ন্যাশনাল থিয়েটার
খ্রিষ্টীয় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে প্রতিষ্ঠিত একটি নাট্যমঞ্চ
ও নাট্যদল।
১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে দিকে
কলকাতার
বাগবাজার অঞ্চলের যুবক সম্প্রদায়ের গঠিত একটি
বাগবাজার এমেচার থিয়েটার,
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে নাম পাল্টে 'শ্যামবাজার নাট্যসমাজ' নামে প্রতিষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ মে, শ্যামবাজারের রাজেন্দ্রলাল বাড়িতে
দীনবন্ধু মিত্রের 'লীলাবতী' নাটক
মঞ্চস্থ হলে, রাতারাতি বিখ্যাত দলে পরিণত হয়। প্রথম রাত্রির সফল অভিনয়ের পর
নাটকটির এতটাই প্রশংসিত হয়েছিল যে, পরপর কয়েকটি শনিবার তা একই মঞ্চে অভিনীত হয়েছিল।
পরে দর্শকদের জায়গা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। দর্শক নিয়ন্ত্রণের জন্য এঁরা
ইউনিভার্সিটি সার্টিফিকেট' দেখে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় এই নাটক দেখার
জন্য টিকেট বিক্রয়ের কথা ভাবা হয়েছিল। এই ভাবনা থেকে এঁদের উদ্যোগে ন্যাশনাল থিয়েটারের উদ্ভব হয়েছিল।
এই নতুন দল তৈরির সময় টিকিট বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
গিরিশচন্দ্র
এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছিলেন। তাঁর মতে উপযুক্ত সাজসরঞ্জাম
ব্যতীত ন্যাশনাল থিয়েটারের নামে টিকিট বিক্রয় করাট যথার্থ হবে না। কিন্তু দলের
অন্যান্য সদস্যরা
গিরিশচন্দ্র
এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধ মত দিলে তিনি দলত্যাগ করেন।
১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই ডিসেম্বর ন্যাশনাল থিয়েটারের উদ্বোধন হয়। এই থিয়েটার
প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্যোক্তাদের ভিতরে
বাগবাজার এমেচার
থিয়েটার (শ্যামবাজার নাট্যসমাজ)-এর
গিরিশচন্দ্র
ব্যতীত সকলেই ছিলেন। এঁদের মধ্যে বিশেষভাবে যাঁরা অগ্রণী ভূমিকা
রেখেছিলেন, তাঁরা হলেন- নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়,
মতিলাল সুর, রাধামাধব কর, অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি, অমৃতলাল বসু, ক্ষেত্রমোহন গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিলেন প্রখ্যাত নাট্যকার মধ্যস্থ পত্রিকার
সম্পাদক মনোমোহন বসু, অমৃতবাজার পত্রিকার সম্পাদক শিশিরকুমার ঘোষ,
হিন্দুমেলার উদ্যোক্তা ও ন্যাশনাল পেপার পত্রিকার সম্পাদক 'ন্যাশনাল” নবগোপাল
মিত্র।
প্রথমাবস্থায়
কলকাতার
৩৬৫ নম্বর আপার
চিৎপুরের শ্রীকৃষ্ণ মল্লিকের বাড়ির সম্মুখের অংশ মাসিক
চল্লিশ টাকায় ভাড়া নিয়ে একটি অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। এই বাড়ির সামনে একটি বড়ো ঘড়ি
লাগানো ছিল। এই কারণে স্থানীয় লোকেরা একে 'ঘড়িওয়ালা বাড়ি' নামে অভিহিত করতো। ধর্মদাস সুরের
তত্ত্বাবধানে মঞ্চনির্মিত হয়েছিল। তাঁর সহকারী ছিলেন ক্ষেত্রমোহন গঙ্গোপাধ্যায়। অর্ধেন্দুশেখর ছিলেন
'জেনারেল মাষ্টার' এবং নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সেক্রেটারী।
দীনবন্ধু মিত্রের 'নীলদর্পণ' নাটক দিয়ে এদের
যাত্রা শুরু হয়েছিল। ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাস নাগাদ নীলদর্পণ প্রস্তুতির সময়েই দলের নান পালটে
ন্যাশনাল থিয়েটার' রাখা ঠিক হয়। 'ইংলিশম্যান' পত্রিকার ২০-১১-১৮৭২ সংখ্যার বিজ্ঞাপনে
নাম লেখা হয়েছিল- “দি ক্যালকাটা ন্যাশনাল থিয়েট্রিক্যাল সোসাইটি'। আবার 'সুলভ
