ফেনী
বাংলাদেশ-এর চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জেলা। ফেনী নদীর নামানুসারে এই অঞ্চলের নাম রাখা হয়েছে ফেনী। ধারণা করা হয় আদি শব্দ ফনী কালক্রমে ফেনীতে পরিণত হয়েছে। মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের কবি-সাহিত্যিকদের লেখায় ফণী নামক একটি নদীর নাম পাওয়া যায়। ষোড়শ শতাব্দীর সময়ে কবি কবীন্দ্র পরমেশ্বর পরাগলপুরের বর্ণনায় উল্লেখ করেন, ফনী নদীতে বেষ্টিত চারিধার, পূর্বে মহাগিরি পার নাই তার। সতের শতকে মির্জা নাথানের ফার্সী ভাষায় রচিত বাহরিস্তান-ই-গায়েবীতে ফেনী নামটি পাওয়া যায়। আঠারো শতকের শেষার্ধে কবি আলী রজা প্রকাশ কানু ফকির তার পীরের বসতি হাজীগাঁও ফেনীর অবস্থান সম্পর্কে লিখছেন, ফেনীর দক্ষিণে এক ষর উপাম, হাজীগাঁও করিছিল সেই দেশের নাম। কবি মুহম্মদ মুকিম তার পৈতৃক বসতির বর্ণনাকালে বলেছেন, ফেনীর পশ্চিমভাগে জুগিদিয়া দেশে। তারাও নদী অর্থে ফেনী ব্যবহার করেছেন।

ভৌগোলিক অবস্থান
: ২৩°১'০" উত্তর ৯১°২৩'৩০" পূর্ব। এ জেলার চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে এ জেলার দূরত্ব ৯৭ কিলোমিটার। এ জেলার পশ্চিমে নোয়াখালী জেলা, উত্তরে কুমিল্লা জেলা ও ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশ, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশ, দক্ষিণ-পূর্বে চট্টগ্রাম জেলা এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর
অবস্থিত।

আয়তন: এর আয়তন ৯২৮ বর্গকিলোমিটার

ইতিহাস ও প্রশাসন: প্রাচীন কালে নোয়াখালির নাম ছিল ভুলুয়া। এই অঞ্চলের কাছেই সাগর সঙ্গমের নিকটে ছিল জুগিদিয়া দ্বীপ। কালক্রমে নিম্ন জলাভূমি ভরাট হয়ে আদি ফেনী গড়ে উঠেছিল। বিভিন্ন প্রত্নতাত্তিক নমুনা অনুসারে ধারণা করা হয়, প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ৩ হাজার বছর আগে এই অঞ্চলে জনবসতি গড়ে উঠেছিল। বঙ্গদেশে বৌদ্ধ ধর্মের বিকাশের সময় এই অঞ্চলে বৌদ্ধ সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল। ফেনীর পূর্বভাগের ছাগলনাইয়া উপজেলার শিলুয়া গ্রামে প্রাপ্ত প্রাচীন ঐতিহাসিক শিলামূর্তির ধ্বংসাবশেষ থেকে বৌদ্ধ সংস্কৃতির অস্তিত্ব সম্পর্কে অনুমান করা যায়।

মোগল আমলে এই জেলার আমীরগাঁও ছিল একটি থানা । ব্রিটিশ আমলে ১৮৭২ থেকে ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে মধ্যে আমীরগাঁও থানা নদী ভাঙ্গনের ফলে ফেনী নদীর ঘাটের কাছাকাছি খাইয়ারাতে স্থানান্তরিত হয়। ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে মীরসরাই, ছাগলনাইয়া ও আমীরগাঁও নিয়ে নোয়াখালি জেলার মহকুমা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। তখন এর সদর দপ্তর ছিল আমীরগাঁও। প্রথম মহকুমা প্রশাসক ছিলেন কবি নবীনচন্দ্র সেন। প্রথম মহকুমা সদর দপ্তর ছিল ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে মীরসরাইকে চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই সময় খাইয়ার থানা থেকে সদর দপ্তর স্থানান্তরিত করে ফেনী নামক স্থানে মহকুমার সদর দপ্তর স্থাপন করা হয় এবং এই নতুন মহকুমা নোয়াখালি জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ফেনী পুরোপুরি শহরে পরিণত হয়। পাকিস্তান শাসনামলে (১৯৪৭-১৯৭১) পর্যন্ত ফেনী নোয়াখালি জেলার মহকুমা হিসেবেই থেকে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রশাসনিক পুনর্গঠনের মাধ্যমে ফেনীকে জেলায় পরিণত করা হয়।

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ
৬টি উপজেলা নিয়ে ফেনী জেলা গঠিত। এই উপজেলাগুলো হলো- ফেণী সদর, ছাগলনাইয়া, দাগনভূঞা, পরশুরাম, ফুলগাজী ও সোনাগাজী। এর ভিতরে ফুলগাজী ছাড়া বাকি পাঁচটি উপজেলা সদর পৌরসভায় উন্নীত হয়েছে।

সমগ্র জেলাটিতে রয়েছে
৪৩টি ইউনিয়ন, ৫৪০টি মৌজা, ৫৬৪টি গ্রাম ও ৩টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।

বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব
শামসুন নাহার মাহমুদ, হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী,
 

সূত্র :
http://bn.banglapedia.org/
http://www.feni.gov.bd/