তাজিকিস্তানের পতাকা

তাজিকিস্তান
ইংরেজি: Tajikistan

এশিয়া মহাদেশের একটি স্থল-পরিবেষ্টিত দেশ। তাজিকদের বাসস্থান অর্থে এই অঞ্চলের নামকরণ হয়েছিল তাজিকিস্তান। রাজধানী দুশানবে।

ভৌগোলিক অবস্থান: ৩৯° উত্তর ৭১° পূর্ব। এর উত্তরে উজবেকিস্তান ও কির্গিজস্তান, পূর্বে চীন, দক্ষিণে
আফগানিস্তান; পশ্চিমে তুর্কেমেনিস্তান

আয়তন : ১,৪৩,১০০ বর্গকিলোমিটার (৫৫,৩০০ বর্গমাইল)

ধর্ম: ইসলাম।
মুদ্রা: তুর্কি লিরা।


ভৌগোলিক অবস্থা:
দেশটির প্রায় ৯০ শতাংশ জুড়ে রয়েছে ছোটবড় পর্বতমালা। দেশটির প্রধান দু'টি পর্বতমালার নাম পামির এবং আলায়। এসব পর্বতমালার হিমবাহ থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন পানির ধারা ও নদী দেশটির খামার ভূমিতে সেচ কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দেশটির উত্তর প্রান্তে মধ্য এশিয়ার অন্যতম পর্বতমালা তিয়ানশান রয়েছে পর্বতগুলোর উত্তর ও দক্ষিণে রয়েছে দুটি নিম্নভূমি অঞ্চল। এখানেই তাজিকরা ব্যাপকভাবে বসবাস করে। দেশটির জলভাগের পরিমাণ আয়তনের মাত্র দশমিক ৩ শতাংশ।

মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে জনবহুল এলাকা সিরদরিয়া নদী বিধৌত ফেরগানা পর্বতমালা ও দক্ষিণে তুর্কিস্তান পর্বতমালার মধ্যে অবস্থিত। দক্ষিণের নিম্নভূমি এলাকাটিতে আমুদরিয়া ও পাঞ্জ হলো প্রধান দু’টি নদী। এই দুই নদীর প্রভাবে বেশ কিছু হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হ্রদগুলো হলো- কায়রাকুম, ইসকানদেরকুল, কুলিকালন, কারাকুল, সারেজ, শাদউ লেক ও জরকুল।

জনসংখ্যা: ৮৭,৩৪,৯৫১ জন (২০১৬)।
এদের মধ্যে ১৪ বছরের নিচের জনসংখ্যা ৩৩.৭%, ১৫ থেকে ২৪ বছরের ২০.৯%, ২৫ থেকে ৫৪ বছরের জনসংখ্যা ৩৭.৯%, ৫৫ থেকে ৬৪ বছরের ৪.৩% এবং ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বের জনসংখ্যা ৩.৩%। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের জরিপ অনুযায়ী জানা যায়- তাজিকিস্তানের ২৬% মানুষ শহরে বাস করে। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের জরিপ মতে দেশের রাজধানী দুশানবেতে ৭ লাখ ৪ হাজার লোক বাস করে।

উল্লেখযোগ্য জাতিগোষ্ঠী: তাজিক ৮৪.৩%, উজবেক ১৩.৮%, কিরগিজ .৮%।

জন্ম-মৃত্যু হার: তাজিকিস্তানের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৮২৩ শতাংশ। জন্মহার প্রতি হাজারে ২৫.৯৩ জন এবং মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ৬.৪৯ জন।

রোগ: ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে হিসাব মতে এইডস রোগীর হার ০.২%। অবশ্য এই সময় এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৯১০০শ জন।
অন্যান্য রোগের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ আক্রান্ত হয় ডায়রিয়া, হেপাটাইটিস এ এবং টাইফয়েড জ্বর। এছাড়া অল্প বিস্তর ম্যালেরিয়ার রোগ দেখা যায়।

ধর্ম:
জনসংখ্যার
৯৮% মুসলমান। এদের ভিতরে ৯৫% সুন্নী এবং ৩ % শিয়া। এছাড়া রয়েছে কিছু সুফীবাদী। সুন্নীদের অধিকাংশই হানাফী মাযহাবের অনুসারী। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে রয়েছে খ্রিষ্টান অর্থোডক্স, প্রোটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও ইহুদি

ভাষা : তাজিক।
উত্তর তাজিকিস্তানে প্রায় ২৫ হাজার ইয়াগনোবি সম্প্রদায়ের মানুষ- ইয়াগনোবি ভাষাতেই কথা বলে থাকে।
খনিজ সম্পদ:
সোনা, রুপা, ইউরেনিয়াম।