সমাচার' পত্রিকার ১০-১২-১৮৭২' নীলদর্পণ অভিনয়ের বিবরণে নাট্যদলের নাম লেখা হয়েছিল
“কলকাতা ন্যাসনযাল থিয়েট্রিকেল সোসাইটি"। ব্রজেন্দ্রনাথ
বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে 'ন্যাশনাল থিয়েটার' ছিল এই দীর্ঘ নামেরই সংক্ষিপ্ত রূপ। ধনীদের সখের নাটাশালায় অভিনয় দেখা ছিল আমন্ত্রমূলক।
ফলে সেখানে সকলের প্রবেশাধিকার ছিল না। ন্যাশনাল থিয়েটারে টিকিট বিক্রির ফলে যে কেউ
টিকিট কেটে অভিনয় দেখার সুযোগ পাবে।
শুরু দিকে টিকিটের মূল্য ছিল- প্রথম শ্রেণি-১ টাকা। দ্বিতীয় শেনি-আট আনা এবং
সংরক্ষিত আসন ২ টাকা।
এছাড়া মূল বাড়ির দালানের সিঁড়িতে বসার মূল্য ছিল ৪ আনা।
১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই ডিসেম্বর (শনিবার),
ন্যাশনাল থিয়েটারের উদ্ধোধন হয়েছিল
দীনবন্ধু মিত্রের 'নীলদর্পণ' নাটক দিয়ে। নাটকটি
মঞ্চস্থ করার সময় কমিটিতে ছিলেন- বেণীমাধব মিত্র প্রেসিডেন্ট, নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সেক্রেটারী।
স্টেজম্যানেজার ধর্মদাস সুর। অভিনয় প্রশিক্ষক ছিলে অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি। এই
নাটকে যাঁর অভিনয়ে
করেছিলেন, তাঁর হলেন- অর্ধেন্দুশেখর (উড সাহেব, সাবিত্রী, গোলোক বসু, একজন চাষা রায়ত), নগেন্দ্রনাথ
(নবীনমাধব), কিরণ (বিন্দুমাধব), শিকচন্দ্র চট্রোপাধ্যায় (গোপীনাথ
দেওয়ান), মতিলাল সুর (তোরাপ ও রাইচরণ), মহেন্দ্রলাল বসু (পদী ময়রাণী), শশীভূষণ দাস
(আমিন, পণ্ডিত মশাই, কবিরাজ), পূর্ণচন্দ্র ঘোষ (লাঠিয়াল), গোপালচন্দ্র দাস (আদুরী, একজন রায়ত), অবিনাশচন্দ্র কর
(রোগ সাহেব), ক্ষেত্রমোহন গাঙ্গুলি (সরলা), অমৃতলাল মুখোপাধ্যায় (ক্ষেত্রমণি), তিনকড়ি
মুখোপাধ্যায় (রেবতী) ও অমৃতলাল বসু (সৈরিন্ধী)।
এই নাটকটি অভিনয়ের পর এর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। পাশাপাশি অনেক সমালোচনাও হজম করতে
হয়েছিল। এসবের ভিতরে প্রতি শনিবার নাটকটি মঞ্চস্থ করা অব্যাহত রেখেছিল। ডিসেম্বর
মাসে যে চারটি অভিনয় সম্পন্ন্ হয়েছিল, সেগুলো হলো-
- নীলদর্পণ (৭ ডিসেম্বর)
- জামাই বারিক (১৪ ডিসেম্বর)
- নীলদর্পণ (২১ ডিসেম্বর)
- সধবার একাদশী (২৮ ডিসেম্বর)।
১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে যে নাটকগুলো
মঞ্চস্থ হয়েছিল, সেগুলো হলো-
- নবীন তপস্থিনী (৪ জানুয়ারি)
- লীলাবতী (১১ জানুয়ারি)
- বিয়েপাগলা বুড়ো (১৫
জানুয়ারি)
- নবীন তপস্থিনী (১৮ জানুয়ারি)
- নবনাটক (২৫ জানুয়ারি)
- নীলদর্পণ (১ ফেব্রুয়ারি)
- নয়শো কুপেয়া (৮ ফেব্রুয়ারি)
- জামাই বারিক (১৫
ফেব্রুয়ারি)। কিরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'ভারতমাতা'র অংশ, এছাড়া কুব্জার
কুঘটন, নববিদ্যালয়, মুস্তাফিসাহেবের পাক্কা তামাশা, পরীস্থান প্রভৃতি এই নাটকের সঙ্গে সঙ্গে অভিনীত হয়েছিল।
- কৃষ্ণকুমারী (২২ ফেব্রুয়ারি)। এই নাটক অভিনয়ের সময়ে
গিরিশচন্দ্র
পুনরায় দলে ফিরে এলেন। তিনি ভীমসিংহের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।
এরপর এই দলটির ভিতরে অন্তর্দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছিল দুটি কারণে। প্রথম কারণটি
ছিল- টিকিট বিক্রয়ের টাকার ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে। দ্বিতীয় কারণ ছিল- নাট্যদলের
কর্তৃত্ব নিয়ে। শুরুর দিকে দলের সাংগঠনিক দেখতেন নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং
