ভাষাংশ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাসংগ্রহের সূচি


কড়ি ও কোমল
 

মথুরায় | নের ছায়া | কোথায় | শান্তি | পাষাণী মা | হৃদয়ের ভাষা | পত্র | বিরহীর পত্র |


 


 


 

         মথুরায়
বাঁশরি বাজাতে চাহি , বাঁশরি বাজিল কই ?
বিহরিছে সমীরণ, কুহরিছে পিকগণ,
মথুরায় উপবন কুসুমে সাজিল ওই।
বাঁশরি বাজাতে চাহি, বাঁশরি বাজিল কই ?

বিকচ বকুল ফুল দেখে যে হতেছে ভুল,
কোথাকার অলিকুল গুঞ্জরে কোথায়!
এ নহে কি বৃন্দাবন? কোথা সেই চন্দ্রানন?
ওই কি নূপুরধ্বনি বনপথে শুনা যায়?
একা আছি বনে বসি, পীত ধড়া পড়ে খসি,
সোঙরি সে মুখশশী পরান মজিল সই।
বাঁশরি বাজাতে চাহি , বাঁশরি বাজিল কই?

এক বার রাধে রাধে ডাক্‌ বাঁশি, মনোসাধে,
আজি এ মধুর চাঁদে মধুর যামিনী ভায়।
কোথা সে বিধুরা বালা, মলিন মালতীমালা,
হৃদয়ে বিরহ-জ্বালা, এ নিশি পোহায়, হায়।
কবি যে হল আকুল, এ কি রে বিধির ভুল,
মথুরায় কেন ফুল ফুটেছে আজি লো সই?
বাঁশরি বাজাতে গিয়ে বাঁশরি বাজিল কই?


   
               বনের ছায়া
        কোথা রে তরুর ছায়া, বনের শ্যামল স্নেহ।
তট-তরু কোলে কোলে
        সারাদিন কলরোলে
        স্রোতস্বিনী যায় চলে সুদূরে সাধের গেহ;
       কোথা রে তরুর ছায়া, বনের শ্যামল স্নেহ;
কোথা রে সুনীল দিশে
         বনান্ত রয়েছে মিশে
       অনন্তের অনিমিষে নয়ন নিমেষ-হারা ।

দূর হতে বায়ু এসে
             চলে যায় দূর-দেশে
      গীত-গান যায় ভেসে, কোন্‌ দেশে যায় তারা।
হাসি, বাঁশি, পরিহাস,
         বিমল সুখের শ্বাস,
      মেলামেশা বারো মাস নদীর শ্যামল তীরে;
কেহ খেলে, কেহ দোলে,
     ঘুমায় ছায়ার কোলে,
      বেলা শুধু যায় চলে কুলুকুলু নদীনীরে।
বকুল কুড়োয় কেহ, কেহ গাঁথে মালাখানি;
ছায়াতে ছায়ার প্রায়
           বসে বসে গান গায়,
      করিতেছে কে কোথায় চুপিচুপি কানাকানি।
খুলে গেছে চুলগুলি,
          বাঁধিতে গিয়েছে ভুলি,
      আঙুলে ধরেছে তুলি আঁখি পাছে ঢেকে যায়,
      কাঁকন খসিয়া গেছে, খুঁজিছে গাছের ছায়।
বনের মর্মের মাঝে
           বিজনে বাঁশরি বাজে,
      তারি সুরে মাঝে মাঝে ঘুঘু দুটি গান গায়।
ঝুরু ঝুরু কত পাতা
         গাহিছে বনের গাথা,
      কত-না মনের কথা তারি সাথে মিশে যায়।
লতাপাতা কত শত
         খেলে কাঁপে কত মতো
      ছোটো ছোটো আলোছায়া ঝিকিমিকি বন ছেয়ে,
      তারি সাথে তারি মতো খেলে কত ছেলেমেয়ে।

      কোথায় সে গুন গুন ঝরঝর মরমর,
      কোথা সে মাথার'পরে লতাপাতা থরথর।
      কোথায় সে ছায়া আলো, ছেলেমেয়ে খেলাধূলি,
      কোথা সে ফুলের মাঝে এলোচুলে হাসিগুলি।
কোথা রে সরল প্রাণ,
         গভীর আনন্দ-গান,
      অসীম শান্তির মাঝে প্রাণের সাধের গেহ,
      তরুর শীতল ছায়া, বনের শ্যামল স্নেহ।

                 
কোথায়
             হায় কোথা যাবে !
অনন্ত অজানা দেশ, নিতান্ত যে একা তুমি,
             পথ কোথা পাবে!
             হায়, কোথা যাবে!

