ভাষাংশ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাসংগ্রহের সূচি


ভগ্নহৃদয়
ঊনত্রিংশ সর্গ


                ললিতা
    সংসারের পথে পথে মরীচিকা অন্বেষিয়া
ভ্রমিয়া হয়েছি ক্লান্ত নিদারুণ কোলাহলে–
তাই বলি একবার আমারে ঘুমাতে দাও–
শীতল করি এ হৃদি বিরামের স্নিগ্ধ জলে!
শ্রান্ত এ জীবনে মোর আসুক নিশীথকাল,
বিস্মৃতি-আঁধারে ডুবি ভুলি সব দুখজ্বালা,
নিঃস্বপ্ন নিদ্রার কোলে ঘুমাতে গিয়াছে সাধ,
মিশাতে মহাসমুদ্রে জীবনের স্রোতোমালা!
শরীর অবশ অতি– নয়ন মুদিয়া আসে
মৃত্যুর দ্বারের কাছে বসিয়া সন্ধ্যার বেলা,
চৌদিকে সংসার-পানে মাঝে মাঝে চেয়ে দেখি–
আধ' স্বপ্নে আধ' জেগে দেখি গো মায়ার খেলা!
কত শত লোক আছে– কেহ কাঁদে, কেহ হাসে,
কেহ ঘৃণা করে, কেহ প্রাণপণে ভালবাসে–
একটি কথার তরে কেহ বা কাঁদিয়া মরে,
একটি চাহনি-তরে চেয়ে আছে কত মাস–
একটি হাসির ঘায়ে কেহ বা কাঁদিয়া উঠে,
একটি হেরিয়া অশ্রু কারো মুখে ফুটে হাস!
কেহ বসে, কেহ ওঠে– কেহ থাকে, কেহ যায়–
জীবনের খেলা দেখি মরণের দ্বারে শুয়ে–
হাসি নাই, অশ্রু নাই––সুখ নাই, দুঃখ নাই–
হাসি অশ্রু সুখ দুখ দেখিতেছি চেয়ে চেয়ে।
শুধু শ্রান্তি, শুধু শ্রান্তি– আর কিছু, কিছু নহে–
নহে তৃষা, নহে শোক, নহে ঘৃণা, ভালবাসা–
দারুণ শ্রান্তির পরে আসে যে দারুণ ঘুম
সেই ঘুম ঘুমাইব– আর কোন নাই আশা!