১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ৪-৭ নভেম্বরে প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট টাইফুন Thelma/Uring

টাইফুন

ইংরেজি typhoon

 

নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বিশেষ। সাধারণভাবে এই জাতীয় ঘূর্ণিঝড়কে সাধারণভাবে বলা হয় সাইক্লোন (Cyclone)। গ্রিক kyklos শব্দের অর্থ হলো বৃ্ত্ত। এই শব্দটি থেকে উৎপন্ন শব্দ হলো kykloun। এর অর্থ হলো- আবর্তিত হওয়া। এই শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে তৈরি হয়েছে kyklōma । এই শব্দের অর্থ হলো- চক্র বা কুণ্ডলিত। ১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ-ভারতীয় আবহাওয়াবিদ হেনরী পিডিংটন তাঁর সামুদ্রিক দুর্যোগ বিষয়ক গ্রন্থ, The Sailor's Horn-book for the Law of Storms-এতে Cyclone শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। উল্লেখ্য বাংলায় সাইক্লোন শব্দটি গৃহীত হয়েছে ইংরেজি থেকে।

 

মূলত চীন ও জাপান সংলগ্ন প্রশান্ত মহাসাগরে উৎপন্ন সাইক্লোনকে টাইফুন বলা হয়। চীনা টাই-ফেং শব্দের অর্থ হলো 'প্রচণ্ড বাতাস'। এই শব্দ থেকে টাইফুন শব্দ অন্যান্য ভাষায় প্রবেশ করেছে। কোনো কোনো মতে ফার্সি বা আরবি শব্দ তুফান থেকেও টাইফুন শব্দটি আসতে পারে।

প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলে উৎপন্ন ঘূর্ণিঝড়-এর গতিবেগ যখন ঘণ্টায় ১১৭ কি.মি.-এর বেশি হয়, তখন এই ঝড়কে টাইফুন নামে অভিহিত করা হয়।

উল্লেখ্য প্রশান্তমহাসাগরীয় ঘূর্ণিঝড়কে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। এই ভাগ তিনটি হলো-

অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের মতোই  এই ঝড়ের সময় বাতাস একটি কেন্দ্র তৈরি করে প্রবল বেগে আবর্তিত হয়। উল্লেখ্য কোনো অঞ্চলের বাতাস অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠলে, ওই অঞ্চলের বাতাস উষ্ণ এবং আর্দ্র অবস্থায় উপরের দিকে উঠে যায়। ফলে ওই স্থানে বায়ুর শূন্যতার সৃষ্টি। এই শূন্যস্থান পূর্ণের জন্য পার্শ্বর্তী অঞ্চল থেকে শীতল বাতাস  ছুটে আসে। এর ফলে ওই অঞ্চলে একটি বায়ুর ঘূর্ণি তৈরি হয়। এই বিচারে পৃথিবী এবং বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহেও ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। নেপচুনের এই জাতীয় ঝড়কে বলা হয় জাদুকরের চোখ (Wizard's Eye)। মঙ্গল গ্রহের ঘূর্ণিঝড়কে 'গ্রেট রেড স্পট' বলা হয়। পৃথিবীতে এই ঝড়ের ঘূর্ণন-দিক গোলার্ধের বিচারে দুই রকম হয়। এই জাতীয় ঘটনা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সারা বৎসরেই ঘটে। কিন্তু তার অধিকাংশই ঝড়ে পরিণত হয় না। ঘূর্ণিবায়ুর কেন্দ্রের দেয়াল বরবার যখন বাতাসের গতির যখন ২৫-থেকে বেশি থাকে তখন তাকে ঝড়ের সৃষ্টি হয়। ঘূর্ণিঝড় তিন রকমের হতে পারে। এই রকম তিনটি হলো সাধারণ ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো এবং সাইক্লোন। স্থলভূমিতে  সাধারণ ঘূর্ণিঝড়  ও টর্নেডো হয়। কিন্তু সাইক্লোন সৃষ্টি হয় সমূদ্রপৃষ্ঠে।

 

সাইক্লোনের সাথে সমুদ্রপৃষ্ঠের নিম্নচাপ মূখ্য ভূমিকা রাখে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এই নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা কমপক্ষে ২৬-২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস-এ উন্নীত হলে এবং তা সমুদ্রের উপরিতল থকে প্রায় ৫০ মিটার তা বজায় থাকলে, সাইক্লোন তৈরির ক্ষেত্র তৈরি হয়। এই সময় এই অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণ আর্দ্র বায়ু উপরে দিকে উঠে যায়। আর এই শূন্য স্থান পূর্ণ করার জন্য উভয় মেরু অঞ্চল থেকে বাতাস নিরক্ষরেখার দিকে প্রবাহিত হয়। কিন্তু পৃথিবীর ঘূর্ণনের প্রভাবে সৃষ্ট কোরিওলিস শক্তির (coriolis force) কারণে, এ বায়ু সোজাসুজি প্রবাহিত না হয়ে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়। এর ফলে উত্তর গোলার্ধে সৃষ্ট বায়ু প্রবাহ ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বায়ু ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরতে থাকে। নিরক্ষরেখার উপর এ শক্তির প্রভাব শূন্য। কাজেই, এ অঞ্চলের তাপমাত্রা  ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অনুকূলে থাকলেও কোরিওলিস শক্তি ন্যূনতম দসায় থাকায়, নিরক্ষরেখার ০ ডিগ্রী থেকে ৫ ডিগ্রীর মধ্যে কোন  ঘূর্ণিঝড় হতে দেখা যায় না। সাধারণত, নিরক্ষরেখার ১০ ডিগ্রী থেকে ৩০ ডিগ্রীর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। 

 

আবহাওয়া বিজ্ঞানীর পৃথিবীতে সংঘটিত  সাইক্লোন এলাকাকে ৭টি অঞ্চলে ভাগ করেছেন। এই ভাগগুলো হলো

বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা এবং তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্রের তাপমাত্রা ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের পর প্রায় এক ডিগ্রী ফারেনহাইট বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই এক ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে এখন আগের চেয়ে শক্তিশালী এবং বেশী সংখ্যায় ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হচ্ছে।

কতিপয় প্রাণঘাতী টাইফুনের পরিচয়


সূত্র :
http://www.merriam-webster.com/dictionary/cyclone
http://en.wikipedia.org/wiki/