ভাষাংশ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাসংগ্রহের সূচি


কড়ি ও কোমল
সংযোজন

 


 

        শরতের শুকতারা

একাদশী রজনী
                 পোহায় ধীরে ধীরে —
রাঙা মেঘ দাঁড়ায়
                 উষারে ঘিরে ঘিরে।
ক্ষীণ চাঁদ নভের
                 আড়ালে যেতে চায়,
মাঝখানে দাঁড়ায়ে
                কিনারা নাহি পায়।
বড়ো ম্লান হয়েছে
                চাঁদের মুখখানি,
আপনাতে আপনি
                মিশাবে অনুমানি।
হেরো দেখো কে ওই
                এসেছে তার কাছে,
শুকতারা চাঁদের
                মুখেতে চেয়ে আছে।
মরি মরি কে তুমি
                একটুখানি প্রাণ,
কী না জানি এনেছ
                 করিতে ওরে দান।
চেয়ে দেখো আকাশে
                আর তো কেহ নাই,
তারা যত গিয়েছে
                 যে যার নিজ ঠাঁই।
সাথীহারা চন্দ্রমা
                  হেরিছে চারি ধার,
শূন্য আহা নিশির
                  বাসর-ঘর তার!
শরতের প্রভাতে
                   বিমল মুখ নিয়ে
তুমি শুধু রয়েছে
                   শিয়রে দাঁড়াইয়ে।
ও হয়তো দেখিতে
                  পেলে না মুখ তোর!
ও হয়তো তারার
                  খেলার গান গায়,
ও হয়তো বিরাগে
                 উদাসী হতে চায়!
ও কেবল নিশির
                 হাসির অবশেষ!
ও কেবল অতীত
                সুখের স্মৃতিলেশ!
দ্রুতপদে তাহারা
                কোথায় চলে গেছে —
সাথে যেতে পারে নি
                পিছনে পড় আছে!
কত দিন উঠেছ
                নিশির শেষাশেষি,
দেখিয়াছ চাঁদেতে
                তারাতে মেশামেশি!
দুই দণ্ড চাহিয়া
                 আবার চলে যেতে,
মুখখানি লুকাতে
                  উষার আঁচলেতে।
পুরবের একান্তে
                  একটু দিয়ে দেখা,
কী ভাবিয়া তখনি
                  ফিরিতে একা একা।
আজ তুমি দেখেছ
                  চাঁদের কেহ নাই,
স্নেহময়ি, আপনি
                  এসেছ তুমি তাই!
দেহখানি মিলায়
                   মিলায় বুঝি তার!
হাসিটুকু রহে না
                    রহে না বুঝি আর!
দুই দণ্ড পরে তো
                    রবে না কিছু হায়!
কোথা তুমি, কোথায়
                    চাঁদের ক্ষীণকায়!
কোলাহল তুলিয়া
                    গরবে আসে দিন,
দুটি ছোটো প্রাণের
                    লিখন হবে লীন।
সুখশ্রমে মলিন
                    চাঁদের একসনে
নবপ্রেম মিলাবে
                    কাহার রবে মনে!

               
পত্র
         শ্রীমতী ইন্দিরা প্রাণাধিকাসু
              স্টীমার । খুলনা

মাগো আমার লক্ষ্মী,
মনিষ্যি না পক্ষী!
এই ছিলেম তরীতে,
কোথায় এনু ত্বরিতে!
কাল ছিলেম খুলনায়,
তাতে তো আর ভুল নাই,
কলকাতায় এসেছি সদ্য,
বসে বসে লিখছি পদ্য।

