গিরীশচন্দ্র ঘোষ
১৮৪৪-১৯১২
সংগীতস্রষ্টা, কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যপরিচালক, অভিনেতা।

১৮৪৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ ফেব্রুয়ারি (সোমবার ১৫ ফাল্গুন, ১৯৫০), কলকাতার বাগবাজারের সম্ভ্রান্ত কায়স্থ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা নীলকমল ঘোষ ছিলেন সওদাগরি অফিসের বুককিপার। মায়ের নাম রাইমণি। তিনি ছিলেন পিতামাতার অষ্টম সন্তান। জন্মের পরপরই রাইমণি কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এই সময় তিনি বাড়ির বাগ্‌দিনী দাসীর স্তন্যপানে বড় হয়ে ওঠেন। ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে তার মায়ের মৃত্যু হয়। পিতার মৃত্যু হয় ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে।

তাঁর শৈশবের শিক্ষা হয়েছিল পাড়ার ভগবতী গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ির পাঠশালায়। কথিত আছে এই পাঠশালায় লেখাপড়া করার সময়- পাঠাশালার হাফ আখড়াই গানের আসরে কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। এই অনুষ্ঠান দেখার পর তাঁর মনে কবি হওয়ার সাধ জেগেছিল। ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দে নীলকমল তাঁকে গৌরমোহন আঢ্যের স্কুলে (পরে এর নাম হয়েছিল 'ওরিয়েন্টাল সেমিনারী স্কুল) ভর্তি করে দেন। এই সময় তাঁর সহপাঠী ছিলেন স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও রেভারেন্ড কালীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে এঁরা তিনজনই হেয়ার-স্কুলে ভর্তি হন। মূলত বড় ভাই নিত্যগোপাল ঘোষের উদ্যোগে গিরিশচন্দ্র এই স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন।

১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর বড় ভাই নিত্যানন্দ ঘোষের মৃত্যু হয়। ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে হেয়ার স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে লেখাপড়া করার সময়- তাঁর পিতা নীলকমল ঘোষের মৃত্যু হয়। এই দুটি মৃত্যুর কারণে গিরিশচন্দ্রের পরিবার অর্থ-সংকটে পড়ে যায়। ফলে তাঁকে এই স্কুল পরিত্যাগ করতে হয়। এই সময় সংসারের দায়িত্ব নেন তাঁর বড় বোন কৃষ্ণকিশোরী। এই সময় পাড়ার সঙ্গীসাথীদের সাথে দুরন্তপনায় কাটাতেন। গিরিশচন্দ্রকে ঘরমুখী করার জন্য, ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে কৃষ্ণকুমারী গিরিশচন্দ্রের বিবাহ দেন। পাত্রী ছিলেন অ্যাটকিন্‌সন টিলটন কোম্পানির বুককিপার শ্যামপুকরস্থ নবীনচন্দ্র দেবের কন্যা প্রমোদিনী। এই বিবাহের পর তিনি আবার ওরিয়েন্টাল সেমিনারীতে ভর্তি হন। স্কুলের পাঠে তিনি অত্যন্ত অমনোযোগী ছিলেন। তাছাড়া তিনি তখন নাট্যদলগুলোর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন।

১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে বাগবাজারের নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর 'সখের যাত্রা দল' থেকে মাইকেল মধুসূদন দত্তের 'শর্মিষ্ঠা' নিয়ে যাত্রাভিনয়ের আয়োজন করেন। এই যাত্রাভিনয়ের জন্য তিনি গান রচনা করেছিলেন। পরে তাঁকে অভিনয় করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এই নাটকে তিনি কোন্ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, তা জানা যায় না।

নাটকের দলে যোগ দেওয়ার জন্য, শেষ পর্যন্ত তিনি এন্ট্রাস পরীক্ষা দেন নি। ১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দে পাইকপাড়া সরকারী স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হন। ইতিমধ্যে নাট্যাঙ্গনে তাঁর অভিনয় ক্ষমতা সম্পর্কে উচ্চমানের ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল। এই সূত্রে  ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে যখন দীনবন্ধু মিত্রের 'সধবার একাদশী' মঞ্চস্থ করা আয়োজন করা হয়, তখন গিরিশচন্দ্রকে অভিনয় শিক্ষার ভার দেওয়া হয়। এই নাটকে তিনি কিছু স্বরচিত গান যুক্ত করেন।

নাটকটির চতুর্থ অভিনয় ছিল বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। এই অভিনয়টি সম্পন্ন হয়েছিল রায়বাহাদুর রামপ্রসাদ মিত্রের বাড়িতে। এই বাড়িতে স্থায়ী মঞ্চ না থাকায় অস্থায়ী মঞ্চস্থ করা হয়েছিল। দর্শকের সারিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দীনবন্ধু মিত্র। এই রাত্রের যাঁরা অভিনয় করেছিলেন, তাঁরা হলে- গিরিশচন্দ্র ঘোষ (নিমচাঁদ),  অর্ধেন্দূশেখর (কেনারাম), নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (অটল), ঈশান নিয়োগী (জীবনচন্দ্র), মহেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (নকড়), নীলকণ্ঠ গাঙ্গুলি (রামমাণিক্য), অমৃতলাল মুখোপাধ্যায় (কুমুদিনী), মহেন্দ্রনাথ দাস (সৌদামিনী), রাধামাধব কর (কাঞ্চন), নগেন্দ্রনাথ পাল (নটী)। নাটকটির অভিনয়ের প্রশিক্ষক ছিলেন- গিরিশচন্দ্র ঘোষ এবং সহ-প্রশিক্ষক ছিলেন  অর্ধেন্দূশেখর  এই নাটকটি মোট সাতবার অভিনীত হয়েছিল।

নাটক করে জামাই উচ্ছন্নে যাচছে ভেবে এই অবস্থায় তাঁর শ্বশুর তাঁর নিজের অফিসে 'শিক্ষানবীশ' হিসেবে চাকরিতে বহাল করেন। এখানে কাজ করার মাধ্যমে তিনি একজন দক্ষ বুককিপার হিসেবে গড়ে উঠেন। এই সময় বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য পড়া শুরু করেন। এই সূত্রে তাঁর ভিতরে জ্ঞানস্পৃহা তীব্রতর হয়ে উঠে এবং ধীরে ধীরে স্বশিক্ষিত হয়ে ওঠেন। তিনি নিয়মিত ভাবে ক্যালকাটা পাবলিক লাইব্রেরি ও অন্যান্য গ্রন্থাগার থেকে বই এনে পড়তেন।

অ্যাটকিন্‌সন টিলটন কোম্পানির চাকরি ছেড়ে কিছুদিন 'আরজেনসি সিলিজ' কোম্পানিতে বুককিপার হিসেবে যোগদান করেন। ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে অ্যাটকিন্‌সন নীল ব্যবসার জন্য অফিস খোলেন। এই সময় তাঁর শ্বশুর নবীনচন্দ্র দেবের প্রচেষ্টায় তাঁর পুত্র ব্রজনাথ দেব এবং গিরিশ এই অফিসে চাকরি শুরু করেন। ব্রজনাথ ছিলেন সঙ্গীতানুরাগী। তাঁর কাছ থেকে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করেন। এই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত অভিনেত্রী মিসেস জি.বি ডবলিউ লুইস রয়াল থিয়েটার ভাড়া করে নিয়মিত থিয়েটার করতেন। ঘটনাক্রমে  লুইসের সাথে তাঁর বিশেষ সখ্য গড়ে ওঠে। এই সূত্রে তিনি নিয়মিত রয়াল থিয়েটারএ লুইসের অভিনীত নাটক দেখার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। তাছাড়া তিনি লুইসের মাধ্যমে মঞ্চ, মঞ্চনাটক ও অভিনয়রীতি বিষয়ক নানাবিধ বিষয়ের ধারণা লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে দিকে কলকাতার বাগবাজার অঞ্চলের যুবক সম্প্রদায় একটি নাট্যমঞ্চ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এই দলটি বাগবাজার এমেচার থিয়েটার নামে পরিচিতি লাভ করেছিল। এই দলে ছিলেন- গিরিশচন্দ্র ঘোষ, নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাধামাধব কর, অরুণচন্দ্র হালদার। এঁরা প্রথম দিকে নাট্যদল তৈরি করতে সক্ষম হলেও অর্থাভাবে কোনো মঞ্চ নির্মাণ করতে পারেন নি। এই সময় বাগবাজারের 'সখের যাত্রাদল‌‌‌' মাইকেল মধুসূদন দত্তের শর্মিষ্ঠা মঞ্চস্থ করার উদ্যোগ নিয়েছিল। এই দলের সাথে বাগবাজারের এমেচার থিয়েটারের অভিনেতারা যুক্ত হয়ে হন। এই সময় গিরিশচন্দ্র ঘোষ এই নাটকের জন্য কয়েকটি গান রচনা করে দেন।

