিয়ে দিয়েছিল। অনেকে নাটক এঁদের গান শোনার জন্যই আসতেন।
কুসুমকুমারী, এই দুজনের অভিনয় ও গান দর্শকদের মাতিয়ে দিয়েছিল। তাই 'অভিমন্যুবধ'
দর্শক টানতে ব্যর্থ হলে প্রতাপঠাদ গিরিশকে ডেকে বলেছিলেন- 'বাবু, যব দুসরা কিতাব
লিখগে তব ফির ওহি দুনো লেড়কা ছোড় দেও'- অর্থাৎ যে নাটকই লেখ না কেন, এ
দুনো লেড়কা লব-কুশকে মঞ্চে এনে ছেড়ে দিতে হবে। এরপর
গিরিশচন্দ্র রচনা করেছিলেন 'লক্ষ্মণ বর্জন' এবং 'ধীবর ও দৈত্য'
নামক দুটি নাটক। নাটক দুটি একসঙ্গে অভিনীত হয়েছিল ৩১ ডিসেম্বর। এ নাটক দু্টিও দর্শক
টানতে ব্যর্থ হয়েছিল।
১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতেই সাফল্য এসেছিল পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস
নাটকের মাধ্যমে। এই নাটকটি অভিনীত হয়েছিল ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জানুয়ারি। কীচক ও দুর্যোধনের
ভুমিকায়
গিরিশচন্দ্রের অভিনয় সবার প্রশংসা অর্জন করেছিল। এই
নাটকে অন্যান্য চরিত্রে মধ্যে যাঁদের অভিনয় বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছিল, তাঁরা হলেন বিনোদিনী
(দ্রৌপদী),
মহেন্দ্র বসু (অর্জুন), অমৃত মিত্র (ভীম)। খুব আকর্ষণীয় অভিনয় করলেন। পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাসের বিপুল জনসমাদর গিরিশকে নাট্যকার, অভিনেতা ও
নাট্যপরিচালক হিসেবে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল।
এই সময়
গিরিশচন্দ্র
আভিনেতাদের মাইনে ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। প্রতাপচাঁদ তা
নাকচ করে দেন। বরং থিয়েটারের নিয়মনীতির আরো কঠোর করেন। এমনকি
বিনোদিনীর মতো অভিনেত্রীদের হাজিরা কয়েকদিন কামাই
করলে নেতন কাটার চেষ্টা করা হয়েছিল। এসব কারণে
গিরিশচন্দ্র ন্যাশনাল থিয়েটার ত্যাগ করেন। এই সময় তাঁর সাথে
সাথে আর যাঁরা এই থিয়েটার ছেড়েছিলেন, তাঁরা হলেন- অমৃত মিত্র, অঘোরনাথ পাঠক,
উপেন্দ্র মিত্র,
বিনোদিনী, কাদম্বিনী, ক্ষেত্রমণি, নীলমাধব চক্রবর্তী প্রমুখ। ন্যাশনাল থিয়েটারে
গিরিশ ও তার সহযোগীদের শেষ অভিনয় ছিল ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারিতে অভিনীত রাবণবধ।
১৮৮৩ ফেব্রুয়ারিতে
ন্যাশনাল থিয়েটারে রাবণবধ
নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার পর,
গিরিশচন্দ্র ঘোষ
সদলবলে বেরিয়ে এসেছিলেন। এই দলে অন্যান্য যাঁরা ছিলেন তাঁরা হলেন- অমৃত মিত্র, অঘোরনাথ পাঠক,
উপেন্দ্র মিত্র, বিনোদিনী, কাদম্বিনী, ক্ষেত্রমণি, নীলমাধব চক্রবর্তী প্রমুখ।
গিরিশচন্দ্র এঁদের নিয়ে তৈরি করেছিলেন 'ক্যালকাটা স্টার কোম্পানী' নামে
একটি দল।
১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের এঁরা ২৮ ও ৩১ মার্চ এবং ১৭ এপ্রিল
বেঙ্গল থিয়েটার মঞ্চ ভাড়া নিয়ে তাঁদের নিজস্ব নাট্ক মঞ্চস্থ
করেছিলেন। এঁরা তখন নিয়মিত নাট্যচর্চা করার জন্য একটি স্থায়ী মঞ্চের সন্ধানে ছিলেন।
এই দলের
বিনোদিনী
ন্যাশনাল থিয়েটারে
থাকাকালে অভিনয়ে, নাচে, গানে এবং রূপে কলকাতার নাট্য-অঙ্গনকে মোহিত করে রেখেছিলেন।
এই সময় রাজস্থানের গুর্মুখ রায় মুসাদ্দি (পিতা ছিলেন গণেশদাস মুসাদ্দি)
