ভাষাংশ
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর
-এর
রচনাবলী
রচনাবলী সূচি
ইলা।
মিছে কথা, মিছে কথা। তোরা চুপ কর্।
আমি তার মন জানি। সখী, ভালো করে
বেঁধে দে কবরী মোর ফুলমালা দিয়ে।
নিয়ে আয় সেই নীলাম্বর। স্বর্ণথালে
আন্ তুলে শুভ্র ফুল্ল মালতীর ফুল।
নির্ঝরিণীতীরে ওই বকুলের তলা
ভালো সে বাসিত, ওইখানে শিলাতলে
পেতে দে আসনখানি। এমনি যতনে
প্রতিদিন করি সাজ, এমনি করিয়া
প্রতিদিন থাকি বসে, কে জানে কখন
সহসা আসিবে ফিরে প্রিয়তম মোর।
এসেছিল আমাদের মিলন দেখিতে
পরে পরে দুটি পূর্ণিমার রাত, অস্ত
গেছে নিরাশ হইয়া। মনে স্থির জানি
এবার পূর্ণিমা-নিশি হবে না নিষ্ফল।
আসিবে সে দেখা দিতে। না'ই যদি আসে
তোদের কী! আমারে সে ভুলে যায় যদি
আমিই সে বুঝিব অন্তরে। কেনই বা
না ভুলিবে, কী আছে আমার। ভুলে যদি
সুখী হয় সেই ভালো− ভালোবেসে যদি
সুখী হয় সেও ভালো। তোরা সখী, মিছে
বকিস নে আর। একটুকু চুপ কর্।
গান
আমি নিশিদিন তোমায় ভালোবাসি,
তুমি অবসরমত বাসিয়ো।
আমি নিশিদিন হেথায় বসে আছি,
তোমার যখন মনে পড়ে আসিয়ো॥
আমি সারানিশি তোমা-লাগিয়া
রব বিরহশয়নে জাগিয়া,
তুমি নিমেষের তরে প্রভাতে
এসে মুখপানে চেয়ে হাসিয়ো॥
তুমি চিরদিন মধুপবনে
চির- বিকশিত বনভবনে
যেয়ো মনোমত পথ ধরিয়া
তুমি নিজ সুখস্রোতে ভাসিয়ো।
যদি তার মাঝে পড়ি আসিয়া
তবে আমিও চলিব ভাসিয়া,
যদি দূরে পড়ি তাহে ক্ষতি কী-
মোর স্মৃতি মন হতে নাশিয়ো॥