বাংলায় বার ভুঁইয়া-উত্তর মোগল শাসনকাল

১৬১৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার মোগল শাসক ইসলাম খান বার ভুইঁয়াদের শেষ ভুঁইয়া উসমান খানের রাজ্য আক্রমণ করেন। যুদ্ধের প্রথম থেকেই উসমান ক্রমাগত জয়লাভ করতে থাকেন। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে তীরবিদ্ধ হয়ে উসমানের মৃত্যু হলে, আফগান সৈন্যরা মোগলদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এর ভিতর দিয়ে বাংলার ভুঁইয়াদের রাজত্ব শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে বাংলায় মোগল শাসন শুরু হয়।

 

মোগলদের শাসনামলের এই পর্যায়ে প্রথম সেনাপতি এবং শাসক ছিলেন ইসলাম খান। ১৬১৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ভারতের পূর্বাঞ্চলের উত্তরাংশের শেষ সীমা ছিল আসাম-বাংলা সীমান্ত। কিন্তু মোগলদের সাথে আসমাদের শাসকদের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরে সচল ছিল। শেষ পর্যন্ত মোগলরা আসাম আক্রমণ করে ১৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে। যুদ্ধে প্রথম দিকে মোগল সৈন্য জয়ী হলেও সেনপতির অদূরদর্শিতার জন্য মোগলদের শোচনীয় পরাজয় হয়।

 

এরপর মোগল শাসক আরকান রাজ্যের দিকে নজর দেন। ১৬১৬ খ্রিষ্টাব্দে একটি বিশাল সেনাবহিনী নিয়ে মোগলরা চট্টগ্রাম আক্রমণ করে। এই আক্রমণও ব্যর্থ হয়ে যায়। পাল্টা আরাকান সৈন্যদের আক্রমণে মোগলবাহিনী যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ১৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে মগ্-রাজা নোয়াখালি ও ঢাকা দখলের জন্য একটি বিশাল নৌবাহিনী পাঠায়। কিন্তু তাদের এই অভিযান ব্যর্থ হয়। ১৬৩৯ খ্রিষ্টাব্দে এরূপ একটি বাহিনী ঢাকার সন্নিকটে পৌঁছায়। মোগল বাহিনী এদের প্রতিরোধের জন্য অগ্রসর হয়। এই সময় মগদের সাথে পর্তুগিজ জলদস্যুদের বিবাদ তীব্র আকার ধারন করলে, মগ সৈন্য ফিরে যায়।

 

১৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে মোগল সম্রাট ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বঙ্গদেশে বাণিজ্যিক সুবিধা প্রদান করে। আর ১৬৫১ খ্রিষ্টাব্দে হুগলী  পাটনা এবং কাশিমবাজার-এ বাণিজ্যকুঠি নির্মাণ করে। এই সকল কুঠির মাধ্যমে ইংরেজরা রেশমী কাপড়, সুতীবস্ত্র, সোরা, চিনি সংগ্রহ করে ইউরোপে রফতানি করতো। ১৬৫৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন প্রতিনিধি হিসেবে জেমস হার্ট ঢাকা প্রবেশ করার মধ্য দিয়ে বাংলায় ইংরেজ আগমন শুরু হয়। এই বৎসরেই বাংলা, বিহার এবং উড়িষ্যার বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে মাদ্রাজকে সুসংহত করে।

 

