এশিয়া
এশিয়া (অভিধান)

এশিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে জনবহুল মহাদেশ। গ্রিক এশিয়া শব্দটি ল্যাটিন ভাষা হয়ে ইংরেজি ভাষায়
Asia হিসেবে গৃহীত হয়েছে। পরে নামটি ভারতীয় অন্যান্য ভাষার সাথে বাংলাতে গৃহীত হয়েছে।


পৃথিবীর সমগ্র ভূপৃষ্ঠের ৮.৬% ও স্থলভাগের ২৯.৪% অংশ জুড়ে এই মহাদেশ অবস্থিত। সারা বিশ্বের ৬০%-এরও বেশি মানুষ এই মহাদেশে বসবাস করেন। এশিয়ার পূর্ব এবং উত্তর গোলার্ধকে প্রথাগতভাবে কখনও কখনও আফ্রিকা-ইউরেশিয়ার অন্তর্ভুক্ত বলা হয়ে থাকে। এই অঞ্চলের পশ্চিমাংশ অনেক আগে ইউরোপের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। একসময় এশিয়া এবং ইউরোপকে একত্রে ইউরেশিয়া বলা হতো।  মূলত উরাল পর্বতমালা এবং উরাল নদী, বৃহত্তর ককেসাস পর্বশ্রেণি বরাবর ইউরোপের সীমানা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। পশ্চিমে বস্‌পরাস, দার্দানালেস এবং ঈজীয়ান সাগর দ্বারা ইউরোপ থেকে এশিয়া বিচ্ছিন্ন হয়েছে। উত্তর-পূর্বদিকে বেরিং  প্রণালী দ্বারা উত্তর আমেরিকা থেকে বিচ্ছিন্ন। অন্যদিকে ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরের মধ্যবর্তী সুয়েজ খাল দ্বারা আফ্রিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

এশিয়া মহাদেশ পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর এবং উত্তরে উত্তর মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত। এর নিকটবর্তী অন্যান্য সাগরগুলো হলো- দক্ষিণে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর, পূর্বে চীন সাগর, পীত সাগর. জাপান সাগর, ওক্‌টস্ক সাগর ও বেরিং সাগর এবং উত্তরে সুমেরু সাগর।

 

এই মহাদেশের আয়তন ৪৪,৫৭৯,০০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (১৭,২১২,০০০ বর্গকিলোমিটার)।

 

ভূত্বকের বিচারে এই মহাদেশ প্রাক্-কেম্ব্রীয় শিলা দ্বারা গঠিত। দক্ষিণে আরব ও ভারত উপমহাদেশ এবং উত্তরে সাইবেরীয় মালভূমি ভাঁজকরা পর্বতশ্রেণি দ্বারা আবদ্ধ। এই মহাদেশের উত্তর রয়েছে নিম্ন-মালভূমি। এই মালভূমির মধ্যে রয়েছে পশ্চিম মধ্য এশিয়া ও সাইবেরিয়ার বেশিরভাগ অংশ। এর কেন্দ্রীয় অংশে রয়েছে সুউচ্চ মালভূমি। এর ভিতরে রয়েছে পামির মালভূমি। এই মালভূমিতেই রয়েছে হিমালয় পর্বতশ্রেণি এবং সর্ব্বোচ্চ পর্বশৃঙ্গ এভারেষ্ট। এছাড়া রয়েছে কারাকুরাম, কুইনলান, তিয়েনশান ও হিন্দুকুশ পর্বতমালা। এছাড়া আছে মধ্যপ্রাচ্যের ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস বিধৌত ভূমি, গঙ্গা, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র বাহিত পলি সমৃদ্ধ ভূমিসমূহ। পূর্ব-প্রান্ত জুড়ে রয়েছে পর্বতসঙ্কুল এবং সমতলের সমন্বয়ে গঠিত নিম্নভূমি

 

এশিয়ার অধিকাংশ নদী উচ্চ মালভূমি বা উচ্চ পর্বত থেকে নিম্নভূমির দিকে ধাবিত হয়ে দীর্ঘপথ অতিক্রম করে সাগরে পতিত হয়েছে। এই মহাদেশের উল্লেখযোগ্য নদীগুলো হলো- অপ্, ইয়েনিসেই, লীনা, আমুদরিয়া, পীতনদী, মেকং, ইরাবতী, ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা, সিন্ধু, তাইগ্রিস, ইউফ্রেটিস।

 

এশিয়ার বেশিরভাগ মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। এই কারণে পৃথিবীর সিংহভাগ ধান উৎপন্ন হয় এশিয়াতে। উৎপাদনের বিচারে খাদ্য শষ্যের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে গম। এছাড়া উৎপন্ন হয় নানাজাতের তৃণগোত্রীয় ফসল, সয়াবীন, চীনা-বাদাম, ইক্ষু, তুলা, পাট, রবার, চা।

 

খনিজ সম্পদের ভিতর হাইড্রোকার্বন জাতীয় খনিজ তেল এবং গ্যাস এশিয়া একটি বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে লৌহ, অভ্র, টাংস্ট্যান, এ্যান্টিমনি, টিন ইত্যাদি।

 

জনসংখ্যার বিচারে এশিয়ার ধর্মগুলোর ভিতরে বৌদ্ধ ধর্ম প্রধান স্থান দখল করে আছে।  এরপরে রয়েছে ইসলাম, হিন্দু এবং খ্রিষ্টান। এছাড়া ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীদের ভিতর প্রচলিত আছে তাদের নিজস্ব ধর্মমত।

 

প্রাচীন সভ্যতার বিচারে এশিয়া একটি বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে। প্রাচীন ব্যাবীলন, চীন, জাপন, ভারত, পারস্য সভ্যতা এশিয়ার গৌরব হিসাবে বিবেচিত হয়।

এশিয়া মহাদেশে বর্তমানে (২০১২ খ্রিষ্টাব্দ) মোট ৪৭টি রাষ্ট্র রয়েছে। এই দেশগুলোর বর্ণানুক্রমিক তালিকা নিচে তুলে ধরা হলো।

আজারবাইজান
আফগানিস্তান
আর্মেনিয়া
ইন্দোনেশিয়া
ইয়েমেন
ইরাক
ইরান
ইস্রাইল
উজবেকিস্তান
ওমান
কম্বোডিয়া
কাজাখস্তান
কাতার
কিরগিজস্তান
কুয়েত
কোরিয়া (উত্তর)
কোরিয়া (দক্ষিণ)
চীন
জর্জিয়া
জর্ডান
জাপান
তাইওয়ান
তাজিকিস্তান
তুরস্ক (অংশত ইউরোপ)
তুর্কমেনিস্তান
থাইল্যান্ড
দক্ষিণ কোরিয়া
নেপাল
পাকিস্তান
পূর্ব তিমুর
ফিলিপাইন
বাংলাদেশ
বাহরাইন
ব্রুনেই
ভারত
ভিয়েতনাম
ভুটান
মঙ্গোলিয়া
মিয়ানমার
মালদ্বীপ
মালয়েশিয়া
রাশিয়া
লাউস
লেবানন
শ্রীলঙ্কা
সংযুক্ত আরব আমিরাত
সাইপ্রাস
সিঙ্গাপুর
সিরিয়া
সৌদি আরব

 

আঞ্চলিকতার বিচারে এশিয়া মহাদেশকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-