            কঠিন বিপুল এ জগৎ,
            খুঁজে নেয় যে যাহার পথ।
স্নেহের পুতলি তুমি সহসা অসীমে গিয়ে
            কার মুখে চাবে।
            হায়, কোথা যাবে!

            মোরা কেহ সাথে রহিব না,
            মোরা কেহ কথা কহিব না।
নিমেষ যেমনি যাবে, আমাদের ভালোবাসা
            আর নাহি পাবে।
            হায়, কোথা যাবে!

            মোরা বসে কাঁদিব হেথায়,
            শূন্যে চেয়ে ডাকিব তোমায়;
মহা সে বিজন মাঝে হয়তো বিলাপধ্বনি
            মাঝে মাঝে শুনিবারে পাবে,
            হায়, কোথা যাবে!

            দেখো, এই ফুটিয়াছে ফুল,
            বসন্তেরে করিছে আকুল,
পুরানো সুখের স্মৃতি বাতাস আনিছে নিতি
            কত স্নেহভাবে,
            হায়, কোথা যাবে!

            খেলাধূলা পড়ে না কি মন,
            কত কথা স্নেহের স্মরণে।
সুখে দুখে শত ফেরে সে
-কথা জড়িত যে রে,
           সেও কি ফুরাবে!
           হায়, কোথা যাবে!

           চিরদিন তরে হবে পর,
           -ঘর রবে না তব ঘর।
যারা ওই কোলে যেত, তারাও পরের মতো,
           বারেক ফিরেও নাহি চাবে।
               হায়, কোথা যাবে!

            হায়, কোথা যাবে!
যাবে যদি, যাও যাও, অশ্রু তব মুছে যাও,
           এইখানে দুঃখ রেখে যাও।
যে বিশ্রাম চেয়েছিলে তাই যেন সেথা মিলে —
           আরামে ঘুমাও।
           যাবে যদি, যাও।


                
শান্তি
থাক্‌ থাক্‌ চুপ কর্ তোরা, ও আমার ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছে।
আবার যদি জেগে ওঠে বাছা কান্না দেখে কান্না পাবে যে।
কত হাসি হেসে গেছে ও, মুছে গেছে কত অশ্রুধার,
হেসে কেঁদে আজ ঘুমাল, ওরে তোরা কাঁদাস নে আর।

কত রাত গিয়েছিল হায়, বসেছিল বসন্তের বায়,
পুবের জানালাখানি দিয়ে চন্দ্রালোক পড়েছিল গায়;
কত রাত গিয়েছিল হায়, দূর হতে বেজেছিল বাঁশি,
সুরগুলি কেঁদে ফিরেছিল বিছানার কাছে কাছে আসি।
কত রাত গিয়েছিল হায়, কোলেতে শুকানো ফুলমালা
নত মুখে উলটি পালটি চেয়ে চেয়ে কেঁদেছিল বালা।
কত দিন ভোরে শুকতারা উঠেছিল ওর আঁখি
'পরে,
সমুখের কুসুম - কাননে ফুল ফুটেছিল থরে থরে।
একটি ছেলেরে কোলে নিয়ে বলেছিল সোহাগের ভাষা,
কারেও বা ভালোবেসেছিল , পেয়েছিল কারো ভালোবাসা!
হেসে হেসে গলাগলি করে খেলেছিল যাহাদের নিয়ে
আজো তারা ওই খেলা করে, ওর খেলা গিয়েছে ফুরিয়ে।
সেই রবি উঠেছে সকালে ফুটেছে সুমুখে সেই ফুল,
ও কখন খেলাতে খেলাতে মাঝখানে ঘুমিয়ে আকুল।
শ্রান্ত দেহ, নিস্পন্দ নয়ন, ভুলে গেছে হৃদয়
-বেদনা।
চুপ করে চেয়ে দেখো ওরে, থামো থামো, হেসো না কেঁদো না।


