পিছনে দাঁড়ানো, বাম থেকে, কাদম্বরী দেবী, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, জ্ঞানদানন্দিনী। উপবিষ্ট জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর।

সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(১৮৪২-১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দ)
বাঙালি কবি, সঙ্গীতজ্ঞ এবং ভাষাবিদ।

১৮৪২ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জুন (বুধবার, ২০শে জ্যৈষ্ঠ ১২৪৯ বঙ্গাব্দ) জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মায়ের নাম সারদাসুন্দরী দেবী পিতামাতার তৃতীয় সন্তান এবং দ্বিতীয় পুত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর মেজোভাই।

বাড়িতেই তাঁর বাল্যশিক্ষা হয় গৃহশিক্ষকের কাছে। এরপর কিছুদিন তিনি হিন্দু কলেজ লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন সেন্ট পল’স স্কুলে। কিন্তু শেষপর্যন্ত  হিন্দু কলেজ থেকে ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত প্রথম প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর বর্ধমানরাজ-প্রদত্ত এক বছরের জন্য মাসিক ১০ টাকা সিনিয়র স্কলারশিপ পেয়ে প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন।

১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে (১২৬৬ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ মাসে)যশোহরের নরেন্দ্রপুর গ্রাম নিবাসী অভয়াচরণ মুখোপাধ্যায় ও নিস্তারিণী দেবীর কন্যা জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর সাথে তাঁর বিবাহ হয়। এই বছরই তিনি দেবেন্দ্রনাথ ও কেশবচন্দ্র সেনের সাথে সিংহল (অধুনা শ্রীলঙ্কা) ভ্রমণ করেন।

১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ মার্চ তিনি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণের উদ্দেশ্যে বন্ধু মনমোহন ঘোষের সাথে ইংল্যান্ডে যান।

১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে তিনি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের জন্য নির্বাচিত হন। এরপর শিক্ষাধীন প্রশিক্ষণ (প্রবেশনারি ট্রেনিং) সমাপ্ত করে, ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে দেশে ফিরে আসেন। তিনি প্রথম নিয়োগ পান বোম্বাই প্রেসিডেন্সিতে। উল্লেখ্য সেকালে বোম্বাই প্রেসিডেন্সি গঠিত ছিল বর্তমান মহারাষ্ট্র, গুজরাট ও সিন্ধু প্রদেশের অংশ বিশেষ নিয়ে। তিনি প্রথম কর্মস্থল ছিল বোম্বাই প্রেসিডেন্সির আমেদাবাদ। এরপর বদলি চাকরির সূত্রে ভারতের বিভিন্ন স্থানে কাজ করেন। সে সময়ে চাকরির জন্য ঠাকুরবাড়ির সাথে তখন তাঁর প্রত্যক্ষ যোগাযোগ কমে গিয়েছিল। তবে তাঁর দুই অনুজ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৩৯-১৯২৫), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) ও বোন স্বর্ণকুমারী দেবী তাঁর সরকারি বাসায় অনেকবার গেছেন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকার সুবাদে তিনি বেশ কয়েকটি ভারতীয় ভাষা শেখেন। তিনি বাল গঙ্গাধর তিলকের গীতারহস্য ও তুকারামের অভঙ্গ কবিতাবলি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন।

১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই এপ্রিল অনুষ্ঠিত হিন্দু মেলা'র প্রথম অধিবেশনের সময় তিনি পশ্চিম ভারতে ছিলেন। ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দের দ্বিতীয় মেলায় তিনি উপস্থিত ছিলেন এবং মেলা উপলক্ষে তিনি 'মিলে সবে ভারতসন্তান, একতান গাহ গান' গানটি রচনা করেন। উল্লেখ্য এই গানটিকে ভারতের প্রথম জাতীয় সংগীতের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল।

১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে মহারাষ্ট্রের সাতারার জজ হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন। এই বৎসরে নাটোরে আয়োজিত দশম বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনেরও পৌরহিত্য করেন।

১৯০০-০১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতিত্ব করেন।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই জানুয়ারি [২৪ পৌষ ১৩২৯ বঙ্গাব্দ]  মৃত্যুবরণ করেন।

সন্তানসন্ততি

রচনাবলি