১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে অক্টোবর মাসে প্রাণকৃষ্ণ হালদারের বাড়িতে শারদীয়া দুর্গা পূজার রাত্রে দীনবন্ধু মিত্রের 'সধবার একাদশী' নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছিল। নাটকটি শ্যামবাজারে দেওয়ান রায় রামপ্রসাদ মিত্র বাহাদুরের বাড়িতে মঞ্চস্থ হওয়ার সময় নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র উপস্থিত ছিলেন। এই নাটকে গিরিশচন্দ্র প্রথম অভিনয় করেন। দীনবন্ধু মিত্র গিরিশচন্দ্রের অভিনয়ে মুগ্ধ হন এবং তাঁর লীলাবতী নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য গিরিশচন্দ্রকে অনুরোধ করেন। এরপর মণিমোহন সরকারে উষাবিরোধ নাটকটিকে যাত্রা-উপযোগী করার জন্য বেশ কয়েকটি গান রচনা করেন।

১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দের নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় একটি নাটক মঞ্চস্থ করার উদ্যোগ নেন। এই দলের প্রথম নাটকটি ছিল দীনবন্ধু মিত্রের  'সধবার একাদশী'। এই বছরের অক্টোবর মাসে শারদীয়া দুর্গাপূজার সপ্তমী পূজার রাত্রে বাগবাজারের দুর্গাচরণ মুখোপাধ্যায়ের পাড়ায়, প্রাণকৃষ্ণ হালদারের বাড়িতে নাটকটি অভিনীত হয়। প্রথম প্রচেষ্টায় এই অভিনয় ততটা সফল হয় নি। এরপর অক্টোবর মাসের কোজাগরী পূর্ণিমায় লক্ষ্মীপূজার রাতে শ্যামপুকুরের নবীনচন্দ্র সরকারের বাড়িতে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। দ্বিতীয় রাত্রির এই অভিনয়ের পর এই দলটি কিছুটা সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়।

নাটকটির চতুর্থ অভিনয় ছিল বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। এই অভিনয়টি সম্পন্ন হয়েছিল রায়বাহাদুর রামপ্রসাদ মিত্রের বাড়িতে। নাটকটির চতুর্থ অভিনয় ছিল বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। কারণ, দর্শকের সারিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দীনবন্ধু মিত্র। এই অভিনয়ে প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেছিলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ। গিরিশচন্দ্র এই নাটকে অভিনয় করেছিলেন নিমচাঁদের ভূমিকায়। নাটকটির অভিনয়ের প্রশিক্ষকও গিরিশচন্দ্র ঘোষ। এই রাতে গিরিশচন্দ্র অসামান্য অভিনয় করে সবাইকে মুগ্ধ করেন।

১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ মে, শ্যামবাজারের রাজেন্দ্রলাল বাড়িতে মঞ্চস্থ হয়েছিল দীনবন্ধু মিত্রের 'লীলাবতী' নাটক। এই সময় এই নাট্যদলের নতুন নাম দেওয়া হয়- 'শ্যামবাজার নাট্যসমাজ'। এই নাটকে গিরিশচন্দ্র ছিলেন অভিনয় প্রশিক্ষক। তিনি 'ললিতমোহন‌'-এর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। প্রথম রাত্রির সফল অভিনয়ের পর নাটকটির এতটাই প্রশংসিত হয়েছিল যে, পরপর কয়েকটি শনিবার তা একই মঞ্চে অভিনীত হয়েছিল। পরে দর্শকদের জায়গা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। দর্শক নিয়ন্ত্রণের জন্য এঁরা ‌ইউনিভার্সিটি সার্টিফিকেট' দেখে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় ‌এই নাটক দেখার জন্য টিকেট বিক্রয়ের কথা ভাবা হয়েছিল। এই সূত্রে এই নাট্যদলের উদ্যোক্তরা পেশাদার নাট্যদল ও মঞ্চের কথা ভাবা শুরু করেন। এই সূত্রে এই নাট্যদলের উদ্যোক্তরা পেশাদার নাট্যদল ও মঞ্চের কথা ভাবা শুরু করেন। এই ভাবনা থেকে এঁদের উদ্যোগে ন্যাশনাল থিয়েটারের উদ্ভব হয়েছিল। এই নতুন দল তৈরির সময় টিকিট বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। গিরিশচন্দ্র এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছিলেন। তাঁর মতে উপযুক্ত সাজসরঞ্জাম ব্যতীত ন্যাশনাল থিয়েটারের নামে টিকিট বিক্রয় করাট যথার্থ হবে না। কিন্তু দলের অন্যান্য সদস্যরা গিরিশচন্দ্র এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মত দিলে তিনি দলত্যাগ করেন। পরে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের  ২২ ফেব্রুয়ারি 'কৃষ্ণকুমারী' হওয়ার সময় তিনি এই নাটক অভিনয়ের সময়ে গিরিশচন্দ্র পুনরায় আসেন এবং ভীমসিংহের ভূমিকায় অভিনয় করেন।

কৃষ্ণকুমারী অভিনয়ের সূত্রে গিরিশচন্দ্র দলে ফিরে আসার পর, নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দাদা দেবেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে গিরিশচন্দ্র দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। ধীরে ধীরে এর সাথে জড়িয়ে পড়েন অরধেন্দুশেখর। এই দ্বন্দ্ব চরমাবস্থায় পৌঁছালে অরধেন্দুশেখর দলত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। এই বিভাজনের বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পতি হয়ে গিয়েছিল ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ৮ মার্চ রাত্রের অভিনয় শেষে। দলটি ভেঙে দুটি ভাগে বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল। বিভাজিত দুটি দল হলো- এঁরা প্রথমে  গিরিশচন্দ্রের নেতৃত্বে নেটিভ হাসপাতালের সাহায্যার্থে এরা নতুন দল নিয়ে নীলদর্পণ করার চেষ্ট করে। কিন্তু দলাদলিতে তাদের প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর নতুন দল ন্যাশনাল থিয়েটার নাম নিয়ে টাউন হলে এবং রাধাকান্ত দেবের বাড়িতে স্টেজ বেঁধে অভিনয় করা শুরু করে। এই পর্যায় যে সকল নাটক অভিনীত হয়েছিল, সেগুলো হলো- এদের অভিনয়ের এবারে এই নাট্যদল ঢাকায় যায়। এই ভ্রমণে  গিরিশচন্দ্র কলকাতায়  থেকে গিয়েছিলেন। বিভাজিত দল দুটি স্বতন্ত্র দল হিসেবে কিছু নাটক মঞ্চায়ন করে। পরে এই দুটি দলের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। 

১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই ডিসেম্বর দুই দলই সাড়ম্বরে আলাদা করে বাৎসরিক উৎসব পালন করল। ন্যাশনাল থিয়েটার নামের দল পুরনো সান্যাল বাড়িতে সভা করে এবং এইখানেই কিছু দিন অভিনয় চালাবার চেষ্টা করে। এইসূত্রে এঁরা যে উল্লেখযোগ্য নাটক মঞ্চস্থ করেছিল, তা হলো- বিভাজিত এই দুটি দলের মিলে মিশে কাজ করার যে উদ্যোম সৃষ্টি হয়েছিল, সেই প্রেরণা থেকে হিন্দু ন্যাশনাল থিয়েটারের নগেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এবং  ন্যাশনাল থিয়েটারের ধর্মদাস সুর, নতুন একটি নাট্যালয় তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এঁরা কলকাতার ৬ নম্বর বিটন স্ট্রটে মহেন্দ্রনাথের দাসের জমিতে ভুবনমোহন নিয়োগীর অর্থায়নে একটি নতুন নাট্যশালা গড়ে তোলেন এবং এর নাম দেন গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার। ধীরে ধীরে এই নতুন থিয়েটারে যোগ দেন উভয়দলের সকল কলাকুশলী। এর ভিতর দিয়ে ন্যাশনাল থিয়েটারের আদি পর্বের সমাপ্তি ঘটে।

গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারের শুরুর দিকে গিরিশচন্দ্র ছিলেন না। ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় -এর মৃণালিনী ও বিষবৃক্ষ উপন্যাসকে মঞ্চস্থ করার উদ্যোগ নেয়। এই উপন্যাস দুটির নাট্যরূপ দেওয়ার জন্য গিরিশচন্দ্র-কে অনুরোধ করা হয়। গিরিশচন্দ্র এই উপন্যাস দুটির নাট্যরূপ দেন এবং অভিনেতা অভিনেত্রীদের প্রশিক্ষণ দেন। এই নাটক দুটির ভিতরে  মৃণালিনীর অসম্ভব সাফল্য লাভ করেছিল। ১৮৭৪ খ্রষ্টাব্দের ২১ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি মৃণালিনী অভিনীত হয়। এতে অভিনয় করেছিলেন গিরিশচন্দ্র (পশুপতি), অর্ধেন্দুশেখর (হ্ষিকেশ), নগেন্দ্রনাথ (হেমচন্দ্) অমৃতলাল বসু (দিগ্বিজয়), অমৃতলাল মুখোপাধ্যায় (ব্যোমকেশ), মহেন্দ্রলাল বসু (বক্তিয়ার খিলজি), বসন্তকুমার ঘোষ (মৃণালিনী), আশুতোব বন্দ্যোপাধ্যায় (গিরিজায়া) এবং ক্ষেত্রমোহন গঙ্গোপাধ্যায় (মনোরমা)। উল্লেখ্যে এই সময় এই থিয়েটারে নারী চরিত্রে পুরুষরাই অভিনয় করতেন। এরপর এই থিয়েটার মঞ্চস্থ হয় নবাবের নবরত্ব সভা (৭ মার্চ), নবীন তপস্থিনী (১৮ মার্চ), হেমলতা (১৮ এপ্রিল) ও কুলীনকন্যা বা কমলিনী (৩০ মে)।  উল্লেখ্যে এই সময় এই থিয়েটারে নারী চরিত্রে পুরুষরাই অভিনয় করতেন। এরপর এই থিয়েটার মঞ্চস্থ হয় ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ ডিসেম্বর তাঁর স্ত্রী প্রমোদিনীর মৃত্যু হয়।

ঘটনাক্রমে অ্যাটকিন্‌সন টিলটন তাঁর কোম্পানির স্বত্ব ত্যাগ করেন। ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে এই কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গিরিশচন্দ্র চাকরি হারিয়ে সংকটে পড়ে যান। এরপর তিনি ফ্রাইবার্জার অ্যান্ড কোম্পানিতে চাকরি নেন। চাকরি উপলক্ষে তাঁকে ভাগলপুরের গ্রামাঞ্চলে অনেক সময় কাটাতে হয়। ফলে অচিরেই তিনি এই চাকরির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ফেব্রুয়ারি, গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার থেকে বেরিয়ে আসা নাট্যশিল্পী এবং বেঙ্গল থিয়েটারের নিজস্ব নাট্যশিল্পীদের নিয়ে অভিনীত হয়েছিল নগেন্দ্রনাথের লেখা 'সতী কি কলঙ্কিনী' গীতিনাট্য। এদের সম্মিলিত অভিনীত  নাটকগুলো ছিল- মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্যের নাট্যরূপ। উল্লেখ্য রামকৃষ্ণ রায়ের অনুপ্রেরণায়, গিরিশচন্দ্র এই নাট্যরূপ দিয়েছিলেন। এই নাটকে প্রথম গিরিশচন্দ্র ভাঙা অমিত্রাক্ষর ছন্দের ব্যবহার করেন। তিনি রাজকৃষ্ণ রায়ের 'হরধনুভঙ্গ' নাটকের ভাঙা অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রভাবে এই ছন্দ তৈরি করেছিলেন। তিনি এই ছন্দকে উন্নত ও ত্রটিমুক্ত করে নাটকের সংলাপে ব্যবহার করেছিলেন। বর্তমানে একে গৈরিশ ছন্দ নামে অভিহিত করা হয়।  এই নাটকে মেঘনাদের চরিত্রে কিরণচন্দ্র এবং লক্ষ্মণ চরিত্রে হরিবৈষ্ণব, মহাদেব চরিত্রে বিহারীলাল গৈরিশ ছন্দের সংলাপ উচ্চারণে পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন।

১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে শিশিরকুমার ঘোষের অনুরোধে তিনি কোম্পানির চাকরি ছেড়ে ইন্ডিয়ান লীগের হেড ক্লার্ক ও ক্যাশিয়ারের কাজে যোগদান করেন। সম্ভবত এই বছরে তিনি দ্বিতীয় বিবাহ করেন। পাত্রী ছিলেন উত্তর কলকাতার সিমলা অঞ্চলের বিহারীলাল মিত্রের প্রথমা কন্যা সুরতকুমারী।

১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসের পরে গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে  গিরিশচন্দ্র  পুনরায় এই মঞ্চটি চালু করার উদ্যোগ নেন। গিরিশচন্দ্র এর নাম পাল্টে রাখেন ন্যাশনাল থিয়েটার। এটি ছিল ন্যাশনাল থিয়েটারের দ্বিতীয় পর্ব। এই সময় এই মঞ্চের ম্যানেজার ছিলেন কেদার চৌধুরী। এই সময়ের উল্লেখযোগ্য নাটক ছিল- অাগমনী ও অকালবোধন। এরপর তিনি পারিবারিক কারণে এই মঞ্চের অধিকার ত্যাগ করেন। তবে ইজারার মালিকা থেকে যান। এই সময় এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তাঁর শ্যালক দ্বারকানাথ দে।

১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পার্কার অফিসের বুক কিপার হিসেবে যোগদান করেন। এই সময় তাঁর বেতন ছিল ১৫০ টাকা।

১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তারকনাথের ভক্ত হন। এই সময় তিনি শিবপূজায় আসক্ত ছিলেন। প্রায়ই তিনি তারকেশ্বরে যেতেন। এ্‌ই বছরে গিরিশচন্দ্র ন্যাশনাল থিয়েটারের ইজারা ত্যাগ করেন। নতুন করে ইজারা নেন কেদার চৌধুরী। ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ন্যাশনাল থিয়েটার নিলামে ওঠে এবং প্রতাপ জহুরি নিলামে ২৫ হাজার টাকায় এই থিয়েটার কিনে নেন। পাকা ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি এই নাট্যালয় পরিচালনার জন্য, গিরিশচন্দ্রকে উপযুক্ত লোক মনে করেছিলেন। কারণ, প্রথমতঃ নাটক রচনা, নাট্য-পরিচালনা, মঞ্চ ব্যব্স্থাপনা, অভিনয় এবং অভিনয় শিক্ষা ইত্যদির ক্ষেত্রে সে সময়ের অধিকতর যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। দ্বিতীয়তঃ সওদাগরি অফিসে চাকরির সুবাদে বুককিপার হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সে বিচারে হিসেব রক্ষার বিষয়ে গিরিশচন্দ্রই ছিলেন উপযুক্ত ব্যক্তি।

গিরিশচন্দ্র সে সময় পার্কার কোম্পানির মাসিক ১৫০ টাকার চাকরি করতেন। নাটক-পাগল গিরিশচন্দ্র সওদাগরি অফিসের চাকরিতে মন বসাতে পারছিলেন না। তাই প্রতাপ জহুরি যখন ১০০ টাকা মাসিক বেতনে ন্যাশনাল থিয়েটারের ম্যানেজারে পদ নিয়োগের প্রস্তাব দেন, তখন ৫০ টাকা কম বেতন সত্ত্বেও রাজি হয়েছিলেন।  এই বছরেই ভবানীপুরের গিরিশ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে ভবানীপুর ও কালীঘাটের হাফ আখড়াই গানের দলের ভিতরে লড়াই হয়েছিল। এই লড়াইয়ে ভবানীপুরের দলের বাঁধনদার কবি ছিলেন গোপাললাল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কালীঘাটের দলের বাঁধনদার ছিলেন গিরিশচন্দ্র। এই আসরে গিরিশচন্দ্রে রচিত গানের কারণে কালীঘাটের দল জয়লাভ করেছিল।