              
পাষাণী মা
হে ধরণী , জীবের জননী,
        শুনেছি যে মা তোমায় বলে,
তবে কেন তোর কোলে সবে
        কেঁদে আসে, কেঁদে যায় চলে।
তবে কেন তোর কোলে এসে
        সন্তানের মেটে না পিয়াসা।
কেন চায়, কেন কাঁদে সবে,
       কেন কেঁদে পায় না ভালোবাসা।
কেন হেথা পাষাণ
-পরান,
       কেন সবে নীরস নিষ্ঠুর,
কেঁদে কেঁদে দুয়ারে যে আসে
      কেন তারে করে দেয় দূর।
কাঁদিয়া যে ফিরে চলে যায়
      তার তরে কাঁদিস নে কেহ,
এই কি মা, জননীর প্রাণ,
এই কি মা, জননীর স্নেহ !


            
হৃদয়ের ভাষা
হৃদয়, কেন গো মোরে ছলিছ সতত,
আপনার ভাষা তুমি শিখাও আমায়।
প্রত্যহ আকুল কন্ঠে গাহিতেছি কত,
ভগ্ন বাঁশরিতে শ্বাস করে হায় হায়!
সন্ধ্যাকালে নেমে যায় নীরব তপন
সুনীল আকাশ হতে সুনীল সাগরে।
আমার মনের কথা , প্রাণের স্বপন
ভাসিয়া উঠিছে যেন আকাশের 'পরে।
ধ্বনিছে সন্ধ্যার মাঝে কার শান্ত বাণী,
ও কি রে আমারি গান ? ভাবিতেছি তাই।
প্রাণের যে কথাগুলি আমি নাহি জানি
সে
-কথা কেমন করে জেনেছে সবাই।
মোর হৃদয়ের গান সকলেই গায়,
গাহিতে পারি নে তাহা আমি শুধু হায়।

                  
পত্র
     নৌকাযাত্রা হইতে ফিরিয়া আসিয়া লিখিত

সুহৃদ্বর শ্রীযুক্ত প্রিয়নাথ সেন স্থলচরবরেষু
জলে বাসা বেঁধেছিলেম, ডাঙায় বড়ো কিচিমিচি।
সবাই গলা জাহির করে, চেঁচায় কেবল মিছিমিছি।
সস্তা লেখক কোকিয়ে মরে, ঢাক নিয়ে সে খালি পিটোয়,
ভদ্রলোকের গায়ে পড়ে কলম নেড়ে কালি ছিটোয়।
এখানে যে বাস করা দায় ভনভনানির বাজারে,
প্রাণের মধ্যে গুলিয়ে উঠে হট্টগোলের মাঝারে।
কানে যখন তালা ধরে, উঠি যখন হাঁপিয়ে
কোথায় পালাই, কোথায় পালাই — জলে পড়ি ঝাঁপিয়ে

গঙ্গাপ্রাপ্তির আশা করে গঙ্গাযাত্রা করেছিলেম।
তোমাদের না বলে কয়ে আস্তে আস্তে সরেছিলেম।

দুনিয়ার এ মজলিসেতে এসেছিলেম গান শুনতে,
আপন মনে গুনগুনিয়ে রাগ
-রাগিণীর জাল বুনতে।
গান শোনে সে কাহার সাধ্যি, ছোঁড়াগুলো বাজায় বাদ্যি,
বিদ্যেখানা ফাটিয়ে ফেলে থাকে তারা তুলো ধুনতে।
ডেকে বলে, হেঁকে বলে, ভঙ্গি করে বেঁকে বলে —
"আমার কথা শোনো সবাই, গান শোনো আর নাই শোনো।
গান যে কাকে বলে সেইটে বুঝিয়ে দেব , তাই শোনে।
"

