ভাষাংশ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাসংগ্রহের সূচি
ললিতা | ||
কে জানে নাথের কেন হল গো এমন? জানি না কি ভাবিবারে যান বিপাশার ধারে, ললিতার চেয়ে ভালোবাসেন বিজন! কভুবা আছেন যবে বিরলে বসিয়া আমি যদি যাই কাছে হাসিয়া হাসিয়া বিরক্তিতে ভুরু কেন আকুঞ্চিয়া উঠে যেন, বিরক্তি জাগিয়া উঠে অধরখানিতে, আপনি যেন গো তাহা নারেন জানিতে! সহসা চমকি উঠি কি যেন হয়েছে ত্রুটি আমারে কাছেতে এনে ডাকিয়া বসান, কি কথা ভাবিতেছেন বুঝাইতে চান, না পারেন বুঝাইতে— সরমে আকুল চিতে কি কথা বলিতে হবে ভাবিয়া না পান! কেন ত্যজি ললিতারে এলেন বিপাশাপারে শতেক সহস্র তার কারণ দেখান, তা লাগি করেছি যেন কত অভিমান! আপনি বলেন আসি "ভালোবাসি ভালোবাসি" সন্দেহ করেছি যেন প্রণয়ে তাঁহার, তা লাগি করেছি যেন কত তিরস্কার! সহসা কাননে এলে আমারে দেখিতে পেলে লুকাইয়া দ্রুত পদে পালান চকিতে মনে ভাবি’ আমি তাঁরে পাই নি দেখিতে! কি করি! কি হবে মোর! বড়ো হয় ভয়! লজ্জা ক’রে ললিতা রে হারালি প্রণয়! লজ্জা কই, ললিতার লজ্জা কোথা আজ? ভেঙেছেও ললিতা সে ভেঙেছে তো লাজ! [ক্রুদ্ধ হইয়া] ধিক্ রে! এই কি লজ্জা ভাঙিবার কাল? ভেঙেছে শরম যবে ভেঙেছে কপাল! আর কিছু দিন আগে গোচে নাই ভ্রম? আর কিছু দিন আগে ভাঙে নি শরম? কাঁদিতে বসিলি আজ শিশুটির মত? কিছু দিন আগে কেন ভাবিলি নে এত? মিছা কি মনেরে তুই দিস রে প্রবোধ? দেখি নি তো' হতে আর অধম অবোধ! তুই যদি কষ্ট পাস দোষ দিব কার? তোর মত অবোধের কষ্ট পুরস্কার! যত কষ্ট আছে তুই সব কর্ ভোগ— অশ্রুজলে তোর দিন অবসান হোক! নিজের চরণ দিয়া নিজহৃদি বিদলিয়া হৃদয়ের রক্তবিন্দু গোন্ দিন রাত! হারায়ে সর্বস্ব ধন কর্ অশ্রুপাত! আগে কেন বুঝিলি নে, আগে কেন ভাবিলি নে, কিছু দিন আগে লজ্জা নারিলি ভাঙিতে! মিছা হৃদয়েরে আজ চাস প্রবোধিতে! যেমন করিলি কাজ ফল ভোগ কর্ আজ, পর হোক যেই জন ছিল আপনার— তুই যদি কষ্ট পাস দোষ দিব কার? |