অভিনয়ের বিষয় দেখতেন অরধেন্দুশেখর। কৃষ্ণকুমারী অভিনয়ের সূত্রে
গিরিশচন্দ্র
দলে ফিরে আসার পর, নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দাদা দেবেন্দ্রনাথ
বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে
গিরিশচন্দ্র
দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। ধীরে ধীরে এর সাথে জড়িয়ে পড়েন অরধেন্দুশেখর। এই দ্বন্দ্ব
চরমাবস্থায় পৌঁছালে অরধেন্দুশেখর দলত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। এই বিভাজনের বিষয়টির
চূড়ান্ত নিষ্পতি হয়ে গিয়েছিল ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ৮ মার্চ রাত্রের অভিনয় শেষে।
- বুড়ো শালিখের ঘাড়ে রৌ, যেমন কর্ম তেমনি ফল (৮ মার্চ)। অভিনয় শেষে অর্ধেদদুশেখর বিদায়
ভাষণ দেন এবং বিহারীলাল বসুর গান দিয়ে অনুষ্ঠান পর্ব শেষ হয়।
দলটি ভেঙে দুটি ভাগে বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল। বিভাজিত দুটি দল হলো-
- ন্যাশনাল থিয়েটার। এই দলে ছিলেন
গিরিশচন্দ্র, ধর্মদাস সুর, মহেন্দ্রলাল বসু, মতিলাল সুর, তিনকড়ি
মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। এরা এই থিয়েটারকে নিজেদের নামে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছিল। ফলে
এর মঞ্চ এবং যবাতীয় সাজসরঞ্জামের অধিকার লাভ করেছিল।
এঁরা প্রথমে
গিরিশচন্দ্রের নেতৃত্বে নেটিভ হাসপাতালের সাহায্যার্থে এরা নতুন দল নিয়ে নীলদর্পণ
করার চেষ্ট করে। কিন্তু দলাদলিতে তাদের প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর নতুন দল ন্যাশনাল থিয়েটার নাম নিয়ে টাউন হলে এবং
রাধাকান্ত দেবের বাড়িতে স্টেজ বেঁধে অভিনয় করা শুরু করে। এই পর্যায় যে সকল নাটক
অভিনীত হয়েছিল, সেগুলো হলো- এদের অভিনয়ের
- নীলদর্পণ (টাউন হল, ২৯ মার্চ)। এই নাটকের মাধ্যমে ২১০ টাকা নেটিভ হাসপাতালকে
প্রদান করে।
- সধবার একাদশী (টাউন হল, ৫
এপ্রিল)। এই নাটকটি অভিনীত হয়েছিল ইন্ডিয়ান রিফর্মস এসোসিয়েশানের সাহায্যার্থে।
- কৃষ্ণকুমারী (রাধাকান্ত দেবের বাড়ি, ১২ এপ্রিল)
- নীলদর্পণ (রাধাকান্ত দেবের বাড়ি, ১৯ এপ্রিল, ১৮৭৩)।
- কিঞিৎ জলযোগ, একেই কি বলে সভ্যতা, কপালকুণ্ডলা।
এবারে এই নাট্যদল
ঢাকায় যায়। এই ভ্রমণে
গিরিশচন্দ্র
কলকাতায়
থেকে গিয়েছিলেন।
ঢাকায়
ন্যাশনাল
থিয়েটার সুবিধে করতে পারে নি, বরং ঋণশ্রস্ত
হয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়।
- হিন্দু ন্যাশনাল থিয়েটার। এই দলে ছিলেন অর্ধেন্দুশেখর, অমৃতলাল বসু,
নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, অমৃতলাল মুখোপাধ্যায়, কিরণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়,
ক্ষেত্রমোহন গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। ভাগবাঁটোয়ারায় এরা পেয়েছিলেন
পোশাক-পরিচ্ছদ। এই দল প্রথম দিকে লিন্ডসে স্ট্রিটে অপেরা হাউস ভাড়া নিয়ে অভিনয় চালাতে
থাকে। প্রথম দিকে কিছু প্রহসন, প্যান্টোমাইম অভিনয় করে। পরে
মঞ্চস্থ করেছিল বিধবা
বিবাহ, নীলদর্পণ।
এরপর এই নাট্যদল
ঢাকায় যায়।
ঢাকায় এর মঞ্চস্থ করে নীলদর্পণ, রামাভিষেক নবনাটক, সধবার একাদশী, নবীন
তপস্বিনী, জামাই বারিক, কৃষ্ণকুমারী নাটক। পরে এই দল কলকাতায় ফিরে আসে।
এরপরে দুই দলের অনেকেই মিলেমিশে আবার অভিনয় চালাবার চেষ্টা করতে থাকে।
এরই ভিতরে এরা রাজশাহী, বোয়ালিয়া, রামপুর, বহরমপুর প্রভৃতি জায়গায় গিয়ে অভিনয়
করে আসে। টুঁচুড়ায় মঞ্চস্থ করেছিলে 'মোহান্তের এই কি কাজ!'
