হেলমান্দ নদী
আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশের অন্তর্গত হেলমান্দ নামক নদী। এটি আফগানিস্তানের দীর্ঘতম নদী। প্রাচীন আবেস্তা ভাষায় এই নদীর নাম ছিল হাটুমান্ট। এই নাম থেকে নদীটির নাম হেলমান্দ হয়েছে। আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশটি এই নদীর নামানুসারে গৃহীত হয়েছে।

হিন্দুকুশ পর্বতমালা থেকে এই নদীটি উৎপন্ন হয়ে এই পর্বতমালার মধ্যবর্তী ‌উপত্যকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পার্বত্যভূমি ছেড়ে নিম্নভূমিতে নেমে আসার পর নদীটি পূর্বদিক থেকে প্রবাহিত হয়ে আর্ঘান্দাব নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। দুই নদীর এই সম্মিলিত প্রবাহ গার্মাসার মরুভূমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের আফগান সীমান্তের কাছে হামুন-ই -হেলমান্দ (অবস্থিত) নামক জলাভূমিতে পতিত হয়েছে।

এই নদীটির দৈর্ঘ্য ১,১৫০ কিলোমিটার (৭১০ মাইল)। এই নদীর উপর বেশ কয়েকটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। এই কেন্দ্রগুলোর জলধারার চাপ তৈরি করার জন্য বাঁধবেষ্টিত কৃত্রিম হ্রদ তৈরি হয়েছে। ফলে এই উপত্যকা অনুর্বর ভূমিতে জলসেচের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন করা সহজতর হয়েছে। এছাড়া এই নদীর চলার পথে ছোট ছোট খাল বা জলাধারের সৃষ্টি হয়েছে। এসব জায়গাতেও চাষের উপযোগী বিশেষ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।

ধারণা করা হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ অব্দের দিকে মধ্য এশিয়া থেকে আগত জনগোষ্ঠী, এই নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে প্রথম কৃষিকাজ শুরু করেছিল।
খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩০০-২৩৫০ অব্দের মধ্য এই নদীর তীরে যে প্রাচীন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। বর্তমানে এই সভ্যতাকে হেলমান্দ সভ্যতা নামে অভিহিত হয়ে থাকে।  ৩০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে নগরায়ন শুরু হতে পারে। এই সময় এই অঞ্চলের মানুষ তৈরি করেছিল মন্দির ও প্রাসাদ। এই নমুনার সূত্রে এই অঞ্চলে ব্রোঞ্চ যুগের নগরসভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায়।

এই অঞ্চলের হেলমান্দ সভ্যতার কেন্দ্রীয় শহর হিসেবে পাওয়া যায় প্রাচীন মুণ্ডিগক নগরী। এটি বর্তমান কান্দাহার শহর থেকে ৫৫ কিমি (৩৪ মাইল) উত্তর পশ্চিম দিকে। এই নগরটির স্থানে ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ জিন মারি ক্যাসাল ১৯৫০-এর দশকে খনন কার্য চালিয়েছিলেন। ঐতিহাসিকদের মতে এই নগরীটির বিকাশ ঘটেছিল খ্রিষ্ট[পূর্ব ৫ম-২য় সহস্রাব্দের ভিতরে। এই অঞ্চলে প্রাপ্ত মৃৎশিল্প এবং অন্যান্য নিদর্শনগুলি সময় ধরা হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় সহস্রাব্দের পরে। এই যুগের মৃৎশিল্পগুলিতে ছিল রঙিন জ্যামিতিক নিদর্শন, প্রাণী এবং গাছপালার চিত্রকর্ম।