তোদের ফেলে সারাটা দিন
              আছি অমনি এক রকম,
খোপে বসে পায়রা যেন
              করছি কেবল বক্‌বকম!
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
              মেঘ করেছে আকাশে,
উষার রাঙা মুখখানি গো
              কেমন যেন ফ্যাকাশে!
বাড়িতে যে কেউ কোথা নেই
              দুয়োরগুলো ভেজানো,
ঘরে ঘরে খুঁজে বেড়াই
              ঘরে আছে কে যেন!
পক্ষীটি সেই ঝুপসি হয়ে
              ঝিমচ্ছে রে খাঁচাতে,
ভুলে গেছে নেচে নেচে
             পুচ্ছটি তার নাচাতে।
ঘরের কোণে আপন মনে
             শূন্য পড়ে বিছেনা,
কাহার তরে কেঁদে মরে
             সে কথাটা মিছে না!
বইগুলো সব ছড়িয়ে প'ড়ে
             নাম লেখা তায় কার গো!
এমনি তারা রবে কি রে
             খুলবে না কেউ আর গো!
এটা আছে সেটা আছে
             অভাব কিছু নেই তো,
স্মরণ করে দেয় রে যারে
             থাকে নাকো সেই তো!
বাগানে ওই দুটো গাছে
             ফুল ফুটেছে রাশি রাশি,
ফুলের গন্ধে মনে পড়ে
             ফুল কে আমায় দিত মেলা,
বিছেনায় কার মুখটি দেখে
             সকাল হত সকালবেলা!
জল থেকে তুই আসবি কবে
             মাটির লক্ষ্মী মাটিতে
ঠাকুরবাবুর ছয় নম্বর
             জোড়াসাঁকোর বাটীতে!

ইস্টিম ওই রে ফুরিয়ে এল
             নোঙর তবে ফেলি অদ্য।
অবিদিত নেই তো তোমার
             রবিকাকা কুঁড়ের হদ্দ!
আজকে নাকি মেঘ করেছে
             ঠেকছে কেমন ফাঁকা-ফাঁকা,
তাই খানিকটা ফোঁসফোঁসিয়ে
             বিদায় হল —
                                রবিকাকা।

             
পত্র
শ্রীমতী ইন্দিরা প্রাণাধিকাসু
         স্টীমার । খুলনা

    বসে বসে লিখলেম চিঠি
    পুরিয়ে দিলাম চারটি পিঠই,
    পেলেম না তার জবাবই
    এমনি তোমার নবাবী!

দুটো ছত্র লিখবি পত্র
         একলা তোমার 'রব্‌-কা' যে!
পোড়ারমুখী তাও হবে না
         আলিস্যি তোর সব কাজে!
ঝগড়াটে নয় স্বভাব আমার
         নইলে দেখতে কারখানা,
গলার চোটে আকাশ ফেটে
         হয়ে যেত চারখানা,
বাছা আমার দেখতে পেতে
         এই কলমের ধারখানা!

তোমার মতো এমনি মা তো
         দেখি নি এ বঙ্গে গো,
মায়া দয়া যা-কিছু সে
         যদিন থাকে সঙ্গে গো!
চোখের আড়াল প্রাণের আড়াল
        কেমনতরো ঢঙ এ গো!
তোমার প্রাণ যে পাষাণ-সম
        জানি সেটা
Long ago!

সংসারে যে সবি মায়া
        সেটা নেহাত গল্প না!
বাইরেতে এক ভিতরে এক
        এ যেন কার খল-পনা!
সত্যি বলে যেটা দেখি
        সেটা আমার কল্পনা!
ভেবে একবার দেখো বাছা
        ফিলজফি অল্প না!

মস্ত একটা বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ
         কে রেখেছে সাজিয়ে
যা করি তা কেবল 'থোড়া
         জমির বাস্তে কাজিয়ে!'
    বৃষ্টি পড়ে চিঠি না পাই,
    মনটা নিয়ে ততই হাঁপাই ,
শূন্যে চেয়ে ততই ভাবি
         সকলি ভোজ-বাজি এ!
ফিলজফি মনের মধ্যে
          ততই ওঠে গাঁজিয়ে!

দূর হোক গে, এত কথা
         কেনই বলি তোমাকে!
ভরা নায়ে পা দিয়েছ,
        আছ তুমি দেমাকে!
              ---
তোমার সঙ্গে আর কথা না,
           তুমি এখন লোকটা মস্ত,
কাজ কি বাপু, এইখেনেতেই
           রবীন্দ্রনাথ হলেন অস্ত।

          
জন্মতিথির উপহার
              একটি কাঠের বাক্স
          শ্রীমতী ইন্দিরা প্রাণাধিকাসু

