ভৌগোলিক
স্থানাঙ্ক: ২৩.১° উত্তর ৮৭.৩°।
ভারত প্রজাতন্ত্রের
পশ্চিমবঙ্গ
প্রদেশের বাঁকুড়া জেলার
মহকুমা, একটি শহর ও পৌর এলাকা।
এই মহকুমায় রয়েছে
বিষ্ণুপুর পুরসভা, সোনামুখি পৌরসভা ও ছয়টি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক (ইন্দাস, জয়পুর, পাত্রসায়র, কোতুলপুর, সোনামুখি ও বিষ্ণুপুর)। ছয়টি ব্লকে
রয়েছে মোট ৫৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত। মহকুমার সদর বিষ্ণুপুর।
বিষ্ণুপুরে ব্লকসমূহ ও গ্রাম পঞ্চায়েত
- ইন্দাস ব্লক:
ব্লকটি ইন্দাস থানার অধীনস্থ। ব্লকের সদর
ইন্দাস। এই ব্লকে রয়েছে দশটি গ্রাম পঞ্চায়েত। এগুলো হলো- আকুই-১, দিঘলগ্রাম, কারিসুন্দা, সাহসপুর, আকুই-২, ইন্দাস-১, মঙ্গলপুর, আমরুল, ইন্দাস-২ ও রোল।
- জয়পুর ব্লক।
ব্লকটি জয়পুর থানার অধীনস্থ। ব্লকের সদর জয়পুর। এই ব্লকে
রয়েছে ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত। এগুলি হলো:
গেলিয়া, কুচিয়াকোল, শালদা, হেতিয়া, ময়নাপুর, শ্যামনগর, জগন্নাথপুর,
রাউতখণ্ড ও উত্তরবাড়।
- পাত্রসায়র ব্লক:
ব্লকটি পাত্রসায়র থানার অধীনস্থ। ব্লকের সদর
পাত্রসায়র। এই ব্লকে রয়েছে দশটি গ্রাম পঞ্চায়েত।
এগুলি হলো- বলসি-১, বেলাত-রসুলপুর, জামকুড়ি, পাত্রসায়র, বলসি-২, বিউর-বেতুর, কুশদ্বীপ, বীরসিংহ, হামিরপুর ও নারায়ণপুর
- কোতুলপুর ব্লক:
ব্লকটি কোতুলপুর থানার অধীনস্থ।
ব্লকের সদর কোতুলপুর। এই ব্লকে
রয়েছে আটটি গ্রাম পঞ্চায়েত। এগুলো হলো- দেশড়া-কোয়ালপাড়া, কোতুলপুর, লেগো, মির্জাপুর, গোপীনাথপুর, লাউগ্রাম, মদনমোহনপুর ও শিহর।
- সোনামুখী ব্লক:
ব্লকটি সোনামুখি থানার অধীনস্থ। ব্লকের সদর সোনামুখি। এই ব্লকে
রয়েছে আটটি গ্রাম পঞ্চায়েত । এগুলো হলো- কুচদিহি, দিহিপাড়া, পাঞ্চাল, রাধামোহনপুর, ধানসিমলা, হামিরহাটি, পিয়ারবেরা, ধুলাই, মানিকবাজার ও পূর্বনবাসন।
- বিষ্ণুপুর ব্লক:
ব্লকটি বিষ্ণুপুর থানার অধীনস্থ। ব্লকের সদর বিষ্ণুপুর। এই ব্লকে
রয়েছে আটটি গ্রাম পঞ্চায়েত। এগুলো হলো:
অযোধ্যা, ভাড়া, মোরার, বাঁকাদহ, দ্বারিকা-গোঁসাইপাড়া, রাধানগর, বেলসুলিয়া,
লায়েকবাঁধ ও উলিয়ারা।
বিধানসভা কেন্দ্র
সীমানা এই মহকুমার বিধানসভা কেন্দ্রগুলো হলো
- বিষ্ণুপুর বিধানসভা কেন্দ্র: বিষ্ণুপুর
পৌরসভা ও বিষ্ণুপুর ব্লক ।
- সোনামুখি বিধানসভা কেন্দ্র: সোনামুখি পুরসভা, সোনামুখি ব্লক ও পাত্রসায়র ব্লকের বেতুল-রসুলপুর, বীরসিংহ, হামিরপুর, নারায়ণপুর ও পাত্রসায়র।
- ইন্দাস বিধানসভা কেন্দ্র :
