প্রাক্তন জাতীয় পতাকা |
নতুন জাতীয় পতাকা |
আফগানিস্তান ৩৪টি প্রদেশ |
|
১.
বাদাখশান ২. বাদগিস ৩. বাগলান ৪. বাল্খ ৫. বামিয়ান ৬. দাইকুন্ডি ৭. ফারাহ ৮. ফারিয়াব ৯. গজনি ১০. ঘাওর ১১. হেলমান্দ ১২. হেরাত ১৩. জোওয্জান ১৪. কাবুল ১৫. কান্দাহার ১৬. কাপিসা ১৭. খোস্ত |
১৮.
কুনার ১৯. কুন্দুজ ২০. লাগমান ২১. লোওগার ২২. নানকারহার ২৩. নিমরুজ ২৪. নুরেস্তান ২৫. ওরুজ্গান ২৬. পাক্তিয়া ২৭. পাক্তিকা ২৮. পাঞ্জশির ২৯. পারভান ৩০. সামাংগান ৩১. সারে বোল ৩২. তাখার ৩৩. ওয়ার্দাক ৩৪. জাবুল। |
জলবায়ু : আফগানিস্তানের অধিকাংশ এলাকাতেই অধঃসুমেরুদেশীয় পার্বত্য জলবায়ু
বিদ্যমান। এখানে শীতকাল শুষ্ক। নিম্নভূমিতে জলবায়ু ঊষর ও অর্ধ-ঊষর। পর্বতগুলিতে ও
পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী কিছু উপত্যকায় মৌসুমী বায়ু নিরক্ষদেশীয় সামুদ্রিক ভেজা
বাতাস বহন করে নিয়ে আসে। আফগানিস্তান গ্রীষ্মকাল এবং শীতকাল নামক দুটি ঋতুতে
বিভক্ত। উত্তরের উপত্যকায় ৪৯° সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা গ্রীষ্মে রেকর্ড করা
হয়েছে। শীতকালের মাঝামাঝি সময়ে হিন্দুকুশ ও আশেপাশের ২,০০০ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট
অঞ্চলে তাপমাত্রা হিমাংক থেকে ৯° সেলসিয়াসে নিচে নেমে পড়ে। অন্যান্য উঁচু এলাকায়
উচ্চতাভেদে তাপমাত্রার তারতম্য ঘটে। এমনকি একই দিনে তাপমাত্রার ব্যাপক তারতম্য ঘটতে
পারে। বরফজমা ভোর থেকে দুপুরে ৩৫° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা ওঠা বিচিত্র নয়। অক্টোবর
ও এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টিপাত হয়। মরুভূমি এলাকায় বছরে ৪ ইঞ্চিরও কম
বৃষ্টি পড়ে। পশ্চিমের হাওয়া মাঝে মাঝে বিরাট ধূলিঝড়ের সৃষ্টি করে,আর সূর্যের
উত্তাপে স্থানীয় ঘূর্ণিবায়ু উঠাও সাধারণ ঘটনা।
ভূ-প্রকৃতি: আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য পূর্ব-পশ্চিমে ১,২৪০ কিমি;উত্তর-দক্ষিণে সর্বোচ্চ ১,০১৫ কিমি। উত্তর-পশ্চিম, পশ্চিম ও দক্ষিণের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলি মূলত মরুভূমি ও পর্বতশ্রেণী। উত্তর-পূর্বে দেশটি ধীরে ধীরে উঁচু হয়ে উঠেছে। এই অঞ্চলটি বেশিরভাগ সময় বরফাচ্ছাদিত থাকে। এই অঞ্চলের পার্বত্য এলাকা পশ্চিম হিমালয়ের হিন্দুকুশ পর্বতের সাথে মিশে গেছে। আমু দরিয়া এবং এর উপনদী পাঞ্জ দেশটির উত্তর সীমান্ত নির্ধারণ করেছে।
আফগানিস্তানের অধিকাংশ অঞ্চল সুউচ্চ পর্বতময়। দেশটির প্রায় অর্ধেক এলাকার উচ্চতা
সমুদ্র সমতল থেকে ২,০০০ মিটার বা তার চেয়ে বেশি। ছোট ছোট হিমবাহ ও বছরব্যাপী
তুষারক্ষেত্র প্রায়ই পরিলক্ষিত হয়।
উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত ৭,৪৮৫ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট নওশাক আফগানিস্তানের
সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এটি পাকিস্তানের তিরিচ মির পর্বতশৃঙ্গের একটি নিচু
পার্শ্বশাখা। পর্বতটি আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বে
হিন্দুকুশ পর্বতমালা
অংশ,