১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে তিনি ন্যাশনাল থিয়েটারে  যোগদান করেন। তিনি প্রথমেই পুরানো ন্যাশনাল থিয়েটারের  কলাকুশলী ও অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জড়ো করলেন। প্রথম প্রচেষ্টাতেই তিনি যাঁদের দলে টানতে পেরেছিলেন, তাঁদের ভিতরে উল্লেখযোগ্য ছিলেন- ধর্মদাস সুর, মহেন্দ্রলাল বসু, অমৃতলাল বসু, মতিলাল সুর, অমৃতলাল মুখোপাধ্যায়, সঙ্গীতাচার্য রামতারণ সান্যাল, অমৃতলাল মিত্র, ক্ষেত্রমণি, কাদম্বিনী, লক্ষ্মীমণি, নারায়ণী, বিনোদিনী, বনবিহারিণী প্রমুখ। গিরিশচন্দ্র প্রথম নাটক হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন মাইকেল টড-এর রাজস্থানের ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ অনুসরণে সুরেন্দ্রনাথ মজুমদারের রচিত 'হামীর'। এঁদের নিয়ে তিনি প্রথম মহড়া দেওয়া শুরু করেছিলেন ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে।

১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি মহাসমারোহে নতুন ন্যাশনাল থিয়েটারের উদ্বোধন হল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষে 'হামীর' মঞ্চস্থা হয়েছিল। এতে অভিনয়ে করেছিলেন- হামীর (গিরিশচন্দ্র),  নায়িকা লীলা (বিনোদিনী)। দুর্ভাগ্যজনক হলো-  এই নাটকটি দর্শকদের ভিতরে তেমন সাড়া জাগাতে পারেন।

প্রতাপচাঁদ দর্শক টানার জন্য বিজ্ঞাপন দিলেন এবং ভালো নাটক পাওয়ার আশায় তিনি থিয়েটারের হ্যান্ডবিলের নিচে নাট্যকারদের কাছ থেকে ভালো নাটকের জন্য পুরস্কার ঘোষণা দিলেন। এতে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় গিরিশচন্দ্র নিজেই নাটক রচনা শুরু করলেন। এর আগে আগমনী, অকালবোধন, দোললীলা নামে গীতিনাট্যগুলো অংশবিশেষ লিখেছিলেন। এছাড়া অন্যের নাটক সম্পাদনা করেছেন অনেক। এই প্রথম তিনি পূর্ণাঙ্গ নাটক লেখা শুরু করলেন। এই উদ্যোগ থেকে রচনা করেছিলেন- 

এর মাঝে ২১ সেপ্টেম্বর অমৃতলাল বসুর রচিত 'তিল-দর্পণ' অভিনীত হয়েছিল। তবে এই নাটক ততটা জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। এরপর পুনরায় গিরিশচন্দ্র পৌরাণিক গল্প অবলম্বনে রচনা করেছিলেন 'অভিমন্যু বধ‌'। এই নাটকে যাঁরা অভিনয় করেছিলেন, তাঁরা হলেন- গিরিশচন্দ্র (যুধিষ্ঠির ও দুর্যোধন), কেদার চৌধুরী (শ্রীকৃষ্ণ ও দ্রোণাচার্য), অমৃত মিত্র (ভীম ও গর্গ), মহেন্দ্রলাল বসু (অর্জুন ও জয়দ্রথ), অমৃতলাল মুখোপাধ্যায় (অভিমন্যু) এবং  বিনোদিনী (উত্তরা)। তবে এই নাটকটি জনপ্রিয় হয় নি।

এই সময়ের সকল নাটক জনসমাদর না পেলেও- বিনোদিনী ও কুসুমকুমারীর গান দর্শকদের মাতিয়ে দিয়েছিল। অনেকে নাটক এঁদের গান শোনার জন্যই আসতেন। কুসুমকুমারী, এই দুজনের অভিনয় ও গান দর্শকদের মাতিয়ে দিয়েছিল। তাই ‌'অভিমন্যুবধ' দর্শক টানতে ব্যর্থ হলে প্রতাপঠাদ গিরিশকে ডেকে বলেছিলেন- 'বাবু, যব দুসরা কিতাব লিখগে তব ফির ওহি দুনো লেড়কা ছোড় দেও'- অর্থাৎ যে নাটকই লেখ না কেন, এ দুনো লেড়কা লব-কুশকে মঞ্চে এনে ছেড়ে দিতে হবে।  এরপর গিরিশচন্দ্র  রচনা করেছিলেন 'লক্ষ্মণ বর্জন' এবং 'ধীবর ও দৈত্য' নামক দুটি নাটক। নাটক দুটি একসঙ্গে অভিনীত হয়েছিল ৩১ ডিসেম্বর। এ নাটক দু্টিও দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়েছিল।

১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতেই সাফল্য এসেছিল পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস নাটকের মাধ্যমে। এই নাটকটি অভিনীত হয়েছিল ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জানুয়ারি। কীচক ও দুর্যোধনের ভুমিকায় গিরিশচন্দ্রর অভিনয় সবার প্রশংসা অর্জন করেছিল। এই নাটকে অন্যান্য চরিত্রে মধ্যে যাঁদের অভিনয় বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছিল, তাঁরা হলেন বিনোদিনী (দ্রৌপদী), মহেন্দ্র বসু (অর্জুন), অমৃত মিত্র (ভীম)। খুব আকর্ষণীয় অভিনয় করলেন। পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাসের বিপুল জনসমাদর গিরিশকে নাট্যকার, অভিনেতা ও নাট্যপরিচালক হিসেবে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল।

এই সময় গিরিশচন্দ্র  আভিনেতাদের মাইনে ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। প্রতাপচাঁদ তা নাকচ করে দেন। বরং থিয়েটারের নিয়মনীতির আরো কঠোর করেন। এমনকি  বিনোদিনীর মতো অভিনেত্রীদের হাজিরা কয়েকদিন কামাই করলে নেতন কাটার চেষ্টা করা হয়েছিল। এসব কারণে গিরিশচন্দ্র ন্যাশনাল থিয়েটার ত্যাগ করেন। এই সময় তাঁর সাথে সাথে আর যাঁরা এই থিয়েটার ছেড়েছিলেন, তাঁরা হলেন- অমৃত মিত্র, অঘোরনাথ পাঠক, উপেন্দ্র মিত্র,  বিনোদিনী, কাদম্বিনী, ক্ষেত্রমণি, নীলমাধব চক্রবর্তী প্রমুখ। ন্যাশনাল থিয়েটারে গিরিশ ও তার সহযোগীদের শেষ অভিনয় ছিল ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারিতে অভিনীত রাবণবধ।

১৮৮৩ ফেব্রুয়ারিতে ন্যাশনাল থিয়েটারে রাবণবধ নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার পর, গিরিশচন্দ্র ঘোষ সদলবলে বেরিয়ে এসেছিলেন। এই দলে অন্যান্য যাঁরা ছিলেন তাঁরা হলেন- অমৃত মিত্র, অঘোরনাথ পাঠক, উপেন্দ্র মিত্র, বিনোদিনী, কাদম্বিনী, ক্ষেত্রমণি, নীলমাধব চক্রবর্তী প্রমুখ। গিরিশচন্দ্র এঁদের নিয়ে তৈরি করেছিলেন 'ক্যালকাটা স্টার কোম্পানী' নামে একটি দল।

১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের এঁরা ২৮ ও ৩১ মার্চ এবং ১৭ এপ্রিল বেঙ্গল থিয়েটার মঞ্চ ভাড়া নিয়ে তাঁদের নিজস্ব নাট্ক মঞ্চস্থ করেছিলেন। এঁরা তখন নিয়মিত নাট্যচর্চা করার জন্য একটি স্থায়ী মঞ্চের সন্ধানে ছিলেন। এই দলের বিনোদিনী ন্যাশনাল থিয়েটারে থাকাকালে অভিনয়ে, নাচে, গানে এবং রূপে কলকাতার নাট্য-অঙ্গনকে মোহিত করে রেখেছিলেন। এই সময় রাজস্থানের গুর্মুখ রায় মুসাদ্দি (পিতা ছিলেন গণেশদাস মুসাদ্দি) বিনোদিনীকে রক্ষিতা হিসেবে পাওয়ার কামনায় অধীর হয়ে উঠেছিলেন। এই কামনা থেকে গুর্মুখ রায় গিরিশচন্দ্রের কাছে একটি প্রস্তাব নিয়ে আসেন। প্রস্তাবটি হলো- যদি বিনোদিনী তাঁর রক্ষিতা হতে রাজি থাকেন, তাহলে গিরিশচন্দ্র ঘোষের দলের জন্য একটি স্থায়ী নাট্যমঞ্চ তৈরি করে দেবেন। প্রথমে গুর্মুখ রায়ের প্রস্তাবে বিনোদিনী প্রথমে রাজি হন নি। কারণ তখন তিনি অন্য বাবুর কাছে বাঁধা ছিলেন। এ নিয়ে আগের বাবুর সাথে গুর্মুখ রায়ের বিবাদের বিষয় জানা যায় বিনোদিনীর 'আমার কথা' গ্রন্থ থেকে। গিরিশচন্দ্র অনুরোধে এবং মঞ্চের নেশায় তিনি এই প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন। তাছাড়া সবাই কথা দিয়েছিলেন যে, বিনোদিনীর নামানুসারে এই নাট্যশালার নাম হবে 'বি-থিয়েটার'।

