বিষয়:রবীন্দ্রসঙ্গীত।
গান সংখ্যা: ২
শিরোনাম: জ্বল্  জ্বল্ চিতা, দ্বিগুণ দ্বিগুণ
পাঠ ও পাঠভেদ:
- গীতবিতান (বিশ্বভারতী, 
	কার্তিক ১৪১২)-এর 
	পাঠ: নাট্যগীতি 	১। 
	
		
জ্বল্ জ্বল্ চিতা, দ্বিগুণ দ্বিগুণ—
          
           পরান সঁপিবে বিধবা বালা।
			
			জ্বলুক জ্বলুক চিতার আগুন,
        
           জুড়াবে এখনি প্রাণের জ্বালা॥
			
			শোন্ রে যবন, শোন্ রে তোরা,
        
          যে জ্বালা হৃদয়ে জ্বালালি সবে
			
			সাক্ষী র’লেন দেবতা তার-
        
          এর প্রতিফল ভুগিতে হবে॥ 
			
			দেখ্ রে জগৎ মেলিয়ে নয়ন,
        
           দেখ্ রে চন্দ্রমা, দেখ্ রে গগন,
			
			স্বর্গ হতে সব দেখো দেবগণ—
        
           জ্বলদ্-অক্ষরে রাখো গো লিখে।
			
			স্পর্ধিত যবন, তোরাও দেখ্ রে,
        
         সতীত্ব-রতন করিতে রক্ষণ
			রাজপুত-সতী আজিকে কেমন
        
        সঁপিছে পরান অনলশিখে॥ 
		
	
	- পাণ্ডুলিপির পাঠ: রবীন্দ্রনাথের পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় নি।
- পাঠভেদ: 
- তথ্যানুসন্ধান
		- ক. রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন 
		তথ্য পাওয়া যায় নাই। গানটি লেখা হয়েছিল, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত 
		'সরোজিনী' নাটকের সংলাপের পরিবর্তে 'গান' ব্যবহারের সূত্রে। সরোজিনী নাটক 
		প্রকাশের কিছু আগে- রবীন্দ্রনাথ এই গানটি রচনা করেছিলেন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ 
		ঠাকুরের জীবনস্মৃতিতে এই গানটি রচনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানা যায়। তিনি 
		লিখেছেন—
 
 'রবীন্দ্রনাথ তখন বাড়িতে রামসর্ব্বস্ব পণ্ডিতের নিকট সংস্কৃত পড়িতেন। আমি ও 
		রামসর্ব্বস্ব দুই জনে রবির পড়ার ঘরে বসিয়াই, 'সরোজিনী'র প্রুফ সংশোধন 
		করিতাম। রামসর্ব্বস্ব খুব জোরে জোরে পড়িতেন। পাশের ঘর হইতে রবি শুনিতেন, ও 
		মাঝে মাঝে পণ্ডিত মহাশয়কে ঊদ্দেশ্য করিয়া, কোন্ স্থানে কি করিলে ভালো হয়, 
		সেই মতামত প্রকাশ করিতেন। রাজপুত মহিলাদের চিতাপ্রবেশের যে একটা দৃশ্য আছে, 
		তাহাতে পূর্বে আমি গদ্যে একটা বক্তৃতা রচনা করিয়া দিয়াছিলাম। যখন এই 
		স্থানটা পড়িয়া প্রুফ্ দেখা হইতেছিল, তখন রবীন্দ্রনাথ পাশের ঘরে পড়াশুনা 
		বন্ধ করিয়া চুপ করিয়া বসিয়া শুনিতেছিলেন। গদ্য রচনাটি এখানে একেবারেই খাপ 
		খায় নাই বুঝিয়া, কিশোর রবি একেবারে আমাদের ঘরে আসিয়া হাজির। তিনি বলিলেন- 
		এখানে পদ্য রচনা ছাড়া কিছুতেই জোর বাঁধিতে পারে না। প্রস্তাবটা আমি উপেক্ষা 
		করিতে পারিলাম না- কারণ, প্রথম হইতেই আমারও মনটা কেমন খুঁত খুঁত করিতেছিল। 
		কিন্তু এখন আর সময় কৈ? আমি সময়াভাবের আপত্তি করিলে, রবীন্দ্রনাথ সেই 
		বক্তৃতাটির পরিবর্তে একটা গান রচনা করিয়া দিবার ভার লইলেন, এবং তখনই খুব 
		সময়ের মধ্যেই 'জ্বল্ জ্বল্ চিতা দ্বিগুণ দ্বিগুণ' গানটি রচনা করিয়া আনিয়া 
		আমাদের চমৎকৃত করিয়া দিলেন।'
 [সূত্র : জ্যোতিরিন্দ্রনাথের নাট্যসংগ্রহ। পৃষ্ঠা : ৬৫৪-৬৫৫। বিশ্বভারতী। 
		অগ্রহায়ণ ১৩৭৬ : ১৮৯১ শকাব্দ সংস্করণ]
 
