জার্মানির পতাকা |
জার্মানি
পশ্চিম
ইউরোপের
একটি
রাষ্ট্র।
জার্মান ভাষায় এর নাম
Deutschland।
সরকারি
নাম সংযুক্ত
প্রজাতন্ত্রী জার্মানি (Bundesrepublik
Deutschland)।
রাজধানী বার্লিন।
ভৌগোলিক অবস্থান:
৫১°
উত্তর
৯°
পূর্ব।
এর উত্তরে
উত্তর সাগর, ডেনমার্ক ও বাল্টিক সাগর;
পূর্বে পোল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্র;
দক্ষিণে
অস্ট্রিয়া
ও সুইজারল্যান্ড
এবং পশ্চিমে
ফ্রান্স, লুক্সেমবুর্গ,
বেলজিয়াম
এবং নেদারল্যান্ড্ অবস্থিত।
আয়তন:
জার্মানির মোট আয়তন
৩,৫৭,০২১ বর্গকিমি। এর
ভিতরে ৩,৪৯,২২৩
বর্গকিমি ভূমি এবং ৭,৭৯৮
বর্গকিমি জলভাগ।
আয়তনের বিচারে জার্মানি ইউরোপের মধ্যে সপ্তম এবং বিশ্বের মধ্যে ৬৩তম।
জনসংখ্যা: ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ৮,২৮,০০,০০০।
ভাষা:
রাষ্ট্রৌয়
ভাষা
জার্মান।
ধর্ম:
দুই-তৃতীয়াংশ লোক হয় রোমান
ক্যাথলিক অথবা প্রোটেস্টান্ট খ্রিস্টান।
প্রধান নদী:
রাইন, দানিউব, এলবে।
জার্মানির ইতিহাস
জার্মান জাতির
সুপ্রাচীন ঐতিহ্য
সংস্কৃতির
থাকলেও ১৮৭১
খ্রিষ্টাব্দের
জার্মান
নামে কোনো
একক রাষ্ট্র ছিল না। ধারণা করা হয় সুপ্রাচীন নর্ডীয় ব্রোঞ্জ যুগ অথবা প্রাক-রোমান
লৌহ যুগে জার্মানিতে আদি জাতিগোষ্ঠীগুলোর বসবাস শুরু
করেছিলল।
খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে
দক্ষিণ
স্ক্যান্ডিনেভিয়া এবং উত্তর জার্মানি থেকে
আগত
গোষ্ঠীগুলো দক্ষিণ,
পূর্ব ও পশ্চিম দিকে বসতি স্থাপন শুরু করে । এই
সূত্রে
জার্মানের
আদিবাসীরা গলের
কেল্টীয় গোষ্ঠী এবং পূর্ব ইউরোপের ইরানীয়, বাল্টিক ও স্লাভিক গোষ্ঠীগুলোর
সান্নিধ্যে আসে।
রোমান শাসক
অগাস্টাসের রাজত্বকালে রোমান
জেনারেল পুবলিয়াস কুইঙ্কটিলিয়াস ভ্যারাস জার্মানিয়াতে (রাইন থেকে উরাল পর্যন্ত
অঞ্চল)
অভিযান চালায়।
এই সময়
জার্মানির গোষ্ঠীগুলো রোমানদের
সাথে যুদ্ধ করার সূত্রে-
যুদ্ধকৌশলের
অভিজ্ঞ হয়ে উঠে।
৯ খ্রিষ্টাব্দে
টেউটোবুর্গ বনের যুদ্ধে জার্মানির চেরুস্কান নেতা আরমিনিউস, রোমান জেনারেল
ভ্যারাসের নেতৃত্বে পরিচালিত
সেনাবহিনী-
লেজিয়নের এক সৈন্যদলকে পরাজিত করে।
৮৪৩
খ্রিষ্টাব্দে
বর্তমান জার্মানি অঞ্চলটি ক্যারোলিঙ্গিয়ান সাম্রাজ্যের বিভাজনের ফলে সৃষ্টি হয়েছিল।
এরপর বহু শতাব্দী যাবৎ জার্মানি জমিদারিভিত্তিক
রাষ্ট্র ছিল। ১৬শ শতকের পর থেকে জার্মান
রাষ্ট্রগুলি ইউরোপের যুদ্ধ ও ধর্মীয় সংঘাতে ক্রমশ বেশি করে জড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
১৯শ শতকের শুরুতে ফ্রান্স জার্মান রাষ্ট্রগুলি দখল করলে, জাতিগতভাবে
জার্মানির
ঐক্যবদ্ধ
হয়। ১৮১৫
খ্রিষ্টাব্দে প্রুশিয়ার নেতৃত্বে জার্মান