এই নাটকের নাট্যকার ছিলেন
যোগেন্দ্রনাথ
ঘোষ।
এই দল এইভাবে মফঃস্বলে অভিনয় করে বাংলা থিয়েটারের প্রচারে
উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। অর্ধেন্দুশেখরের নেতৃত্বে এইভাবে নানা অঞ্চলে
ঘুরে ঘুরে অভিনয়ের মাধ্যমে থিয়েটার প্রচারের সাফল্যের জন্য
তাঁকে 'মিশনারি অফ দি বেঙ্গলি স্টেজ'
নামে পরিচিতি লাভ করেছিলেন।
এরপর বিভাজিত এই দুটি দলের সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৭৩-এর ৭ই ডিসেম্বর দুই দলই সাড়ম্বরে আলাদা করে বাৎসরিক উৎসব পালন
করল। ন্যাশনাল থিয়েটার নামের দল পুরনো সান্যাল বাড়িতে সভা করে এবং
এইখানেই কিছু দিন অভিনয় চালাবার চেষ্টা করে। এইসূত্রে এঁরা যে
উল্লেখযোগ্য নাটক মঞ্চস্থ করেছিল, তা হলো-
- হরলাল রায়ের হেমলতা (১৩
ডিসেম্বর, ১৯৭৩)
- নীলদর্পণ (৩ জানুয়ারি ও ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৮৭৪)
- মুণালিনীর নাট্যরূপ।
বিভাজিত এই দুটি দলের ভিতের মিলে মিশে কাজ করার যে উদ্যোম
সৃষ্টি হয়েছিল, সেই প্রেরণা থেকে হিন্দু ন্যাশনাল থিয়েটারের
নগেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ন্যাশনাল থিয়েটারের ধর্মদাস সুর, নতুন একটি
নাট্যালয় তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এঁরা
কলকাতার
৬ নম্বর বিটন স্ট্রটে মহেন্দ্রনাথের দাসের জমিতে
ভুবনমোহন নিয়োগীর অর্থায়নে একটি নতুন নাট্যশালা গড়ে তোলেন এবং
এর নাম দেন
গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার।
ধীরে ধীরে এই নতুন থিয়েটারে যোগ দেন উভয়দলের সকল কলকাকুশলী। এর ভিতর দিয়ে ন্যাশনাল
থিয়েটারের আদি পর্বের সমাপ্তি ঘটে।
ন্যাশনাল থিয়েটারে প্রথম পর্ব
১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসের পরে
গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার
বন্ধ হয়ে যায়।
১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে গিরিশচন্দ্র
পুনরায় এই মঞ্চটি চালু করার উদ্যোগ নেন।
গিরিশচন্দ্র এর নাম পাল্টে রাখেন ন্যাশনাল থিয়েটার।
এটি ছিল ন্যাশনাল থিয়েটারের দ্বিতীয় পর্ব। এই সময় এই মঞ্চের ম্যানেজার ছিলেন কেদার
চৌধুরী। এই সময়ের উল্লেখযোগ্য নাটক ছিল- অাগমনী ও অকালবোধন। এরপর
গিরিশচন্দ্র পারিবারিক কারণে এই মঞ্চের অধিকার ত্যাগ করেন।
এই সময় এর দায়িত্ব গ্রহণ কেন তাঁর শ্যালক দ্বারকানাথ দে।
১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে
গিরিশচন্দ্র ন্যাশনাল থিয়েটারের ইজারা ত্যাগ করেন। নতুন করে
ইজারা নেন কেদার চৌধুরী। এই সময় দ্বারকানাথ দেব, কেদার চৌধুরী, গোপীচাঁদ শেঠ এই
থিয়েটার কিছুদিন চালু ছিল। গোপীচাঁদ শেঠের অর্থায়নে চলা এই থিয়েটারের ম্যানেজার
ছিলেন অবিনাশচন্দ্র কর। নানাবিধ চেষ্টা করার পর, এই থিয়েটারের পতন অনিবার্য হয়ে হয়ে
উঠেছিল। ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে বকেয়া বিল পরিশোধ না করার জন্য গ্যাস লাইন কেটে দেওয়া