এই সময় দিল্লিতে সম্রাট শাহজাহান (১৬২৭-১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পুত্রদের ভিতর, তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র সুজা বাংলার শাসক হন। রাজত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয় ১৬৫৭ খ্রিষ্টাব্দে। এই সময় শাহজাহান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে, আওরঙ্গজেব একে একে তিন ভাইকে পরাজিত করে দিল্লির সিংহাসন দখল করতে সমর্থ হন। ভাতৃবিরোধের সূত্রে সুজা নিজেকে বাংলার নবাব ঘোষণা দিয়ে আগ্রার পথে রওনা হন। অন্যদিকে মুরাদ নিজেকে গুজরাটের নবাব ঘোষণা করে অগ্রসর হন। আওরঙ্গজেব প্রকাশ্যে কোনো ঘোষণা না দিয়ে প্রতীক্ষার পথ বেছে নেন। সুজার সসৈন্যে অগ্রসর হওয়ার সংবাদ শোনার পর আওরঙ্গজেব দ্রুত নর্মদা নদী অতিক্রম করে উজ্জ্বয়িনীর কাছে মুরাদের সাথে মিলিত হন। উভয়ই দারা এবং সুজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্রতীজ্ঞা করেন। জয়ের পর দুই ভাই রাজ্য সমানভাবে ভাগ করে নেবেন এমন সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। দারা এই সংবাদ পেয়ে তাঁর পুত্র সুলেমানকে সুজাকে প্রতিহত করার জন্য পাঠান। বারণসীর কাছে বাহাদুরপুর নামক স্থানে উভয় বাহিনী মুখোমুখী হয়। ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত যুদ্ধে সুজা পরাজিত হয়ে বাংলাদেশে ফিরে যান। দিল্লির সিংহাসনে বসে আওরঙ্গজেব নিজের ক্ষমতাকে সুসংহত করতে কিছুদিন সময় নেন। এরপর তিনি সুজাকে শায়েস্তা করার জন্য, বাংলাতে সেনাপতি মীরজুমলাকে পাঠান। প্রতিটি যুদ্ধে সুজা পরাজিত হয়ে আরাকানে পালিয়ে যান। ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে  আওরঙ্গজেব মীরজুমলাকে বাংলার শাসক নির্বাচন করেন। মীরজুমলা বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। তিনি ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দের পরে আসাম এবং কুচবিহারে যুদ্ধবিগ্রহে কাটান। এর ভিতরে তিনি মগ ও পর্তুগিজদের উপর নজরদারি বৃদ্ধি করেন।

 

৬৬১ খ্রিষ্টাব্দে মীরজুমলা কুচবিহার অভিযান চালান।  কুচবিহারের রাজা কোনো যুদ্ধ না করেই পালিয়ে যান। ফলে কুচবিহার মোগলদের অধিকারে চলে আসে। ১৬৬২ খ্রিষ্টাব্দে মীরজুমলা আসামে অভিযান চালান। একটি নৌযুদ্ধে আসমের সৈন্যরা পরাজিত হলে, আসাম-রাজ তাঁর রাজধানী গড়গাঁও ত্যাগ করেন। সে বছর বর্ষা শুরু হলে, মোগল সৈন্যরা বিপর্যয়ে পড়ে। এই সময় আসামের সৈন্যরা বিচ্ছিন্নভাবে আক্রমণ করে মোগলদের ক্ষতি করতে থাকে। বর্ষার মৌসুমে মোগলরা কোনো ক্রমে টিকে যায় মাত্র। বর্ষা শেষে মোগলরা বাংলার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা  পুনস্থাপন করে এবং আসাম সৈন্যদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। ১৬৬৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রচুর অর্থ যুদ্ধাস্ত্র সমর্পণ করে মোগলদের সাথে সন্ধি স্থাপন করে। এরপর মীরজুমলার মৃত্যু হলে, আসাম-রাজ সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করে আসামকে মোগল শাসনমুক্ত করে। একই সাথে কুচবিহারও স্বাধীন হয়ে যায়।

 

