ভাষাংশ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাসংগ্রহের সূচি


ভগ্নহৃদয়
সপ্তবিংশ সর্গ


                 কবি
    মুরলা রে– মুরলা, কোথায়?
দেশে দেশে ভ্রমিতেছি কোথায়– কোথায়?
সম্মুখে বিশাল মাঠ ধুধু করিতেছে,
সে মাঠেতে অন্ধকার– বিস্তারিয়া বাহু তার
ভূমিতে রাখিয়া মুখ কেঁদে মরিতেছে!
কোথা তুই– কোথা মুরলা রে,
কোথা তুই গেলি বল–শুধাইব কারে?
উদিল সন্ধ্যার তারা ওই রে গগনে!
ওই তারা কত দিন দেখেছি দুজনে!
তা কি তোর মুরলা রে মনে আর পড়ে না রে?
সে সকল কথা তুই ভুলিলি কেমনে?
কত দিন– কত কথা– কত সে ঘটনা–
মনের ভিতরে কি রে আকুলি ওঠে না?
তবে তুই কি পাষাণে বেঁধেছিলি হিয়া?
কেমনে কবিরে তোর গেলি তেয়াগিয়া?
বিজন আকাশে মোর ছিলি রে সতত
স্থিরজ্যোতি ওই সন্ধ্যাতারাটির মত,
যদি রে মুহূর্ত্ত-তরে আপনারে ভুলে
মেঘখণ্ড রেখে থাকি এ হৃদয়ে তুলে,
তাই কি রে অভিমানে অস্ত যেতে হয়?
এ জনমে আর কি রে হবি নে উদয়?
আজ আমি লক্ষ্যহীন দিক হারাইয়া!
অসীম সংসারে কোথা বেড়াই ভাসিয়া!
দেখিতে যে পাব নাকো তোরে একেবারে–
সে কথা পারি নে কভু মনে করিবারে!
শব্দ কোন শুনিলেই আপনারে ছলি
মুদিয়া নয়ন-দুটি মনে মনে বলি–
"যদি এই শব্দ তারি পদশব্দ হয়!
যদি খুলিলেই আঁখি– অমনি তাহারে দেখি!
সুমুখে সে মুখ আসি হয় রে উদয়!"
কোথায় মুরলা! দেখা দে রে একবার,
খুঁজিয়া বেড়াতে হবে কত দূর আর?
মুরলা রে– মুরলা কোথায়!
একেলা ফেলিয়া মোরে গেলি রে কোথায়!