জাতীয় পতাকা

তুর্কমেনিস্তান
পোস্তু : افغانستان। ইংরেজি : Turkmenistan
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা | { দেশপ্রশাসনিক অঞ্চল | আঞ্চলিক স্বশাসিত এলাকা | অঞ্চল| অবস্থান | দৈহিক-লক্ষ্যবস্তু | দৈহিক সত্তা | সত্তা |}

এশিয়া মহাদেশের একটি দেশ। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে পৃথক হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। উল্লেখ্য, ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে তুর্কমেনিস্তান ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি প্রদেশ। তখন এর নাম ছিল-  তুর্কমেনিয়া (রুশ: Туркмения)১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা-বিষয়ক গণভোটের পরে তুর্কমেনিস্তান সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে পৃথক হয়ে একটি স্বাধীনতা রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা দেয়পরে সাংবিধানিক আইন মোতাবেক ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ শে অক্টোবর এই প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১ অনুসারে এই রাষ্ট্রের নতুন নাম নির্ধারন করে: তুর্কমেনিস্তান। এই সূত্রে ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে তুর্কমেনিস্তান আত্মপ্রকাশ করে।

তুর্কমেনিস্তানের নামটি  তুর্কমেন (তুরকমেন ভাষার জনগোষ্ঠী) ও ফার্সি প্রত্যয় (স্থান অর্থে) তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, তুর্কমেন নামটি তুর্ক (তুর্কি জাতি) থেকে এসেছে, মূল তুর্ক শব্দের সাথে মেন প্রত্যয় যোগে তৈরি হয়েছে তুর্কমেন শব্দ। এর অর্থ "প্রায় তুর্ক"তবে কিছু কিছু ভাষাতাত্ত্বিক মনে করেন যে মেন প্রত্যয়টি খাঁটি অর্থবোধক। এই বিচারে এর অর্থ দাঁড়ায় "খাঁটি তুর্ক" বা "তুর্কি তুর্ক"। মুসলিম ইতিহাসবিদদের মতে, তুর্কমেনিস্তানের ব্যুৎপত্তিটি তুর্ক ও ঈমান (আরবি: إيمان‎‎, "আস্থা, ধর্মবিশ্বাস") শব্দ থেকে এসেছে 

ভৌগোলিক অবস্থান: ৩৯ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ ৬০ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ । এর উত্তরে কাজাখস্তান ও উজেবকিস্তান, পূর্বে উজেবকিস্তান আফগানিস্তান দক্ষিণে আফগানিস্তান ইরান, পশ্চিমে কাস্পিয়ান সাগর

রাজধানী
: আশখাবাদ।
আয়তন: ৪,৯১,২১০ বর্গ কিলোমিটার (১,৮৯,৬৬০ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা: ৫,১১০,০২৩ (ডিসেম্বর ২০০৬)।
ভাষা: তুর্কমেন, রুশ, উজবেক, দারি
ধর্ম: ইসলাম।
মুদ্রা: তুর্কমেন মানাত
(TMT)
মাথাপিছু আয়: $১৮,৭৭১ (২০১৮)

ইতিহাস: প্রায় খ্রিষ্ট-পূর্ব ৩৫০০ অব্দের দিকে এই অঞ্চলে ইন্দো-ইরানিয়ান ভাষাভাষীর মানুষ বসবাস শুরু করে। প্রাচীন ইরানের আকাইমেনিড সাম্রাজ্যের সংযুক্তির মাধ্যমে তুর্কমেনিস্তানের লিখিত ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল। খ্রিষ্টীয়য় অষ্টম শতাব্দীতে, তুর্কি ভাষী ওঘুজ উপজাতিরা মঙ্গোলিয়া থেকে বর্তমান মধ্য এশিয়ায় চলে এসেছিল। এই উপজাতির একটি শক্তিশালী সংঘের তুর্কমেন জনগণের জাতিগত ভিত্তি তৈরি করেছিল। খ্রিষ্টীয় দশম শতাব্দীতে "তুর্কমেন" নামটি প্রথম ওঘুজ উপজাতির মানুষ গ্রহণ করেছিল। এই সময় এরা ইসলাম গ্রহণ করেছিল। এই সময় তুর্কমেনিস্তান ছিল সেলজুক সাম্রাজ্যের রাজত্বের অধীনে ছিল। তখন এই অঞ্চল ছিল পারশ্যের অধিবাসি ও ওঘুজ উপজাতির মিশ্র আবাসভূমি। এদে অনেকে দেশ ত্যাগ করে আজারবাইজান এবং পূর্ব তুরস্কে চলে গিয়েছিল।

