গোবেক্লি টেপে
ইংরেজি:
Göbekli Tepe
ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক; অক্ষাংশ ৩৭°১৩'২৩"
উত্তর, দ্রাঘিমাংশ ৩৮°৫৫'২১" পূর্ব
পৃথিবীর প্রাচীনতম পরিচিত ধর্মীয় মন্দির। মন্দিরটি তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্ব
আনাতোলিয়া অঞ্চলের
একটি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত। বর্তমান দক্ষিণ-পূর্ব
তুরস্কের শানলিউরফা
(Şanlıurfa)
শহরের কাছে অবস্থিত। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে তুর্কি ও আমেরিকান প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি যৌথ দল এই স্থানটি জরিপ করে।
তারা এখানে পাথরের টুকরো ও স্তম্ভের সন্ধান পায় এবং একটি মধ্যযুগীয় কবরস্থান হিসেবে
চিহ্নিত করে। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিক ক্লাউস শ্মিড্ট
(Klaus Schmidt) (German Archaeological Institute, DAI) এই স্থানে খনন কাজ শুরু করেন।
তিনি প্রমাণ করেন যে এটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মীয় মন্দির কমপ্লেক্স।
তার নেতৃত্বে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে খনন চলে।
১২,০০০-৯,৬০০
খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে আফ্রিকা থেকে আগত শিকারীর
জনগোষ্ঠী বসতি স্থাপন করে। এর ছিল মূলত মধ্য পাথুরে যুগের শিকারী
জনগোষ্ঠী। খ্রিষ্টপূর্ব ৯৫০০-৮০০০ অব্দের ভিতরে এরাগোবেক্লি টেপেমন্দির তৈরি করেছিল।
এই মন্দিরের রয়েঢ়ে এখানে বিশাল T-আকৃতির চুনাপাথরের স্তম্ভ। এগুলোর উচ্চতা ৩-৬ মিটার এবং ওজন ১০-২০ টন পর্যন্ত।
স্তম্ভগুলো বৃত্তাকারে সাজানো। ধারণা করা হয়, ধর্মীয় আচার বা আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত হতো বলে।
কিছু প্রত্নতত্ত্ববিদ মনে করেন যে, এখানে মৃতদেহ সমাধি দেওয়ার সময় আচার-অনুষ্ঠানও হতো।
অনেক স্তম্ভে খোদাই করা রয়েছে সিংহ, শকুন, সাপ, বন্যশূকর, শেয়াল, বিচ্ছু ইত্যাদির ছবি।
সম্ভবত
এরা বন্য পশুকে গৃহপালিত পশুতে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিল।সেই সময়ে এরা প্রয়োজনীয় উদ্ভিদের চাষ এবং পরিচর্যার প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন
করেছিল।
গোবেক্লি টেপে-তে প্রাপ্ত পাত্রসমূহ
চুনাপাথরের বাটি ও বেসিন
বিশাল আকারের কিছু পাথরের পাত্র পাওয়া গেছে, যেগুলো একটানা পাথর খোদাই করে তৈরি।
এগুলোর কিছু ব্যাস ১ মিটারেরও বেশি।
সম্ভবত এগুলো ব্যবহার হতো তরল পদার্থ (যেমন পানি, রক্ত বা ফারমেন্ট করা পানীয়) সংরক্ষণে।
ছোট চুনাপাথরের কাপ ও পাত্র
অনেক ছোট আকারের বাটি পাওয়া গেছে, যা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য হতে পারে।
চোলাইকরণ:
কিছু পাথরের বাটির ভেতরে অক্সালেট সঞ্চিত পদার্থ পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয় শস্যজাতীয় জিনিস ভিজিয়ে রেখে
চোলাই করা হতো।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা ধারণা করেন, গোবেক্লি টেপে-র ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে প্রথম দিককার বিয়ার জাতীয় পানীয় ব্যবহার করা হতে পারে।
গোবেক্লি টেপের খোদাই চিত্র
প্রাণীর খোদাই: সাপ, বন্য শূকর, শেয়াল, সিংহ, হায়েনা, কুমির, হরিণ, সারস ও বিভিন্ন পাখির
খোদিত চিত্র পাওয়া গেছে।
কিছু প্রজাতিকে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে দেখানো হয়েছে।
সম্ভবত টোটেমিক প্রতীক বা ধর্মীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
মানবাকৃতি প্রতীক:
T-আকৃতির স্তম্ভগুলোকে অনেকে মানবদেহের প্রতিরূপ মনে করেন।
কিছু স্তম্ভে হাত, আঙুল ও বেল্ট খোদাই করা আছে।
এগুলো হয়তো দেবতা বা পূর্বপুরুষকে প্রতিফলিত করে।
বিমূর্ত প্রতীক ও চিহ্ন: কিছু আঁকাবাঁকা রেখা, অর্ধচন্দ্র, বৃত্ত ইত্যাদি।
সম্ভবত এগুলো হয়তো জ্যোতির্বিজ্ঞান বা আধ্যাত্মিক প্রতীক।
ভালচার স্টোন (Vulture Stone / Pillar 43): একটি স্তম্ভে শকুন, বিচ্ছু, সাপ ও গোলক আকৃতি খোদাই করা আছে।
অনেকে এটিকে মৃত্যু, আত্মার যাত্রা বা নক্ষত্রমণ্ডলীর প্রতীক হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।
ভালচার স্টোন-এর
চিত্র (A B)। ডান দিকের প্রতীকী চিত্র
উল্লেখ্য, ইউনেস্কো ২০১৮ সালে এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান
(UNESCO World Heritage Site)) হিসেবে ঘোষণা করে।