ভাষাংশ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর রচনাবলী

রচনাবলী সূচি


রাজা ও রানী

তৃতীয় অঙ্ক
চতুর্থ দৃশ্য

কাশ্মীর-প্রাসাদ
অন্তঃপুর
রেবতী ও চন্দ্রসেন

রেবতী।       যেতে দাও মহারাজ। কী ভাবিছ বসি?
                 ভাবিছ কী লাগি? যাক যুদ্ধে,− তার পরে
                দেবতা-কৃপায় আর যেন নাহি আসে
                ফিরে।
চন্দ্রসেন।            ধীরে রানী, ধীরে।
রেবতী।                              ক্ষুধিত মার্জার
                বসে ছিলে এতদিন সময় চাহিয়া,
                আজ তো সময় এল− তবু আজো কেন
                সেই বসে আছ।
চন্দ্রসেন।                         কে বসিয়া ছিল, রানী,
                কিসের লাগিয়া।
রেবতী।                             ছি ছি, আবার ছলনা।
                লুকাবে আমার কাছে? কোন্‌ অভিপ্রায়ে
                এতদিন কুমারের দাও নি বিবাহ।
                কেন বা সম্মতি দিলে ত্রিচূড়-রাজ্যের
                এই অনার্য প্রথায়। পঞ্চবর্ষ ধরে
                কন্যার সাধনা।
চন্দ্রসেন।                         ধিক্‌। চুপ করো রানী−
                কে বোঝে কাহার অভিপ্রায়?
রেবতী।                                          তবে, বুঝে
                দেখো ভালো করে। যে কাজ করিতে চাও
                জেনে শুনে করো। আপনার কাছ হতে
                রেখো না গোপন করে উদ্দেশ্য আপন।
                দেবতা তোমার হয়ে অলক্ষ্য-সন্ধানে
                করিবে না তব লক্ষ্যভেদ। নিজহাতে
                উপায় রচনা করো অবসর বুঝে।
                বাসনার পাপ সেই হতেছে সঞ্চয়,
                তার পরে কেন থাকে অসিদ্ধির ক্লেশ।
                কুমারে পাঠাও যুদ্ধে।
চন্দ্রসেন।                                 বাহিরে রয়েছে
                কাশ্মীরের যত উপদ্রব। পর-রাজ্যে
                আপনার বিষদন্ত করিতেছে ক্ষয়।
                ফিরায়ে আনিতে চাও তাদের আবার?
রেবতী।      অনেক সময় আছে সে-কথা ভাবিতে।
                আপাতত পাঠাও কুমারে। প্রজাগণ
                ব্যগ্র অতি যৌবরাজ্য-অভিষেক তরে,
                তাদের থামাও কিছুদিন। ইতিমধ্যে
                কত কী ঘটিতে পারে পরে ভেবে দেখো।

                        কুমারের প্রবেশ
রেবতী।     (কুমারের প্রতি) যাও যুদ্ধে, পিতৃব্যের হয়েছে আদেশ।
                বিলম্ব ক'রো না আর, বিবাহ-উৎসব
                পরে হবে। দীপ্ত যৌবনের তেজ ক্ষয়
                করিয়ো না গৃহে বসে আলস্য-উৎসবে।
কুমারসেন।  জয় হোক, জয় হোক জননী তোমার।
                এ কী আনন্দ-সংবাদ। নিজমুখে তাত,
                করহ আদেশ।
চন্দ্রসেন।     যাও তবে। দেখো বৎস,
                থেকো সাবধানে। দর্পমদে ইচ্ছা ক'রে
                বিপদে দিয়ো না ঝাঁপ। আশীর্বাদ করি
                ফিরে এসো জয়গর্বে অক্ষত শরীরে
                পিতৃসিংহাসন 'পরে।
কুমারসেন।                             মাগি জননীর
                আশীর্বাদ।
রেবতী।      কী হইবে মিথ্যা আশীর্বাদে।
                আপনারে রক্ষা করে আপনার বাহু।