বিনোদিনীকে রক্ষিতা হিসেবে পাওয়ার
কামনায় অধীর হয়ে উঠেছিলেন। এই কামনা থেকে গুর্মুখ রায়
গিরিশচন্দ্রের কাছে একটি
প্রস্তাব নিয়ে আসেন। প্রস্তাবটি হলো- যদি
বিনোদিনী তাঁর রক্ষিতা হতে রাজি
থাকেন, তাহলে
গিরিশচন্দ্র ঘোষের
দলের জন্য একটি স্থায়ী নাট্যমঞ্চ তৈরি করে দেবেন। প্রথমে গুর্মুখ রায়ের প্রস্তাবে
বিনোদিনী প্রথমে রাজি হন নি। কারণ
তখন তিনি অন্য বাবুর কাছে বাঁধা ছিলেন। এ নিয়ে আগের বাবুর সাথে গুর্মুখ রায়ের
বিবাদের বিষয় জানা যায় বিনোদিনীর 'আমার কথা' গ্রন্থ থেকে।
গিরিশচন্দ্র অনুরোধে এবং মঞ্চের নেশায় তিনি এই প্রস্তাবে
রাজি হয়েছিলেন। তাছাড়া সবাই কথা দিয়েছিলেন যে, বিনোদিনীর নামানুসারে এই নাট্যশালার
নাম হবে 'বি-থিয়েটার'।
এরপর
কলকাতার ৬৮ নম্বর
বিটন স্ট্রিটে গুর্মুখ রায় (গুর্মুখ
রায় মুসদ্দি) একটি খালি জায়গা ইজারা নিয়ে এই মঞ্চটি
তৈরি করেছিলেন। কাঠ-টিনের পরিবর্তে বাড়িটি তৈরি হয়েছিল ইট দিয়ে।
বিনোদিনীকে ছিলেন নিষিদ্ধ পল্লীর
মেয়ে। সে কারণ, নির্মাতার মনে করেছিলেন যে, নিষিদ্ধ পল্লীর মেয়ের নামে মঞ্চ
তৈরি হলে, সেখানে দর্শকরা আসবেন না। তাছাড়া
গিরিশচন্দ্র তাঁর 'ক্যালকাটা স্টার কোম্পানী' নামকে
পরিবর্তন করে স্টার থিয়েটার করার ক্ষেত্রে আগেই মনস্থির করে রেখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত
বাড়িটি রেজিস্ট্রি করার সময় এর নাম পাল্টে রাখা হয়েছিল-
স্টার থিয়েটার। এই
থিয়েটারের মালিক ছিলেন গুর্মুখ
রায়, কিন্তু কার্যত এর সর্বেসর্বা ছিলেন
গিরিশচন্দ্র।
১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ২১ জুলাই এই স্টার থিয়েটারের যাত্রা শুরু হয়েছিল। প্রথম নাটক
ছিল-
গিরিশচন্দ্রের রচিত দক্ষযজ্ঞ। এই নাটকে যাঁরা অভিনয়
করেছিলেন, তাঁরা হলেন-
দক্ষ (গিরিশচন্দ্র), মহাদেব
(অমৃতলাল মিত্র), দধীচি (অমৃতলাল বসু), ব্রহ্মা (শীলমাধব
চক্রবর্তী) বিষ্ণু (উপেন্দ্রনাথ মিত্র), সতী (
বিনোদিনী), তপস্বিনী (ক্ষেত্রমণি), প্রসৃতি
(কাদস্বিনী)।
গুর্মুখ
রায়ে মালিকাধীনে স্টারে
অভিনীত হয়- দক্ষযজ্ঞ (২১ জুলাই), ধ্রুবচরিত (১১ আগস্ট), রামের বনবাস (২৯
আগস্ট), সীতার বনবাস (২৬ সেপ্টেম্বর), সীতাহরণ, চক্ষুদান (রামনারায়ণ রচিত ২৭
অক্টোবর), মেঘনাদবধ (নধুসূদনের ২১ নভেম্বর), সধবার একাদশী (৫ ডিসেম্বর),
রাবণবধ (৮ ডিসেম্বর), নলদময়ন্তী (১৫ ডিসেম্বর), চোরের উপর বাটপাড়ি
(অমৃতলালএর রচিত, ২৬ অক্টোবর)।
এর ভিতরে দীনবন্ধু, রামনারায়ণ, অমৃতলালের একটি করে নাটক ছাড়া বাকি সবগুলোর রচয়িতা
ছিলেন
গিরিশচন্দ্র।
এছাড়া মেঘনাদবধের
নাট্যরূপও দিয়েছিলেন
গিরিশচন্দ্র। এগুলোর ভিতরে দর্শকসমাদর পেয়েছিল দক্ষযজ্ঞ, ধ্রুবচরিত্র ও নলদময়ন্তী।
ধ্রুবচরিত্র নাটকেই গিরিশ প্রথম
গিরিশচন্দ্র চরিত্র সৃষ্টি করেন এবং অমৃতলাল বসু সেই
চরিত্রে অসামানা অভিনয় করে তাকে প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া এই নাটকে ধ্রুব চরিত্রে ভূষণকুমারী গানে ও
অভিনয়ে মাতিয়ে দিয়েছিলেন।
১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে গুর্মুখ রায় আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের লোকজনের
