১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের সাইক্লোন 02B -এর ২৯ এপ্রিল, উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি।

সাইক্লোন

সমার্থক শব্দ : ঘূর্ণিঝড়
ইংরেজি 
Cyclone

 

নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বিশেষ। এই জাতীয় ঘূর্ণিঝড়কে সাধারণভাবে বলা হয় সাইক্লোন (Cyclone)। গ্রিক kyklos শব্দের অর্থ হলো বৃ্ত্ত। এই শব্দটি থেকে উৎপন্ন শব্দ হলো kykloun। এর অর্থ হলো- আবর্তিত হওয়া। এই শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে তৈরি হয়েছে kyklōma । এই শব্দের অর্থ হলো- চক্র বা কুণ্ডলিত। ১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ-ভারতীয় আবহাওয়াবিদ হেনরী পিডিংটন তাঁর সামুদ্রিক দুর্যোগ বিষয়ক গ্রন্থ, The Sailor's Horn-book for the Law of Storms-এতে Cyclone শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। বাংলায় সাইক্লোন শব্দটি গৃহীত হয়েছে ইংরেজি থেকে।

 

সমুদ্রপৃষ্ঠে সৃষ্ট যে কোন  ঘূর্ণিঝড়কেই সাধারণভাবে সাইক্লোন বলা হয়। ভারত মহাসাগরীয়, প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং আটলান্টিক মহাসাগরীয় সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়কে তিনটি নামে অভিহিত করা হয়। এর ভিতরে ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট  ঘূর্ণিঝড়কেই বিশেষভাবে সাইক্লোন বলা হয়। এই ঝড়ের আক্রমণ হয়ে থাকে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড-এর উপকূলীয় অঞ্চল। অন্যদিকে  আটলান্টিক মহাসাগরীয় ঝড়কে বলা হয় হারিকেন এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় ঝড়কে বলা হয় টাইফুন


অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের মতোই
  এই ঝড়ের সময় বাতাস একটি কেন্দ্র তৈরি করে প্রবল বেগে আবর্তিত হয়। উল্লেখ্য কোনো অঞ্চলের বাতাস অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠলে, ওই অঞ্চলের বাতাস উষ্ণ এবং আর্দ্র অবস্থায় উপরের দিকে উঠে যায়। ফলে ওই স্থানে বায়ুর শূন্যতার সৃষ্টি। এই শূন্যস্থান পূর্ণের জন্য পার্শ্বর্তী অঞ্চল থেকে শীতল বাতাস  ছুটে আসে। এর ফলে ওই অঞ্চলে একটি বায়ুর ঘূর্ণি তৈরি হয়। এই বিচারে পৃথিবী এবং বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহেও ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। নেপচুনের এই জাতীয় ঝড়কে বলা হয় জাদুকরের চোখ (Wizard's Eye)। মঙ্গল গ্রহের ঘূর্ণিঝড়কে 'গ্রেট রেড স্পট' বলা হয়। পৃথিবীতে এই ঝড়ের ঘূর্ণন-দিক গোলার্ধের বিচারে দুই রকম হয়। এই জাতীয় ঘটনা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সারা বৎসরেই ঘটে। কিন্তু তার অধিকাংশই ঝড়ে পরিণত হয় না। ঘূর্ণিবায়ুর কেন্দ্রের যখন বাতাসের গতির যখন ২৫-থেকে বেশি থাকে তখন ঝড়ের সৃষ্টি হয়। ঘূর্ণিঝড় তিন রকমের হতে পারে। এই রকম তিনটি হলো সাধারণ ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো এবং সাইক্লোন। স্থলভূমিতে  সাধারণ ঘূর্ণিঝড়  ও টর্নেডো হয়। কিন্তু সাইক্লোন সৃষ্টি হয় সমূদ্রপৃষ্ঠে।

 