স্নেহ-উপহার এনেছি রে দিতে
           লিখেও এনেছি দু-তিন ছত্তর।
দিতে কত কী যে সাধ যায় তোরে
          দেবার মতো নেই জিনিস-পত্তর!
টাকাকড়িগুলো ট্যাঁকশালে আছে
          ব্যাঙ্কে আছে সব জমা,
ট্যাঁকে আছে খালি গোটা দুত্তিন,
          এবার করো বাছ ক্ষমা!
হীরে জহরাৎ যত ছিল মোর
          পোঁতা ছিল সব মাটিতে,
জহরী যে যেত সন্ধান পেয়ে
          নে গেছে যে যার বাটীতে!
দুনিয়া শহর জমিদারি মোর,
          পাঁচ ভূতে করে কাড়াকাড়ি,
হাতের কাছেতে যা-কিছু পেলুম,
          নিয়ে এনু তাই তাড়াতাড়ি!
স্নেহ যদি কাছে রেখে যাওয়া যেত
          চোখে যদি দেখা যেত রে,
বাজারে-জিনিস কিনে নিয়ে এসে
          বল্‌ দেখি দিত কে তোরে!
জিনিসটা অতি যৎসামান্য
          রাখিস ঘরের কোণে,
বাক্সখানি ভরে স্নেহ দিনু তোরে
         এইটে থাকে যেন মনে!
বড়োসড়ো হবি ফাঁকি দিয়ে যাবি,
          কোন্‌খেনে রবি নুকিয়ে,
কাকা-ফাকা সব ধুয়ে-মুছে ফেলে
          দিবি একেবারে চুকিয়ে।
তখন যদি রে এই কাঠখানা
          মনে একটুকু তোলে ঢেউ —
একবার যদি মনে পড়ে তোর
          'বুজি' বলে বুঝি ছিল কেউ!
এই-যে সংসারে আছি মোরা সবে
          এ বড়ো বিষম দেশটা!
ফাঁকিফুঁকি দিয়ে দূরে চলে যেতে
          ভুলে যেতে সবার চেষ্টা!
ভয়ে ভয়ে তাই সবারে সবাই
          কত কী যে এনে দিচ্ছে,
এটা-ওটা দিয়ে স্মরণ জাগিয়ে
          বেঁধে রাখিবার ইচ্ছে!
মনে রাখতে যে মেলাই কাঠ-খড় চাই,
          ভুলে যাবার ভারি সুবিধে,
ভালোবাস যারে কাছে রাখ তারে
          যাহা পাস তারে খুবি দে!
বুঝে কাজ নেই এত শত কথা,
          ফিলজফি হোক ছাই!
বেঁচে থাকো তুমি সুখে থাকো বাছা
          বালাই নিয়ে মরে যাই!

               
চিঠি
       শ্রীমতী ইন্দিরা প্রাণাধিকাসু
                  স্টীমার 'রাজহংস' । গঙ্গা

চিঠি লিখব কথা ছিল,
           দেখছি সেটা ভারি শক্ত।
তেমন যদি খবর থাকে
           লিখতে পারি তক্ত তক্ত।
খবর বয়ে বেড়ায় ঘুরে
           খবরওয়ালা ঝাঁকা-মুটে।
আমি বাপু ভাবের ভক্ত
            বেড়াই নাকো খবর খুঁটে।
এত ধুলো, এত খবর
            কলকাতাটার গলিতে!
নাকে চোকে খবর ঢোকে
            দু-চার কদম চলিতে।
এত খবর সয় না আমার
            মরি আমি হাঁপোষে।
ঘরে এসেই খবরগুলো
            মুছে ফেলি পাপোষে।
আমাকে তো জানই বাছা!
            আমি একজন খেয়ালি।
কথাগুলো যা বলি, তার
            অধিকাংশই হেঁয়ালি।
আমার যত খবর আসে
            ভোরের বেলা পুব দিয়ে।
পেটের কথা তুলি আমি
            পেটের মধ্যে ডুব দিয়ে।
আকাশ ঘিরে জাল ফেলে
            তারা ধরাই ব্যাবসা।
থাক্‌ গে তোমার পাটের হাটে
             মথুর কুণ্ডু শিবু সা ।
কল্পতরুর তলায় থাকি
             নই গো আমি খবুরে।
হাঁ করিয়ে চেয়ে আছি
             মেওয়া ফলে সবুরে।
তবে যদি নেহাত কর
             খবর নিয়ে টানাটানি।
আমি বাপু একটি কেবল
             দুষ্টু মেয়ের খবর জানি!
দুষ্টুমি তার শোনো যদি
             অবাক হবে সত্যি!
এত বড়ো বড়ো কথা তার
             মুখখানি একরত্তি।
মনে মনে জানেন তিনি
             ভারি মস্ত লোকটা।
লোকের সঙ্গে না-হক কেবল
             ঝগড়া করবার ঝোঁকটা।
আমার সঙ্গেই যত বিবাদ
             কথায় কথায় আড়ি।
এর নাম কি ভদ্র ব্যাভার!
             বড্ড বাড়াবাড়ি।
মনে করেছি তার সঙ্গে
            কথাবার্তা বন্দ করি।
প্রতিজ্ঞা থাকে না পাছে
           সেইটে ভারি সন্দ করি।
সে না হলে সকাল বেলায়
           চামেলি কি ফুটবে!
সে নইলে কি সন্ধে বেলায়
           সন্ধেতারা উঠবে।
সে না হলে দিনটা ফাঁকি
           আগাগোড়াই মস্কারা।
পোড়ারমুখী জানে সেটা
          তাই এত তার আস্কারা।
চুড়ি-পরা হাত দুখানি
          কতই জানে ফন্দি।
কোনোমতে তার সাথে তাই
          করে আছি সন্ধি।