মুদ্রার নাম:
সোমোনি

ইতিহাস:
খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ অব্দের দিকে বর্তমান তাজিকিস্তান অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। কালক্রমে এই স্থানের জনগোষ্ঠী আশপাশের কিছু শক্তিশালী সম্রাটের অধীনে চলে যায়। বিশেষ করে এই ভূখণ্ডটি দীর্ঘদিন পারস্যের সম্রাটদের অধীনে ছিল। বুদ্ধ-পূর্ব যুগে এই অঞ্চল পারস্যের আচেহমানিদ সম্রাটদের অধীনে ছিল।
খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩৪ অব্দে আলেকজান্ডার পারশ্য আক্রমণ করে। পারশ্য সম্রাটদের পরাজয়ের ফলে- অঞ্চলটি গ্রেসো-ব্যাকট্রিয়ান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর শেষাংশ থেকে শুরু করে দ্বিতীয় শতাব্দীর প্রথমাংশ পর্যন্ত এটি ব্যাকট্রিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবেই থাকে।
এরপর এটা হয়ে যায় তুর্কিস্তানের অংশ। এরপর এই অঞ্চলটি এটি চীন সাম্রাজ্যের অংশে পরিণত হয়েছিল।

সপ্তম খ্রিষ্টাব্দে আরবরা এই অঞ্চল দখল করে এবং এই সূত্রে  এ অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের বিকাশ ঘটে। এরপর তাজিক সম্রাট সামানিড আরবদের উচ্ছেদ করেন। এ সময় তিনি সমরখন্দ ও বোখারা সমৃদ্ধশালী নগরে পরিণত হয়। কালক্রমে
এই দুটি শহর তাজিকদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পড়ে। উল্লেখ্য বর্তমানে এই দুটি শহরই উজবেকিস্তানের অন্তর্গত। এরপর মোঙ্গোলরা এই অঞ্চলের দখল করে নেয়।
 
ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাশিয়ার সম্রাটরা মধ্য এশিয়ায় তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার করতে থাকেন। ১৮৬৪ থেকে ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে রাশিয়া বর্তমান কাজাখস্তান, কাস্পিয়ান সাগর, আফগানিস্তান সীমান্ত পর্যন্ত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। যতদূর জানা যায়-১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে রুশ সম্রাট তাজিকিস্তানকে নিজ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছিল।

১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত রুশ বিল্পবের পর রাশিয়া কমিউনিস্ট শাসকদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ফলে এই অঞ্চলের অধিকার চলে যায় তৎকালীন বলশেভিকদের হাতে। এই সময় বাসমাচি গোষ্ঠী বলশেভিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই যুদ্ধের প্রথম দিকে এরা সোভিয়েত শাসনাধীন খিবা ও বোখারা জয় করে নেয়। এরপর বিভিন্ন কারণে তাদের এই স্বাধীনতা আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যায়। প্রায় চার বছরব্যাপী এ যুদ্ধে সময় বলশেভিক সৈন্যরা তাজিকিস্তানের গ্রাম ও মসজিদগুলো পুড়িয়ে দেয় এবং লোকজনকে ব্যাপক হারে গ্রেফতার করে। এরপর থেকে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের প্রচারণা শুরু করে। এ সময় তারা ধর্মপ্রাণ মুসলিম, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের নির্যাতন করতে থাকে। একই সময় মসজিদ, চার্চ ও সিনাগগগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়।

১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে বাসমাচি আন্দোলন দমন করার পর, সোভিয়েত সরকার প্রতিবিপ্লব দমন করার জন্য মধ্য এশিয়াকে জাতিভিত্তিক পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান নামে দু’টি ইউনিয়ন প্রজাতন্ত্র গঠন করে। এ সময় তাজিক ও কিরগিজ নামে দুইটি স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র গঠিত হলেও এগুলো ছিল উজবেক সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের অংশ।


১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে তাজিকিস্তানকে পূর্ণাঙ্গ ইউনিয়ন সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত করা হয়। এ সময়ে জীবনযাত্রার মান, শিক্ষা এবং শিল্প সব দিক দিয়েই তাজিকিস্তান সোভিয়েতের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর পেছনে পড়ে যায়। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দ তাজিকিস্তানে এ অবস্থাতেই ছিল। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে সোভিয়েত ইউনিয়ন তাজিকিস্তান থেকে তার নিয়ন্ত্রণ গুটিয়ে নেওয়া শুরু করে।
১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার সূত্রে- এই বৎসরের ৯ই সেপ্টেম্বর তাজিকিস্তান স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ২রা মার্চ দেশটি জাতিসংঘে যোগদান করে।

স্বাধীনতার পর পরই দেশটিতে সাম্যবাদী সরকার ও বিরোধী দলগুলির মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে দুই পক্ষ একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এরপর থেকে দেশটি সাম্যাবস্থায় রয়েছে।

২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের নতুন সংবিধান অনুসারে প্রেসিডেন্ট ৭ বছর মেয়াদের জন্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন।
২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে দেশটি ইসলামকে সরকারি ধর্ম হিসেবে ঘোষণা দেয়।