এরপর কলকাতার ৬৮ নম্বর বিটন স্ট্রিটে গুর্মুখ রায় (গুর্মুখ রায় মুসদ্দি) একটি খালি জায়গা ইজারা নিয়ে এই মঞ্চটি তৈরি করেছিলেন। কাঠ-টিনের পরিবর্তে বাড়িটি তৈরি হয়েছিল ইট দিয়ে। বিনোদিনীকে ছিলেন নিষিদ্ধ পল্লীর মেয়ে। সে কারণ, নির্মাতার মনে করেছিলেন যে,  নিষিদ্ধ পল্লীর মেয়ের নামে মঞ্চ তৈরি হলে, সেখানে দর্শকরা আসবেন না। তাছাড়া  গিরিশচন্দ্র তাঁর 'ক্যালকাটা স্টার কোম্পানী' নামকে পরিবর্তন করে স্টার থিয়েটার করার ক্ষেত্রে আগেই মনস্থির করে রেখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত বাড়িটি রেজিস্ট্রি করার সময় এর নাম পাল্টে রাখা হয়েছিল- স্টার থিয়েটার। এই থিয়েটারের মালিক ছিলেন গুর্মুখ রায়, কিন্তু কার্যত এর সর্বেসর্বা ছিলেন গিরিশচন্দ্র

১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ২১ জুলাই এই স্টার থিয়েটারের যাত্রা শুরু হয়েছিল। প্রথম নাটক ছিল- গিরিশচন্দ্রের রচিত দক্ষযজ্ঞ। এই নাটকে যাঁরা অভিনয় করেছিলেন, তাঁরা হলেন- দক্ষ (গিরিশচন্দ্র), মহাদেব (অমৃতলাল মিত্র), দধীচি (অমৃতলাল বসু),  ব্রহ্মা (শীলমাধব চক্রবর্তী) বিষ্ণু (উপেন্দ্রনাথ মিত্র), সতী ( বিনোদিনী), তপস্বিনী (ক্ষেত্রমণি), প্রসৃতি (কাদস্বিনী)।

গুর্মুখ রায়ে মালিকাধীনে স্টারে অভিনীত হয়- দক্ষযজ্ঞ (২১ জুলাই), ধ্রুবচরিত (১১ আগস্ট), রামের বনবাস (২৯ আগস্ট), সীতার বনবাস (২৬ সেপ্টেম্বর), সীতাহরণ, চক্ষুদান (রামনারায়ণ রচিত ২৭ অক্টোবর), মেঘনাদবধ (নধুসূদনের ২১ নভেম্বর), সধবার একাদশী (৫ ডিসেম্বর), রাবণবধ (৮ ডিসেম্বর), নলদময়ন্তী (১৫ ডিসেম্বর), চোরের উপর বাটপাড়ি (অমৃতলালএর রচিত, ২৬ অক্টোবর)। এর ভিতরে দীনবন্ধু, রামনারায়ণ, অমৃতলালের একটি করে নাটক ছাড়া বাকি সবগুলোর রচয়িতা ছিলেন গিরিশচন্দ্র। এছাড়া মেঘনাদবধের নাট্যরূপও দিয়েছিলেন গিরিশচন্দ্র। এগুলোর ভিতরে দর্শকসমাদর পেয়েছিল দক্ষযজ্ঞ, ধ্রুবচরিত্র ও নলদময়ন্তী। ধ্রুবচরিত্র নাটকেই গিরিশ প্রথম গিরিশচন্দ্র চরিত্র সৃষ্টি করেন এবং অমৃতলাল বসু সেই চরিত্রে অসামানা অভিনয় করে তাকে প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া এই নাটকে ধ্রুব চরিত্রে ভূষণকুমারী গানে ও অভিনয়ে মাতিয়ে দিয়েছিলেন।

১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে  গুর্মুখ রায় আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের লোকজনের পীড়নে এবং ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে স্টারের স্বত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বিনোদিনীর জন্য তৈরি এই থিয়েটারের স্বত্ব দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গিরিশচন্দ্র ও অন্যান্যদের প্রতিবন্ধকতায় তা বিনোদিনী কোনো স্বত্ব পান নি। গুর্মুখ রায় হতাশ হয়ে মাত্র এগারো হাজার টাকায় স্টার থিয়েটারের স্বত্ব বিক্রি করে দেন চারজনের নামে। এঁরা হলোন অমৃতলাল মিত্র. দাসচরণ নিয়োগী, হরিপ্রসাদ বস ও অমতলাল বসু।

চার জন নতুন মালিকের তত্ত্বাববধানে স্টার নতুনভাবে শুরু হলেই  গিরিশচন্দ্র সর্বের্বা হিসেবেই ছিলেন। তিনি ছিলেন ম্যানেজার, অভিনয় শিক্ষক, নাট্যকার। ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে পুরানো নাটকের সাথে নতুন যে সকল উল্লেখযোগ্য নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল, সেগুলো হলো- অভিমন্যুবধ (১৬ মার্চ), কমলেকামিনী (২৯ মার্চ), বৃষকেতু, হীরার ফুল (২৬ এপ্রিল), চাটুজ্জে-বাঁডুজ্জে (অমৃতলালের রচিত, ২৬ এপ্রিল), আদর্শ সতী (অতুল মিত্রের রচিত, ২১ মে), শ্রীবৎসচিন্তা (৭ জুন), চৈতন্যলীলা (২ আগস্ট), প্রহ্লাদ চরিত্র (২২ নভেম্বর), বিবাহ বিভ্রাট (অমৃতলালের রচিত, ২২ নভেম্বর)। এই বছরেও অমৃতলাল বসু, অতুলকৃষ্ণ মিত্র ও দীনবন্ধুর একটি করে নাটক ছাড়া বাকি সব নাটকই গিরিশচন্দ্রে লেখা।

এই বছরে নতুন নাটকের মধ্যে গিরিশচন্দ্রের 'চৈতন্যলীলা'র অভিনয় নানা দিক দিয়ে উল্লেখযোগ্য। প্রথমত পুরাণের বিষয় নিয়ে এতদিন গিরিশচন্দ্র  নাটক লিখেছেন। চৈতন্যলীলায় তিনি শ্রীচৈতন্যের জীবনাশ্রয়ী ধর্মকথা উপস্থাপন করেছিলেন। এই নাটকে  নিমাইয়ের ভূমিকায় বিনোদিনী এবং নিতাইয়ের ভূমিকায় বনবিহারিণী, নৃত্যে গীতে ও অভিনয়ে সবাইকে মুগ্ধ করে দিলেন। এই নাটকে সুরকার ও নৃত্য শিক্ষক ছিলেন বেশীমাধব অধিকারী। চৈতন্যলীলার ২১ সেপ্টেম্বরে অভিনয় দেখতে এসেছিলেন পরমহংস রামকৃষ্ণদেব। তিনি এই নাটক দেখে অভিভূত হন এবং সবাইকে আশীর্বাদ করেন। বিশেষ করে চৈতন্যের চরিত্রে বিনোদিনী-কে বিশেষভাবে প্রশংসা ও আশীর্বাদ করেন। এই সময় রামকৃষ্ণ পরমহংসসের সাথে তাঁর পরিচয় ঘটে। ধীরে ধীরে তিনি রামকৃষ্ণ পরমহংসেরের প্রিয়পাত্র, ভক্ত, শিষ্যে পরিণত হন।

