যাদব বংশ
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের একটি রাজবংশ। যাদবরা নিজেদেরকে শ্রীকৃষ্ণের পূর্বপুরুষ যদুর বংশধর বলে দাবি করতেন।

এঁরা দক্ষিণ ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় চালুক্য রাজাদের অধীন সামন্তরাজ রূপে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। চালুক্য রাজবংশের পতনের পর, এই বংশের প্রথম উল্লেখযোগ্য শাসক পঞ্চম ভিল্লম (আনুমানিক ১১৮৫-১১৯১ খ্রি) চতুর্থ সোমেশ্বরের কাছ থেকে কৃষ্ণা নদীর উত্তরে চালুক্য রাজ্যের এক বৃহদংশ অধিকার করেন। তিনি মালব ও গুজরাট অঞ্চল অধিকার করেছিলেন। তিনি ভিল্লমই দেবগিরিতে (মহারাষ্ট্র রাজ্যে অবস্থিত আধুনিক দৌলতাবাদ) রাজধানী স্থাপন করেন। এরপর এই শহরটি দক্ষিণ ভারত-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহরে পরিণত হয়। তিনি হোয়সল বংশীয় প্রথম বীরবল্লালের কাছে তিনি পরাজিত এবং নিহত হন। 

এই রাজবংশের রাজা জৈত্রপাল বা জয়তুণি (আনুমানিক ১১৯১-১২১০ খ্রি) সিংহাসনে নিজ মনোনীত ব্যক্তিকে স্থাপন করে যাদব বংশের প্রভাব বিস্তার করেন।  তার পুত্র সিংঘন (আনুমানিক ১২১০-১২৪৭ খ্রি) হোয়সলরাজ দ্বিতীয় বীরবল্লালকে পরাজিত করে কৃষ্ণা নদীর পরপার পর্যন্ত রাজ্যবিস্তার করেন। বাঘেলা রাজাদের শাসনকালে তিনি একাধিকবার গুজরাট আক্রমণ করেছিলেন। তিনি কোহলাপুরের শিলহর রাজ্যটি জয় করেন। তিনি মালব ও ছত্রিশগড়ের (মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত) শাসকগণ, গোয়ার কদম্ব বংশ ও পাণ্ড্য রাজ্য-এর সাথে সাফল্যের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।  তিনি কাবেরী নদীর তীরে একটি বিজয়স্তম্ভ স্থাপন করেছিলেন। তাঁর রাজত্বকালে দক্ষিণ ভারতের এক বৃহদংশে যাদব বংশের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রাচীন ভারতের অন্যান্যা শ্রেষ্ঠ রাজাদের মতো সিংঘনও বিদ্যানুরাগী ছিলেন। সঙ্গীত শাস্ত্রের উপর একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ রচয়িতা শারঙ্গদেব এবং প্রসিদ্ধ জ্যোতির্বিদ চন্দ্রদেব তাঁর রাজসভা অলঙ্কৃত করেন। উল্লেখ্য,তিনি চন্দ্রদেব জ্যোতির্বিদ্যা চর্চার জন্য একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন।

যাদব বংশের শেষ রাজা ছিলেন রামচন্দ্র (আনুমানিক ১২৭১-১৩০১ খ্রিষ্টাব্দ)।  তাঁর সময় সন্ত জ্ঞানেশ্বর
মারাঠী ভাষায় গীতার ভাষ্য রচনা করেছিলেন। তাঁর রাজা রামচন্দ্রের রাজত্বকালেই
আলাউদ্দীন খিলজি দেবগিরি আক্রমণ করেন।

আলাউদ্দীন খিলজি ভিলসা অভিযানের নামে একটি বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে রামচন্দ্রের রাজধানী দেবগিরি আক্রমণ করেন। রাজা রামচন্দ্র এই অতর্কিত আক্রমণে দিশেহারা হয়ে, আলাউদ্দিনের সাথে সন্ধি করেন। এর বিনিময়ে রামচন্দ্র তাঁকে  সাত মণ স্বর্ণ, সাত মণ মুক্তা ও ৪০টি হাতি প্রদান করেন। এই সন্ধির সময় রামচন্দ্রের পুত্র শঙ্কর রাজধানীতে ছিলেন। তিনি রাজধানীতে ফিরে এসে এই সন্ধি অগ্রাহ্য করেন। ফলে উভ্য়ের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে শঙ্কর পরাজিত হয়ে, প্রচুর ধনসম্পদ ও ইলিচপুর প্রদেশ আলাউদ্দিনকে প্রদান করে সন্ধি করেন। এর মধ্য দিয়ে যাদব বংশের সমাপ্তি ঘটে।