ভাষাংশ
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর
-এর
রচনাবলী
প্রথম অঙ্ক
সপ্তম দৃশ্য
মন্ত্রগৃহ
বিক্রমদেব ও মন্ত্রী
বিক্রমদেব। এই দণ্ডে রাজ্য হতে দাও দূর করে
যত সব বিদেশী দস্যুরে। সদা দুঃখ,
সদা ভয়, রাজ্য জুড়ে কেবল ক্রন্দন!
আর যেন এক দিন না শুনিতে হয়
পীড়িত প্রজার এই নিত্য কোলাহল।
মন্ত্রী।
মহারাজ, ধৈর্য চাই। কিছুদিন ধরে
রাজার নিয়ত দৃষ্টি পড়ুক সর্বত্র,
ভয় শোক বিশৃঙ্খলা তবে দূর হবে।
অন্ধকারে বাড়িয়াছে বহুকাল ধরে
অমঙ্গল
প্রথম অঙ্ক
অষ্টম দৃশ্য
ত্রিবেদীর কুটির
মন্ত্রী ও ত্রিবেদী
মন্ত্রী।
বুঝেছ ঠাকুর, এ কাজ তোমাকে ছাড়া আর কাউকে দেওয়া যায় না।
ত্রিবেদী।
তা বুঝেছি। হরি হে। কিন্তু মন্ত্রী, কাজের সময় আমাকে ডাক, আর পৈরহিত্যের বেলায়
দেবদত্তের খোঁজ পড়ে।
মন্ত্রী।
তুমি তো জান ঠাকুর, দেবদত্ত বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ, ওঁকে দিয়ে আর তো কোনো কাজ হয় না। উনি
কেবল মন্ত্র পড়তে আর ঘণ্টা নাড়তে পারেন।
ত্রিবেদী।
কেন, আমার কি বেদের উপর কম ভক্তি? আমি বেদ পুজো করি, তাই বেদ পাঠ করবার সুবিধে হয়ে
ওঠে না। চন্দনে আর সিঁদুরে আমার বেদের একটা অক্ষরও দেখবার জো নেই। আজই আমি যাব। হে
মধুসূদন।
মন্ত্রী।
কী বলবে?
ত্রিবেদী।
তা আমি বলব কালভৈরবের পুজো, তাই রাজা তোমাদের নিমন্ত্রণ করেছেন। আমি খুব বড়োরকম
সালংকার দিয়েই বলব। সব কথা এখন মনে আসছে না‒
পথে যেতে যেতে ভেবে নেব। হরি হে তুমিই
সত্য।
মন্ত্রী।
যাবার আগে একবার দেখা করে যেয়ো ঠাকুর।
[ প্রস্থান
ত্রিবেদী।
আমি নির্বোধ, আমি শিশু, আমি সরল, আমি তোমাদের কাজ উদ্ধার করবার গোরু! পিঠে বস্তা,
নাকে দড়ি, কিছু বুঝব না, শুধু লেজে মোড়া খেয়ে চলব-- আর সন্ধ্যেবেলায় দুটিখানি শুকনো
বিচিলি খেতে দেবে। হরি হে, তোমারি ইচ্ছে। দেখা যাবে কে কতখানি বোঝে। ওরে এখনো পুজোর
সামগ্রী দিলি নে? বেলা যায় যে। নারায়ণ। নারায়ণ।