ভাষাংশ
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর
-এর
রচনাবলী
রচনাবলী সূচি
৬
চিত্রাঙ্গদার সহচর-সহচরীগণ
অর্জুনের প্রতি
এসো এসো পুরুষোত্তম, এসো এসো বীর মম!
তোমার পথ চেয়ে আছে প্রদীপ জ্বালা।
আজি পরিবে বীরাঙ্গনার হাতে দৃপ্ত ললাটে, সখা,
বীরের বরণমালা।
ছিন্ন ক’রে দিবে সে তার শক্তির অভিমান,
তোমার চরণে করিবে দান আত্মনিবেদনের ডালা—
চরণে করিবে দান।
আজ পরাবে বীরাঙ্গনা তোমার
দৃপ্ত ললাটে, সখা,
বীরের বরণমালা॥
সখী। হে কৌন্তেয়,
ভালো লেগেছিল ব’লে
তব করযুগে সখী দিয়েছিল ভরি সৌন্দর্যের ডালি
নন্দনকানন হতে পুষ্প তুলে এনে বহু সাধনায়।
যদি সাঙ্গ হল পূজা
তবে আজ্ঞা করো, প্রভু,
নির্মাল্যের সাজি থাক্ পড়ে মন্দিরবাহিরে।
এইবার প্রসন্ন নয়নে চাও সেবিকার পানে॥
চিত্রাঙ্গদার প্রবেশ
চিত্রাঙ্গদা। আমি চিত্রাঙ্গদা, আমি রাজেন্দ্রনন্দনী।
নহি দেবী, নহি সামান্য নারী।
পূজা করি মোরে রাখিবে ঊর্ধ্বে সে নহি নহি,
হেলা করি মোরে রাখিবে পিছে সে নহি নহি।
যদি পার্শ্বে রাখ মোরে সংকটে সম্পদে,
সম্মতি দাও যদি কঠিন ব্রতে সহায় হতে
পাবে তবে তুমি চিনিতে মোরে।
আজ শুধু করি নিবেদন—
আমি চিত্রাঙ্গদা রাজেন্দ্রনন্দিনী॥
অর্জুন। ধন্য ধন্য ধন্য আমি॥
সমবেত নৃত্য
তৃষ্ণার শান্তি সুন্দরকান্তি
তুমি এসো বিরহের সন্তাপভঞ্জন।
দোলা দাও বক্ষে, এঁকে দাও চক্ষে
স্বপনের তুলি দিয়ে মাধুরীর অঞ্জন।
এনে দাও চিত্তে রক্তের নৃত্যে
বকুলনিকুঞ্জের মধুকরগুঞ্জন—
উদ্বেল উতরোল
যমুনার কল্লোল,
কম্পিত বেণুবনে মলয়ের চুম্বন।
আনো নবপল্লবে নর্তন উল্লোল,
অশোকের শাখা ঘেরি বল্লরীবন্ধন॥
-----
এস’ এস’ বসন্ত ধরাতলে—
আন’ মুহু মুহু নব তান,
আন’ নব প্রাণ,
নব গান,
আন’ গন্ধমদভরে অলস সমীরণ,
আন’ বিশ্বের অন্তরে অন্তরে নিবিড় চেতনা।
আন’ নব উল্লাসহিল্লোল,
আন’ আন’ আনন্দছন্দের হিন্দোলা
ধরাতলে।
এস’ এস’।
ভাঙ’ ভাঙ’ বন্ধনশৃঙ্খল,
আন’ আন’ উদ্দীপ্ত প্রাণের বেদনা
ধরাতলে।
এস’ এস’।
এস’ থরথরকম্পিত
মর্মরমুখরিত
মধুসৌরভপুলকিত
ফুল-আকুল মালতিবল্লিবিতানে
সুখছায়ে মধুবায়ে।
এস’ এস’।
এস’ বিকশিত উন্মুখ,
এস’ চির-উৎসুক,
নন্দনপথচিরযাত্রী।
আন’ বাঁশরিমন্দ্রিত মিলনের রাত্রি,
পরিপূর্ণ সুধাপাত্র নিয়ে এস’।
এস’ অরুণচরণ কমলবরণ
তরুণ উষার কোলে।
এস’ জ্যোৎস্নাবিবশ নিশীথে,
এস’ নীরব কুঞ্জকুঠিরে,
সুখসুপ্ত সরসীনীরে।
এস’ এস’।
এস’ তড়িৎশিখাসম ঝঞ্ঝাবিভঙ্গে,
সিন্ধুতরঙ্গদোলে।
এস’ জাগরমুখর প্রভাতে,
এস’ নগরে প্রান্তরে বনে,
এস’
কর্মে বচনে মনে।
এস’ এস’।
এস’ মঞ্জীরগুঞ্জর চরণে,
এস’ গীতমুখর কলকণ্ঠে।
এস’ মঞ্জুল মল্লিকামাল্যে,
এস’ কোমল কিশলয়বসনে।
এস’ সুন্দর, যৌবনবেগে।
এস’ দৃপ্ত বীর, নব তেজে।
ওহে দুর্মদ, কর’ জয়যাত্রা।
চল’ জরাপরাভব সমরে—
পবনে কেশররেণু ছড়ায়ে,
চঞ্চল কুন্তল উড়ায়ে।
এস’ এস’॥
অর্জুন। মা মিৎ কিল ত্বং বনাঃ শাখাং মধুমতীমিম্
যথা সুপর্ণঃ প্রপতন্ পক্ষৌ নিহন্তি ভূম্যাম্
এবা নিহন্মি তে মনঃ।
চিত্রাঙ্গদা। যথেমে দ্যাবা পৃথিবী সদ্যঃ পর্যেতি সূর্যঃ
এবা পর্যেমি তে মনঃ।
উত্তয়ে। অক্ষৌ নৌ মধুসংকাশে অনীকং নৌ সমঞ্জনম্।
অন্ত কৃণুস্ব মাং হৃদি মন ইন্নৌ সহাসতি॥