পীড়নে এবং ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে স্টারের স্বত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বিনোদিনীর
জন্য তৈরি
এই থিয়েটারের স্বত্ব দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু
গিরিশচন্দ্র ও অন্যান্যদের প্রতিবন্ধকতায় তা বিনোদিনী কোনো স্বত্ব
পান নি। গুর্মুখ রায় হতাশ হয়ে মাত্র
এগারো হাজার টাকায় স্টার থিয়েটারের স্বত্ব বিক্রি করে দেন চারজনের নামে। এঁরা
হলোন অমৃতলাল মিত্র. দাসচরণ নিয়োগী, হরিপ্রসাদ বস ও অমতলাল বসু।
চার জন নতুন মালিকের তত্ত্বাববধানে স্টার নতুনভাবে শুরু হলেই
গিরিশচন্দ্র সর্বের্বা হিসেবেই ছিলেন। তিনি ছিলেন ম্যানেজার, অভিনয় শিক্ষক, নাট্যকার।
১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে পুরানো নাটকের সাথে নতুন যে সকল উল্লেখযোগ্য নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল,
সেগুলো হলো- অভিমন্যুবধ (১৬ মার্চ), কমলেকামিনী (২৯ মার্চ), বৃষকেতু, হীরার ফুল (২৬ এপ্রিল), চাটুজ্জে-বাঁডুজ্জে
(অমৃতলালের রচিত, ২৬ এপ্রিল), আদর্শ সতী (অতুল মিত্রের রচিত,
২১ মে), শ্রীবৎসচিন্তা (৭ জুন), চৈতন্যলীলা (২ আগস্ট), প্রহ্লাদ চরিত্র (২২
নভেম্বর), বিবাহ বিভ্রাট (অমৃতলালের রচিত, ২২ নভেম্বর)।
এই বছরেও অমৃতলাল বসু, অতুলকৃষ্ণ মিত্র ও দীনবন্ধুর একটি করে নাটক ছাড়া
বাকি সব নাটকই গিরিশচন্দ্রে লেখা।
এই বছরে নতুন নাটকের মধ্যে
গিরিশচন্দ্রের 'চৈতন্যলীলা'র অভিনয় নানা দিক দিয়ে
উল্লেখযোগ্য। প্রথমত পুরাণের বিষয় নিয়ে এতদিন
গিরিশচন্দ্র নাটক লিখেছেন। চৈতন্যলীলায় তিনি শ্রীচৈতন্যের জীবনাশ্রয়ী
ধর্মকথা উপস্থাপন করেছিলেন। এই নাটকে নিমাইয়ের ভূমিকায় বিনোদিনী এবং নিতাইয়ের
ভূমিকায় বনবিহারিণী, নৃত্যে গীতে ও অভিনয়ে সবাইকে মুগ্ধ
করে দিলেন। এই নাটকে সুরকার ও নৃত্য শিক্ষক ছিলেন বেশীমাধব অধিকারী।
চৈতন্যলীলার ২১ সেপ্টেম্বরে অভিনয় দেখতে এসেছিলেন পরমহংস রামকৃষ্ণদেব। তিনি এই নাটক
দেখে অভিভূত হন এবং সবাইকে আশীর্বাদ করেন। বিশেষ করে চৈতন্যের চরিত্রে
বিনোদিনী-কে বিশেষভাবে প্রশংসা ও
আশীর্বাদ করেন। এই সময়
রামকৃষ্ণ পরমহংসসের
সাথে তাঁর পরিচয় ঘটে। ধীরে ধীরে তিনি
রামকৃষ্ণ পরমহংসেরের
প্রিয়পাত্র, ভক্ত, শিষ্যে পরিণত হন।
১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে এই থিয়েটারের উল্লেখযোগ্য পরিবেশনা ছিল- চৈতন্যলীলা, ২য় ভাগ (১০ জানুয়ারি), দোললীলা (১ মার্চ),
মৃণালিনী (১ এপ্রিল), পলাশীর যুদ্ধ (২৬ এপ্রিল), প্রভাস যজ্ঞ (৩০ মে),
বুদ্ধদেবচরিত (১৯ সেপ্টেম্বর)।
এই বছরেও প্রায় সব নাটক
গিরিশচন্দ্রের
রচিত এবং সবগুলোই ছিল পৌরাণিক। ব্যতিক্রম ছিল বঙ্কিমের উপন্যাসের নাট্যরূপ, নবীনচন্দ্র সেনের কাব্যের নাট্যরূপ। অবশ্য
এই দুটিরই নাট্যরূপ দিয়েছিলেন
গিরিশচন্দ্র। চৈতন্যলীলা প্রথম ভাগের অভিনয়ের সার্থকতায় উৎসাহিত
হয়ে তিনি এর দ্বিতীর ভাগ নিয়ে রচনা করেন। তবে ততটা দর্শক সমাদর পায় নি। প্রভাস যজ্ঞ কিছুটা
দর্শক টানতে ওএরেছিল। 'বুদ্ধদেবচরিত'-এ দর্শক-সমাদর পেয়েছিল। স্যার এডুইন আর্নল্ডের