টীকে করেন ব্যখ্যা করেন, জেঁকে ওঠে বক্তিমে —
কে দেখে তার হাত
-পা নাড়া, চক্ষু দুটোর রক্তিমে!
চন্দ্রসূর্য জ্বলছে মিছে আকাশখানার চালাতে —
তিনি বলেন,
"আমিই আছি জ্বলতে এবং জ্বালাতে।"
কুঞ্জবনের তানপুরোতে সুর বেঁধেছে বসন্ত,
সেটা শুনে নাড়েন কর্ণ , হয় নাকো তাঁর পছন্দ।
তাঁরি সুরে গাক
-না সবাই টপ্পা খেয়াল ধুরবোধ —

গায় না যে কেউ , আসল কথা নাইকো কারো সুর
-বোধ !
কাগজওয়ালা সারি সারি নাড়ছে কাগজ হাতে নিয়ে —
বাঙলা থেকে শান্তি বিদায় তিনশো কুলোর বাতাস দিয়ে।
কাগজ দিয়ে নৌকা বানায় বেকার যত ছেলেপিলে,
কর্ণ ধরে পার করবেন দু
-এক পয়সা খেয়া দিলে।
সস্তা শুনে ছুটে আসে যত দীর্ঘকর্ণগুলো —
বঙ্গদেশের চতুর্দিকে তাই উড়ছে এত ধুলো।
খুদে খুদে ‘আর্য' গুলো ঘাসের মতো গজিয়ে ওঠে,
ছুঁচোলো সব জিবের ডগা কাঁটার মতো পায়ে ফোটে।
তাঁরা বলেন 
"আমিই কল্কি" — গাঁজার কল্কি হবে বুঝি !
অবতারে ভরে গেল যত রাজ্যের গলিঘুঁজি।

পাড়ার এমন কত আছে কত কব তার!
বঙ্গদেশে মেলাই এল বরা '
-অবতার।
দাঁতের জোরে হিন্দুশাস্ত্র তুলবে তারা পাঁকের থেকে,
দাঁতকপাটি লাগে তাদের দাঁত - খিঁচুনির ভঙ্গি দেখে।
আগাগোড়াই মিথ্যে কথা, মিথ্যেবাদীর কোলাহল,
জিব নাচিয়ে বেড়ায় যত জিহ্বাওয়ালা সঙের দল।
বাক্যবন্যা ফেনিয়ে আসে, ভাসিয়ে নে যায় তোড়ে —
কোনোক্রমে রক্ষে পেলাম মা
-গঙ্গারই ক্রোড়ে।
হেথায় কিবা শান্তি
-ঢালা কুলুকুলু তান !
সাগর
-পানে বহন করে গিরিরাজের গান।
ধীরি ধীরি বাতাসটি দেয় জলের গায়ে কাঁটা ।
আকাশেতে আলো
-আঁধার খেলে জোয়ারভাঁটা।
তীরে তীরে গাছের সারি পল্লবেরই ঢেউ ।
সারা দিবস হেলে দোলে , দেখে না তো কেউ।
পূর্বতীরে তরুশিরে অরুণ হেসে চায় —
পশ্চিমেতে কুঞ্জমাঝে সন্ধ্যা নেমে যায়।
তীরে ওঠে শঙ্খধ্বনি, ধীরে আসে কানে,
সন্ধ্যাতারা চেয়ে থাকে ধরণীর পানে।
ঝাউবনের আড়ালেতে চাঁদ ওঠে ধীরে,
ফোটে সন্ধ্যাদীপগুলি অন্ধকার তীরে।
এই শান্তি
-সলিলেতে দিয়েছিলেম ডুব,
হট্টগোলটা ভুলেছিলেম, সুখে ছিলেম খুব।