রাষ্ট্রগুলি একটি কনফেডারেশন গঠন করে।
এই কনফেডারেশন ১৮৬৭
খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত
স্থায়ী ছিল।
১৮৭১
খ্রিষ্টাব্দে
অটো ফন বিসমার্ক
জার্মানির প্রায় সকল
ক্ষুদ্র রাজ্যগুলো একত্রিত করতে সক্ষম হয়।
বিসমার্কের
শাসনমালে
জার্মানিতে
ব্যাপক
শিল্পায়ন
হয়।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে
জার্মানি ইউরোপে
অন্যতম শক্তিতে পরিণত
হয়। এই সময় ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর উপর
আধিপত্য
বিস্তারের
চেষ্টা করে। এই সূত্রে
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের
সূত্রপাত
ঘটে।
১৯১৮
খ্রিষ্টাব্দে
এই
যুদ্ধে জার্মানির পরাজিত
হয়। ফলে জার্মানিতে
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এই
অবস্থার
ভিতরে
জার্মানিতে
উগ্র জাতীয়তাবাদী নাৎসি
পার্টির আবির্ভাব ঘটে। নাৎসি পার্টি
অন্যতম নেতা এ্যাডলফ
হিটলার রাষ্ট্রীয়
ক্ষমতায় আসে। ১৯৩৯
খ্রিষ্টাব্দে
জার্মানির আগ্রাসনের ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
শুরু হয়।
১৯৪৫
খ্রিষ্টাব্দে
মিত্রশক্তি
(যুক্তরাজ্য,
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন)
জার্মানিকে পরাজিত করে।
এই সময়
মিত্র
শক্তি জার্মানিকে দুর্বল
করার জন্য, দেশটিকে
চারটি অঞ্চলে ভাগ করে।
ব্রিটিশ, ফরাসি, মার্কিন ও সোভিয়েত সেনারা
এক
একেকটি অঞ্চলের
নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব
লাভ করে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পশ্চিমা শক্তিগুলির মধ্যকার মিত্রতা ১৯৪০-এর দশকের শেষে ভেঙে
গেলে,
সোভিয়েত অঞ্চলটি জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র তথা পূর্ব জার্মানিতে পরিণত হয়।
পশ্চিম-নিয়ন্ত্রিত বাকী তিন অঞ্চল একত্রিত হয়ে
তৈরি হয়
পশ্চিম জার্মানি।
এই সময়
জার্মানির ঐতিহাসিক
রাজধানী বার্লিন পূর্ব জার্মানির অনেক অভ্যন্তরে অবস্থিত ছিল।
তারপরেও
বার্লিনকে
দুই দেশের মধ্যে ভাগ করে
দেওয়া হয়।
এইসময়
পূর্ব জার্মান
থেকে
অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও
গণতান্ত্রিক পশ্চিম জার্মানিতে অভিবাসী হওয়া শুরু
করে।
১৯৬১
খ্রিষ্টাব্দে
পূর্ব জার্মানি সরকার বার্লিন
শহরের
ভিতর
দিয়ে
একটি প্রাচীর তুলে
দেয়।
১৯৯০
খ্রিষ্টাব্দের
৩রা
অক্টোবর
উভয় জার্মানির
একত্রীকরণ
প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন করা হয়। পূর্ব জার্মানির ৫টি প্রদেশ
এই প্রক্রিয়ায়
মাধ্যমে ফেডারেল জার্মানিতে যোগ দেয় । ১৪ই
নভেম্বর পোল্যান্ড-এর
সাথে আনুষ্ঠানিক চুক্তির মাধ্যমে ওদের-নিসে লাইনকে জার্মানি-পোল্যান্ডের সীমানা বলে
স্বীকৃতি দেয়া হয়।