কিশোরগঞ্জ
জেলাজুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে পাকসেনারা নিকলি উপজেলার শ্মশানঘাটে প্রায় অর্ধশত নিরীহ লোককে হত্যা করে।
১৪ই আগষ্ট কুলিয়ারচর উপজেলায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৪ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ২৮ জন রাজাকার অস্ত্রসহ মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পণ করে।
৩রা সেপ্টেম্বর পাকসেনারা স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় অষ্টগ্রামের ইকরদিয়া গ্রামে ৩৫ জন লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
৫ই সেপ্টেম্বর একই উপজেলার সাভিয়ানগর গ্রামে পাকসেনারা আরও ২৫ জন লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
৬ই সেপ্টেম্বর নিকলি উপজেলার গুরুই গ্রামে পাকসেনারা ২৫ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে।
১৯ই অক্টোবর নিকলি উপজেলায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন
২০ই অক্টোবর নিকলি শত্রুমুক্ত হয়।
২৬ই অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা বাজিতপুর উপজেলা শত্রুমুক্ত করে।
১লা নভেম্বর পাকসেনারা মিটামইন উপজেলার ধুবাজুরা গ্রামের ১৮ জন এবং তেলিখাই গ্রামের ৩ জন লোককে হত্যা করে।
১৮ই নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা হোসেনপুর থানা এলাকায় একটি সেতু ডিনামাইটের সাহায্যে উড়িয়ে দেয় এবং রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে রাইফেলসহ ১৪ জন রাজাকারকে বন্দি করে।
নভেম্বর মাসেই কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদলের বরইতলায় পাকসেনারা ৩৬০ জন নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। ভৈরব উপজেলার হালগড়া নামক স্থানে পাকসেনারা তিন শতাধিক লোককে হত্যা করে এবং
১৩ই ডিসেম্বর
পাকসেনারা ভৈরব রেলসেতুটি বিধ্বস্ত করে দেয়। হোসেনপুর থানায় মুক্তিযোদ্ধাদের
আক্রমণে ৩৯ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং এ অভিযানে প্রচুর গোলাবারুদ
মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় করিমগঞ্জ উপজেলার
কাজলা, আয়লা, সাকুয়া, বালিয়াবাড়ি প্রভৃতি স্থানে পাকসেনাদের সঙ্গে
মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই সংঘটিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি ১১ (কিশোরগঞ্জ সদর ৭, নিকলি ১, মিটামইন ১,
হোসেনপুর ১, বাজিতপুর ১); গণকবর ১ (ইটনা); শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ ১ (কিশোরগঞ্জ
সদর); স্মৃতিফলক ১ (হোসেনপুর); ভাস্কর্য ১ (ভৈরব বাসস্ট্যান্ড); স্মৃতিসৌধ ১
(ভৈরব)।
কিশোরগঞ্জের লোকসাহিত্য:
মৈয়মনসিংহ গীতিকার পালাসমূহের মধ্যে 'মহুয়া', 'মলুয়া', 'চন্দ্রাবতী' ও
'দস্যু কেনারাম' এ বর্ণিত গ্রাম-হাওর-বিল কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্ভূক্ত। এ্ছাড়া
রয়েছে ভাটিয়ালি গান, মেয়েলী গীত, লোক কিসসা, লোককাহিনী, লোকবিশ্বাস, পালাগান,
প্রবাদ-প্রবচন, ধাঁধা, শিলুক, ছড়া ইত্যাদি। মন্দির-মসজিদে শিরনি-ভোগ দেওয়া,
বিভিন্ন পূজ্যদ্রবের দুগ্ধস্নান, বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে, খড়ের ভোলা
পুড়িয়ে মশামাছির মুখ পোড়ানো, কলেরা বসন্ত রোগে ঝাঁড় ফুঁক দেওয়া, গৃহপালিত
পশুর শনিরদশা, ফসল রক্ষার জন্য হিরালীর মন্ত্র পাঠ ইত্যাদি লোকসংস্কার এ জেলায়
প্রচলিত ছিল। বর্ধতমানে এসকল আচার প্রায় বিলুপ্তির পথে। এ জেলার নিকলি ও
বাজিতপুরের নৌকাবাইচের ঐতিহ্য অতি প্রাচীন। এছাড়া কাবাডি, গোল্লাছুট, হাডুডু,
ঘোড়দৌড়, কানামাছি, লাঠিখেলা, কুস্তি, ডাংগুটি, নৌকাবাইচ, গরুদৌড়, ষোলঘুটি,
বাঘবন্দি, জোড়-বিজো, বনভোজন, তোফাভাতি ইত্যাদি এ অঞ্চলে এখনও প্রচলিত। বিভিন্ন
নাট্যগোষ্ঠীর নাট্যচর্চাও এখানে পরিলক্ষিত হয়।
সূত্র:
http://www.banglapedia.org