|
১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের সাইক্লোন
02B
-এর ২৯ এপ্রিল, উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি। |
সাইক্লোন
সমার্থক শব্দ : ঘূর্ণিঝড়।
ইংরেজি
Cyclone।
নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বিশেষ। এই
জাতীয় ঘূর্ণিঝড়কে সাধারণভাবে বলা হয় সাইক্লোন (Cyclone)। গ্রিক
kyklos
শব্দের অর্থ হলো বৃ্ত্ত। এই শব্দটি থেকে উৎপন্ন
শব্দ হলো kykloun।
এর অর্থ হলো- আবর্তিত হওয়া। এই শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে তৈরি হয়েছে
kyklōma
। এই শব্দের অর্থ হলো- চক্র বা কুণ্ডলিত। ১৮৪৮
খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ-ভারতীয় আবহাওয়াবিদ হেনরী পিডিংটন তাঁর সামুদ্রিক দুর্যোগ
বিষয়ক গ্রন্থ,
The Sailor's Horn-book for the Law of Storms-এতে
Cyclone
শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। বাংলায় সাইক্লোন শব্দটি গৃহীত হয়েছে
ইংরেজি থেকে।
সমুদ্রপৃষ্ঠে সৃষ্ট যে কোন ঘূর্ণিঝড়কেই সাধারণভাবে সাইক্লোন বলা হয়।
ভারত মহাসাগরীয়, প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং আটলান্টিক মহাসাগরীয় সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়কে
তিনটি নামে অভিহিত করা হয়। এর ভিতরে ভারত
মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়কেই বিশেষভাবে সাইক্লোন বলা হয়। এই ঝড়ের আক্রমণ হয়ে
থাকে
বাংলাদেশ,
ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড-এর উপকূলীয়
অঞ্চল। অন্যদিকে আটলান্টিক মহাসাগরীয় ঝড়কে বলা হয়
হারিকেন
এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় ঝড়কে বলা হয়
টাইফুন।
অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের মতোই− এই ঝড়ের
সময়
বাতাস একটি কেন্দ্র তৈরি করে প্রবল বেগে আবর্তিত হয়। উল্লেখ্য কোনো অঞ্চলের বাতাস অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে
উঠলে, ওই অঞ্চলের বাতাস উষ্ণ এবং আর্দ্র অবস্থায় উপরের দিকে উঠে যায়। ফলে ওই স্থানে
বায়ুর শূন্যতার সৃষ্টি। এই শূন্যস্থান পূর্ণের জন্য পার্শ্বর্তী অঞ্চল থেকে শীতল
বাতাস ছুটে আসে। এর ফলে ওই অঞ্চলে একটি বায়ুর ঘূর্ণি তৈরি হয়।
এই বিচারে পৃথিবী এবং বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহেও ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। নেপচুনের এই জাতীয়
ঝড়কে বলা হয় জাদুকরের চোখ
(Wizard's Eye)।
মঙ্গল গ্রহের ঘূর্ণিঝড়কে
'গ্রেট রেড স্পট' বলা হয়। পৃথিবীতে এই ঝড়ের ঘূর্ণন-দিক গোলার্ধের বিচারে দুই রকম
হয়। এই জাতীয় ঘটনা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সারা বৎসরেই ঘটে। কিন্তু তার অধিকাংশই
ঝড়ে পরিণত হয় না। ঘূর্ণিবায়ুর কেন্দ্রের যখন বাতাসের গতির যখন ২৫-থেকে বেশি থাকে
তখন ঝড়ের সৃষ্টি হয়। ঘূর্ণিঝড় তিন রকমের হতে পারে। এই রকম তিনটি হলো−
সাধারণ ঘূর্ণিঝড়,
টর্নেডো এবং সাইক্লোন। স্থলভূমিতে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়
ও
টর্নেডো
হয়। কিন্তু সাইক্লোন সৃষ্টি হয় সমূদ্রপৃষ্ঠে।
সাইক্লোনের সাথে সমুদ্রপৃষ্ঠের নিম্নচাপ মূখ্য
ভূমিকা রাখে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এই নিম্নচাপের সৃষ্টি করে।
সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা কমপক্ষে ২৬-২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস-এ উন্নীত হলে এবং তা
সমুদ্রের উপরিতল থেকে প্রায় ৫০ মিটার তা বজায় থাকলে, সাইক্লোন তৈরির ক্ষেত্র তৈরি
হয়। এই সময় এই অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণ আর্দ্র বায়ু উপরে দিকে উঠে যায়। আর এই
