ভাষাংশ
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর
-এর
রচনাবলী
রচনাবলী সূচি
দ্বিতীয় অঙ্ক
চতুর্থ দৃশ্য
প্রাসাদ
বিক্রমদেব, মন্ত্রী ও দেবদত্ত
বিক্রমদেব। পলায়ন! রাজ্য ছেড়ে পলায়ন! এ রাজ্যেতে
যত সৈন্য, যত দুর্গ, যত কারাগার,
যত লোহার শৃঙ্খল আছে, সব দিয়ে
পারে না কি বাঁধিয়া রাখিতে দৃঢ়বলে
ক্ষুদ্র এক নারীর হৃদয়? এই রাজা?
এই কি মহিমা তার। বৃহৎ প্রতাপ,
লোকবল অর্থবল নিয়ে, পড়ে থাকে
শূন্য স্বর্ণ পিঞ্জরের মতো, ক্ষুদ্র পাখি
উড়ে চলে যায়।
মন্ত্রী। হায় হায়, মহারাজ,
লোকনিন্দা, ভগ্নবাঁধ জলস্রোত সম,
ছুটে চারিদিক হতে।
বিক্রমদেব। চুপ করো মন্ত্রী।
লোকনিন্দা, লোকনিন্দা সদা! নিন্দাভারে
রসনা খসিয়া যাক অলস লোকের।
দিবা যদি গেল, উঠুক না চুপি চুপি
ক্ষুদ্র পঙ্ককুণ্ড হতে দুষ্ট বাষ্পরাশি,
অমার আঁধার তাহে বাড়িবে না কিছু।
লোকনিন্দা!
দেবদত্ত। মন্ত্রী, পরিপূর্ণ সূর্য-পানে
কে পারে তাকাতে। তাই গ্রহণের বেলা
ছুটে আসে যত মর্তলোক, দীননেত্রে
চেয়ে দেখে দুর্দিনের দিনপতি-পানে,
আপনার কালিমাখা কাচখণ্ড দিয়ে
কালো দেখে গগনের আলো। মহারানী,
মা জননী, এই ছিল অদৃষ্টে তোমার?
তব নাম ধুলায় লুটায়? তব নাম
ফিরে মুখে মুখে? এ কী এ দুর্দিন আজি!
তবু তুমি তেজস্বিনী সতী, এরা সব
পথের কাঙাল।
বিক্রমদেব। ত্রিবেদী কোথায় গেল?
মন্ত্রী, ডেকে আনো তারে। শোনা হয় নাই
তার সব কথা, ছিনু অন্যমনে।
মন্ত্রী। যাই
ডেকে আনি তারে।
[ প্রস্থান
বিক্রমদেব। এখনো সময় আছে,
এখনো ফিরাতে পারি পাইলে সন্ধান।
আবার সন্ধান? এমনি কি চিরদিন
কাটিবে জীবন? সে দিবে না ধরা, আমি
ফিরিব পশ্চাতে? প্রেমের শৃঙ্খল হাতে
রাজ্য রাজধর্ম ফেলে শুধু রমণীর
পলাতক হৃদয়ের সন্ধানে ফিরিব?
পলাও, পলাও নারী, চির দিনরাত
করো পলায়ন; গৃহহীন প্রেমহীন
বিশ্রামবিহীন অনাবৃত
পৃথ্বীমাঝে
কেবল পশ্চাতে লয়ে আপনার ছায়া।
ত্রিবেদীর প্রবেশ
চলে যাও, দূর হও, কে ডাকে তোমারে?
বার বার তার কথা কে চাহে শুনিতে