ওরিয়েন্টাল সেমিনারী স্কুল
খ্রিষ্টীয় ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে
কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত
একটি স্কুল।
১৮২৯খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন বিশিষ্ট
শিক্ষাবিদ
গৌরমোহন আঢ্য
ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং পরিচলনায় স্কুল স্থাপন করেন। শুরু দিকে এই স্কুলের নাম ছিল-
'গৌরমোহন আঢ্যের স্কুল'। এই স্কুলে তৎকালীন সরকারি শিক্ষানীতি কার্যকর ছিল না। কেবল
হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা এই স্কুলে শিক্ষাগ্রহণে সুযোগ পেতো। সে সময়ে ইংরেজি
শিক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের স্কুল গড়ে উঠেছিল। সেই ধর্মীয় শিক্ষা দান করা হতো। এই
বিদ্যালয়ে ইংরেজি শিক্ষা প্রাধান্য পেয়েছিল। তেব গৌরমোহন আঢ্য তাঁর স্কুলে ধর্মীয় প্রভাব ব্যতিরেকে ইংরেজি শিক্ষার
পদ্ধতি চালু করেছিলেন।
স্কুলটি
প্রথমে বেঁশোহাটা অঞ্চলে ছিল। পরে তা জোড়াসাঁকোয় রবীন্দ্র সরণির (তৎকালীন চিৎপুর
সড়কে) উঠে আসে।
প্রথম দিকে শুধু ছেলেরাই এই স্কুলে পাঠ গ্রহণ করতো। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে ছাত্রীদের
জন্য একটি বিভাগ খোলা হয়েছিল।
১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দে
এই স্কুলের তত্ত্বাবধানে
ওরিয়েন্টাল থিয়েটার
নামে একটি নাট্যমঞ্চ
তৈরি হয়েছিল। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে দিকে এই থিয়েটার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দে শিশুদের জন্য প্রাতঃকালীন বিভাগটি চালু হয়।
১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা ভাষাকে শিক্ষার একটি মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা হয়। জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় চিৎপুর,
দক্ষিণ কলকাতা ও বেলঘড়িয়া অঞ্চলেও এই বিদ্যালয়ের শাখা স্থাপিত হয়।
এই বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির প্রথন সভাপতি ছিলেন এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র
উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর পর,
১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এই বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সভাপতি ছিলেন। ১৯২২
খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এরপর
১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের বাৎসরিক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছিলেন
এনি বেসান্ত।
১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার তদনীন্তন গভর্নর লর্ড কার্মিকল এই বিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন। সেই সময় এই বিদ্যালয়ের মাসিক বেতন ছিল ৩ টাকা। হিন্দু স্কুলের মাসিক বেতন ৫ টাকা হওয়ার দরুন ওরিয়েন্টাল সেমিনারি সেই সময় অধিক সংখ্যক ছাত্র টানতে সক্ষম হয়।
১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে এই স্কুলের উচ্চমাধ্যমিক স্তরে সহ-শিক্ষা চালু করা হয়েছে।
এই স্কুলের মূল ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন মার্টিন বার্ন। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে এই ভবনটিকে ঐতিহ্যবাহী ভবন
হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবনস্মৃতি গ্রন্থে
এই স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন
বলে উল্লেখ করেছিলেন। বিশিষ্ট রবীন্দ্র-জীবনীকার প্রশান্তকুমার পাল তাঁর রচিত
'রবিজীবনী' প্রথম খণ্ডে- একে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিভ্রাট হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই
গ্রন্থ প্রশান্তকুমার রবীন্দ্রনাথের শৈশবের স্কুলটি শনাক্ত করেছেন 'কলকাতা ট্রেনিং
সেন্টার' নামে। এই লেখা থেকেই জানা যায়, ওরিয়েন্টাল সেমিনারী স্কুলের প্রধান
শিক্ষক ঈশ্বরচন্দ্র নন্দী ঠাকুরবাড়ি গৃহশিক্ষক ছিলেন। এই শিক্ষকের কাছে পড়তেন
রবীন্দ্রনাথের দুই
অগ্রজ-
সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ
ঠাকুর।
সূত্র:
- ব্যানার্জি, হিরান্ময়, ঠাকুরবাড়ির কথা, (বাংলা), শিশু সাহিত্য সাংসদ
- রবিজীবনী। প্রথম খণ্ড। প্রশান্তকুমার পাল।
ভূর্জপত্র। কলকাতা। ১ বৈশাখ, ১৩৮৯।