ভাষাংশ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাসংগ্রহের সূচি
শয্যায় শয়ান ললিতা। অনিলের প্রবেশ ললিতার গান বায়ু! বায়ু! কি দেখিতে আসিয়াছে হেথা কৌতুকে আকুল! আমি একটি জুঁই ফুল! সারা রাত এ মাথায় প'ড়েছে শিশির– গণেছি কেবল! প্রভাতে বড়ই শ্রান্ত ক্লান্ত, হে সমীর, অতি হীনবল! ভাঙ্গা বৃন্তে ভর করি রয়েছি জীবন ধরি জীবনে উদাস! ওগো উষার বাতাস! শ্রান্ত মাথা পড়ে নুয়ে– চাহিয়া রয়েছে ভুঁয়ে মর'-মর' একটি জুঁই ফুল! কাছেতে এস না স'রে– একখানি পড়িবে ঝ'রে সুকুমার একটি জুঁই ফুল! ও ফুল গোলাপ নয় সুষমাসুরভিময়, নহে চাঁপা, নহে গো বকুল! ও নহে গো মৃণালিনী তপনের আদরিণী, ও শুধু একটি জুঁই ফুল! ওরে আসিয়াছ দিতে কি সংবাদ হায় হে প্রভাতবায়? প্রভাতে নলিনী আজি হাসিছে সরসে? হাসুক সরসে! শিশিরে গোলাপগুলি কাঁদিছে হরষে? কাঁদুক হরষে! ও এখনি বৃন্ত হ'তে কঠিন মাটিতে পড়িবে ঝড়িয়া– শান্তিতে মরে গো যেন মরিবার কালে, যাও গো সরিয়া! মুখখানি ধীরে ধীরে দেখিতেছ তুলে দাঁড়াইয়া কাছে– দেখিবারে– ক্ষুদ্র জুঁই মুখ নত করি অভিমান ক'রে বুঝি আছে! নয় নয়, তাহা নয়, সে সকল খেলা নয়– ফুরায় জীবন! তবে যাও, চ'লে যাও– আর কোন ফুলে যাও প্রভাতপবন! ওরে কি শুধতে আছে প্রেমের বারতা মর'-মর' যবে? একটি কহে নি কথা, অনেক সহেছে– মরমে মরমে কীট অনেক বহেছে– আজ মরিবার কালে শুধাইছ কেন? কথা নাহি ক'বে! ও যখন মাটি-'পরে পড়িবে ঝরিয়া ওরে ল'য়ে খেলাস নে তুই! উড়ায়ে যাস নে ল'য়ে হেথা হ'তে হোথা! ক্ষুদ্র এক জুঁই! যেথাই খসিয়া পড়ে সেথা যেন থাকে প'ড়ে, ঢেকে দিস শুকানো পাতায়! ক্ষুদ্র জুঁই ছিল কিনা কেহই ত জানিত না, মরিলেও জানিবে না তায়! কাননে হাসিত চাঁপা, হাসিত গোলাপ আমি যবে মরিতাম কাঁদি, আজো হাসিবেক তারা শাখায় শাখায় হাতে হাতে বাঁধি! সে অজস্র হাসি-মাঝে সে হরষরাশি-মাঝে ক্ষুদ্র এই বিষাদের হইবে সমাধি! |
||
সমাপ্ত | ||