ভাষাংশ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাসংগ্রহের সূচি
কবি | ||
প্রথম গান | ||
বিপাশার তীরে ভ্রমিবারে যাই, প্রতিদিন প্রাতে দেখিবারে পাই লতা-পাতা-ঘেরা জানালা-মাঝারে একটি মধুর মুখ। চারি দিকে তার ফুটে আছে ফুল, কেহ বা হেলিয়া পরশিছে চুল, দুয়েকটি শাখা কপাল ছুঁইয়া, দুয়েকটি আছে কপোলে নুইয়া, কেহবা এলায়ে চেতনা হারায়ে চুমিয়া আছে চিবুক। বসন্ত প্রভাতে লতার মাঝারে মুখানি মধুর অতি! অধর দুটির শাসন টুটিয়া রাশি রাশি হাসি পড়িছে ফুটিয়া, দুটি আঁখি-'পরে মেলিছে মিশিছে তরল চপল জ্যোতি। দ্বিতীয় গান প্রতিদিন যাই সেই পথ দিয়া, দেখি সেই মুখখানি– কুসুমমাঝারে রয়েছে ফুটিয়া কুসুমগুলির রাণী! আপনা-আপনি উঠে আঁখি মোর সেই জানালার পানে, আনমন হয়ে রহি দাঁড়াইয়া কিছুখন সেইখানে। আর কিছু নহে, এ ভাব আমার কবির সৌন্দর্য্যতৃষা, কলপনা-সুধা-বিভল কবির মনের মধুর নেশা! গোলাপের রূপ, বকুলের বাস, পাপিয়ার বনগান, সৌন্দর্য্যমদিরা দিবস রজনী করিয়া করিয়া পান শিথিল হইয়া পড়েছে হৃদয়– নয়নে লেগেছে ঘোর– বিকশিত রূপ বড়ো ভালো লাগে মুগ্ধ নয়নে মোর! |
||
তৃতীয় গান প্রতিদিন দেখি তারে, কেন না দেখিনু আজি? আলিঙ্গিতে গ্রীবা তার লতাগুলি চারি ধার আছে শত বাহু তুলি শত ফুলহারে সাজি। দূর-বন হতে ছুটি আসিয়া প্রভাতবায় সে বয়ান না দেখিয়া শূন্য বাতায়ন দিয়া প্রবেশি আঁধার গৃহে করিতেছে হায় হায়! কত খন– কত খন– কত খন ভ্রমি একা, গনিনু ফুলের দল, মাটিতে কাটিনু রেখা। কত খন– কত খন– গেল চলি কত খন– খনে খনে দেখি চাহি, তবু না পাইনু দেখা! ফিরিনু আলয়মুখে, চলিনু আপন মনে, চলিতে চলিতে ধীরে ভুলে ভুলে ফিরে ফিরে বার বার এসে পড়ি সেই– সেই বাতায়নে! নিরাশ-আশার মোহে চেয়ে দেখি বার বার, শূন্য– শূন্য– শূন্য সব বাতায়ন অন্ধকার! ফুলময় বাহু দিয়া আঁধারকে বুকে নিয়া আঁধারকে আলিঙ্গিয়া রয়েছে সে লতাগুলি, তবু ফিরি ফিরি সেথা আসিলাম ভুলি ভুলি! তেমনি সকলি আছে– বাতায়ন ফুলে সাজি, দুলিছে তেমনি করি বাতাসে কুসুমরাজি! শুধু এ মনে আমার এক কথা বার বার এক সুরে মাঝে মাঝে উঠিতেছে বাজি বাজি– "প্রতিদিন দেখি তারে, কেন না দেখিনু আজি? কেন না দেখিনু তারে, কেন না দেখিনু আজি?" অতিধীর পদক্ষেপে আলয়ে আসিনু ফিরি, শতবার আনমনে বলিলাম ধীরি ধীরি– "প্রতিদিন দেখি তারে, কেন না দেখিনু আজি?–
চতুর্থ গান |