 'সরোজিনী' নাটক প্রকাশিত হয়েছিল ১৫ অগ্রহায়ণ ১২৮২ বঙ্গাব্দে [৩০ নভেম্বর 
		১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দ]। এই গানটি ব্যবহৃত হয়েছে নাটকটির ষষ্ঠ অঙ্কের শেষের 
		দিকে। এই নাটকটির শেষ ফর্মার প্রুফ দেখার সময় রবীন্দ্রনাথ গানটি লিখেছিলেন। 
		জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবস্মৃতি থেকে জানা যায়- 'কিন্তু এখন আর সময় কৈ?' 
		বাক্যটি। অর্থাৎ গানটি প্রকাশকালের খুব নিকটবর্তী সময়ে অর্থাৎ ১৫ 
		অগ্রহায়ণের খুব কাছাকাছি সময়ে রচিত। এই বিচারে অনুমান করা যায় যে- গানটি ১৫ 
		কার্তিক থেকে ১৫ অগ্রহায়ণের মধ্যে রচিত। এই সময় অনুসারে বলা যায় যে, গানটি 
		রবীন্দ্রনাথের ১৪ বৎসর ৬-৭ মাস বয়সের রচনা।
 
 উল্লেখ্য, ১৩১২ 
		বঙ্গাব্দে  (১৯০৫ 
		খ্রিষ্টাব্দ) প্রকাশিত দুর্গাদাস লাহিড়ি সম্পাদিত 'বাঙালির গান' গ্রন্থে 
		গানটি স্থান পেয়েছিল জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের তালিকায় দ্বিতীয় গান 
		হিসেবে। সম্ভবত সরোজিনী নাটকের গান হিসেবে দুর্গাদাস 
		লাহিড়ি ভেবেছিলেন- গানটি 
		জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত।
 
 
খ. 
		প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
		- গ্রন্থ
			- 
			গীতবিতান 
			
			 
				- তৃতীয় 
				খণ্ড [বিশ্বভারতী, ১৩৫৭ বঙ্গাব্দ। নাট্যগীতি ১]
- অখণ্ড সংস্করণ, তৃতীয় সংস্করণ (বিশ্বভারতী,
					পৌষ ১৩৮০ 
					বঙ্গাব্দ)। 
				 নাট্যগীতি
				
				
				পর্যায়ের প্রথম গান।
				
 
- 
			 সরোজিনী
				
			
				- 
				
				জ্যোতিরিন্দ্রনাথ 
					ঠাকুর রচিত নাটক। প্রথম 
					প্রকাশকাল: ৩০ নভেম্বর ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দ। মঙ্গলবার ১৫ 
					অগ্রহায়ণ ১২৮২ বঙ্গাব্দ)।
- জ্যোতিরিন্দ্রনাথ 
					গ্রন্থাবলী, পঞ্চমভাগ। (প্রকাশক: শ্রীসতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়)। 
					ষষ্ঠ দৃশ্য। রাজপুত মহিলাগণ সমস্বরে। পৃষ্ঠা: ২৮৭। [নমুনা]
- 
				