হয়েছিল। সে সময়ে গ্যাস-চালিত বাতির সাহায্যে রাতের অভিনয়। গ্যাসের অভাবে যাতে অভিনয়
বন্ধন বা থাকে, তাই অবিনাশচন্দ্র কর রবিবার দুপুর বেলা অভিনয় চালু করেছিল। তারপরে
আর্থিক দুরবস্থা দূর হলো না। শেষ পরযন্ত ন্যাশনাল থিয়েটার নিলামে ওঠে। নিলামে
থিয়েটার কিনে নেন প্রতাপচাঁদ জহুরী। এর মধ্য দিয়ে শুরু হলো ন্যাশনাল থিয়েটারের
তৃতীয় পর্ব।
ন্যাশনাল থিয়েটারে তৃতীয় পর্ব
প্রতাপচাঁদ জহুর ছিলেন পুরোপুরি ব্যবসায়ী। তিনি
দ্রুত এই থিয়েটারকে বাণিজ্যিক থিয়েটারে পরিণত করেন। ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে
তিনি নিলামে ২৫ হাজার টাকায় এই থিয়েটার কিনে নিয়েছিলেন। তিনি তাঁর অন্যান্য
কর্মীদের বাঁধা বেতনে নিয়োগ দিলেন। কর্মচারীদের হাজিরা খাতা, আয়-ব্যয়ের হিসাব-বই
ইত্যাদির মাধ্যমে কর্মাচারীদের নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থ-লগ্নীর কঠোরভাবে দেখাশোনার
ব্যবস্থা করলেন। ফলে আগের থিয়েটারের ব্যবস্থাপনার চেয়ে অনেক বেশি পেশাদারী
ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাঁর এই নতুন ব্যবস্থাপনার পরিচালনার জন্য
গিরিশচন্দ্রেরকাছে যান। প্রতাপচাঁদ জহুর
গিরিশচন্দ্রকে বেছে নিয়ে
নিয়েছিলেন দুটি কারণে। প্রথমতঃ নাটক রচনা, নাট্য-পরিচালনা, মঞ্চ ব্যব্স্থাপনা,
অভিনয় এবং অভিনয় শিক্ষা ইত্যদির ক্ষেত্রে সে সময়ের অধিকতর যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন।
অন্যদিকে সওদাগরি অফিসে চাকরির সুবাদে বুককিপার হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
গিরিশচন্দ্রকে সে সময় পার্কার কোম্পানির মাসিক ১৫০
টাকার চাকরি করতেন। নাটক-পাগল
গিরিশচন্দ্র
সওদাগরি অফিসের চাকরিতে মন বসাতে পারছিলেন না। তাই প্রতাপ জহুরি যখন ১০০ টাকা
মাসিক বেতনে ন্যাশনাল থিয়েটারের ম্যানেজারে পদ নিয়োগের প্রস্তাব দেন, তখন ৫০ টাকা
কম বেতন সত্ত্বেই রাজি হয়ে হয়েছিল। ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে তিনি ন্যাশনাল
থিয়েটারে যোগদান করেন। তিনি প্রথমেই পুরানো ন্যাশনাল থিয়েটারের কলাকুশলী ও অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জড়ো করলেন।
প্রথম প্রচেষ্টাতেই তিনি যাঁদের দলে টানতে পেরেছিলেন, তাঁদের ভিতরে উল্লেখযোগ্য
ছিলেন- ধর্মদাস সুর, মহেন্দ্রলাল বসু,
অমৃতলাল বসু, মতিলাল সুর, অমৃতলাল মুখোপাধ্যায়, সঙ্গীতাচার্য রামতারণ সান্যাল,
অমৃতলাল মিত্র, ক্ষেত্রমণি, কাদম্বিনী, লক্ষ্মীমণি, নারায়ণী,
বিনোদিনী, বনবিহারিণী
প্রমুখ।
গিরিশচন্দ্র
প্রথম নাটক হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন মাইকেল টড-এর রাজস্থানের ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ
অনুসরণে সুরেন্দ্রনাথ মজুমদারের রচিত 'হামীর'। এঁদের নিয়ে তিনি প্রথম মহড়া দেওয়া
শুরু করেছিলেন ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি মহাসমারোহে
নতুন ন্যাশনাল থিয়েটারের
উদ্বোধন হল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষে 'হামীর' মঞ্চস্থা হয়েছিল। এতে অভিনয়ে করেছিলেন- হামীর