কাব্য 'লাইট অফ এশিয়া* অবলম্বন করে গিরিশ এই নাটকটি লিখিছিলেন। এতে অভিনয়
করেছিলেন- সিদ্ধার্থ-অমৃতলাল মিত্র, শুদ্ধোধন-উপেন্দরনাথ মিত্র, বিদূষক-শিবচন্দ্র ভট্রাচার্য, সুজাতা- প্রমদাসুন্দরী, গোপা- বিনোদিনী।
সৌভাগ্যবশত স্যার আর্নল্ড সে সময়ে কলকাতায় ছিলেন। তিনি অভিনয়
দেখে নাটকটির উচ্ছৃসিত প্রশংসা
করে সংবাদপত্রে চিঠিপত্রে।
১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে এই থিয়েটারের উল্লেখযোগ্য পরিবেশনা ছিল- বিল্বমঙ্গল ঠাকুর
(১২ জুন), বেল্লিকবাজার (২৬ ডিসেম্বর),
কমলেকামিনী (২৬ ডিসেম্বর)। এছাড়া আগের নাটকগুলিও ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে
অভিনয় করা হয়েছিল। এই বছরেও প্রায় সব নাটক ছিল
গিরিশচন্দ্রের রচিত। এর ভিতরে তবে
সবচেয়ে সফল প্রযোজনা ছিল বিল্বমঙ্গল ঠাকুর।
১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি
বিনোদিনী
আনুষ্ঠানিকভাবে স্টার থিয়েটার ত্যাগ করেন। ২১ মে
গিরিশচন্দ্রের রূপসনাতন (২১ মে)অভিনীত
হয়। এরপর ৩১ জুলাই অভিনীত হয় বুদ্ধদেবচরিত ও বেল্লিককবাজার। বেল্লিককবাজার অভিনয়
শেষে আনুষ্ঠিকাভাবে বিদায় ভাষণ দিয়ে অমৃতলাল বসু স্টার ত্যাগ করেন। এই বছরে ধনকুবের মতিলাল শীলের
নাতি গোপাল লাল শীল থিয়েটার করার সখে কৌশলে স্টার থিয়েটারের
জমি কিনে নেন এবং স্টারের স্বত্বাধিকারীদের উচ্ছেদের নোটিশ দেওয়া দেন। ফলে বাধ্য হয়ে ত্রিশ হাজার টাকায় এই থিয়েটার বাড়ি গোপাল
শীলের কাছে হস্তান্তর করেন। এই বাড়িতে বাড়িতে গোপাল লাল শীল খুললেন এমারেন্ড
থিয়েটার।
১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ৮ অক্টোবর এমারেল্ড উদ্বোধন হয়েছিল
কেদার চৌধুরীর লেখা 'পাণ্ডব
নির্বাসন' নাটক দিয়ে। দৃশ্যপট ও সাজসজ্জার দায়িত্ব পাল
করেছিলেন জহরলাল ধর এবং সুকুমারী ও শশিভৃষণ দেব।
এই বছরের ২৬ অক্টোবর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'বউ
ঠাকুরানীর হাট' উপন্যাসের নাট্যরূপ 'রাজা বসন্ত রায়'
মঞ্চস্থ হয়। নাট্যরূপ দিয়েছিলেন কেদার চৌধুরী
এবং এর আগেই ন্যাশনাল থিয়েটারে ১৮৮৬
খ্রিষ্টাব্দের ৩ জুলাই অভিনীত হয়েছিল। এরপর মঞ্চস্থ হয় আনন্দকানন, মদনভষ্ম
প্রভৃতি নাটক। সব মিলিয়ে এই বছরে এমারেল্ড আর্থিকভাবে সুবিধা
করতে ব্যর্থ হয়। তাই গোপাল শীল কেদার চৌধুরীর পরিবর্তে
গিরিশচন্দ্রকে
ম্যানেজার হিসেবে নিয়ে আসেন। গিরিশচন্দ্র
প্রথমে সম্মত না হলেও, পরে
স্টার থিয়েটারের স্বত্বাধিকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেই
তিনি এমারেন্ডে যোগ দিলেন।
গিরিশ এমারেন্ডে যোগ দিয়েছিলেন ৫ বছরের
চুক্তিতে। এই চুক্তি অনুসারে গিরিশচন্দ্র
২০ হাজার টাকার বোনাস এবং মাসিক ৩৫০ টাকা বেতন পাবেন।
স্টার থিয়েটারের
নাট্যদল বাড়িটি ছেড়ে দিলেও, নামের অধিকার ছাড়েন নি। তাঁরা নতুন করে
অভিনয় শুরু করেন হাতী বাগান থেকে।
স্টার থিয়েটারের
মালিক অমৃতলাল বসু, দাসুচরণ নিয়োগী, অমৃতলাল মিত্র এবং
হরিপ্রসাদ বসু, নতুন থিয়েটারের জায়গা খোঁজা শুরু করেন। অবশেষে হাতিবাগানের