৬৬৪ খ্রিষ্টাব্দ বাংলার শাসক হয়ে আসেন শায়েস্তা খান। তিনি মগ ও পর্তুগিজ জলদেস্যুদের অত্যাচার থেকে উপকূলীয় মানুষকে রক্ষার জন্য ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রামে সেনাভিযান চালানো হয়। এই সময় মগ এবং পর্তুগিজদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হলে, পর্তুগিজরা মগদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। এই সময় পর্তুগিজদের অনেককে মোগল বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করেন। এরপর পর্তুগিজ সেনাপতিদের পরামর্শে শায়েস্তা খান চট্টগ্রামে অভিযান চালান। মোগলবাহিনী প্রথমে সন্দীপ দখল করে নেয়। এরপর চট্টগ্রাম তাদের অধিকারে আসে। শায়েস্তা খান চট্টগ্রামে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেন এবং এই শহরের নামকরণ করা হয় ইসলামাবাদ।

 

াংলায় ইংরেজ কুঠি স্থাপনের পর থেকে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইংরেজরা বিশেষ সুবিধা লাভ করতে পারে নি। মোগল কর্মকর্তারা নানাভাবে কোম্পানির কর্মচারীরাদের কাছ থেকে কর আদায় করতো। ফলে ইংরেজদের সাথে মোগলদের সংঘাত সৃষ্টি হয়। মোগলরা হুগলীর ইংরেজ কুঠি আক্রমণ করে। ইংরেজরা জব চার্নকের নেতৃত্বে হুগলী ত্যাগ করে সুতানটিতে আশ্রয় নেয়। মোগলরা পুনরায় আক্রমণ করলে, জব চার্নক সুতানটি পরিত্যাগ করে বালেশ্বরে চলে যায়। এরপর মোগলবাহিনী বালেশ্বর অধিকার করে।

 

১৬৮৫ খ্রিষ্টাব্দে শায়েস্তা খান কুচবিহারের বিরুদ্ধে একটি অভিযান চালান। কুচবিহারের রাজা পালিয়ে গেলে, সেখানে মোগল সামরিক ঘাঁটি স্থাপিত হয়।

 

৬৮৭ খ্রিষ্টাব্দে শায়েস্তা খান উলুবেড়িয়াতে (কলকাতার ২০ মাইল দক্ষিণে) কুঠি নির্মাণের অনুমতি দেন। এই সূত্রে জব চার্নক আবার সুতানটিতে ফিরে আসেন। এই সময় বোম্বাই উপকুলে ইংরেজদের সাথে মোগলদের সংঘর্ষ শুরু হলে, বাংলাদেশে তার প্রভাব পড়ে। শায়েস্তা খানের পরবর্তী মোগল শাসক ইব্রাহিম খান ১৬৮৮ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাটের আদেশে কোম্পানির সাথে যুদ্ধ বন্ধ করে দেয়। ১৬৯০ খ্রিষ্টাব্দে উভয় পক্ষের ভিতর শান্তি চুক্তি হয়। এই সময় জব চার্নক কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ পান। ১৬৯০ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে আগষ্ট সুতানটিতে কলকাতা নগরের পত্তন করেন।

 

১৬৯৭ খ্রিষ্টাব্দে আওরঙ্গজেবের  পৌত্র আজিম-উস-শান্ বাংলার সুবেদার হয়ে আসেন। ১৭১২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এই পদে থাকেন। তিনি বৈধ-অবৈধ উপায়ে অর্থ সঞ্চয়ে মনোযোগ দেন। কারণ, তাঁর লক্ষ্য ছিল দিল্লির সিংহাসন দখল করা। এই কারণে তিনি শক্তি সঞ্চয়ের জন্য অর্থ সঞ্চয় ছাড়া নানাবিধ পদক্ষেপ নেন। আওরঙ্গজেব তাঁর অবৈধ অর্থ উপার্জন বন্ধ করে দিলে, তিনি রাজকোষ থেকে অর্থ নেওয়া শুরু করেন। এর ফলে তৎকালীন বাংলার দেওয়ান মুর্শিদকুলি খানের সাথে তাঁর দ্বন্দ্ব শুরু হয়। উপায় না দেখে তিনি মুর্শিদকুলি খানকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেন। মুর্শিদকুলি খান বিষয়টি অবগত হওয়ার পর, তিনি আওরঙ্গজেবকে জানান এবং দেওয়ান বিভাগকে ঢাকা থেকে মুক্সাদাবাদে স্থানন্তর করেন। পরে তাঁর নামানুসারে মুক্সাদাবাদের নামকরণ হয় মুর্শিদাবাদ।