(গিরিশচন্দ্র), নায়িকা লীলা (বিনোদিনী)। মূল নাটকে গান ছিল না।
গিরিশচন্দ্র এই নিজের লেখা চারটি গান ব্যবহার করেছিলেন এই
নাটকে। দুর্ভাগ্যজনক হলো- এই নাটকটি
দর্শকদের ভিতরে তেমন সাড়া জাগাতে পারেন।
প্রতাপচাঁদ দর্শক টানার জন্য বিজ্ঞাপন দিলেন এবং ভালো নাটক পাওয়ার আশায় তিনি থিয়েটারের
হ্যান্ডবিলের নিচে ভালো নাটকের জন্য পুরস্কার ঘোষণা দিলেন। এতে আশানুরূপ সাড়া না
পাওয়ায়
গিরিশচন্দ্র নিজেই নাটক রচনা শুরু করলেন। এর আগে আগমনী, অকালবোধন,
দোললীলা নামে গীতিনাট্যগুলো অংশবিশেষ লিখেছিলেন। এছাড়া অন্যের নাটক সম্পাদনা করেছেন
অনেক। এই প্রথম তিনি পূর্ণাঙ্গ নাটক লেখা শুরু করলেন। এই উদ্যোগ থেকে রচনা করেছিলেন-
- মোহিনী প্রতিমা (২২ জানুয়ারি)।
মোহিনী প্রতিমা" প্রেমের উচ্চভাব ও আদর্শে রচিত বলে সাধারণ স্তরের
দর্শকের আনুকুল্য পায়নি।
- 'মায়াতরু' (৯ এপ্রিল)।
মায়াতরু গীতিনাট্য দর্শকদের ভিতরে সাড়া জাগিয়েছিল।
- আলাদীন (৯ এপ্রিল)।
আরব্য উপন্যাসের কাহিনি
অবলম্বনে রচিত। গিরিশচন্দ্র
কুহকী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। আলাদীনের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন রামতারণ
সান্ন্যাল।
- আনন্দ রহো (২১ মে)। বেতালের ভূমিকায় অভিনয় গিরিশচন্দ্র
অভিনয় করেছিলেন।
- রাবণবধ (৩০ জুলাই)। পৌরাণিক নাটক। রামের ভূমিকায়
গিরিশচন্দ্র, সীতার ভূমিকায়
বিনোদিনী,
লক্ষ্মণের ভূমিকায় মহেন্দ্রলাল বসু এবং রাবণের ভূমিকায় অভিনয় করেন অমৃতলাল
মিত্র। এই নাটকটি বিপুল সাড়া জাগিয়েছিল। এই নাটকে তিনি প্রথম নিজস্বরীতিতে ভাঙা
অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেছিলেন। যা পরবর্তী সময়ে গৈরিশ ছন্দ নামে পরিচিতি
লাভ করেছে।
- সীতার বনবাস (১৭ সেপ্টেম্বর)। এই নাটকে যাঁরা অভিনয়
করেছিলেন- গিরিশচন্দ্র (রাম), কাদম্বিনী (সীতা), মহেন্দ্রলাল বসু (লক্ষ্মণ),
অমৃতলাল মিত্র (বাল্মীকি),
বিনোদিনী
(লব), কুসুমকুমারী (কুশ)। আগে নিষিদ্ধপল্লীর মেয়েদের
দ্বারা অভিনীত নাটক দেখার জন্য ভদ্রঘরের মেয়েরা নাটক
দেখতে আসতো না। সে অবস্থার নিরসন ঘটিয়ে
'সীতার বনবাস দেখার জন্য
ভদ্রঘরের মেয়েরা স্টার থিয়েটারে ভীড় জমিয়েছিল।
এর মাঝে ২১ সেপ্টেম্বর অমৃতলাল বসুর রচিত 'তিল-দর্পণ' অভিনীত
হয়েছিল। তবে এই নাটক ততটা জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। এরপর পুনরায়
গিরিশচন্দ্র পৌরাণিক গল্প অবলম্বনে রচনা করেছিলেন 'অভিমন্যু
বধ'। এই নাটকে যাঁরা অভিনয় করেছিলেন, তাঁরা হলেন-
গিরিশচন্দ্র (যুধিষ্ঠির ও দুর্যোধন), কেদার চৌধুরী (শ্রীকৃষ্ণ
ও দ্রোণাচার্য), অমৃত মিত্র (ভীম ও গর্গ), মহেন্দ্রলাল বসু (অর্জুন ও জয়দ্রথ),
অমৃতলাল মুখোপাধ্যায় (অভিমন্যু) এবং
বিনোদিনী
(উত্তরা)। তবে এই নাটকটি জনপ্রিয় হয়
নি।
এই সময়ের সকল নাটক জনসমাদর না পেলেও-
বিনোদিনী ও কুসুমকুমারীর গান
দর্শকদের মাতিয়ে দিয়েছিল। অনেকে নাটক এঁদের গান শোনার জন্যই আসতেন।