পাত্রসায়রের অবশিষ্ট পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত, ইন্দাস ব্লক এবং কোতুলপুর ব্লকের
লাউগ্রাম ও মদনমোহনপুর গ্রাম।
- কোতুলপুর বিধানসভা কেন্দ্র: কোতুলপুর ব্লকের অবশিষ্ট ছটি
গ্রাম পঞ্চায়েত ও জয়পুর ব্লক।
বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্র: সোনামুখি, কোতুলপুর ও ইন্দাস বিধানসভা কেন্দ্রগুলি তফসিলি জাতি প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত।
চারটি বিধানসভা কেন্দ্রই তফসিলি জাতি প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত অন্তর্গত।
ঐতিহ্যগত ভাবে বিষ্ণুপর নানা কারণে বিখ্যাত। বিষ্ণুপুরে হিন্দু মল্লরাজবংশের
উত্থান হয়েছিল এখানে। এছাড়া ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি বিশেষ ধারার উদ্ভব
হয়েছিল বিষ্ণুপুরে। এই বিশেষ ধারাটি বিষ্ণুপুর ঘরানা নামে পরিচিত। গৌড়ীয়
বৈষ্ণবধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘটেছিল এই অঞ্চলে।
এই অঞ্চলটি ছিল নিম্নবর্ণে হিন্দু ধর্মালম্বাদের আদি নিবাস। এই
অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য আদিবাসী ছিল বাগদি, মাল ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী। খ্রিষ্টী্য় সপ্তম
শতাব্দীতে বাগদী ও মালদের সংমিশ্রণে একটি জনপদ গড়ে উঠেছিল। এই শতাব্দীর শেষার্ধে আদি
মল্লের নেতৃত্বে একটি রাজ্য গড়ে উঠে। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দী থেকে ব্রিটিশ শাসনের সূচনালগ্ন পর্যন্ত প্রায় এক সহস্রাব্দ কাল বিষ্ণুপুরের
এই রাজবংশ রাজত্ব করে। এই সময় অঞ্চলটি মল্লভূম নাম পরিচিতি লাভ করেছিল।
বিষ্ণুপুরের
মল্লরাজ বংশ
খ্রিষ্টীয় বিষ্ণুপুরের আদি নাম ছিল মল্লভূম। এই অঞ্চলে মল্লরাজ
বংশের উত্থান এবং দীর্ঘকাল এদের শাসনের সূত্রে এই অঞ্চল মল্লভূম নামে পরিচিতি
পেয়েছিল। শুরুর দিকে বিষ্ণুপুর রাজারা ঐতিহাসিকভাবে বাগদি রাজা নামে পরিচিত ছিল। তবে বিষ্ণুপুরের রাজারা এবং তাদের অনুগামীরা
নিজেদেরকে উত্তর ভারতের ক্ষত্রিয় বংশোদ্ভুত বলে দাবী করে থাকেন। উল্লেখ্য, সংস্কৃত মল্ল শব্দটির অর্থ মল্লযোদ্ধা।
ক্ষত্রিয় বংশোদ্ভুত হিসেবে মল্ল নামটি হয়তো যথার্থ। অনেকে মনে করেন- এই অঞ্চলের মাল
আদিবাসীদের সাথে একসময় এদের সুসম্পর্ক ছিল। এদের সাথে আদি বাগদি গোষ্ঠীর সংমিশ্রণে
সৃষ্টি হয়েছিল নূতন মিশ্র জনগোষ্ঠী। এদের রাজাকে তাই বলা হতো বাগদী রাজা। এই বংশের
আদি পুরুষ প্রথম রাজা ছিলেন আদিমল্ল। এটি এই রাজার প্রকৃত নাম, না কি উপাধি এ বিষয়ে
সন্দেহ রয়েছে। [বিস্তারিত:
মল্লরাজবংশ]
বিষ্ণুপুর
সূত্র :