				বাঙালির গান [ 
				
				১৩১২ বঙ্গাব্দ। 
		
				দুর্গাদাস লাহিড়ি সম্পাদিত। 
				জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান হিসেবে গৃহীত হয়েছিল। গান সংখ্যা ২। 
				অহং-একাতালা। পৃষ্ঠা: ৬১৩-৬১৪ ]
 
- 
			স্বরবিতান একপঞ্চাশত্তম (৫১) খণ্ডের 
				(ভাদ্র ১৪১৩) পরিশিষ্ট অংশের প্রথম গান। 
		পৃষ্ঠা: ৫১-৫২
		[নমুনা]
 
 
- 
		প্রকাশের কালানুক্রম:  ১২৮২ বঙ্গাব্দের প্রকাশিত 
				
				জ্যোতিরিন্দ্রনাথ 
					ঠাকুর রচিত সরোজিনী নাটকে গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত 
		হয়েছিল। এরপর ১৩১২ 
		বঙ্গাব্দে প্রকাশিত 
		
		দুর্গাদাস লাহিড়ি সম্পাদিত 
		
		
		বাঙালির গান গ্রন্থে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত 
		হয়েছিল। উভয় গ্রন্থে গানটির দীর্ঘতর পাঠ ছিল। ১৩৫৭ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে 
		প্রকাশিত গীতবিতানের তৃতীয় খণ্ডের দ্বিতীয় সংস্করণে, পূর্ববর্তী দীর্ঘতর ৩৬ 
		পংক্তির পাঠটির প্রথম ৮টি এবং শেষ ৮টি পংক্তি গৃহীত হয়েছিল।
		গীতবিতানের তৃতীয় 
		খণ্ডের 
	
		
		গানটি 
		একইভাবে অখণ্ড গীতাবিতানের তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত 
		হয়েছিল পৌষ ১৩৮০ বঙ্গাব্দের পৌষ মাসে। 
 
গ. 
	সঙ্গীত 
	বিষয়ক তথ্যাবলী:
		- স্বরলিপিকার:
			নাম পাওয়া যায় না।
			
		স্বরবিতান একপঞ্চাশত্তম 
			খণ্ডে গৃহীত স্বরলিপিটি পাণ্ডুলিপি থেকে গৃহীত হয়েছে। 
		
		[স্বরলিপি]
- 
		সুরকার: এই গানটির সুর কে করিয়াছিলেন- এ বিষয় 
			সংশয় আছে। এ বিষয়ে স্বরবিতান -৫১ খণ্ডে লিখা হয়েছে- ''...ইহার সুর 
			জ্যোতিরিন্দ্রনাথের
			রচনা হওয়াও অসম্ভব নয়।
- সুর ও তাল:
			- 
			স্বরবিতান একপঞ্চাশত্তম 
			খণ্ডে
		গৃহীত গানটির স্বরলিপিতে রাগ-তালের উল্লেখ নেই।
		উক্ত স্বরলিপিটি ৩।৩।৩।৩ 
			মাত্রা ছন্দে'
			একতাল'
নিবদ্ধ।
- রাগ: ভূপালী। তাল: একতালা।
			[রবীন্দ্রসংগীত 
			: রাগ-সুর নির্দেশিকা । সুধীর চন্দ। (প্যাপিরাস, ডিসেম্বর ২০০৬)। 
			পৃষ্ঠা: ৫২]।
- রাগ: অহং, বিভাস (বাংলা)। তাল: একতাল
			[রাগরাগিণীর এলাকায় রবীন্দ্রসংগীত। 
			প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তী, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত আকাদেমী, জুলাই ২০০১। 
			পৃষ্ঠা: ৯৩]
 [একতালে 
			নিবদ্ধ রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকা]
 
- পর্যায়:নাট্যগীতি
- গ্রহস্বর: 
			সা