রণেশকৃষ্ণ দেবের ত্রিশ কাঠা জমি ক্রয় করতে সক্ষম হন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ৬৮ নম্বর
বিডন স্ট্রিটের স্টার থিয়েটার-বাড়ি ত্যাগ করা সময় দায়ে পড়ে
গিরিশচন্দ্র এমারেল্ড থিয়েটারের সাথে নাটক রচনার চুক্তি
করেছিলেন বটে। কিন্তু স্টারের টানে গোপনে যোগাযোগ রেখেছিলেন। গিরিশচন্দ্র এমারেল্ড থিয়েটারের সাথে
চুক্তিরর সূত্রে পাওয়া ২০ হাজার টাকা থেকে ১৬ হাজার টাকা
স্টার থিয়েটারকে বিনাশর্তে দিয়ে দেন নতুন বাড়ি
তৈরির জন্য। থিয়েটার বাড়ি তৈরি হওয়ার পর,
গিরিশচন্দ্র গোপনে এদের জন্য নাটক লিখেছিলেন।
১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ নভেম্বর গিরিশ এমারেল্ডের
ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেছিলেন।
তিনি রবীন্দ্রনাথ এবং কেদার চৌধুরীর পূর্ব অভিনীত
নাটকগুলি বন্ধ করে দেন। এর পরিবর্তে তিনি
'নীলদর্পণ' নাটক দিয়ে গিরিশ এখানে কাজ শুরু করলেন। তারপরে
মঞ্চস্থ করেন সীতাহরণ, দীনবন্ধুর নবীন তপস্থিনী, গিরিশের মায়াতরু।
এর ভিতরে শেষের দুটি নাটক
খুবই জনসমাদর লাভ করেছিল।
প্রতাপ জহুরির
ন্যাশনাল থিয়েটারে
থাকার সময়,
গিরিশচন্দ্র
অনেকটা দায়ে পড়ে নাটক লিখেছিলেন। এবারে তিনি এমারেল্ডকে
বাঁচানোর জন্য নাটক রচনা শুরু করেছিলেন। এই সময়ের যে সকল উল্লেখযোগ্য নাটক মঞ্চস্থ
হয়েছিল, সেগুলো হলো- 'সীতার বনবাস'
বঙ্কিমচন্দ্র
চট্টোপাধ্যায়ের
মৃণালিনী উপন্যাসের নাট্যরূপ এবং
মধুসূদন
দত্তের মেঘনাদবধ কাব্যের নাট্যরূপ,
নিজের নাটক 'পূর্ণচন্দ্র' করলেন। এ সকল নাটকের মাধ্যমে
এমারেল্ড জনন্দিত হয়ে উঠেছিল। এই সময়েই
গিরিশচন্দ্রের
সঙ্গে অর্ধেনদুশেখর মুস্তাফিও যুক্ত হলেন।
আবর নবীন তপস্বিনী
নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। এই নাটকে জলধরের ভূমিকায় অর্ধেন্দু
অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন। এই সময়ের অন্যান্য নাটকের ভিতরে ছিল-
দীনবন্ধু মিত্রের 'নীলদর্পণ” ও 'জামাইবারিক'।
জনসমাদর পেয়েছিল
মধুসূদন
দত্তের দুটি প্রহসন
'একেই কি বলে সভ্যতা' ও 'বুড়ো শালিখের ঘাড়ে রৌ'।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের
উপন্যাস আনন্দমঠ, মৃণালিনী, বিষবৃক্ষ,
কৃষ্ণকান্তের উইল-প্রভৃতির নাট্যরূপ অভিনীত হয়ে হয়েছিল সাফল্যের
সাথে। ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ সেপ্টেম্বর অর্ধেন্দুশেখর এমারেল্ড ছেড়ে চলে যান।
১৮৮৭-৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে এমারেল্ডে গিরিশচন্দ্রে রচিত সীতার বনবাস, সীতাহরণ, মায়াতরু, পূর্ণচন্দ্র
, বিষাদ, অভিনীত হয়েছিল। এমারেল্ডের এই রমরমা অবস্থা থাকা সত্বেই, অজানা কারণে
গোপাল লাল এমারেল্ড ছেড়ে দিলেন।
১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি ইজারা দিয়েছিলেন
মতিলাল সুর, পণ্ডিত হরিভূষণ ভট্টাচার্য, পুর্ণচন্দ্র
ঘোষ, ব্রজনাথ মিত্রের কাছে। গোপাললালের
চলে যাওয়ার পর, গিরিশের সঙ্গে গোপাললালের চুক্তি
আর কার্যকরী রইলো না। ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩ ফেব্রুয়ারি
গিরিশচন্দ্র এমারেল্ডে ত্যাগ কর