১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে এই থিয়েটারের উল্লেখযোগ্য পরিবেশনা ছিল-  চৈতন্যলীলা, ২য় ভাগ (১০ জানুয়ারি), দোললীলা (১ মার্চ), মৃণালিনী (১ এপ্রিল), পলাশীর যুদ্ধ (২৬ এপ্রিল), প্রভাস যজ্ঞ (৩০ মে), বুদ্ধদেবচরিত (১৯ সেপ্টেম্বর)। এই বছরেও প্রায় সব নাটক গিরিশচন্দ্রের রচিত এবং সবগুলোই ছিল পৌরাণিক। ব্যতিক্রম ছিল বঙ্কিমের উপন্যাসের নাট্যরূপ, নবীনচন্দ্র সেনের কাব্যের নাট্যরূপ।  অবশ্য এই দুটিরই নাট্যরূপ দিয়েছিলেন গিরিশচন্দ্রচৈতন্যলীলা প্রথম ভাগের অভিনয়ের সার্থকতায় উৎসাহিত হয়ে তিনি এর দ্বিতীর ভাগ নিয়ে রচনা করেন। তবে ততটা দর্শক সমাদর পায় নি। প্রভাস যজ্ঞ কিছুটা দর্শক টানতে ওএরেছিল। 'বুদ্ধদেবচরিত'-এ দর্শক-সমাদর পেয়েছিল। স্যার এডুইন আর্নল্ডের কাব্য 'লাইট অফ এশিয়া* অবলম্বন করে গিরিশ এই নাটকটি লিখিছিলেন। এতে অভিনয় করেছিলেন- সিদ্ধার্থ-অমৃতলাল মিত্র, শুদ্ধোধন-উপেন্দরনাথ মিত্র, বিদূষক-শিবচন্দ্র ভট্রাচার্য, সুজাতা- প্রমদাসুন্দরী, গোপা- বিনোদিনী। সৌভাগ্যবশত স্যার আর্নল্ড সে সময়ে কলকাতায় ছিলেন। তিনি অভিনয় দেখে নাটকটির উচ্ছৃসিত প্রশংসা করে সংবাদপত্রে চিঠিপত্রে।

১৮৮৬  খ্রিষ্টাব্দে এই থিয়েটারের উল্লেখযোগ্য পরিবেশনা ছিল- বিল্বমঙ্গল ঠাকুর (১২ জুন), বেল্লিকবাজার (২৬ ডিসেম্বর), কমলেকামিনী (২৬ ডিসেম্বর)। এছাড়া আগের নাটকগুলিও ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অভিনয় করা হয়েছিল।  এই বছরেও প্রায় সব নাটক ছিল গিরিশচন্দ্রের রচিত। এর ভিতরে তবে সবচেয়ে সফল প্রযোজনা ছিল বিল্বমঙ্গল ঠাকুর। 

১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি  বিনোদিনী আনুষ্ঠানিকভাবে স্টার থিয়েটার ত্যাগ করেন। ২১ মে গিরিশচন্দ্রের  রূপসনাতন (২১ মে)অভিনীত হয়। এরপর ৩১ জুলাই অভিনীত হয় বুদ্ধদেবচরিত ও বেল্লিককবাজার। বেল্লিককবাজার অভিনয় শেষে আনুষ্ঠিকাভাবে বিদায় ভাষণ দিয়ে অমৃতলাল বসু স্টার ত্যাগ করেন। এই বছরে ধনকুবের মতিলাল শীলের নাতি গোপাল লাল শীল থিয়েটার করার সখে কৌশলে স্টার থিয়েটারের জমি কিনে নেন এবং স্টারের স্বত্বাধিকারীদের উচ্ছেদের নোটিশ দেওয়া দেন। ফলে বাধ্য হয়ে ত্রিশ হাজার টাকায় এই থিয়েটার বাড়ি গোপাল শীলের কাছে হস্তান্তর করেন। এই বাড়িতে বাড়িতে গোপাল লাল শীল খুললেন এমারেন্ড থিয়েটার।

১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ৮ অক্টোবর এমারেল্ড উদ্বোধন হয়েছিল কেদার চৌধুরীর লেখা 'পাণ্ডব নির্বাসন' নাটক দিয়ে। দৃশ্যপট ও সাজসজ্জার দায়িত্ব পাল করেছিলেন জহরলাল ধর এবং সুকুমারী ও শশিভৃষণ দেব। এই বছরের ২৬ অক্টোবর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের  'বউ ঠাকুরানীর হাট' উপন্যাসের নাট্যরূপ 'রাজা বসন্ত রায়' মঞ্চস্থ হয়। নাট্যরূপ দিয়েছিলেন কেদার চৌধুরী এবং এর আগেই  ন্যাশনাল থিয়েটারে ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩ জুলাই অভিনীত হয়েছিল। এরপর মঞ্চস্থ হয় আনন্দকানন, মদনভষ্ম প্রভৃতি নাটক। সব মিলিয়ে এই বছরে এমারেল্ড আর্থিকভাবে সুবিধা করতে ব্যর্থ হয়। তাই গোপাল শীল কেদার চৌধুরীর পরিবর্তে গিরিশচন্দ্রকে ম্যানেজার হিসেবে নিয়ে আসেন। গিরিশচন্দ্র প্রথমে সম্মত না হলেও, পরে স্টার থিয়েটারের স্বত্বাধিকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেই তিনি এমারেন্ডে যোগ দিলেন। গিরিশ এমারেন্ডে যোগ দিয়েছিলেন ৫ বছরের চুক্তিতে। এই চুক্তি অনুসারে গিরিশচন্দ্র ২০ হাজার টাকার বোনাস এবং মাসিক ৩৫০ টাকা বেতন পাবেন।

স্টার থিয়েটারের নাট্যদল বাড়িটি ছেড়ে দিলেও, নামের অধিকার ছাড়েন নি। তাঁরা নতুন করে অভিনয় শুরু করেন হাতী বাগান থেকে। স্টার থিয়েটারের  মালিক অমৃতলাল বসু, দাসুচরণ নিয়োগী, অমৃতলাল মিত্র এবং হরিপ্রসাদ বসু, নতুন থিয়েটারের জায়গা খোঁজা শুরু করেন। অবশেষে হাতিবাগানের রণেশকৃষ্ণ দেবের ত্রিশ কাঠা জমি ক্রয় করতে সক্ষম হন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ৬৮ নম্বর বিডন স্ট্রিটের স্টার থিয়েটার-বাড়ি ত্যাগ করা সময় দায়ে পড়ে  গিরিশচন্দ্র এমারেল্ড থিয়েটারের সাথে নাটক রচনার চুক্তি করেছিলেন বটে। কিন্তু স্টারের টানে গোপনে যোগাযোগ রেখেছিলেন। গিরিশচন্দ্র এমারেল্ড থিয়েটারের সাথে চুক্তিরর সূত্রে পাওয়া ২০ হাজার টাকা থেকে ১৬ হাজার টাকা স্টার থিয়েটারকে বিনাশর্তে দিয়ে দেন নতুন বাড়ি তৈরির জন্য। থিয়েটার বাড়ি তৈরি হওয়ার পর, গিরিশচন্দ্র গোপনে এদের জন্য নাটক লিখেছিলেন।

১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ নভেম্বর গিরিশ এমারেল্ডের ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেছিলেন। তিনি রবীন্দ্রনাথ এবং কেদার চৌধুরীর পূর্ব অভিনীত নাটকগুলি বন্ধ করে দেন। এর পরিবর্তে  তিনি 'নীলদর্পণ' নাটক দিয়ে গিরিশ এখানে কাজ শুরু করলেন। তারপরে মঞ্চস্থ করেন সীতাহরণ, দীনবন্ধুর নবীন তপস্থিনী, গিরিশের মায়াতরু। এর ভিতরে শেষের দুটি নাটক খুবই জনসমাদর লাভ করেছিল।

