বিষয়:
নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: মাগো চিন্ময়ী রূপ ধ’রে আয়
রাগ: বাগেশ্রী, তাল: ত্রিতাল
মাগো চিন্ময়ী রূপ ধ'রে আয়।
মৃন্ময়ী রূপ তোর পূজি শ্রী দুর্গা তাই দুর্গতি কাটিল না হায়॥
যে মহা-শক্তির হয় না বিসর্জন
অন্তরে বাহিরে প্রকাশ যার অনুখন
মন্দিরে দুর্গে রহে না যে বন্দী সেই দুর্গারে দেশ চায়॥
আমাদের দ্বিভুজে দশভুজা-শক্তি দে পরম ব্রহ্মময়ী।
শক্তিপূজার ফল ভক্তি কি পাব শুধু হব না কি বিশ্বজয়ী?
এই পূজা-বিলাস সংহার কর্ যদি, পুত্র শক্তি নাহি পায়॥
-
ভাবার্থ:
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে-
আদ্যা শক্তি দুর্গা, মহিষাসুরের অত্যাচার এবং অনাচার থেকে জগৎকে
রক্ষার জন্য আবির্ভুত হয়েছিলেন দুর্গতিনাশিনী রূপে।
সেই ঘটনার স্মরণে সনাতনধর্মীরা প্রতি বৎসর সেই
আদ্যশক্তিকে আবাহন কে থাকেন শরৎকালীন দুর্গা পূজার মধ্য দিয়ে। মন্দিরে মন্দিরে এই দেবী পূজিতা
হন মাটির প্রতীকী মূর্তিতে। বিপুল আয়োজনে প্রতিবৎসর মহাসমারোহে পূজা হয় বটে, কিন্তু
জগতের দুর্গতি কাটে না। কবি মনে করেন, মৃন্ময়ীরূপে দেবীর এই আবির্ভাব জগতের জন্য
কল্যাণ বয়ে আনে না। তাই তিনি চিত্তমন্দিরে দেবীকে আবাহন করছেন। যেনো মানুষের
চৈতন্যের ভিতরে অসুরিবনাসী আদ্যশক্তির প্রকাশ ঘটে। যাঁর চিন্ময়ীরূপের প্রভাবে প্রতিটি ভক্ত হয়ে
উঠতে পারেন দুর্গতিনাশিনী শক্তি হিসেবে।
কবি মনে করেন আদ্যা মহাশক্তির বিনাস নাই, যাকে ত্যাগও করা যায় না। চিত্তের বাইরে এবং
অন্তরে যার অনুক্ষণ প্রকাশ। তিনি মনে করেন মন্দিরে বন্দী দেবী দেশের দুর্গতি রোধে
অক্ষম। তাই সেই মহাশক্তি সকলের অন্তরকে উদ্দীপ্ত করুক এবং
জগৎ-সংসারের
সকল অকল্যাণকে ধ্বংস করুক। এর জন্য
মৃন্ময়ী দশভুজা দুর্গার দরকার নেই। কবির কামনা- দেশমাতৃকার প্রতিটি
সৈনিকের দুটি হাতই দশভুজার শক্তিকে প্রবলতর হয়ে উঠুক। মৃন্ময়ীমূর্তিতে
যে
শক্তিপূজা করা হয়, তাতে ভক্তি প্রকাশ পায়। কিন্তু দেশের দুর্গতি দূর হয় না।
কবির জিজ্ঞাসা ভক্ত কি
শুধু ভক্তিতেই সন্তুষ্ট থাকবে? বিশ্বকে জয় করার সৌভাগ্য কি তার কপালে জুটবে না?
কবি মনে করেন যে পূজার ভিতরে মাতৃরূপেণ দুর্গার ভক্তিটাই প্রধান হয়ে উঠে, তাতে সন্তানরা শক্তিহীন
হয়ে অন্যের দাসত্ব করে। তাই কবি মূর্তিপূজাকে পূজা-বিলাস ছাড়া আর কিছু ভাবেন না।
কবির প্রার্থনা সেই
পূজাবিলাসকে সংহার করে, প্রতিটি ভক্ত হয়ে উঠুক চিন্ময়ীরূপী দুর্গার
কল্যাণ-সৈনিক।
-
রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে
সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের
সেপ্টেম্বর (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪৮) মাসে,
এইচএমভি
রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল
৪২ বৎসর ৩ মাস।
- রেকর্ড:
এইচএমভি। সেপ্টেম্বর
১৯৪১ (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৪৮)। এন ২৭১৮৬।
শিল্পী:
জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ গোস্বামী
- পত্রিকা:
সঙ্গীত বিজ্ঞান প্রবেশিকা। মাঘ ১৩৪৮
(জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ১৯৪২)। সুরকার: নিতাই ঘটক।
স্বরলিপি: কুমারী বিজলী ধর। [নমুনা]
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- সুরকার: নিতাই ঘটক
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ভক্তি ও স্বদেশ
- সুরাঙ্গ:
খেয়ালাঙ্গ
- রাগ:
বাগেশ্রী
- তাল:
ত্রিতাল
- গ্রহস্বর:
- বিজলী ধরের স্বরলিপিতে গানটির শুরু 'চিন্ময়ী'
শব্দ থেকে। এই বিচারে গ্রহস্বর র্সণা।
- নিতাই ঘটকের স্বরলিপিতে গ্রহস্বর ধণা
- সালাউদ্দিন আহ্মেদের স্বরলিপিতে গানটির শুরু 'মাগো'
শব্দ থেকে। এই বিচারে গ্রহস্বর সা।