স্টার থিয়েটারে
যোগদান করেন।
১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মে শুক্রবার ফুলদোলের দিন (১৩ জ্যৈষ্ঠ, ১২৯৫)
মহাসমারোহে হাতীবাগানের নবনির্মিত দ্বিতীয় স্টার থিয়েটার উদ্বোধন হয়। প্রথম নাটক
ছিল নাটক
গিরিশচন্দ্রের লেখা 'নসীরাম'। উল্লেখ্য এমারেন্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকায়
গিরিশচন্দ্র লুকিয়ে খালপারে
বসে এই নাটকটি লিখে দিয়েছিলেন। এই কারণে এই নতুন নাটকের রচয়িতা নাম দেওয়া হয়েছিল
'নসীরাম'।
এতে অভিনয় করেছিলেন- নসীরাম (অমৃতলাল বসু), অনাথনাথ (অমৃতলাল মিত্র), শম্ভুনাথ (অমৃতলাল
মুখোপাধ্যায়), কাপালিক (অঘোর পাঠক), বিরজা (কাদম্বিনী), সোনা (গঙ্গামণি), পাহাড়িয়া বালকের ভূমিকায়
(তারাসুন্দরী)। এটিন ছিল তারাসুন্দরীর প্রথম মঞ্চাভিনয়। উদ্বোধনকালে অমৃতলাল বসু
গিরিশচন্দ্র লেখা কবিতা পাঠ করেন।
প্রথম বছর
গিরিশচন্দ্র স্টারে ছিলেন না, কিন্তু তাঁর রচিত পুরনো
নাটকগুলোই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এখানে অভিনীত হয়েছিল। এগুলোর ভিতরে ছিল চৈতন্যলীলা, বিল্বমঙ্গল
ঠাকুর, সীতার বনবাস, নলদময়ন্তী, রাবণবধ।
গিরিশচন্দ্র ছাড়া এই মঞ্চে অভিনীত 'সরলা' অভাবনীয় সাড়া
জাগিয়েছিল। 'সরলা' ছিল তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্বর্ণলতা' উপন্যাসের
অমৃতলাল বসু-কৃত নাট্যরূপ। নাটকটি অভিনীত হয়েছিল ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ২২ সেপ্টেম্বর। এই
নাটকে অসামান্য অভিনয় করেছিলেন- বিধুভূষণ (অমৃতলাল মিত্র), গদাধর (অমৃতলাল মুখোপাধ্যায়), শশিভৃষণ
(নীলমাধব চত্রবর্তী), সরলা (কিরণবালা), গোপাল (তারাসুন্দরী), শ্যামা (গঙ্গামণি), প্রমদা
(কাদম্বিনী)।
এমারেল্ড ছেড়ে দিয়ে
গিরিশচন্দ্র স্টারে চলে আসেন ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩ ফেব্রুয়ারি।
আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেছিলেন ২৭
এপ্রিল। এই দিনই অভিনীত হয়েছিল- তাঁর রচিত 'প্রফুল্ল'। পৌরাণিক কাহিনি ভিত্তিক
নাটকের বেড়াজাল ভেঙে এই নাটক লিখেছিলেন 'সরলা' নাটকের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে। এই
নাটকটির জনপ্রিয়তা 'সরলা' নাটকের রেকর্ডকে অতিক্রম করেছিল। এই নাটকে
গিরিশচন্দ্র অভিনয় করেন নি। অন্যান্য যাঁরা এতে অভিনয়
করেছিলেন, তাঁরা হলেন-
অমৃতলাল মিত্র (যোগেশ), অমৃতলাল বসু (রমেশ), কাশীনাথ চট্টোপাধ্যায় (সুরেশ), অমৃতলাল মুখোপাধ্যায়
(ভজহরি), মহেন্দ্রনাথ চৌধুরী (পীতাম্বর), শ্যামাচরণ কুণ্ড (কাঙালিচরণ), নীলমাধব
চক্রবর্তী (মদন ঘোষ), ভূষণকুমারী (প্রফুল্প), গঙ্গামণি (উমাসুন্দরী), কিরণবালা (জ্ঞানদা), টুম্পামণি
(জগমণি)।
১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রফুল্ল ছাড়া আর অভিনীত হয়েছিল
গিরিশচন্দ্রের প্রায় সব পুরনো নাটক এবং অমৃতলালের 'তাজ্জব ব্যাপার'।
গিরিশচন্দ্রের নতুন সামাজিক নাটক 'হারানিধি'
অভিনীত হয়েছিল ৭ সেপ্টেম্বর। কিন্তু সেরকম দর্শকনন্দিত হয় নি।
১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের অধিকাংশ নাটকই ছিল