এই অংশটি পামির মালভূমির দক্ষিণে অবস্থিত।
হিন্দুকুশ থেকে অন্যান্য নিচু পর্বতসারি
ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে প্রধান শাখাটি দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রসারিত হয়ে
পশ্চিমের ইরান সীমান্ত অবধি চলে গেছে। এই নিচু পর্বতমালাগুলির মধ্যে রয়েছে
পারোপামিসুস পর্বতমালা, যা উত্তর আফগানিস্তান অতিক্রম করেছে
এবং সফেদ কোহ পর্বতমালা, যা পাকিস্তানের সাথে পূর্ব সীমান্ত
তৈরি করেছে। সফেদ কোহ-তেই রয়েছে বিখ্যাত খাইবার গিরিপথ। এই পথটি আফগানিস্তান
ও পাকিস্তানকে সংযুক্ত করেছে। অপেক্ষাকৃত নিম্নভূমিগুলি দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমে
অবস্থিত। এদের মধ্যে রয়েছে উত্তর-পশ্চিম প্রান্তের হেরাত-ফেরা নিম্নভূমি,দক্ষিণ-পশ্চিমের
সিস্তান ও হেলমন্দ নদী অববাহিকা, এবং
দক্ষিণের রিগেস্তান মরুভূমি। সিস্তান অববাহিকাটি বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক এলাকার
একটি।
নদী উপত্যকাগুলি ও আরও কিছু ভূগর্ভস্থ পানিবিশিষ্ট নিম্নভূমি ছাড়া অন্য কোথাও
কৃষিকাজ হয় না বললেই চলে। মাত্র ১২ শতাংশ এলাকা পশু চারণযোগ্য। দেশটির মাত্র ১%
এলাকা বনাঞ্চল এবং এগুলি মূলত পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আফগানিস্তানে অবস্থিত। যুদ্ধ ও
জ্বালানি সংকটের কারণে বনভূমি দ্রুত বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
যোগাযোগ : ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের হিসাব মতে সড়কপথের মোট ৪২,১৫০কিমি রাস্তার
১২,৩৫০কিমি পাকা, বাকি ২৯,৮০০কিমি কাঁচা।
আফগানিস্তানের বেশির ভাগ প্রধান নদীর
উৎপত্তি পার্বত্য জলধারা থেকে। দীর্ঘস্থায়ী শুষ্ক মৌসুমে বেশির ভাগ নদী শীর্ণ
ধারায় প্রবাহিত হয়। বসন্তে পর্বতের বরফ গলা শুরু হলে এগুলিতে পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি
পায়। বেশির ভাগ নদীই হ্রদ, জলাভূমি কিংবা নোনাভূমিতে পতিত হয়েছে। কিন্তু
কাবুল নদ
পূর্বে প্রবাহিত হয়ে পাকিস্তানের সিন্ধু নদের সাথে মিলে এবং পরে ভারত মহাসাগরে
পতিত হযয়েছে। দেশটির একমাত্র নৌ-পরিবহনযোগ্য নদীটি হল উত্তর সীমান্তের আমু দরিয়া।
পামির মালভূমি থেকে উৎপন্ন পাঞ্জ ও বখ্শ্ উপনদী থেকে পানি আমু দরিয়ায় গিয়ে
মেশে। হারিরুদ নদী মধ্য আফগানিস্তানে উৎপন্ন হয়ে পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে
প্রবাহিত হয়ে ইরানের সাথে সীমান্ত সৃষ্টি করেছে। হারিরুদের পানি হেরাত অঞ্চলে
সেচের কাজে ব্যবহৃত হয়। হেলমান্দ নদী কেন্দ্রীয় হিন্দুকুশ পর্বতমালায় উৎপন্ন
হয়ে দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত ইরানে প্রবেশ করেছে। এই
নদীটি ব্যাপকভাবে সেচকাজে ব্যবহৃত হয়, তবে ইদানিং এর পানিতে খনিজ লবণের আধিক্য
দেখা যাওয়ায় শস্যে পানি দেয়ার কাজে এর উপযোগিতা কমে এসেছে।
আফগানিস্তানের হ্রদগুলি আকারে ছোট। এদের মধ্যে আছে তাজিকিস্তান সীমান্তে ওয়াখান
করিডোরে অবস্থিত জার্কোল হ্রদ, বাদাখশানে অবস্থিত শিভেহ হ্রদ, এবং গজনীর দক্ষিণে
অবস্থিত লবণাক্ত হ্রদ ইস্তাদেহহেলমান্দ।
