বাঁকুড়া জেলার ডিহরে প্রাচীন জনবসতির নিদর্শন পাওয়া যায়। প্রায়
১ লক্ষ ২৫ হাজার
বৎসর থেকে ৬০ হাজার বৎসরের ভিতরে এরা
আফ্রিকার
ইথিওপিয়া
অঞ্চল থেকে
হোমো স্যাপিয়েন্স(মানগোষ্ঠী)
-এর
একটি দল এশিয়া এবং
ইউরোপে
প্রবেশ করে। এদের একটি দল
ভারতবর্ষে
প্রবেশ করেছিল, এদেরকে বিজ্ঞানীরা নামকরণ করেছেন
নেগ্রিটো।
ধারণা করা হয়, এই জনগোষ্ঠীর একাংশ
দ্বারকেশ্বর নদের
অংশে উত্তর তীরে বসতীস্থাপন করেছিল।
খ্রিষ্টপূর্ব ২০-৬ হাজার বৎসর পূর্বে
আদিম নৃগোষ্ঠীর
প্রোটো-অস্ট্রালয়েডদের আগমন
ঘটেছিল ভারতবর্ষে। এদের একটি শাখা ৬ হাজার বৎসর
পূর্বে দামোদর উপত্যাকয় বসতি গড়ে তুলেছিল।
খ্রিষ্টপূর্ব ৬-৫ হাজার বৎসর আগে দ্রাবিড় নরগোষ্ঠী
ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছিল। এই দ্রাবিড়
ও
প্রোটো-অস্ট্রালয়েডদের
সংমিশ্রণে সৃষ্ট নরগোষ্ঠী খ্রিষ্টপূর্ব ১
হাজার অব্দের দিকে এই উপত্যাকায়
দ্বারকেশ্বর নদের
অংশে তাম্র-প্রস্তর তাম্র-প্রস্তযুগীয় সভ্যতার পত্তন ঘটিয়েছিল।
আর্যরা
ভারতে প্রবেশ করেছিল খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দের দিকে। ক্রমে ক্রমে এরা
উত্তর-পশ্চিম ভারতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হয়। ধারণা করা এদের দ্বারা
তাম্রযুগের সূচনা হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ অব্দের দিকে। আর লৌহযুগের সূচনা হয়েছিল
খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ অব্দের দিকে। এরই ধারাবাহিকতায় দামোদর
উপাত্যাকায় তাম্র এবং লৌহের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। এই
অঞ্চলরের আদবাসীদের
আর্যরা
সম্মানের চোখে দেখতো না। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম
শতাব্দীর দিকে রচিত ঐতরেয় আরণ্যক-এ এদেরকে অসুর নামে অভিহত করা হয়েছিল। আনুমানিক খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে
রচিত প্রাচীন জৈন ধর্মগ্রন্থ আচারাঙ্গ সূত্র-এ এই অঞ্চলের মানুষকে
সুসভ্য ও অসভ্য হিসেবে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এরা বাস করতো এই অঞ্চলের সূহ্ম ও লাড়া (রাঢ়) রাজ্যে
বাস করতো। সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষায় লেখা শুশুনিয়া শিলালিপি থেকে জানা যায় যে,
খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে পুষ্করণার (আধুনিক পোখান্না অঞ্চল) রাজা ছিলেন সিংহবর্মণের পুত্র চন্দ্রবর্মণ।
খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৪ অব্দে
সমুদ্রগুপ্ত প্রাচীন
সুশুনিয়া রাজ্যের শেষ রাজা ধননন্দ এবং চন্দ্রবর্মণকে
পরাজিত করেন। এর জয়ের মাধ্যমে এই অঞ্চল
গুপ্ত রাজবংশের শাসনধীনে চলে গিয়েছিল। বহু বছর বাঁকুড়া জেলা ভূখণ্ডটি দণ্ডভুক্তি ও বর্ধমানভুক্তি রাজ্যের অন্তর্গত ছিল।
এই অঞ্চলটি ছিল নিম্নবর্ণে হিন্দু ধর্মালম্বাদের আদি নিবাস। এই
অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য আদিবাসী ছিল বাগদি, মাল ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী। খ্রিষ্টী্য় সপ্তম
শতাব্দীতে বাগদী ও মালদের সংমিশ্রণে একটি জনপদ গড়ে উঠেছিল। এই শতাব্দীর শেষার্ধে আদি
মল্লের নেতৃত্বে একটি রাজ্য গড়ে উঠে। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দী থেকে ব্রিটিশ শাসনের সূচনালগ্ন পর্যন্ত প্রায় এক সহস্রাব্দ কাল
বিষ্ণুপুরর
এই রাজবংশ রাজত্ব করে। এই সময় অঞ্চলটি মল্লভূম নাম পরিচিতি লাভ করেছিল।
এই সূত্রের বাঁকুড়া অঞ্চল
বিষ্ণুপুরের
মল্লরাজ বংশের দ্বারা শাসিত মল্লভূমের অংশভাগী হয়ে পড়েছিল।
১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ
ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানিনি মল্লভূম রাজ্য অধিকার করে নেয়।
১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে আধুনিক বাঁকুড়া জেলাটি
প্রতিষ্ঠিত হয়। জেলার নামকরণ করা হয় এর সদর শহরের নামানুসারে।