গিরিশচন্দ্রের রচিত পুরনো নাটক। জাতীয়
কংগ্রেসের অধিবেশন উপলক্ষে
গিরিশচন্দ্র মলিনাবিকাশ (গীতিনাট্য) এবং মহাপুজা মঞ্চস্থ
হয়েছিল। 'মলিনাবিকাশ' গীতিনাট্যে বাংলা মঞ্চে প্রথম দ্বৈত-নৃত্যগীতের প্রচলন হয়।
এই নাচে অংশগ্রহণ করেছিলেন বিকাশ (সুকুমারী)
এবং মলিনা (মানদাসুন্দরী)। এর সুরকার ছিলেন রামতারণ সান্যাল এবং
নৃত্যশিক্ষায় ছিলেন কাশীনাথ চট্টোপাধ্যায়। এই বছরে
গিরিশচন্দ্রের পুত্র সুরেন্দ্রনাথ (দানী) চণ্ড
নাটকের রঘুদেবজীর চরিত্রে প্রথম অভিনয় শুরু করেন। এই বছরের ১১ মার্চ স্টারের বিখ্যাত অভিনেতা অমৃতলাল মুখোপাধ্যায় এবং
এপ্রিল মাসে অভিনেত্রী কিরণবালার মৃত্যু হয়। এই দুজনের আকস্মিক মৃত্যুর কারণে তিন মাস
স্টারে অভিনয় বন্ধ ছিল।
অমৃতলাল বসুর নতুন নাটক 'তরুবালা' সাফল্য লাভ পেয়েছিল। ঠাকুরদা চরিত্রে নীলমাধব চক্রবর্তী এবং ঠানদিদির
ভূমিকায় গঙ্গামণি এবং তরুবালার ভূমিকায় প্রমদাসুন্দরী খ্যাতি অর্জন করেন।
১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দের শুরু থেকে গিরিশচন্দ্রের
সাথে স্টারের কর্তৃপক্ষের মনোমালিন্য শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁকে ম্যানেজার পদ থেকে
অব্যাহতি দেওয়া হয় ১৫ ফেব্রুয়ারি। এই সময় গিরিশচন্দ্রের
সাথ অন্যান্য যাঁরা স্টার ত্যাগ করেছিলেন, তাঁরা হলেন- নীলমাধব চক্রবর্তী,
অঘোরনাথ পাঠক, প্রবোধচন্দ্র ঘোষ, দানীবাবু, শরৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, মানদাসুন্দরী
প্রমুখ। স্টার ত্যাগের পর নীলমাধব চক্রবর্তীর নেতৃত্বে সিটি থিয়েটার খোলা হয়। এই
সময় গিরিশচন্দ্র অন্তরাল
থেকে এঁদের সাহায্য করেছিলেন। এই বছরে সিটি থিয়েটারে গিরিশচন্দ্রের নাটকগুলো অভিনীত
হতে থাকলে স্টার কর্তৃপক্ষ মামলা করে। মামলায় স্টার হেরে যায়। এই সময় বিচারপতি
উইলসন তাঁর রয়ে উল্লেখ জরেন যে,- কোনো মুদ্রিত নাটক বিক্রয় করা শুরু হলে, তা বিনা
বাধায় সকল থিয়েটারই মঞ্চস্থ করতে পারবে।
গিরিশচন্দ্র
চলে যাওয়ার পর ম্যানেজার হন অমৃতলাল বসু। মাসিক একশো টাকা বেতনে ১৫ ফেব্রুয়ারি নাট্যকার হিসেবে যোগ
দেন রাজকৃষ্ণ রায়। তাই ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে গিরিশচন্দ্রের
নাটকের পরিবর্তে রাজকৃষ্ণ রায়ের নাটকগুলো অভিনীত হতে
থাকে। তাঁর রচিত 'সম্মতি সঙ্কট', 'নরমেধ যজ্ঞ', 'লায়লা-মজনু' প্রভৃতি নাটকগুলো বেশ
ভালোই সমাদৃত হয়েছিল।
১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে
কলকাতার
৬ নম্বর বিটন স্ট্রটে নাগেন্দ্রভূষণ মুখোপাধ্যায়ের অর্থায়নে
মিনার্ভা থিয়েটার তৈরি হয়েছিল।
নাট্যদল তৈরি ও অভিনয়ের যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন
গিরিশচন্দ্র ঘোষ। এঁর সাথে
অভিনয় শিক্ষক হিসেবে যুক্ত ছিলেন অর্ধেন্দু শেখর। এছাড়া অভিনয় শিল্পী হিসেবে যুক্ত
হয়েছিলেন- দানীবাবু, চুনিলাল দেব, নিখিল দেব, নীলমণি ঘোষ, কুমুদনাথ সরকার, অঘোরনাথ
পাঠক, অনুকুল বটব্যাল, তিনকড়ি দাসী, প্রমদাসু্ন্দরী ও পরমাসুন্দরী। সঙ্গীত শিক্ষক
যুক্ত হয়েছিলেন দেবকণ্ঠ বাগচী। স্টেজ ম্যানেজার ছিলেন ধর্মদাস সুর।