প্রাকৃতিক সম্পদ : প্রাকৃতিক গ্যাসের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মজুদ রয়েছে। এছাড়া
পেট্রোলিয়াম, কয়লা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তামা, লোহা, বেরাইট, ক্রোমাইট, সীসা,
দস্তা, গন্ধক, লবণ, ইউরেনিয়াম ও অভ্রের মজুদ আছে। আফগানিস্তান দুষ্প্রাপ্য ও
অর্ধ-দুষ্প্রাপ্য পাথরের একটি উৎসস্থল যাদের মধ্যে আছে নীলকান্তমণি, চুনি, নীলা ও
পান্না।
প্রাণী ও জীবজন্তু : আফগানিস্তানের উদ্ভিদসম্পদে সমৃদ্ধ নয়। পর্বতে চিরসবুজ বন,
ওক, পপলার, হেজেলনাট ঝাড়, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম ইত্যাদি দেখা যায়। উত্তরের
সমতলভূমি মূলত শুষ্ক, বৃক্ষহীন ঘাসভূমি, আর দক্ষিণ-পশ্চিমের সমভূমি বসবাসের অযোগ্য
মরুভূমি। শুষ্ক অঞ্চলের গাছের মধ্যে আছে ক্যামেল থর্ন, লোকোউইড, মিমোসা, ওয়ার্মউড,
সেজব্রাশ ইত্যাদি।
বন্য প্রাণীর মধ্যে আর্গালি (মার্কো পোলো ভেড়া) উরিয়াল (মাঝারি আকারের বন্য ভেড়া),
আইবেক্স বা বুনো ছাগল,ভালুক, নেকড়ে, শেয়াল, হায়না ও বেঁজি। এছাড়াও বন্য শূকর,
শজারু, ছুঁচা, বন্য খরগোশ, বাদুড় এবং অনেক তীক্ষ্ণদন্ত প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়।
এদের মধ্যে কিছু কিছু স্তন্যপায়ী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি হুমকির
সম্মুখীন গ্যাজেল হরিণ, চিতা, বরফ চিতা, মার্কর ছাগল এবং বাকত্রীয় হরিণ।
আফগানিস্তানে প্রায় ২০০ জাতের পাখিরও দেখা মেলে। ফ্লেমিংগো ও অন্যান্য জলচর পাখি
গজনীর উত্তরে ও দক্ষিণে হ্রদ এলাকায় দেখতে পাওয়া যায়। হাঁস ও তিতিরজাতীয় পাখিও
চোখে পড়ে। তবে পাখি অনেক শিকার করা হয় এবং ফলে কিছু কিছু পাখির অস্তিত্ব হুমকির
সম্মুখীন, যেমন -সাইবেরীয় বক।
কৃষি
: আফগানিস্তানে আবাদযোগ্য কৃষিভূমির পরিমাণ খুবই কম এবং ব্যাপক সেচের প্রয়োজন
হয়। ঝর্না ও নদী থেকে খাল খুঁড়ে পানি আনা হয়। আফিম উৎপাদনকারি দেশ। মাদকদ্রব্য
হিসাবে হাশিশ উৎপাদনে আফগানিস্থান বিশেষ স্থান দখল করে আছে। গম আফগানিস্তানের
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শস্য। এরপর রয়েছে যব, ভুট্টা ও ধান। তুলাও ব্যাপকভাবে চাষ
করা হয়। আফগানিস্তান থেকে রপ্তানিকৃত দ্রব্যের মধ্যে ফল ও বাদাম গুরুত্বপূর্ণ।
আফগানিস্তানের আঙুর ও তরমুজ খুব মিষ্টি হয়; এগুলি দক্ষিণ-পশ্চিমে, হিন্দুকুশের
উত্তরে ও হেরাতের আশেপাশের অঞ্চলে জন্মে। আফগানিস্তান কিশমিশও রপ্তানি করে।
অন্যান্য ফলের মধ্যে রয়েছে এপ্রিকট, চেরি, ডুমুর, তুঁত ও ডালিম।
উত্তর আফগানিস্তানে বিপুল পরিমাণে কারাকুল ভেড়া পালন করা হয়। এই ভেড়ার শক্ত,
কোঁকড়া লোম দিয়ে পারসিক ভেড়ার কোট তৈরি করা হয়। আফগানিস্তান বিশ্বে সর্বাপেক্ষা
বড় আফিম উৎপাদনকারী দেশ।
আমদানি: যন্ত্রপাতি, খাদ্য, বস্ত্রশিল্প, পেট্রোলিয়াম।
রফতানি : আফিম, ফল, বাদাম, হাতে তৈরি কার্পেট, উল, সূতা, চামড়া, মূল্যবান ও
অর্ধ-মূল্যবান রত্ন।
সূত্রঃ
http://www.amarbornomala.com/details8733.html
https://www.cia.gov/library/publications/the-world-factbook/geos/af.html