কুসুমকুমারী, এই দুজনের অভিনয় ও গান দর্শকদের মাতিয়ে দিয়েছিল। তাই 'অভিমন্যুবধ'
দর্শক টানতে ব্যর্থ হলে প্রতাপঠাদ গিরিশকে ডেকে বলেছিলেন- 'বাবু, যব দুসরা কিতাব
লিখগে তব ফির ওহি দুনো লেড়কা ছোড় দেও'-_অর্থাৎ যে নাটকই লেখ না কেন, এ
দুনো লেড়কা লব-কুশকে মঞ্চে এনে ছেড়ে দিতে হবে। এরপর
গিরিশচন্দ্র রচনা করেছিলেন 'লক্ষ্মণ বর্জন' এবং 'ধীবর ও দৈত্য'
নামক দুটি নাটক। নাটক দুটি একসঙ্গে অভিনীত হয়েছিল ৩১ ডিসেম্বর। এ নাটক দু্টিও দর্শক
টানতে ব্যর্থ হয়েছিল।
১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে
গিরিশচন্দ্র দর্শক ধরে রাখা এবং দর্শক বৃদ্ধির জন্য
অনেকগুলো নাটক মঞ্চস্থ করেলন। পুরানো নাটকের ভিতরে ছিল- সীতার
বনবাস ও রাবণবধ। নতুন নাটক ছিল-
- রামের
বনবাস (১১ মার্চ)।
গিরিশচন্দ্রের রচিত
- সীতার বিবাহ (১৫ এপ্রিল)।
গিরিশচন্দ্রের রচিত। কিছুটা সমাদর পেয়েছিল।
- সীতাহরণ (২২ জুলাই)।
গিরিশচন্দ্রের রচিত
- মলিনামালা
(১৬ সেপ্টেম্বর)।
গিরিশচন্দ্রের রচিত । কিছুটা সমাদর পেয়েছিল।
- ভোটমঙ্গল (১৪ অক্টোবর)। লর্ড রিপনের বড়লাট থাকাকালীন মিউনিসিপ্যালিটিতে 'লোকাল সেলফ গভর্নমেন্ট" চালু
হওয়াতে যে ভোটপর্ব চলছিল, তা নিয়ে রঙ্গত্মক প্রহসন ছিল ভোটমঙ্গল।
১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতেই সাফল্য এসেছিল পাগুবের অজ্ঞাতবাস
নাটকের মাধ্যমে। এই নাটকটি অভিনীত হয়েছিল ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জানুয়ারি। কীচক ও দুর্যোধনের
ভুমিকায়
গিরিশচন্দ্রের অভিনয় সবার প্রশংসা অর্জন করেছিল। এই
নাটকে অন্যান্য চরিত্রে মধ্যে যাঁদের অভিনয় বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছিল, তাঁরা হলেন বিনোদিনী
(দ্রৌপদী),
মহেন্দ্র বসু (অর্জুন), অমৃত মিত্র (ভীম)। খুব আকর্ষণীয় অভিনয় করলেন। পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাসের বিপুল জনসমাদর গিরিশকে নাট্যকার, অভিনেতা ও
নাট্যপরিচালক হিসেবে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল।
এই সময়
গিরিশচন্দ্র
আভিনেতাদের মাইনে ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। প্রতাপচাঁদ তা
নাকচ করে দেন। বরং থিয়েটারের নিয়মনীতির আরো কঠোর করেন। এমনকি
বিনোদিনীর মতো অভিনেত্রীদের হাজিরা কয়েকদিন কামাই
করলে নেতন কাটার চেষ্টা করা হয়েছিল। এসব কারণে
গিরিশচন্দ্র ন্যাশনাল থিয়েটার ত্যাগ করেন। এই সময় তাঁর সাথে
সাথে আর যাঁরা এই থিয়েটার ছেড়েছিলেন, তাঁরা হলেন- অমৃত মিত্র, অঘোরনাথ পাঠক,
উপেন্দ্র মিত্র,
বিনোদিনী, কাদম্বিনী, ক্ষেত্রমণি, নীলমাধব চক্রবর্তী প্রমুখ। ন্যাশনাল থিয়েটারে
গিরিশ ও তার সহযোগীদের শেষ অভিনয় ছিল ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারিতে অভিনীত রাবণবধ।
ন্যাশনাল থিয়েটার থেকে বেরিয়ে এসে এঁরা এরা কিছুদিন 'ক্যালকাটা স্টার কোম্পানী' নামে
একটি দল তৈরি করেছিলেন। এই সময় এঁরা
বেঙ্গল থিয়েটার মঞ্চ ভাড়া নিয়ে কিছুদিন অভিনয় করেন।