১২১৯ থেকে ১২২৫ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে মোঙ্গল সামরিক নেতা
চেঙ্গিশ খান মধ্য এশিয়ায় যে সামরিক অভিযান চালায়, এবং মধ্য এশিয়া অধিকারে আনতে সক্ষম হয়। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে চেঙ্গিশ খানের আক্রমণে খিভা, কনিয়ে উরজেনচ এবং মাগুরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এই আক্রমণের সময় ব্যাপকভাবে স্থানীয় মানুষদের হত্যা করা হয় এবং প্রতিটি বাসস্থলকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

ষোড়শ এবং আঠারো শতকে যাযাবর তুর্কমেনী উপজাতিদের মধ্যে একের পর এক বিভক্তি ও সংঘবদ্ধতা দেখা গিয়েছিল। এঁদের ভিতর  কতিপয় গোষ্ঠী স্বাধীন তর্কমেনিস্তানের স্বপ্ন দেখেছিল। ষোড়শ শতকের মধ্যে, এই উপজাতিগুলোর অধিকাংশই দুটি উজবেক আসন খিভা এবং বুখোরোর নামমাত্র নিয়ন্ত্রণে ছিল। তুর্কমেন সৈন্যরা এই সময়ের উজবেক সেনাবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিল।

উনিশ শতকে, ইয়মুদ বিদ্রোহ ঘটে। এর ফলে ধীরে ধীরে তুর্কমেন উজবেক শাসন থেকে অনেকটাই মুক্ত হয়ে যায়।
১৮৫৫ খ্রিষ্টবব্দে মোঙ্গল সেনাপতি গোশুত-খানের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে তুর্কমেন বাহিনী পরাজিত হয়।
১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে পারস্য সেনাবাহিনীকে মঙ্গোলদের হাতে পরাজিত হয়। এর ফলে  তুর্কমেনিস্তান মঙ্গোল রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়া তুর্কমেনিস্তানের আখাল অঞ্চল জয় করার জন্য প্রথম প্রচেষ্টা চালায়। তবে এই অভিযানে রাশিয়ান বাহিনী টেক তুর্কমেনীদের কাছে পরাজিত হয়
১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়া তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তান দখল করে নেয় এরপর থেকে তুর্কমেনিস্তান রাশিয়ার অধিকারে থেকে যায়।

১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তুর্কমেন সেনাবাহিনী নবগঠিত সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসনের বিরুদ্ধে তথাকথিত বাসমচি বিদ্রোহে কাজাক, কিরগিজ এবং উজবেকদের সাথে যোগ দিয়েছিল। রাশিয়া এই বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করতে সক্ষম হয়েছিল।

১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে তুর্কমেনকে নিয়ে সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ট্রান্সকাস্পিয়া প্রদেশ থেকে গঠন করেছিল
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে, সোভিয়েত ইউনিয়নে আধুনিক কৃষি-উৎপাদনের কার্যক্রম শুরু হয়। এই সময় তুর্কমেনিস্তানের যাযাবর জীবনযাত্রা ধ্বংস হয়ে যায়।

১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ভূমিকম্পে তুরকমেনিস্তানের রাজধানী আশগাবাদে প্রায় ১১০,০০০ জন মৃত্যুবরণ করে।  যা ছিল শহরের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ।

