কুতুবদিয়া

চট্টগ্রাম [বাংলাদেশ] বিভাগের কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। বাংলাদেশের অতি নিকটবর্তী একটি দ্বীপ। কুতুবদিয়া চ্যানেল দ্বারা মূল ভুখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৮১৬৭° উত্তর দ্রাঘিমাংশ ৯১°৮৫৮৩ পূর্ব অক্ষাংশ। এর উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে কুতুবদিয়া চ্যানেল, বাঁশখালী, চকোরিয়া এবং মহেশখালী উপজেলা।
এর মোট আয়তন ২১৫.৮ বর্গকিলোমিটার।

দীর্ঘদিন ধরে নদীবাহিত পলিমাটি জমে, বাংলাদেশের মূলভূখণ্ডের সামান্যদূরে বঙ্গোপসাগর-এ বুকে এই দ্বীপ জেগে উঠেছে। খ্রিষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীর শেষের দিকে এই দ্বীপটি পুরোপুরি উঠে। তবে পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষের দিকে, এই দ্বীপটি মানুষের বসবাস উপযোগী হয়ে উঠে। এরপর থেকে ক্রমে ক্রমে এই দ্বীপে মানুষের পদচারণা শুরু হয়। কথিত আছে, হযরত কুতুবুদ্দীন নামক জনৈক মুসলিম আধ্যাত্মিক পুরুষ এই দ্বীপে আস্তানা গড়ে তোলে। এই সময় এই দ্বীপে মগ ও পর্তুগীজদের চারণভূমি ছিল। কুতুবুদ্দীনের নেতৃত্বে আলী আকবর, আলী ফকির প্রমূখ শিষ্যদের নিয়ে এই দ্বীপে আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হন। এই সময় আরাকান থেকে পালিয়ে আসা মুসলমানদের একাংশ ভাগ্যান্বষণে এই দ্বীপে আসতে থাকে। জরিপ করে দেখা যায় আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, পটিয়া, চকরিয়া অঞ্চল থেকে অধিকাংশ আরাকানি মুসলমানদের সাথে বাঙালি মুসলমানরা এই দ্বীপে এসে বসতি স্থাপন করে। কালক্রমে কুতুবুদ্দীনের নামানুসারে লোকমুখে এই দ্বীপের নাম হয়ে যায় 'কুতুবুদ্দীনের দিয়া'।

গুগল ম্যাপ অনুসারে কুতুবদিয়া এবং এর বাতিঘরের অবস্থান

কুতুবদিয়ায় বাতি ঘর
১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার জাহাজ চলাচলের উপযোগী করে চট্টগ্রাম নৌবন্দর গড়ে তোলে। প্রাথমিকভাবে দুটি অস্থায়ী জেটি তৈরি করা হয়েছিল। এরও বহ আগে থেকে চট্টগ্রামে জাহাজ চলাচল করতো। এই কারণে ব্রিটিশদের চট্টগ্রাম নৌবন্দর উন্নয়নের বেশ আগে থেকে কুতুবদিয়ায় বাতি ঘর তৈরি করা হয়েছিল।

বর্তমান বাতিঘর

১৮২২ খ্রিষ্টাব্দে কর্ণফুলি নদীর মোহনার ৪০ মাইল দূরে কুতুবদিয়াতে এই বাতিঘরটি নির্মাণ করা হয়। ক্যাপ্টেন হেয়ার-এর পরিচালনায় এবং  ইঞ্জিনিয়র জে,এইচ,টুগুড -এর নকশায় এই বাতিঘর নির্মাণ করা হয়। ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দে এই বাতিঘরটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। সেই সময়ে এর নির্মাণ ব্যয় ছিল ৪৪২৮ টাকা।

এই বাতিঘরের ভিত্তিভূমিতে পাথর স্থাপন করা হয় এবং ভিত্তির উপর গড়ে তোলা হয় ১২০ ফুট উচ্চতার টাওয়ার। টাওয়ারটির মাটির নিচে একটি কক্ষ ছিল। ভূপৃষ্ঠ থেকে টাওয়ারে অংশে ছিল ১৫ফুট উচ্চতার ১৫টি কক্ষ। সে সময় প্রায় ২২০ কিলোমিটার দূর থেকে এর আলো রাতের জাহাজ-নাবিকরা দেখতে পারতো। পাকিস্তান আমলে এই টাওয়ারটি নতুন করে নির্মাণ করা লৌহ কাঠামোর উপর। এই টাওয়ারের প্রাচীন আলোক-উৎপাদন প্রক্রিয়া বাতিল করে আধুনিক পদ্ধতি চালু করা হয়। পরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পাকিস্তান আমলেই এই বাতিঘরটি অকেজো হয়ে পড়েছিল। পরে ক্রমাগত সমুদ্রের ভাঙ্গনের মুখে এই বাতিঘরটি বিলীন হয়ে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কুতুবদিয়ার দক্ষিণ ধুরঙ্গ ইউনিয়নে একটি নতুন বাতিঘর নির্মিত হয়েছে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে। এই বাতিঘরটি তৈরি করা হয়েছে ইস্পাতের কৌণিক দণ্ড ব্যবহার করে। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ঘূর্ণিঝড়ে একমাত্র ওয়্যারলেস যন্ত্রটি নষ্ট হয়ে গেছে।

বর্তমানে ডিজেল চালিত জেনারেটরের মাধ্যমে ১৫টি ব্যাটারিতে চার্জ করা হয়। এবং ওই ব্যাটারির মাধ্যমে বাতিঘরে আলো জ্বালনো হয়।

প্রশাসন
১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে এই দ্বীপকে থানায় রূপান্তর করা হয়। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে থানাকে কক্সবাজার জেলার একটি উপজেলায় পরিণত করা হয়।
এই উপজেলাটি মোট ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই ইউনিয়নগুলো হল উত্তর ধুরঙ্গ,  দক্ষিণ ধুরঙ্গ, লেমসিখালী, কাইয়ার বিল, বড়গোপ ও আলি আকবর দেইল। এর মৌজা সংখ্যা ৯টি এবং গ্রাম ৩০টি।


তথ্যসূত্র :
http://www.banglapedia.org
অযত্ন-অবহেলায় কুতুবদিয়া বাতিঘর। সমকাল
http://www.banglapedia.org/HTB/100998.htm
www.geonames.org/6416032/kutubdia-lighthouse.html