জান তো ভাই আমি হচ্ছি জলচরের জাত,
আপন মনে সাঁতরে বেড়াই — ভাসি যে দিনরাত।
রোদ পোহাতে ডাঙায় উঠি, হাওয়াটি খাই চোখ বুজে,
ভয়ে ভয়ে কাছে এগোই তেমন তেমন লোক বুঝে।
গতিক মন্দ দেখলে আবার ডুবি অগাধ জলে,
এমনি করেই দিনটা কাটাই লুকোচুরির ছলে।
তুমি কেন ছিপ ফেলেছ শুকনো ডাঙায় বসে?
বুকের কাছে বিদ্ধ করে টান মেরেছ কষে।
আমি তোমায় জলে টানি, তুমি ডাঙায় টানো —
অটল হয়ে বসে আছ, হার তো নাহি মানো।
আমারি নয় হার হয়েছে, তোমারি নয় জিত —
খাবি খাচ্ছি ডাঙায় পড়ে হয়ে পড়ে চিত।
আর কেন ভাই, ঘরে চলো ছিপ গুটিয়ে নাও,
রবীন্দ্রনাথ পড়ল ধরা ঢাক পিটিয়ে দাও।

           
বিরহীর পত্র
হয় কি না হয় দেখা, ফিরি কি না ফিরি,
          দূরে গেলে এই মনে হয়;
দুজনার মাঝখানে অন্ধকারে ঘিরি
          জেগে থাকে সতত সংশয়।
এত লোক, এত জন, এত পথ গলি,
          এমন বিপুল এ সংসার —
ভয়ে ভয়ে হাতে হাতে বেঁধে বেঁধে চ
লি,
          ছাড়া পেলে কে আর কাহার।

তারায় তারায় সদা থাকে চোখে চোখে
          অন্ধকারে অসীম গগনে।
ভয়ে ভয়ে অনিমেষে কম্পিত আলোকে
          বাঁধা থাকে নয়নে নয়নে।
চৌদিকে অটল স্তব্ধ সুগভীর রাত্রি,
          তরুহীন মরুময় ব্যোম —
মুখে মুখে চেয়ে তাই চলে যত যাত্রী
          চলে গ্রহ রবি তারা সোম।

নিমেষের অন্তরালে কী আছে কে জানে,
          নিমেষে অসীম পড়ে ঢাকা —
অন্ধ কালতুরঙ্গম রাশ নাহি মানে,
          বেগে ধায় অদৃষ্টের চাকা।
কাছে কাছে পাছে পাছে চলিবারে চাই,
          জেগে জেগে দিতেছি পাহারা,
একটু এসেছে ঘুম — চমকি তাকাই
          গেছে চলে কোথায় কাহারা!
ছাড়িয়ে চলিয়া গেলে কাঁদি তাই একা
          বিরহের সমুদ্রের তীরে।
অনন্তের মাঝখানে দু
-দণ্ডের দেখা
          তাও কেন রাহু এসে ঘিরে!
মৃত্যু যেন মাঝে মাঝে দেখা দিয়ে যায়,
          পাঠায় সে বিরহের চর।
সকলেই চলে যাবে, পড়ে রবে হায়
          ধরণীর শূন্য খেলাঘর।

গ্রহ তারা ধূমকেতু কত রবি শশী
         শূন্য ঘেরি জগতের ভিড়,
তারি মাঝে যদি ভাঙে , যদি যায় খসি
         আমাদের দু-ণ্ডের নীড় —
কোথায় কে হারাইব! কোন্‌ রাত্রিবেলা
         কে কোথায় হইব অতিথি !
তখন কি মনে রবে দু
-দিনের খেলা,
         দরশের পরশের স্মৃতি !

তাই মনে করে কি রে চোখে জল আসে
        একটুকু চোখের আড়ালে!
প্রাণ যারে প্রাণের অধিক ভালোবাসে
        সেও কি রবে না এক কালে !
আশা নিয়ে এ কি শুধু খেলাই কেবল —
        সুখ দুঃখ মনের বিকার !
ভালোবাসা কাঁদে, হাসে, মোছে অশ্রুজল,
        চায়, পায়, হারায় আবার।