১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ জানুয়ারি, এর যাত্রা শুরু হয়েছিল শেক্সপিয়ারের 'ম্যাকবেথ' নাটকটি
মঞ্চস্থ হওয়ার মধ্য দিয়ে। নাটকটি অনুবাদ
করেছিলেন-গিরিশচন্দ্র ঘোষ। মঞ্চের ড্রপসিন এঁকেছিলেন ইংরেজ চিত্রকর মি. উইলিয়ার্ড
এবং দৃশ্যসজ্জায় ছিলেন পিমসাহেব। অভিনয়ে অংশগ্রহণ করেন গিরিশচন্দ্র (ম্যাকবেথ), তিনকড়ি দাসী (লেডি ম্যাকবেথ),
দানীবাবু (ম্যালকম), কুমুদ সরকার বেঙ্কো), অঘোর পাঠক (ম্যাকডাফ), প্রমদাসুন্দরী (লেডি ম্যাকডাফ), অর্ধেনদুশেখর (দ্বারপাল,
ডাস্তার, হত্যাকারী ও
ডাকিনি)।
পত্রপত্রিকায় এই নাটকের অভিনয় দারুণ সুখ্যাতি লাভ করলেও, সাধারণ দর্শক এ নাটক সহজে
গ্রহণ করতে পারে নি। ফলে এই নাটকের দর্শক হ্রাস কমে যেতে থাকে। ফলে দশ রাত অভিনয়ের
পর এই নাটকের অভিনয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে ১৩ জুলাই গিরিশচন্দ্রের প্রফুল্ল
অভিনীত হয়। উল্লেখ্য একই দিনে
মিনার্ভা থিয়েটার 'প্রফুল্ল' অভিনীত হয়েছিল
মিনার্ভা থিয়েটারে যোগেশের ভূমিকায়
অভিনয় করেছিলেন গিরিশচন্দ্র। অন্যদিকে স্টারে যোগেশের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অমৃতলাল মিত্র। এই
বছরে পুরানো নাটক মঞ্চস্থ করেই স্টার টিকেছিল।
১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জানুয়ারি অমৃতলাল বসুর নাট্যরূ্প দেওয়া রাজসিংহ অভিনীত হয়। এই বছরে
১৫ এপ্রিল গিরিশচন্দ্র
মিনার্ভা থিয়েটার থেকে
আবার স্টার থিয়েটারে ফিরে আসেন এবং ড্রামাটিক ডিরেক্টর হিসেবে যোগদান করেন। ২৬
সেপ্টেম্বর গিরিশচন্দ্রের
রচিত নতুন নাটক 'কালাপাহাড়' মঞ্চস্থ হয়।
এই নাটকে অভিনয় করেছিলেন গিরিশ (চিন্তামণি), অমৃত মিত্র (কালাপাহাড়), নগেন্দ্রবালা
(ইমান)। নরীসুন্দরী (দোলনা), প্রমদাসুন্দরী (চঞ্চলা)। এই বছরে উল্লেখ্যযোগ্য অপর
নাটকটি ছিল অমৃতলালের 'বৌমা'।
১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের
সেপ্টেম্বর মাসে
গিরিশচন্দ্র নতুন
নাটক পারস্যপ্রসূন অভিনীত হয়। ডিসেম্বর মাসে অভিনীত হয় তাঁর 'মায়াবসান' নামক নতুন সামাজিক নাটক।
এতে অভিনয় করেছিলেন- এতে
গিরিশচন্দ্র
(কালীকিঙ্কর), দানীবাবু (হলধর), অক্ষয়
কোঁঙার (গণপতি), তারাসুন্দরী (অন্নপূর্ণা), নরীসুন্দরী (রঙ্গিনী) ও নগেন্দ্রবালা (বিন্দু)।
১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে শুধু অমৃতলালের 'গ্রাম্য-বিভ্রাট' এবং নতুন নাটক 'হরিশচন্দ্র' অভিনীত হয়। এই বছরেই আবার
গিরিশচন্দ্রের সঙ্গে
স্টার-কর্তৃপক্ষের মতান্তর হয়। ১১ মের পরে গিরিশচন্দ্র স্টার ছেড়ে দেন।
এরপর তিনি আর কখনো স্টার থিয়েটারে ফিরে আসেন নি।
এর পর গিরিশচন্দ্রের পরিচালনায় মঞ্চস্থ হয়েছিল 'মুকুলমঞ্জুরা' ও 'আবুহোসেন'। এই দুটি নাটক ছিল নাচে গানে ভরপুর। ফলে নাটক দুটি সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এই সাফল্যের সূত্রে মিনার্ভা থিয়েটার বিপুল সুখ্যাতি লাভ করেছিল। এরপর এই মঞ্চে একের পর এক নাটক মঞ্চ-সফল নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। এর ভিতরে উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো ছিল-