শামসুন নাহার মাহমুদ
(১৯০৮- ১৯৬৪)
নারীমুক্তি আন্দোলনের নেত্রী, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, সমাজসেবিকা, সাংবাদিক
১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ অক্টোবর তৎকালীন
ফেণী মহকুমার গুথুমা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম
মুহাম্মদ নুরুল্লাহ চৌধুরী। মায়ের নাম আসিয়া খাতুন চৌধুরানী।
মাত্র আড়াই বছর বয়সে তিনি পিতৃহীন হন। এরপর তাঁর মাতামহ খান বাহাদুর আব্দুল
আজিজের চট্টগ্রামের তামাকুণ্ডস্থ বাড়িতে তিনি এবং তাঁর বড় ভাই
হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী প্রতিপালিত হন। পারিবারিক পরিবেশে প্রাথমিক শিক্ষালাভের পর, তিনি ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্যক্তিগতভাবে পরীক্ষা দিয়ে এই স্কুলের রেজিস্ট্রেশনে ম্যাট্রিক পাশ করেন।
এই বছরের জুলাই মাসে
কাজী নজরুল ইসলাম হেমন্তকুমার সরকারে সাথে চট্টগ্রাম যান। এই সময়
হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী'র আমন্ত্রণে
কাজী নজরুল ইসলাম এঁদের
চট্টগ্রামের তামাকুণ্ডস্থ বাড়িতে
কিছুদিন কাটান। সেখানে শামসুন নাহারের সাথে
নজরুল ইসলামের সাথে পরিচয় ঘটে। এই সময়
নজরুল ইসলাম
তাঁকে উদ্দেশ্য করে তিনি রচনা করেছিলেন অ-নামিকা, গোপন প্রিয়া কবিতা।
নজরুল
তাঁকে সাহিত্য চর্চায় উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে
প্রকাশিত নজরুলের রচিত
সিন্ধু-হিন্দোল কাব্যগ্রন্থে এই কবিতাগুলো স্থান
পেয়েছিল। উল্লেখ্য এই গ্রন্থটি কবি উৎসর্গ করেছিলেন বাহার ও নাহার-কে।
১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে শল্য চিকিৎসক ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদকে বিয়ে করেন।
১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে ডায়েসিমন কলেজ থেকে আই এ পাশ করেন।
এই সময় তিনি নওরোজ ও আত্মশক্তি পত্রিকার মহিলা বিভাগ
সম্পাদনা করতেন।
১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে ডায়েসিমন কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।
বি এ পাস করার পর বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত মেমোরিয়াল হাইস্কুল থেকে তাঁকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। পরে তিনি
বেগম রোকেয়ার নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনের অংশীদার হন।
১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা থেকে
হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী ও শামসুন্নাহারের যুগ্ম সম্পাদনায় বুলবুল পত্রিকা প্রকাশিত হয়।
১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এমএ পাশ করেন।
শামসুন্নাহার লেডি ব্রাবোর্ন কলেজে বাংলা বিভাগের অধ্যাপকরূপে কর্মজীবন শুরু করেন। এই সময় তিনি
প্রায় নিয়মিত
বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি 'র আড্ডায় যোগ দিতেন।
তিনি তাঁর বড় ভাই
হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী'র
সূত্রে মুসলীম লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। এই সময় তিনি কিছুদিন নিখিল বঙ্গ মুসলিম মহিলা সমিতির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্য সফর করেন।
কলম্বোতে ইন্টারন্যাশন্যাল কাউন্সিল অব ওমেন-এ তিনি একটি দলের নেতৃত্ব দেন।
সমগ্র এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে তিনি ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ অর্গানাইজেশনে যোগ দেন।
১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর প্রচেষ্টায পঙ্গু শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপিত হয়।
১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
তিনি তাঁর ভাই
হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী'র সাথে বুলবুল নামক পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন।
১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ এপ্রিল তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাকে সমাজসেবার জন্য মরণোত্তর স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার প্রদান করেন।
১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার বেগম শামসুন নাহার মাহমুদকে মরণোত্তর ,'বেগম রোকেয়া পদক' প্রদান করে।
স্বামী: ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ
সন্তান: মামুন মাহমুদ শহীদ হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে শহিদ হন।
অপর পুত্র মইনউদ্দীন মাহমুদ একজন ক্রিকেটার এবং ক্রীড়া উদ্যোক্তা।
রচিত গ্রন্থ
- পূণ্যময়ী (১৯২৫)। উল্লেখ্য,
নজরুল ইসলামের স্নেহধন্যা
শামসুন নাহার মাহমুদের 'পূণ্যময়ী' গ্রন্থটি প্রকাশের পর, তিনি
এই গ্রন্থের 'প্রশস্তি' হিসেবে রচনা করেছিলেন
আশীর্বাদ
নামক কবিতাটি।
ফণি-মনসা
প্রথম সংস্করণ [শ্রাবণ ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ (জুলাই ১৯২৭)] কবিতাটি '
আশীর্বাদ'
শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
- ফুলবাগিচা (১৯৩৫)
- বেগম মহল (১৯৩৬)
- রোকেয়া জীবনী (১৯৩৭)
- শিশুর শিক্ষা (১৯৩৯)
- আমার দেখা তুরস্ক (১৯৫৫)
- নজরুলকে যেমন দেখেছি (১৯৫৮)