নাম যদি তার জিগেস কর
          নামটি বলা হবে না।
কী জানি সে শোনে যদি
         প্রাণটি আমার রবে না।
নামের খবর কে রাখে তার
         ডাকি তারে যা খুশি।
দুষ্টু বলো, দস্যি বলো,
         পোড়ারমুখী, রাক্ষুসী!
বাপ মায়ে যে নাম দিয়েছে
         বাপ মায়েরি থাক্‌ সে।
ছিষ্টি খুঁজে মিষ্টি নামটি
         তুলে রাখুন বাক্সে!
এক জনেতে নাম রাখবে
          অন্নপ্রাশনে।
বিশ্বসুদ্ধ সে নাম নেবে
         বিষম শাসন এ!
নিজের মনের মত সবাই
         করুক নামকরণ ।
বাবা ডাকুন 'চন্দ্রকুমার'
         খুড়ো 'রামচরণ' !
ধার-করা নাম নেব আমি
         হবে না তো সিটি।
জানই আমার সকল কাজে
        
Originality
ঘরের মেয়ে তার কি সাজে
         সঙস্কৃত নাম ।
এতে কেবল বেড়ে ওঠে
         অভিধানের দাম।
আমি বাপু ডেকে বসি
        যেটা মুখে আসে,
যারে ডাকি সেই তা বোঝে
        আর সকলে হাসে!
দুষ্টু মেয়ের দুষ্টুমি — তায়
        কোথায় দেব দাঁড়ি!
অকূল পাথার দেখে শেষে
        কলমের হাল ছাড়ি!
শোনো বাছা , সত্যি কথা
        বলি তোমার কাছে —
ত্রিজগতে তেমন মেয়ে
       একটি কেবল আছে!
বর্ণিমেটা কারো সঙ্গে
       মিলে পাছে যায় —
তুমুল ব্যাপার উঠবে বেধে
       হবে বিষম দায়!
হপ্তাখানেক বকাবকি
       ঝগড়াঝাঁটির পালা,
একটু চিঠি লিখে, শেষে
       প্রাণটা ঝালাফালা।
আমি বাপু ভালোমানুষ
       মুখে নেইকো রা।
ঘরের কোণে বসে বসে
       গোঁফে দিচ্ছি তা।
আমি যত গোলে পড়ি
       শুনি নানান বাক্যি।
খোঁড়ার পা যে খানায় পড়ে
       আমিই তাহার সাক্ষী।
আমি কারো নাম করি নি
       তবু ভয়ে মরি।
তুই পাছে নিস গায়ে পেতে
       সেইটো বড়ো ডরি!
কথা একটা উঠলে মনে
       ভারি তোরা জ্বালাস ।
আমি বাপু আগে থাকতে
       বলে হলুম খালাস!

             
পত্র
শ্রীমান্‌ দামু বসু এবং চামু বসু
                   সম্পাদক সমীপেষু ।

দামু বোস আর চামু বোসে
            কাগজ বেনিয়েছে
বিদ্যেখানা বড্ড ফেনিয়েছে!
                 (আমার দামু আমার চামু!)