১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে রাশিয়া উদারনৈতিক আন্দোলনের শুরু হয়। তবে তুরকমেনিস্তানে এর প্রভাব ততটা পড়ে নি।
১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে তুর্কমেনিস্তানের সুপ্রিম সোভিয়েত মস্কোর দ্বারা শোষণের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়া হিসাবে প্রায় অপ্রস্তুত ভাবে সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করে।
১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে জাতীয় গণভোট আহ্বান করা হয়। ২৬ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়নের অস্তিত্ব শেষ হয়ে যায়। ২৭শে ডিসেম্বর তুর্কমেনিস্তান স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এই সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির প্রাক্তন আমলা,  সাপারমুরাত নিয়াজভ তুর্কমেনিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান হন।
১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে নিয়াজভ একমাত্র রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের একমাত্র প্রার্থী ছিলেন। কারণ সে সময়ে অন্য প্রার্থী হওয়ার অনুমতি ছিল না।
২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পরে তালেবানদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে তর্কেমেনিস্তান সীমিত সমর্থন দিয়েছিলেন।
২০০২ খ্রিষ্টাব্দে নিয়াজভ তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি এই অভিযোগ তুলেছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস শিখমুরাদভের বিরুদ্ধে।

২০০২ থেকে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানের মধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে মারাত্মক উত্তেজনা দেখা দেয়। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে নিয়াজভ  হত্যা চেষ্টায় উজবেকিস্তানের ভূমিকা ছিল বলে মনে করা হয়।
২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে পুনরধিষ্ঠিত করেছে।

২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর এবং ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনে কেবল নিয়াজভের দল প্রতিনিধিত্ব করেছিল। এই নির্বাচনে কোনও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক অংশ নেননি।
২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে নিয়াজভ আশগাবাত ও গ্রামীণ গ্রন্থাগারের বাইরে সমস্ত হাসপাতাল বন্ধ করে তার স্বৈরাচারী শক্তি প্রয়োগ করেছিল। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে সার্বভৌম নীতি পরিবর্তনের প্রবণতা, শীর্ষ কর্মকর্তাদের বদলি, তেল ও গ্যাস খাতের বাইরে অর্থনৈতিক উৎপাদন হ্রাস পেয়েছিল। এই সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসাবে মনোনীত উপ-প্রধানমন্ত্রী গুরবানগুলি বেরদিমুহামেদু রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পান।
২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারির মাসের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত বিশেষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হন।
২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে পিপলস কাউন্সিল সর্বসম্মতিক্রমে একটি নতুন সংবিধান গৃহীত করার প্রস্তাব পাস করে। এর ফলে কাউন্সিলটি বিলুপ্ত হয়ে যায় ডিসেম্বর মাসে সংসদের আকারে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটে এবং একাধিক রাজনৈতিক দল গঠনেরও অনুমতি দেওয়া হয়
২০১২ খ্রিষ্টাব্দে ৯৭% ভোট নিয়ে পুনর্নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে তুর্কমেনিস্তানে প্রথম বহু-দলীয় সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই নির্বাচনে বেরদি মুহামেদু জয়ী হয়েছিলেন।
২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে তুর্কমেনিস্তানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নয়জন প্রার্থী ছিল, প্রতিটি বিরোধী প্রার্থী তার ইশতেহারে বর্তমান রাষ্ট্রপতি বেরদি মুহামেদুকে নতুন বছরের শুভকামনা জানাতে একটি বক্তব্য রেখেছিলেন।

বর্তমানে তুর্কমেনিস্তানের সাথে ১৩৯ টি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দেশ হলো- আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, ইরান এবং রাশিয়া

 


সূত্রঃ
http://www.amarbornomala.com/details8733.html

https://www.cia.gov/library/publications/the-world-factbook/geos/af.html