চন্দ্রগুপ্ত দ্বিতীয়
ভারতবর্ষের
গুপ্তরাজবংশের ষষ্ঠ রাজা। গুপ্তবংশের তৃতীয় রাজার নাম ছিল চন্দ্রগুপ্ত। এই
কারণে সমুদ্রগুপ্তের পুত্র চন্দ্রগুপ্তকে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বা চন্দ্রগুপ্ত
দ্বিতীয় বলা হয়।
৩৮০ খ্রিষ্টাব্দে
সমুদ্রগুপ্তের মৃত্যুর পর রাজা হন তাঁর রামগুপ্ত। রাজ্যলাভের পরপরই তিনি নিজের
নামে মুদ্রা প্রকাশ করেন। শকরাজ রুদ্রসেন রামগুপ্তের অসাধারণ সুন্দরী স্ত্রী
ধ্রুবদেবীকে অধিকার করার জন্য, আকস্মিকভাবে একটি অভিযান চালান। এই অভিযানে তিনি
রামগুপ্তকে হত্যা করেন এবং ধ্রুবদেবীকে অপহরণ করে নিয়ে যান। এই ঘটনার পরপরই
সমুদ্রগুপ্তের অপর সন্তান
চন্দ্রগুপ্ত
দ্রুত রাজ্যের শাসনভার গ্রহণ করে, তাৎক্ষণিক অস্থির পরিস্থিতি সামাল দেন। এরপর
শকরাজা রুদ্রসেনকে শাস্তি দেওয়ার জন্য অভিযান চালান। এই যুদ্ধে তিনি রুদ্রসেনকে
পরাজিত ও হত্যা করে ধ্রুবদেবীকে উদ্ধার
করেন। চন্দ্রগুপ্ত ধ্রুপদেবীর সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে, তৎকালীন সামাজিক বিধিকে
অগ্রাহ্য করেই তিনি ধ্রুবদেবীকে
বিবাহ করেছিলেন।
চন্দ্রগুপ্ত রাজ্যলাভের পর 'বিক্রমাদিত্য'
উপাধি গ্রহণ করেন। এছাড়া তাঁর অন্যান্য নাম ছিল নরেন্দ্রচন্দ্র, সিংহচন্দ্র,
দেবরাজ, দেবশ্রী। তাঁর মায়ের নাম দত্তা। তাঁর প্রথমা স্ত্রী ছিলেন ধ্রুবদেবী,
দ্বিতীয়া স্ত্রী ছিলেন কুবের নাগ। তাঁর দুই পুত্রের নাম কুমারগুপ্ত ও গোবিন্দগুপ্ত।
এঁর একমাত্র কন্যার নাম প্রভাবতীগুপ্ত।
উত্তরাধিকারসূত্রে চন্দ্রগুপ্ত
যে সাম্রাজ্য লাভ করেছিলেন, তাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে তিনি প্রথমে তাঁর
সেনাবাহিনীকে সুসংগঠিত করেন। এর পাশাপাশি তিনি পার্শ্ববর্তী রাজাদের সাথে বৈবাহিক
সম্পর্ক স্থাপন করে শত্রুর সংখ্যা কমিয়ে ফেলেন। তিনি নিজে নাগ-বংশের রাজকন্যা কুবের
নাগকে বিবাহ করেন। পরে নিজ কন্যা প্রভাবতীকে বিদর্ভের বকাটক-রাজ দ্বিতীয় রুদ্রসেনের
সাথে বিবাহ দেন। এই বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে তিনি সৌরাষ্ট্রের শকদের দমন করতে সক্ষম
হয়েছিলেন।
তিনি সৌরাষ্ট্রের শক রাজা তৃতীয় রুদ্রসেনের রাজ্য আক্রমণের পূর্বে, তাঁর করদ
রাজ্যগুলোকে সাথে নিয়ে একটি বিশাল সৈন্যবাহিনী তৈরি করেন। এই শকদের ভিতর
অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছিল। এই সুযোগে চন্দ্রগুপ্ত সৌরাষ্ট্র আক্রমণ করেন। বেশ কয়েক বৎসর
যুদ্ধের পর রুদ্রসেন পরাজিত ও নিহত হন। এর ফলে তিনি তাঁর রাজ্যসীমাকে আরব সাগর
পর্যন্ত সম্প্রসারিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এছাড়া এই জয়ের ফলে শক রাজবংশের রাজত্ব
চিরকালের মতো বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই কারণে চন্দ্রগুপ্ত 'শকারি' উপাধি পান।
কুতুবমিনার-এর নিকটবর্তী মেহরাউলি গ্রামের একটি লৌহস্তম্ভে উৎকীর্ণ লিপি থেকে জানা যায়, তিনি বঙ্গদেশের নৃপতিতদের সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করেন এবং বহ্লিক দেশ জয় করেন। বাস্তবে গোড়া থেকেই বঙ্গদেশ গুপ্তরাজ্যের অংশ ছিল। অনেকে এঁদেরকে বঙ্গদেশের রাজা হিসেবে মনে করেন। সম্ভবত বঙ্গদেশের কিছু জমিদার বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। চন্দ্রগুপ্ত তাঁদেরকে দমন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
তিনি ৪১৩ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র কুমারগুপ্ত মহেন্দ্রাদিত্য সিংহাসন লাভ করেন।
চন্দ্রগুপ্তকে বিক্রমাদিত্য
নাম গ্রহণ করেছিলেন। অনেকে মনে করেন বিক্রমাদিত্য বিক্রমাব্দ নামক একটি পঞ্জিকা
প্রণয়ন করেছিলেন। বাস্তবে বিক্রমাব্দ চালু হয়েছিল ৫৮ খ্রিষ্টাব্দ। সম্ভবত এই
বিক্রামাদিত্য চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন না।
সূত্র :
বাংলাদেশের
ইতিহাস (আদিপর্ব)/রমেশচন্দ্র মজুমদার।
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।