গুপ্ত
রাজবংশ
প্রাচীন ভারতের রাজবংশ বিশেষ।
দাক্ষিণাত্যে সাতবাহন ও উত্তর আর্যাবর্তে কুষাণ সাম্রাজ্য পতনের পর খ্রিষ্টীয় তৃতীয়
ও চতুর্থ শতকে গুপ্তবংশীয় রাজগণ ভারতে একটি বিশাল
সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই রাজবংশটি ক্ষত্রিয় ছিল কিনা, তা জানা যায় না।
অনেক ঐতিহাসিকের মনে করেন এঁরা বৈশ্য ছিলেন। পূর্ব ভারত ও উত্তর প্রদেশেই এঁরা
রাজত্ব গড়ে তুলেছিলেন। এ যাবত প্রাপ্ত এদের মুদ্রা ও শিলালিপি থেকে অনুমান করা হয়
যে, গুপ্তরাজারা উত্তর প্রদেশ থেকেই তাদের ক্ষমতা বিস্তার আরম্ভ করেন। এই বংশের
আদিপুরুষ শ্রীগুপ্ত খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর শেষে অথবা চতুর্থ শতাব্দীর প্রারম্ভে
কোনো ক্ষুদ্র রাজ্যের অধিপতি ছিলেন, কিন্তু কোথায় তিনি রাজত্ব করতেন সে সম্বন্ধে
নিশ্চিত কিছু জানা যায় না। ৬৭৫ খ্রিষ্টাব্দে চৈনিক পরিব্রাজক ইৎসিং
ভারতবর্ষ ভ্রমণ করতে আসেন। তাঁর ভ্রমণ বৃত্তান্ত থেকে জানা যায়, তাঁর ভারত-ভ্রমণের
প্রায় ২৫ বৎসর আগে, মহারাজা শ্রীগুপ্ত চৈনিক ধর্মযাজকের জন্য় নালন্দার ২৪০ মাইল
পূর্বে একটি ধর্মমন্দির নির্মাণ করেছিলেন। এটি চীনের মন্দির নামে পরিচিত। নালন্দার
পূর্বদিক বলতে বঙ্গদেশ বুঝায়। ই অর্থে অনেকে গুপ্তরাজ্য বঙ্গদেশে ছিল বলে মনে করে
থাকেন। সম্ভবত গুপ্ত সাম্রাজ্যের পত্তন ঘটেছিল বঙ্গদেশে।
গুপ্ত সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটেছিল পূর্ব-পশ্চিম বরাবর সৌরাষ্ট্র থেকে উত্তর বঙ্গ
পর্যন্ত। পক্ষান্তরে উত্তর-দক্ষিণ দিকে ছিল হিমালয় থেকে নর্মদা নদী অন্য দিকে আরব
সাগর পর্যন্ত। এই বংশের পতন ঘটেছিল ৫১০ খ্রিষ্টাব্দের পরে। তবে ঠিক কোন সময়ে
গুপ্তরাজ্য সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছিল, তা জানা যায় নি। গুপ্ত সাম্রাজ্যের স্থানীয়
প্রাদেশিক শাসক এবং হুনদের আক্রমণে গুপ্তসাম্রাজ্য বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যায়। এর
সাথে যুক্ত হয়েছিল যশোধর্মণের রাজ্য বিস্তার। এই বঙ্গদেশে দুটি স্বাধীন এবং
শক্তিশালী রাজ্যের উদ্ভব ঘটে। এই রাজ্য দুটি হলো গৌড় এবং বঙ্গ।
গুপ্তবংশের রাজাদের তালিকা।
শ্রীগুপ্ত (২৪০-২৮০ খ্রিষ্টাব্দ)
ঘটোৎকচ (২৮০-৩২০ খ্রিষ্টাব্দ)
চন্দ্রগুপ্ত প্রথম (৩২০-৩২৫ খ্রিষ্টাব্দ)
সমুদ্রগুপ্ত (৩২৫-৩৮০ খ্রিষ্টাব্দ)
রামগুপ্ত (৩৮০-৩৮০ খ্রিষ্টাব্দ)
চন্দ্রগুপ্ত দ্বিতীয় (৩৮০-৪১৩ খ্রিষ্টাব্দ)
কুমারগুপ্ত মহেন্দ্রাদিত্য (৪১৪-৪৫৫ খ্রিষ্টাব্দ)
পুরুগুপ্ত (৪১৫-৪৫৫ খ্রিষ্টাব্দ)
স্কন্ধগুপ্ত (৪৫৫-৪৬৭ খ্রিষ্টাব্দ)
পুরগুপ্ত, দ্বিতীয় কুমারগুপ্ত, বুধগুপ্ত, ভানুগুপ্ত (৪৬৭- আনুমানিক ৫১০ খ্রিষ্টাব্দ)
এই রাজ বংশের
রাজা স্কন্ধগুপ্তের পর, পরবর্তী অযোগ্য শাসক এবং হুনদের ক্রমাগত আক্রমণের কারণে
সাম্রাজ্যের সামরিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে
স্কন্ধগুপ্ত
হুনদের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছিল।
শেষ পর্যন্ত
হুনদের
রাজা
তোরমান
গুপ্তরাজ্যের একটি অংশ দখল করতে সক্ষম। যদিও
ভানুগুপ্ত নামক এক রাজার কাছে
তোরমান
পরাজিত হয়েছিল, কিন্তু হুনদের সম্পূর্ণ পরাস্ত করতে পারেন নি।
এই সময় গুপ্তরাজ বংশের উত্তরাধিকারদের মধ্যে
আত্মকলহের সুযোগে সাম্রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলে একাধিক রাজবংশের উত্থান ঘটে। হুনরা
গান্ধার, পাঞ্জাব থেকে শুরু করে মালব পর্যন্ত দখল করে। এর পাশাপাশি দক্ষিণে বলভীর
মৈত্রবংশ, থানেশ্বররের পুষ্যভূতি বংশ, কনৌজের মৌখরীবংশ এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলে দুটি
শক্তিশালী রাজ্যের উদ্ভব ঘটে। এই রাজ্য দুটি হলো- স্বাধীন বঙ্গরাজ্য ও স্বাধীন
গৌড়রাজ্য।
সূত্র :
বাংলাদেশের
ইতিহাস (আদিপর্ব)/রমেশচন্দ্র মজুমদার।
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।