কোথায় গেল বাবা তোমার
               মা জননী কই!
সাত-রাজার-ধন মানিক ছেলের
               মুখে ফুটছে খই!
                    (আমার দামু আমার চামু!)

দামু ছিল একরত্তি
              চামু তথৈবচ,
কোথা থেকে এল শিখে
             এতই খচমচ!
                    (আমার দামু আমার চামু!)

দামু বলেন 'দাদা আমার'
             চামু বলেন 'ভাই',
আমাদের দোঁহাকার মতো
            ত্রিভুবনে নাই!
                   (আমার দামু আমার চামু!)

গায়ে পড়ে গাল পাড়ছে
            বাজার সরগরম,
মেছুনি-সংহিতায় ব্যাখ্যা
             হিঁদুর ধরম!
                    (দামু আমার চামু!)

দামুচন্দ্র অতি হিঁদু
            আরো হিঁদু চামু
সঙ্গে সঙ্গে গজায় হিঁদু
            রামু বামু শামু
                    (দামু আমার চামু!)

রব উঠেছে ভারতভূমে
            হিঁদু মেলা ভার,
দামু চামু দেখা দিয়েছেন
            ভয় নেইকো আর ।
                  (ওরে দামু, ওরে চামু!)

নাই বটে গোতম অত্রি
            যে যার গেছে সরে,
হিঁদু দামু চামু এলেন
            কাগজ হাতে করে ।
                 (আহা দামু আহা চামু!)

লিখছে দোঁহে হিঁদুশাস্ত্র
            এডিটোরিয়াল,
দামু বলছে মিথ্যে কথা
             চামু দিচ্ছে গাল।
                  (হায় দামু হায় চামু!)

এমন হিঁদু মিলবে না রে
            সকল হিঁদুর সেরা,
বোস বংশ আর্যবংশ
           সেই বংশের এঁরা!
                   (বোস দামু বোস চামু!)

কলির শেষে প্রজাপতি
           তুলেছিলেন হাই,
সুড়সুড়িয়ে বেড়িয়ে এলেন
           আর্য দুটি ভাই;
                  (আর্য দামু চামু!)

দন্ত দিয়ে খুঁড়ে তুলছে
           হিঁদু শাস্ত্রের মূল,
মেলাই কচুর আমদানিতে
           বাজার হুলুস্থুল।
                 (দামু চামু অবতার!)

মনু বলেন 'মনু আমি'
          বেদের হল ভেদ,
দামু চামু শাস্ত্র ছাড়ে,
          রইল মনে খেদ!
                 (ওরে দামু ওরে চামু!)

মেড়ার মত লড়াই করে
          লেজের দিকটা মোটা,
দাপে কাঁপে থরথর
         হিঁদুয়ানির খোঁটা!
                 (আমার হিঁদু দামু চামু!)

দামু চামু কেঁদে আকুল
         কোথায় হিঁদুয়ানি!
ট্যাকে আছে গোঁজ ' যেথায়
         সিকি দুয়ানি।
                (থলের মধ্যে হিঁদুয়ানি!)

দামু চামু ফুলে উঠল
         হিঁদুয়ানি বেচে,
হামাগুড়ি ছেড়ে এখন
        বেড়ায় নেচে নেচে!
               (ষেটের বাছা দামু চামু!)

আদর পেয়ে নাদুস নুদুস
         আহার করছে কসে,
তরিবৎটা শিখলে নাকো
         বাপের শিক্ষাদোষে!
                (ওরে দামু চামু!)

এসো বাপু কানটি নিয়ে,
         শিখবে সদাচার,
কানের যদি অভাব থাকে
         তবেই নাচার!
                 (হায় দামু হায় চামু!)
 

পড়াশুনো করো, ছাড়ো
         শাস্ত্র আষাঢ়ে,
মেজে ঘষে তোল্‌ রে বাপু
         স্বভাব চাষাড়ে।
               (ও দামু ও চামু!)

ভদ্রলোকের মান রেখে চল্‌
         ভদ্র বলবে তোকে,
মুখ ছুটোলে কুলশীলটা
         জেনে ফেলবে লোকে!
               (হায় দামু হায় চামু!)

পয়সা চাও তো পয়সা দেব
        থাকো সাধুপথে,
তাবচ্চ শোভতে কেউ কেউ
        যাবৎ ন ভাষতে!
                (হে দামু হে চামু!)