প্রতাপ জহুরির ন্যাশনাল থিয়েটারে থাকার সময়, গিরিশচন্দ্র অনেকটা দায়ে পড়ে নাটক লিখেছিলেন। এবারে তিনি এমারেল্ডকে বাঁচানোর জন্য নাটক রচনা শুরু করেছিলেন। এই সময়ের যে সকল উল্লেখযোগ্য নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল, সেগুলো হলো- 'সীতার বনবাস'  বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃণালিনী উপন্যাসের নাট্যরূপ এবং মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্যের নাট্যরূপ, নিজের নাটক 'পূর্ণচন্দ্র' করলেন। এ সকল নাটকের মাধ্যমে এমারেল্ড জনন্দিত হয়ে উঠেছিল। এই সময়েই  গিরিশচন্দ্রের সঙ্গে অর্ধেনদুশেখর মুস্তাফিও যুক্ত হলেন। আবর নবীন তপস্বিনী নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। এই নাটকে জলধরের ভূমিকায় অর্ধেন্দু অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন। এই সময়ের অন্যান্য নাটকের ভিতরে ছিল- দীনবন্ধু মিত্রের 'নীলদর্পণ” ও 'জামাইবারিক'। জনসমাদর পেয়েছিল মধুসূদন দত্তের দুটি প্রহসন 'একেই কি বলে সভ্যতা' ও 'বুড়ো শালিখের ঘাড়ে রৌ'। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস আনন্দমঠ, মৃণালিনী, বিষবৃক্ষ, কৃষ্ণকান্তের উইল-প্রভৃতির নাট্যরূপ অভিনীত হয়ে হয়েছিল সাফল্যের সাথে। ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ সেপ্টেম্বর অর্ধেন্দুশেখর এমারেল্ড ছেড়ে চলে যান।

১৮৮৭-৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে এমারেল্ডে গিরিশচন্দ্রে রচিত সীতার বনবাস, সীতাহরণ, মায়াতরু, পূর্ণচন্দ্র , বিষাদ, অভিনীত হয়েছিল। এমারেল্ডের এই রমরমা অবস্থা থাকা সত্বেই, অজানা কারণে গোপাল লাল এমারেল্ড ছেড়ে দিলেন। ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি ইজারা দিয়েছিলেন মতিলাল সুর, পণ্ডিত হরিভূষণ ভট্টাচার্য, পুর্ণচন্দ্র ঘোষ, ব্রজনাথ মিত্রের কাছে। গোপাললালের চলে যাওয়ার পর, গিরিশের সঙ্গে গোপাললালের চুক্তি আর কার্যকরী রইলো না। ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩ ফেব্রুয়ারি  গিরিশচন্দ্র এমারেল্ডে ত্যাগ কর স্টার থিয়েটারে যোগদান করেন।

১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মে শুক্রবার ফুলদোলের দিন (১৩ জ্যৈষ্ঠ, ১২৯৫) মহাসমারোহে হাতীবাগানের নবনির্মিত দ্বিতীয় স্টার থিয়েটার উদ্বোধন হয়। প্রথম নাটক ছিল নাটক গিরিশচন্দ্রের লেখা 'নসীরাম'। উল্লেখ্য এমারেন্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকায় গিরিশচন্দ্র লুকিয়ে খালপারে বসে এই নাটকটি লিখে দিয়েছিলেন। এই কারণে এই নতুন নাটকের রচয়িতা নাম দেওয়া হয়েছিল ‌'নসীরাম'।
এতে অভিনয় করেছিলেন- নসীরাম (অমৃতলাল বসু), অনাথনাথ (অমৃতলাল মিত্র), শম্ভুনাথ (অমৃতলাল মুখোপাধ্যায়), কাপালিক (অঘোর পাঠক), বিরজা (কাদম্বিনী), সোনা (গঙ্গামণি), পাহাড়িয়া বালকের ভূমিকায় (তারাসুন্দরী)। এটিন ছিল তারাসুন্দরীর  প্রথম মঞ্চাভিনয়। উদ্বোধনকালে অমৃতলাল বসু গিরিশচন্দ্র লেখা কবিতা পাঠ করেন।

প্রথম বছর গিরিশচন্দ্র স্টারে ছিলেন না, কিন্তু তাঁর রচিত পুরনো নাটকগুলোই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এখানে অভিনীত হয়েছিল। এগুলোর ভিতরে ছিল চৈতন্যলীলা, বিল্বমঙ্গল ঠাকুর, সীতার বনবাস, নলদময়ন্তী, রাবণবধ। গিরিশচন্দ্র ছাড়া এই মঞ্চে অভিনীত 'সরলা' অভাবনীয় সাড়া জাগিয়েছিল। 'সরলা' ছিল তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্বর্ণলতা' উপন্যাসের অমৃতলাল বসু-কৃত নাট্যরূপ। নাটকটি অভিনীত হয়েছিল ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ২২ সেপ্টেম্বর। এই নাটকে অসামান্য অভিনয় করেছিলেন- বিধুভূষণ (অমৃতলাল মিত্র), গদাধর (অমৃতলাল মুখোপাধ্যায়), শশিভৃষণ (নীলমাধব চত্রবর্তী), সরলা (কিরণবালা), গোপাল (তারাসুন্দরী), শ্যামা (গঙ্গামণি), প্রমদা (কাদম্বিনী)।

এমারেল্ড ছেড়ে দিয়ে গিরিশচন্দ্র স্টারে চলে আসেন ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩ ফেব্রুয়ারি। আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেছিলেন ২৭ এপ্রিল। এই দিনই অভিনীত হয়েছিল- তাঁর রচিত 'প্রফুল্ল'। পৌরাণিক কাহিনি ভিত্তিক নাটকের বেড়াজাল ভেঙে এই নাটক লিখেছিলেন 'সরলা' নাটকের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে। এই নাটকটির জনপ্রিয়তা 'সরলা' নাটকের রেকর্ডকে অতিক্রম করেছিল। এই নাটকে  গিরিশচন্দ্র অভিনয় করেন নি। অন্যান্য যাঁরা এতে অভিনয় করেছিলেন, তাঁরা হলেন- অমৃতলাল মিত্র (যোগেশ), অমৃতলাল বসু (রমেশ), কাশীনাথ চট্টোপাধ্যায় (সুরেশ), অমৃতলাল মুখোপাধ্যায় (ভজহরি), মহেন্দ্রনাথ চৌধুরী (পীতাম্বর), শ্যামাচরণ কুণ্ড (কাঙালিচরণ), নীলমাধব চক্রবর্তী (মদন ঘোষ), ভূষণকুমারী (প্রফুল্প), গঙ্গামণি (উমাসুন্দরী), কিরণবালা (জ্ঞানদা), টুম্পামণি (জগমণি)।

১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রফুল্ল ছাড়া আর অভিনীত হয়েছিল গিরিশচন্দ্রের প্রায় সব পুরনো নাটক এবং অমৃতলালের 'তাজ্জব ব্যাপার‌'। গিরিশচন্দ্রের নতুন সামাজিক নাটক 'হারানিধি' অভিনীত হয়েছিল ৭ সেপ্টেম্বর। কিন্তু সেরকম দর্শকনন্দিত হয় নি।

১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের অধিকাংশ নাটকই ছিল গিরিশচন্দ্রের রচিত পুরনো নাটক। জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন উপলক্ষে গিরিশচন্দ্র মলিনাবিকাশ (গীতিনাট্য) এবং মহাপুজা  মঞ্চস্থ হয়েছিল। 'মলিনাবিকাশ' গীতিনাট্যে বাংলা মঞ্চে প্রথম দ্বৈত-নৃত্যগীতের প্রচলন হয়। এই নাচে অংশগ্রহণ করেছিলেন বিকাশ (সুকুমারী) এবং মলিনা (মানদাসুন্দরী)। এর সুরকার ছিলেন রামতারণ সান্যাল এবং নৃত্যশিক্ষায় ছিলেন কাশীনাথ চট্টোপাধ্যায়। এই বছরে  গিরিশচন্দ্রের পুত্র সুরেন্দ্রনাথ (দানী) চণ্ড নাটকের রঘুদেবজীর চরিত্রে প্রথম অভিনয় শুরু করেন। এই বছরের ১১ মার্চ স্টারের বিখ্যাত অভিনেতা অমৃতলাল মুখোপাধ্যায় এবং এপ্রিল মাসে অভিনেত্রী কিরণবালার মৃত্যু হয়। এই দু‌জনের আকস্মিক মৃত্যুর কারণে তিন মাস স্টারে অভিনয় বন্ধ ছিল।

অমৃতলাল বসুর নতুন নাটক 'তরুবালা' সাফল্য লাভ পেয়েছিল। ঠাকুরদা চরিত্রে নীলমাধব চক্রবর্তী এবং ঠানদিদি‌র ভূমিকায় গঙ্গামণি এবং তরুবালার ভূমিকায় প্রমদাসুন্দরী খ্যাতি অর্জন করেন।