সাইক্লোনের সাথে সমুদ্রপৃষ্ঠের নিম্নচাপ মূখ্য ভূমিকা রাখে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এই নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা কমপক্ষে ২৬-২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস-এ উন্নীত হলে এবং তা সমুদ্রের উপরিতল থেকে প্রায় ৫০ মিটার তা বজায় থাকলে, সাইক্লোন তৈরির ক্ষেত্র তৈরি হয়। এই সময় এই অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণ আর্দ্র বায়ু উপরে দিকে উঠে যায়। আর এই শূন্য স্থান পূর্ণ করার জন্য উভয় মেরু অঞ্চল থেকে বাতাস নিরক্ষরেখার দিকে প্রবাহিত হয়। কিন্তু পৃথিবীর ঘূর্ণনের প্রভাবে সৃষ্ট কোরিওলিস শক্তির (coriolis force) কারণে, এ বায়ু সোজাসুজি প্রবাহিত না হয়ে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়। এর ফলে উত্তর গোলার্ধে সৃষ্ট বায়ু প্রবাহ ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বায়ু ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরতে থাকে। নিরক্ষরেখার উপর এ শক্তির প্রভাব শূন্য। কাজেই, এ অঞ্চলের তাপমাত্রা  ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অনুকূলে থাকলেও নিরক্ষরেখার ০ ডিগ্রী থেকে ৫ ডিগ্রীর মধ্যে কোন  ঘূর্ণিঝড় হতে দেখা যায় না। সাধারণত, নিরক্ষরেখার ১০ ডিগ্রী থেকে ৩০ ডিগ্রীর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। 

 

সাইক্লোনের কেন্দ্রস্থলকে চোখ বলা হয়। এই অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি থাকলেও বাতাসের গতি থাকে ২০-২৫ কিলোমিটার/ঘণ্টার ভিতরে। কিন্তু এর বাইরে যে ঝড়ো দেওয়াল তৈরি হয়। তাতে ঝড়ের ক্ষমতা অনুসারে বাতাসের গতি ২৫০-৩০০ কিলোমিটার/ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে। এই বাতাসের সাথে থাকে অবিরাম প্রচুর বৃষ্টিপাত। একই সাথে সমুদ্র থেকে উত্থিত দেওয়াল সদৃশ্য জলোচ্ছ্বাস। এই জলোচ্ছ্বাস ঝড়ের ক্ষমতা অনুসারে প্রায় ১৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। সমুদ্রের জোয়ারের সময় জলোচ্ছ্বাস হলে, তা ভয়ঙ্কর রূপ লাভ করে।

 

সাইক্লোন স্থলভাগে আঘাত না হানা পর্যন্ত ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে অগ্রসর হতে থাকে। স্থলভাগে আঘাত হানার পর অল্প সময়ের ভিতর সাইক্লোন দুর্বল হয়ে পড়ে। এরপরে জলোচ্ছ্বাস ও ঝড়ের দ্বারা আক্রান্ত স্থানটি একটি বিশাল বিধ্বংস অঞ্চলে পরিণত হয়।

 

আবহাওয়া বিজ্ঞানীর পৃথিবীতে সংঘটিত  সাইক্লোন এলাকাকে ৭টি অঞ্চলে ভাগ করেছেন। এই ভাগগুলো হলো

ভারত মহাসাগর এলাকা এবং বাংলাদেশের জন্য  ঘূর্ণিঝড়-এর বাতাসের গতির বিচারে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ দুটি হলো

পূর্বে বাংলাদেশ তথা উত্তর ভারত মহাসাগর এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হতো না। আগে আরব সাগর এলাকায় উৎপন্ন ঝড়গুলোকে A এবং বঙ্গোপসাগরে উৎপন্ন ঝড়গুলোকে B অক্ষর দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে এপ্রিল-এর বাংলাদেশে আঘাত হানা যে ঘূর্ণিঝড়টির নাম ছিল- TC-02B । এই নামের অর্থ ছিল ১৯৯১ সালে বঙ্গোপসাগরে উৎপন্ন দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড়। বর্তমানে সাইক্লোনের নাম দেওয়া হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ আঘাত হানা উল্লেখযোগ্য সাইক্লোনের তালিকা


সূত্র :
http://www.merriam-webster.com/dictionary/cyclone

http://www.primekhobor.com/details.php?id=23163

http://en.wikipedia.org/wiki/Cyclone