এরপর প্রতাপচাঁদ ন্যাশনাল থিয়েটার সচল রাখলেন। এই সময়ে কেদারনাথ চৌধুরীকে ম্যানেজার করে আনলেন।
১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মে, কেদার চৌধুরীর নাট্যরাপ দেওয়া 'আনন্দমঠ' অভিনীত হয়। এই
সময়ে অর্ধেন্দুশেখর এই থিয়েটারে যোগ দেন। এছাড়া ছিল
গিরিশচন্দ্রের সময়ের মহেন্দ্র বসু, রামতারণ সান্যাল,
অমৃত মিত্র, ধর্মদাস সুর, বনবিহারিণী (ভূনি) প্রমুখেরা কেদারনাথের পরিচালনায় আনন্দমঠে অভিনয় করেছিলেন।
১৫ সেপ্টেম্বর অভিনীত হয়েছিল জ্যোতিরিন্দরনাথের স্বপ্নময়ী। এছাড়া অভিনীত হয়েছিল কেদার চৌধুরীর ছত্রভঙ্গ
(দুর্যোধনের উরুভঙ্গ), রাজসূয় যজ্ঞ প্রভৃতি।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রতাপচাঁদ ব্যবসায়ীক সাফল্য পেলেন না। নিরুপায় হয়ে প্রদাপচাঁদ
১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ন্যাশনাল থিয়েটার হস্তান্তর করলেন ভুবনমোহন নিয়োগীর কাছে।
ভুবনমোহন থিয়েটার অধিগ্রহণ করেছিলেন তাঁর স্ত্রীর নামে। ভুবনমোহন থিয়েটারের
ম্যানেজার হিসেবে কেদার চৌধুরীকেই রাখলেন। নব্যমালিকানার ন্যাশনাল থিয়েটারে প্রথম
অভিনীত হয়েছিল হরিভূষণ ভট্টাচার্যের 'কুমারসম্ভব' নাটক। ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩ জুলাই
কেদার চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে মঞ্চস্থ হয়েছিল রবীন্দ্রনাথে 'বৌঠাকরুনের হাট
উপন্যাসের নাট্যরূপ। এই সময় প্রতাপচাঁদ ও ভুবনমোহনের মধ্যে থিয়েটার নিয়ে মামলা শুরু
হয়। পরে এই বাড়িটি নীলামে ওঠে। এই সময় হাতিবাগানের স্টার থিয়েটার আড়াই হাজার টাকায়
কিনে নেয়। এরা পুরানো বাড়ি ভেঙে ফেলে নতুন করে স্টার থিয়েটার তৈরি করে। এর ভিতর দিয়ে
প্রতাপচাঁদ ও ভুবনমিহনের ন্যাশনাল থিয়েটার চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যায়। ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে
এই স্থানে গড়ে উঠেছিল
মিনার্ভা থিয়েটার।
সূত্র:
- আমার কথা। বিনোদিনী দাসী। কথাশুল্প প্রকাশ। কলকাতা। পৌষ
১৩৬১
- গিরিশ রচনাবলী। সাহিত্য সংসদ। কলিকাতা। ১৯৬৯।
- বঙ্গীয় নাট্যশঠালার
ইতিহাস। ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ মন্দির, ১৩৪৬
-
বাংলা থিয়েটারের ইতিহাস।
দর্শন চৌধুরী। পুস্তক বিপনী
কলকাতা ১৯৯৫।
- বাংলা থিয়েটারের গান। শ্রীরাজ্যেশ্বর মিত্র। ইন্দিরা সংগীত-শিক্ষায়তন।
১৯৮২।
- বাংলা থিয়েটারের পূর্বাপর। নৃপেন্দ্র সাহা। তূণ প্রকাশ। ১৯৯৯।
- বাংলা নাটকের ইতিবৃ্ত্ত। হেমেন্দ্র নাথ
দাশগুপ্ত
-
বাংলা নাটকের ইতিহাস। অজিতকুমার ঘোষ
- বাংলা নাট্য সাহিত্যের ইতিহাস। আশুতোষ ভট্টাচার্য
- বাংলা নাট্যসাহিত্যের পূর্ব্ব-কথা। শ্রীশরচ্চন্দ্র ঘোষাল। নারায়ণ [পৌষ ১৩২১ বঙ্গাব্দ]
- বাংলা নাটকের বিবর্তন। সুরেশচন্দ্র মৈত্র। মুক্তধারা। ১৯৭১
-
বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত।
সপ্তম খণ্ড। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়