১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দের শুরু থেকে  গিরিশচন্দ্রের সাথে স্টারের কর্তৃপক্ষের মনোমালিন্য শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁকে ম্যানেজার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় ১৫ ফেব্রুয়ারি। এই সময় গিরিশচন্দ্রের সাথ অন্যান্য যাঁরা স্টার ত্যাগ করেছিলেন, তাঁরা হলেন- নীলমাধব চক্রবর্তী, অঘোরনাথ পাঠক, প্রবোধচন্দ্র ঘোষ, দানীবাবু, শরৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, মানদাসুন্দরী প্রমুখ। স্টার ত্যাগের পর নীলমাধব চক্রবর্তীর নেতৃত্বে সিটি থিয়েটার খোলা হয়। এই সময় গিরিশচন্দ্র অন্তরাল থেকে এঁদের সাহায্য করেছিলেন। এই বছরে সিটি থিয়েটারে গিরিশচন্দ্রের নাটকগুলো অভিনীত হতে থাকলে স্টার কর্তৃপক্ষ মামলা করে। মামলায় স্টার হেরে যায়। এই সময় বিচারপতি উইলসন তাঁর রয়ে উল্লেখ জরেন যে,- কোনো মুদ্রিত নাটক বিক্রয় করা শুরু হলে, তা বিনা বাধায় সকল থিয়েটারই মঞ্চস্থ করতে পারবে।

গিরিশচন্দ্র চলে যাওয়ার পর ম্যানেজার হন অমৃতলাল বসু। মাসিক একশো টাকা বেতনে ১৫ ফেব্রুয়ারি নাট্যকার হিসেবে যোগ দেন রাজকৃষ্ণ রায়। তাই ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে গিরিশচন্দ্রের নাটকের পরিবর্তে রাজকৃষ্ণ রায়ের নাটকগুলো অভিনীত হতে থাকে। তাঁর রচিত 'সম্মতি সঙ্কট', 'নরমেধ যজ্ঞ', 'লায়লা-মজনু' প্রভৃতি নাটকগুলো বেশ ভালোই সমাদৃত হয়েছিল।

১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার ৬ নম্বর বিটন স্ট্রটে নাগেন্দ্রভূষণ মুখোপাধ্যায়ের অর্থায়নে মিনার্ভা থিয়েটার তৈরি হয়েছিল। নাট্যদল তৈরি ও অভিনয়ের যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ। এঁর সাথে অভিনয় শিক্ষক হিসেবে যুক্ত ছিলেন অর্ধেন্দু শেখর। এছাড়া অভিনয় শিল্পী হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন- দানীবাবু, চুনিলাল দেব, নিখিল দেব, নীলমণি ঘোষ, কুমুদনাথ সরকার, অঘোরনাথ পাঠক, অনুকুল বটব্যাল, তিনকড়ি দাসী, প্রমদাসু্ন্দরী ও পরমাসুন্দরী। সঙ্গীত শিক্ষক যুক্ত হয়েছিলেন দেবকণ্ঠ বাগচী। স্টেজ ম্যানেজার ছিলেন ধর্মদাস সুর।

১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ জানুয়ারি, এর যাত্রা শুরু হয়েছিল শেক্সপিয়ারের '‌ম্যাকবেথ' নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার মধ্য দিয়ে। নাটকটি অনুবাদ করেছিলেন-গিরিশচন্দ্র ঘোষ। মঞ্চের ড্রপসিন এঁকেছিলেন ইংরেজ চিত্রকর মি. উইলিয়ার্ড এবং দৃশ্যসজ্জায় ছিলেন পিমসাহেব। অভিনয়ে অংশগ্রহণ করেন গিরিশচন্দ্র (ম্যাকবেথ), তিনকড়ি দাসী (লেডি ম্যাকবেথ), দানীবাবু (ম্যালকম), কুমুদ সরকার বেঙ্কো), অঘোর পাঠক (ম্যাকডাফ), প্রমদাসুন্দরী (লেডি ম্যাকডাফ), অর্ধেনদুশেখর (দ্বারপাল, ডাস্তার, হত্যাকারী ও
ডাকিনি)। পত্রপত্রিকায় এই নাটকের অভিনয় দারুণ সুখ্যাতি লাভ করলেও, সাধারণ দর্শক এ নাটক সহজে গ্রহণ করতে পারে নি। ফলে এই নাটকের দর্শক হ্রাস কমে যেতে থাকে। ফলে দশ রাত অভিনয়ের পর এই নাটকের অভিনয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে ১৩ জুলাই গিরিশচন্দ্রের প্রফুল্ল অভিনীত হয়। উল্লেখ্য একই দিনে মিনার্ভা থিয়েটার 'প্রফুল্ল' অভিনীত হয়েছিল মিনার্ভা থিয়েটারে যোগেশের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন গিরিশচন্দ্র। অন্যদিকে স্টারে যোগেশের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অমৃতলাল মিত্র। এই বছরে পুরানো নাটক মঞ্চস্থ করেই স্টার টিকেছিল।

১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জানুয়ারি অমৃতলাল বসুর নাট্যরূ্প দেওয়া রাজসিংহ অভিনীত হয়। এই বছরে ১৫ এপ্রিল গিরিশচন্দ্র মিনার্ভা থিয়েটার থেকে আবার স্টার থিয়েটারে ফিরে আসেন এবং ড্রামাটিক ডিরেক্টর হিসেবে যোগদান করেন। ২৬ সেপ্টেম্বর গিরিশচন্দ্রের রচিত নতুন নাটক 'কালাপাহাড়' মঞ্চস্থ হয়। এই নাটকে অভিনয় করেছিলেন গিরিশ (চিন্তামণি), অমৃত মিত্র (কালাপাহাড়), নগেন্দ্রবালা (ইমান)। নরীসুন্দরী (দোলনা), প্রমদাসুন্দরী (চঞ্চলা)। এই বছরে উল্লেখ্যযোগ্য অপর নাটকটি ছিল অমৃতলালের 'বৌমা'।

১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে গিরিশচন্দ্র নতুন নাটক পারস্যপ্রসূন অভিনীত হয়। ডিসেম্বর মাসে অভিনীত হয় তাঁর 'মায়াবসান' নামক  নতুন সামাজিক নাটক। এতে অভিনয় করেছিলেন-  এতে গিরিশচন্দ্র (কালীকিঙ্কর), দানীবাবু (হলধর), অক্ষয় কোঁঙার (গণপতি), তারাসুন্দরী (অন্নপূর্ণা), নরীসুন্দরী (রঙ্গিনী) ও নগেন্দ্রবালা (বিন্দু)।

১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে শুধু অমৃতলালের 'গ্রাম্য-বিভ্রাট' এবং  নতুন নাটক 'হরিশচন্দ্র' অভিনীত হয়। এই বছরেই আবার গিরিশচন্দ্রের সঙ্গে স্টার-কর্তৃপক্ষের মতান্তর  হয়। ১১ মের পরে  গিরিশচন্দ্র স্টার ছেড়ে দেন। এরপর তিনি আর কখনো স্টার থিয়েটারে ফিরে আসেন নি।

এর পর গিরিশচন্দ্রের পরিচালনায় মঞ্চস্থ হয়েছিল 'মুকুলমঞ্জুরা' ও 'আবুহোসেন'। এই দুটি নাটক ছিল নাচে গানে ভরপুর। ফলে নাটক দুটি সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এই সাফল্যের সূত্রে মিনার্ভা থিয়েটার বিপুল সুখ্যাতি লাভ করেছিল। এরপর এই মঞ্চে একের পর এক নাটক মঞ্চ-সফল নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। এর ভিতরে  উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো ছিল-

উল্লেখযোগ্য। উল্লেখ্য যে 'বড়দিনের বখশিস' ও 'পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস' অভিনয়ের সময় ব্রিটিশ পুলিশ নাটকের অভিনয় বন্ধ করার চেষ্টা করে। এর ভিতরে মিনার্ভা থিয়েটারের মালিক নাগেন্দ্রভুষণের সাথে গিরিশ ঘোষের আর্থিক বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য শুরু হয়। এই কারণে ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে গিরিশ ঘোষ মিনার্ভা থিয়েটার ত্যাগ করেন। 

১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দেরে ১৫ এপ্রিল গিরিশচন্দ্র আবার স্টারে ফিরে আসেন। এবং তিনি নতুন নাটক 'কালাপাহাড়' রচনা করেন।

 ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
 
সূত্র: