ভাষাংশ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাসংগ্রহের সূচি


ভগ্নহৃদয়
গ্রন্থ পরিচিতি
  কাব্যের পাত্রগণ
| ভূমিকা |  উপহার
প্রথম সর্গ | দ্বিতীয় সর্গ | তৃতীয় সর্গ | চতুর্থ সর্গ | পঞ্চম সর্গ | ষষ্ঠ সর্গ | সপ্তম সর্গ | অষ্টম সর্গ | নবম সর্গ | দশম সর্গ | একাদশ সর্গ | দ্বাদশ সর্গ | ত্রয়োদশ সর্গ | চতুর্দশ সর্গ | পঞ্চদশ সর্গ | ষোড়শ সর্গ | সপ্তদশ সর্গ | অষ্টাদশ সর্গ | ঊনবিংশ সর্গ | বিংশ সর্গ | একবিংশ সর্গ | দ্বাবিংশ সর্গ |  ত্রয়োবিংশ সর্গ |  চতুর্বিংশ সর্গ | পঞ্চবিংশ সর্গ | ষড়্‌বিংশ সর্গ | সপ্তবিংশ সর্গ | অষ্টবিংশ সর্গ | ঊনত্রিংশ সর্গ | ত্রিংশ সর্গ | একত্রিংশ সর্গ | দ্বাত্রিংশ সর্গ | ত্রয়স্ত্রিংশ সর্গ | চতুস্ত্রিংশ সর্গ |


ভগ্নহৃদয়

(গীতি-কাব্য)

শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
প্রণীত।

কলিকাতা
বা ল্মী কি য ন্ত্রে
শ্রীকালীকিঙ্কর চক্রবর্ত্তী দ্বারা মুদ্রিত ও প্রকাশিত।
শকাব্দা ১৮০৩।


 

                      কাব্যের পাত্রগণ

কবি
অনিল
মুরলা              অনিলের ভগ্নী ও কবির বাল্যসহচরী
ললিতা            অনিলের প্রণয়িনী
নলিনী             এক চপলস্বভাবা কুমারী
চপলা              মুরলার সখী

লীলা
সুরুচি                   নলিনীর সখীগণ
মাধবী প্রভৃতি

সুরেশ
বিজয়                 নলিনীর বিবাহ বা প্রণয়াকাঙ্ক্ষী
বিনোদ প্রভৃতি

   
                                ভূমিকা
     এই কাব্যটিকে কেহ যেন নাটক মনে না করেন। নাটক ফুলের গাছ। তাহাতে ফুল ফুটে বটে, কিন্তু সেই সঙ্গে মূল, কাণ্ড, শাখা, পত্র, এমন কি কাঁটাটি পর্য্যন্ত থাকা চাই। বর্তমান কাব্যটি ফুলের মালা, ইহাতে কেবল ফুলগুলি মাত্র সংগ্রহ করা হইয়াছে। বলা বাহুল্য, যে, দৃষ্টান্তরূপেই ফুলের উল্লেখ করা হইল।
 
   
                 উপহার

শ্রীমতী হে----------------,

                   
হৃদয়ের বনে বনে সূর্য্যমুখী শত শত
ওই মুখপানে চেয়ে ফুটিয়া উঠেছে যত।
বেঁচে থাকে বেঁচে থাক্‌, শুকায়ে শুকায়ে যাক্‌,
ওই মুখপানে তারা চাহিয়া থাকিতে চায়।
বেলা অবসান হবে,      মুদিয়া আসিবে যবে
ওই মুখ চেয়ে যেন নীরবে ঝরিয়া যায়!

                   
জীবনসমূদ্রে তব জীবনতটিনী মোর
মিশায়েছি একেবারে আনন্দে হইয়ে ভোর।
সন্ধ্যার বাতাস লাগি ঊর্ম্মি যত উঠে জাগি
অথবা তরঙ্গ উঠে ঝটিকায় আকুলিয়া

জানে বা না জানে কেউ জীবনের প্রতি ঢেউ
মিশিবে
বিরাম পাবে তোমার চরণে গিয়া।

                    
হয়ত জান না, দেবি, অদৃশ্য বাঁধন দিয়া
নিয়মিত পথে এক ফিরাইছ মোর হিয়া।
গেছি দূরে, গেছি কাছে, সেই আকর্ষণ আছে,
পথভ্রষ্ট হই নাক তাহারি অটল বলে।
নহিলে হৃদয় মম ছিন্নধূমকেতু-সম
দিশাহারা হইত সে অনন্ত আকাশতলে!

                   
আজ সাগরের তীরে দাঁড়ায়ে তোমার কাছে;
পরপারে মেঘাচ্ছন্ন অন্ধকার দেশ আছে।
দিবস ফুরাবে যবে সে দেশে যাইতে হবে,
এ পারে ফেলিয়া যাব আমার তপন শশী

ফুরাইবে গীত গান, অবসাদে ম্রিয়মাণ,
সুখ শান্তি অবসান
কাঁদিব আঁধারে বসি!

                     
স্নেহের অরুণালোকে খুলিয়া হৃদয় প্রাণ
এ পারে দাঁড়ায়ে, দেবি, গাহিনু যে শেষ গান
তোমারি মনের ছায় সে গান আশ্রয় চায়

একটি নয়নজল তাহারে করিও দান।
আজিকে বিদায় তবে, আবার কি দেখা হবে

পাইয়া স্নেহের আলো হৃদয় গাহিবে গান?


বিশ্বভারতী কর্তৃক প্রকাশিত রবীন্দ্ররচনাবলী অচলিত সংগ্রহ প্রথম খণ্ডের (মাঘ ১৩৯২) গ্রন্থ পরিচয় অংশে লিখিত এই গ্রন্থ সম্পর্কিত পাঠ।

গ্রন্থপরিচয়
ভগ্নহৃদয়

    এই বিচিত্র নাট্য-কাব্যখানি ১৮০৩ শকে [২৩ জুন ১৮৮১] মুদ্রিত হয়। পৃষ্ঠা-সংখ্যা ছিল ১৯৬।  ইহা পুনর্‌মূদ্রিত হয় নাই।
    সমগ্র পুস্তক মোট ৩৪ সর্গে সমাপ্ত। ১২৮৭ সালের কার্তিক হইতে ফাল্গুন অবধি 'ভারতী' পত্রে ধারাবাহিকভাবে ইহার প্রথম ছয় সর্গ বাহির হয়।

    'ভগ্নহৃদয়' সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ জীবনস্মৃতি'তে লিখিয়াছেন

    বিলাতে আর একটি কাব্যের পত্তন হইয়াছিল। কতকটা ফিরিবার পথে কতকটা দেশে ফিরিয়া আসিয়া ইহা সমাধা করি। "ভগ্নহৃদয়"  নামে ইহা ছাপান হইয়াছিল।... 'ভগ্নহৃদয় যখন লিখতে আরম্ভ করেছিলেম তখন আমার বয়স আঠারো।'         
প্রথম সংস্করণ, পৃ.১২৭
    এই পুস্তক সম্বন্ধে কয়েকটি কথা উল্লেখযোগ্য। বিখ্যাত 'তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা' গানটি 'ভারতী'তে 'ভগ্নহৃদয়ে'র "উপহার"-রূপে মূদ্রিত হইয়াছিল। পুস্তকাকারে প্রকাশ করিবার সময় "উপহার"টি সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হইয়াছে।
    'ভগ্নহৃদয়' স্বতন্ত্রাকারে বিলুপ্ত হইলেও ইহার বহু অংশ সংগীতরূপে রবীন্দ্রনাথের নানা সংগীত ও কাব্য -সংগ্রহগ্রন্থে স্থান পাইয়া আসিতেছে। আজও গাওয়া হইয়া থাকে বা গাওয়া যাইতে পারে তাহা গীতবিতান, বিশেষতঃ উহার প্রচল তৃতীয় খণ্ড (১৩৭৬ বা ১৩৭৯), দেখিলে বুঝা যাইবে। রবীন্দ্রনাথের প্রথম-প্রকাশিত 'কাব্য গ্রন্থাবলী'তে (আশ্বিন ১৩০৩) ভগ্নহৃদয়ের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব না থাকিলেও যেমন ইহার কয়েকটি গান আছে তেমনি ২২টি সর্গ হইতে (মোট সর্গসংখ্যা ৩৪) অন্যূন ২৯টি রচনাংশ, স্বয়ংপূর্ণ কবিতা হিসাবে, 'বাসকসজ্জা' 'শ্যামা' 'চাঞ্চল্য' প্রভৃতি শিরোনাম "কৈশোরক" অংশে (দ্রষ্টব্য পৃ. ৫-১৫) দেওয়া হইয়াছে। সুতরাং পূর্ণ বর্জনের অপমান এটিকে সহিতে হয় নাই। বস্তুতঃ, নানা রূপে রূপান্তরে সামগ্রিক রবীন্দ্র-রচনাধারায় সূক্ষ্মভাবে ইহার মিলিয়া মিশিয়া আছে।