 

১৭০২ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদকুলি খানকে উড়িষ্যার সুবেদার করা হয়।  ১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩ মার্চ আহমেদ নগরে আওরঙ্গজেব  মৃত্যবরণ করেন। এরপর দিল্লির সিংহাসনে বসেন প্রথম বাহাদুর শাহ দিল্লির। এই সময় আজিম-উস-শান্ মুর্শিদকুলি খানের উপর প্রতিশোধ নেন। সম্রাটকে বলে, তিনি মুর্শিদকুলি খানকে বাংলার সুবেদার পদ থেকে অব্যহতি দিয়ে দাক্ষিণ্যাতে প্রেরণ করেন। তিনি ১৭০৮ থেকে ১৭০৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি বাংলার বাইরে থাকেন। এরপর ১৭১০ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে বাংলার দেওয়ান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৭১২ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বাহাদুর শাহ মৃত্যুবরণ করলে, দিল্লির সিংহাসন নিয়ে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব উপস্থিত হয়। শেষ পর্যন্ত আজিম-উস-শান্-এর পুত্র ফারুকশিয়ার দিল্লির সিংহাসনে বসেন। মুর্শিদকুলি খান নতুন সম্রাটের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। ১৭১৩ খ্রিষ্টাব্দে দেওয়ান পদ-সহ বাংলার সুবেদার করেন। ১৭১৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে উড়িষ্যার সুবেদার করেন এবং 'জাফর খাঁ' উপাধি দেন। ১৭১৭ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদকুলি খান বাংলার সুবেদার হন। এই সময় তিনি ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে বাংলার রাজধানী স্থানান্তর করেন। ১৭২৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এই সময় পর্যন্ত তিনি বাংলার সুবেদার ছিলেন।

 

৭২৭ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদকুলি খান অপুত্রক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মুর্শিদকুলি খান-এর সাথে তাঁর জামাতা সুজাউদ্দিনের সুসম্পর্ক ছিল না। এই কারণে মুর্শিদকুলি খান জীবদ্দশায় তাঁর দৌহিত্র (সুজাউদ্দিনের পুত্র) সরফরাজ খানকে উত্তরাধিকারী করে যান। এই মনোনয়ন সুজাউদ্দিনের মনঃপুত হয় নাই। তাই তিনি তাঁর দুই ভাই হাজী আহম্মদ ও আলীবর্দী খান-এর পরামর্শে মুর্শিদাবাদ অভিমুখে সসৈন্যে অগ্রসর হন। ইতিমধ্যে তিনি বাংলার সুবেদারি পদের ফরমান দিল্লি থেকে সংগ্রহ করেন। সুজাউদ্দিন মুর্শিদাবাদে পৌঁছালে, আত্মীয় সজনদের মধ্যস্থতায় সরফরাজ খান পিতার হাতে বাংলার শাসনক্ষমতা তুলে দেন। সিংহাসন লাভেরভ পর, তিনি তাঁর ক্ষমতাকে সুসংহত করেন এবং সরফরাজ খানকে একটি দেওয়ানী পদ দেন। তাঁর অপর পুত্র তাকি খানকে উড়িষ্যার সহকারী সুবেদার পদে নিয়োগ দেন। তাঁর জামাতা দ্বিতীয় মুর্শিদকুলী খানকে ঢাকার সহকারী শাসনকর্তা করেন। এই সময় আলীবর্দী খান ও হাজী আহম্মদ সুজাউদ্দিনের প্রধান পরামর্শদাতা হন। এরপর দিল্লির সম্রাটকে তিনি নানাবিধ উপহার পাঠান। সম্রাট সন্তুষ্ট হয়ে সুজাউদ্দিনকে 'মুতাসন্-উল-মুলক-সুজা-উদ্-দৌলা উপাধিতে ভূষিত করেন।

 

তাঁর শাসনামলে জার্মান-অস্ট্রিয়ার ওয়েস্ট কোম্পানি ইংরেজ ও ওলন্দাজদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে। মুর্শিদকুলী খানের অনুমুতি নিয়ে কলকাতা থেকে ১৫ মাইল দূরে বাঁকিবাজার নামক স্থানে ওয়েস্ট কোম্পানি একটি কুঠি স্থাপন করেছিল। ১৭৩০ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ নৌবহর বাঁকিবাজার আক্রমণ করে ওয়েস্ট কোম্পানির একটি বাণিজ্য জাহাজ দখল করে নেয়। এরপর ইংরেজ এবং ওলন্দাজরা নবাবের কর্মচারীদের উৎকোচ দ্বারা বশীভূত করে, বাংলায় ওয়েস্ট কোম্পানির বাণিজ্যের অধিকার বাতিল করে দেয়। এরপর ওয়েস্ট কোম্পানি বাণিজ্য চালিয়ে যেতে থাকলে। মীরজাফর ১৭৩৩ খ্রিষ্টাব্দে বাণিজ্যকুঠি দখল করে। ১৭৪৪ খ্রিষ্টাব্দে নবাবের আদেশ অগ্রাহ্য করে আলীবর্দী খান বাংলা থেকে ওয়েস্ট কোম্পানিকে বিতারিত করেন। ইংরেজ ও ওলন্দাজ ব্যবসায়ীরা এক্ষেত্রে জয়ী হলেও, শেষ পর্যন্ত তাদের ভিতর সুসম্পর্ক নষ্ট হয়। ফরাসী এবং ওলন্দাজদের সাথে ব্যবসায় ইংরেজরা সুবিধা করতে না পেরে, তাদের সাথে ইংরেজদের সুসম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়।

 

১৭৩৯ খ্রিষ্টাব্দে সুজাউদ্দিন মৃত্যুবরণ করলে, বাংলার নবাব হন তাঁর পুত্র সরফরাজ খান।  তিনি আলা-উদ্-দৌলা হায়দর জঙ্গ' উপাধি ধারণ করে দিল্লির সিংহাসনে বসেন। তাঁর দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করে, হাজী আহম্মদ ও আলীবর্দী খান বাংলার সিংহাসন দখলের জন্য ষড়যন্ত্র করেন। এর সাথে যোগ দেন আলমচাঁদ, জগৎশেঠ-এর মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ। আলীবর্দী খান গোপনে দিল্লির সম্রাটের কাছ থেকে 'ফরমান' জোগাড় করে সিংহাসন দখলের প্রস্তুতি নেন। ১৭৪০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিহার থেকে সসৈন্যে অগ্রসর হন। মুর্শিদাবাদের ২২ মাইল উত্তর পশ্চিমে গিরিয়ার রণক্ষেত্রে সরফরাজ খান তাঁকে বাধা দেন। যুদ্ধে সরফরাজ খান পরাজিত ও নিহত হলে, আলীবর্দী খান বাংলার সিংহাসন দখল করেন।  ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে এপ্রিল আলীবর্দী খান মুর্শিদাবাদে মৃত্যবরণ করেন। এরপর তাঁর দৌহিত্র সিরাজ-উদ্-দৌলা বাংলার সিংহাসন লাভ করেন। ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ এবং তাঁর বিদ্রোহী সেনাপ্রধানদের কাছে পরাজিত ও নিহত হলে- বাংলার অধিকার ধীরে ধীরে ইংরেজদের অধিকারে চলে যায়।


সূত্র :
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।