শূন্য স্থান পূর্ণ করার জন্য উভয় মেরু অঞ্চল থেকে বাতাস নিরক্ষরেখার দিকে প্রবাহিত হয়।
কিন্তু পৃথিবীর ঘূর্ণনের প্রভাবে সৃষ্ট
কোরিওলিস শক্তির (coriolis force) কারণে, এ বায়ু সোজাসুজি প্রবাহিত না হয়ে উত্তর
গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়। এর ফলে উত্তর গোলার্ধে সৃষ্ট
বায়ু প্রবাহ ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে
বায়ু ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরতে থাকে। নিরক্ষরেখার উপর এ শক্তির প্রভাব শূন্য। কাজেই, এ
অঞ্চলের তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড়
সৃষ্টির অনুকূলে থাকলেও
নিরক্ষরেখার ০ ডিগ্রী থেকে ৫ ডিগ্রীর মধ্যে কোন ঘূর্ণিঝড় হতে দেখা যায় না।
সাধারণত, নিরক্ষরেখার ১০ ডিগ্রী থেকে ৩০ ডিগ্রীর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়।
সাইক্লোনের কেন্দ্রস্থলকে চোখ বলা হয়। এই
অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি থাকলেও বাতাসের গতি থাকে ২০-২৫ কিলোমিটার/ঘণ্টার ভিতরে।
কিন্তু এর বাইরে যে ঝড়ো দেওয়াল তৈরি হয়। তাতে ঝড়ের ক্ষমতা অনুসারে বাতাসের গতি
২৫০-৩০০ কিলোমিটার/ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে। এই বাতাসের সাথে থাকে অবিরাম প্রচুর
বৃষ্টিপাত। একই সাথে সমুদ্র থেকে উত্থিত দেওয়াল সদৃশ্য জলোচ্ছ্বাস। এই জলোচ্ছ্বাস
ঝড়ের ক্ষমতা অনুসারে প্রায় ১৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। সমুদ্রের জোয়ারের সময়
জলোচ্ছ্বাস হলে, তা ভয়ঙ্কর রূপ লাভ করে।
সাইক্লোন স্থলভাগে আঘাত না হানা পর্যন্ত ক্রমেই
শক্তিশালী হয়ে অগ্রসর হতে থাকে। স্থলভাগে আঘাত হানার পর অল্প সময়ের ভিতর সাইক্লোন
দুর্বল হয়ে পড়ে। এরপরে জলোচ্ছ্বাস ও ঝড়ের দ্বারা আক্রান্ত স্থানটি একটি বিশাল
বিধ্বংস অঞ্চলে পরিণত হয়।
আবহাওয়া বিজ্ঞানীর পৃথিবীতে সংঘটিত
সাইক্লোন
এলাকাকে ৭টি অঞ্চলে ভাগ করেছেন। এই ভাগগুলো হলো−
-
উত্তর আটলান্টিক
মহাসাগর
-
উত্তর পূব প্রশান্ত
মহাসাগর
-
উত্তর ভারত মহাসাগর
-
দক্ষিণ পশ্চিম প্রশান্ত
মহাসাগর
-
দক্ষিণ পূর্ব
ভারত মহাসাগর
-
দক্ষিণ পশ্চিম ভারত
মহাসাগর
ভারত মহাসাগর এলাকা এবং বাংলাদেশের জন্য ঘূর্ণিঝড়-এর বাতাসের গতির বিচারে দুটি
ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ দুটি হলো−
-
নিম্নচাপ (Depression) :
বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি. থেকে ১১৭ কি.মি.-এর মধ্যে থাকে। ঝড়ের বিচারে
এদের নিম্নচাপকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। ভাগ দুটি হলো−
- সাধারণ ঘূর্ণিঝড় : বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি.-এর নিচে থাকে।
- প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় :
বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি. থেকে ১১৭ কি.মি. পর্যন্ত।
- গভীর নিম্নচাপ (Deep
Depression)
: বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৭ কি.মি.-এর বেশি
হলে। এর ধ্বংস ক্ষমতা আটালান্টিক মহাসাগরীয় হারিকেনের মতো।
পূর্বে বাংলাদেশ তথা উত্তর ভারত মহাসাগর এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হতো না।
আগে আরব সাগর এলাকায় উৎপন্ন ঝড়গুলোকে
A এবং বঙ্গোপসাগরে উৎপন্ন ঝড়গুলোকে
B
অক্ষর দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে এপ্রিল-এর বাংলাদেশে আঘাত
হানা যে ঘূর্ণিঝড়টির নাম ছিল- TC-02B
। এই নামের অর্থ ছিল ১৯৯১ সালে বঙ্গোপসাগরে উৎপন্ন
দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড়। বর্তমানে সাইক্লোনের নাম দেওয়া হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ আঘাত হানা উল্লেখযোগ্য সাইক্লোনের তালিকা
- ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ ১৮ মে। এর নাম আম্পান। এটি ছিল সুপার সাইক্লোন। থাই ভাষায় এর অর্থ -আকাশ। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল, ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ ঘূর্ণিঝড়
আঘাত হেনেছিল।
- ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ ২০ আগষ্ট। নাম ডি্যামু। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে আংশিক আঘাত হেনেছিল।
-
২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ, ২১ মে। এর নাম রোয়ানু। মালদ্বীপের দেওয়া এই নামের অর্থ
'নারকেলের ছোবড়ার দড়ি'। বাংলাদেশের পায়রা বন্দর থেকে ১৩৫ মিটার দূরে এই
ঘূর্ণিঝড়টি উৎপন্ন হয়েছিল। এই বাতাসের গতিবেগ ছিল ১০০ কিলোমিটার/ঘণ্টা। এই
ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৪০,০০০ বসতবাড়ি ও ব্যবসায়িক
প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
-
২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ ২৯ জুলাই। এর নাম কোমেন। জুলাই মাসের ২৫ তারিখে বাংলাদেশের
দক্ষিণাঞ্চলের উপকুলীয় অঞ্চলে সৃষ্টি হয়। ২৮ তারিখ পর্যন্ত ঘূর্ণি ঝড়টি প্রায়
স্থির অবস্থানে থেকে শক্তিশালী হয়ে উঠে। ২৯ তারিখ দুপুর ২-৩টার ভিতরে
ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রামের উপকূলীয় অংশে আঘাত হানে। ৩১ তারিখে এই ঘূর্ণিঝড়টি
ভারতের পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যে দূর্বল অবস্থায় প্রবেশ করে এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্যে এর
পরিসমাপ্তি ঘটে।
- ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ
১৩মে-১৬। এর নাম মহাসেন। এর অন্যনাম ভিয়ারু।
বাংলাদেশের
উপকূলে আঘাত হানে। বাতসের গতিবেগ ছিল ৯৫ কিলোমিটার/ঘণ্টা।
- ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের
২৭ মে। এর নাম আইলা। বাংলাদেশ ও ভারতে আঘাত হানে। এ ঝড়ে ৩৩০ জন
মারা গেলেও সাড়ে আট হাজারের বেশি মানুষ নিখোঁজ হয়। বাড়িঘর থেকে স্থানচ্যুত
হয় ১০ লাখের বেশি মানুষ। আইলা পরবর্তী দুর্যোগে সাত হাজারের বেশি মানুষ
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। বিশুদ্ধ পানির ঘাটতি দেখা দেয়। সম্পদের ক্ষতি
হয়েছিল ৫৫ কোটি ২৬ লাখ ডলারের। সম্পদের ক্ষতি থেকে দেশকে রক্ষা করা যায় নি।
- ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দ
২৭ এপ্রিল-৩ মে। এর নাম ছিল নার্গিস। মায়ানমার উপকূলে আঘাত হানে। তবে বাংলাদেশ,
ভারত, শ্রীলঙ্কাও এই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বাতাসের গতি ছিল ২১৫ কিলোমিটার/ঘণ্টা।
মায়ানমারে প্রায় ১ লক্ষ ৩৮ হাজার লোক মারা যায়।
- ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ
১৫-১৬ নভেম্বর। এর নাম ছিল সিডর। ২৬০ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হওয়া এই ঝড়টি মধ্য
বঙ্গোপসাগরে হঠাৎ উত্থিত হয়েই শক্তিশালী হয়ে পড়ে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার
মানুষ এ ঝড়ে মারা যান। সেভ দ্য চিলড্রেন ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির
পরিসংখ্যান মতে মৃতের সংখ্যা পাঁচ থেকে ১০ হাজারের মধ্যে ছিল। ২০০৭
খ্রিষ্টাব্দে ৯ নভেম্বর আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে একটি দুর্বল
ঘূর্ণনের ফলে এটির সৃষ্টি হলেও পরে তা প্রবলশক্তি সঞ্চয় করে ১৫ নভেম্বর
বাংলাদেশের সুন্দরবন, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট এলাকায় প্রবল বেগে আঘাত হানে।
- ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দ
১৯-২২ মে। খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালীতে আঘাত হানে।
বাতাসের গতি ছিল ২.৪৪
কিলোমিটার/ঘণ্টা। ২.৪৪ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল।
- ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দ
১৬-২০ মে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও নোয়াখালীতে আঘাত হানে।
বাতাসের গতি ছিল ১৫০
কিলোমিটার/ঘণ্টা। ১.৮৩-২.৪৪ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল।
- ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দ
২৫-২৭
সেপ্টেম্বর।
চট্টগ্রামে ঝড়ে প্রায় দেড় লাখ মানুষ মারা যায় এবং গবাদি পশু মারা যায়
প্রায় ৭০ হাজার। সব মিলিয়ে এ ঝড়ে ৬০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতি হয়েছিল।
- ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দ
১৬-
১৯ মে।
উপকূলীয় দ্বীপসমূহে আঘাত হানে। বাতাসের গতি ছিল ২২৫ কিলোমিটার/ঘণ্টা। ৩ মিটার
উঁচু জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল। ১২৬ জন মানুষ মারা যায়।
- ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দ
২১-২৫ নভেম্বর:
কক্সবাজার উপকূলে আঘাত করে ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার/ঘণ্টা বেগে। এ
ঝড়ে মারা গিয়েছিল ৬৫০ জন মানুষ।
- ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দ ২৯ এপ্রিল- ৩ মে : কক্সবাজার উপকূলে আঘাত করে ঘণ্টায় ২১০
কিলোমিটার/ঘণ্টা বেগে। এ ঝড়ে মারা গিয়েছিল ৪০০ মানুষ।
- ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ
৩১ মে-২ জুন : পটুয়াখালী, বরিশাল, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম উপকূলীয় স্থলভাগে
আঘাত করে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার/ঘণ্টা বেগে। জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ১,৯
মিটার।
- ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ ২৯-৩০ এপ্রিল:
এর নাম ছিল সাইক্লোন 02B।
ঝড়ের গতিবেগ ছিল
ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার/ঘণ্টা। তবে এনওএএ-১১ নামক স্যাটেলাইটের রেকর্ড থেকে বলা
হয়েছিল ঝড়টির গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার। এটি ভারত মহাসাগর থেকে
উত্থিত হয় এবং ২০ দিন পর বঙ্গোপসাগরে এসে পৌঁছায় এবং চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত
হানে। ঝড়টি ৬০০ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে আবর্তিত হয়। উপকূলীয় এলাকায় পাঁচ
থেকে আট মিটার উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হয়ে তলিয়ে গিয়েছিল ফসলের মাঠ, ভাসিয়ে
নিয়ে গিয়েছিল ঘর, গাছপালা ও পশুপাখি।
প্রায় এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোক নিহত
হয়েছিল এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল।
- ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দ
২৪-৩০ নভেম্বর : যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, বরিশাল ও খুলনার উপকূলীয়
দ্বীপাঞ্চলে ১৬২ কিলোমিটার/ঘণ্টা বেগে সংঘটিত ঝড়ে পাঁচ হাজার ৭০৮ জন মারা গিয়েছিল।
জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল প্রায় ৪.৫ মিটার। এ ঝড়ে সুন্দরবনে ১৫ হাজার হরিণ ও ৯টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার মারা গিয়েছিল।
গবাদিপশু মারা যায় ৬৫ হাজার ও সম্পদের ক্ষতি হয় ৯৪১ কোটি টাকার।
- ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দ
৮-৯ নভেম্বর : উপকূলীয় দ্বীপাঞ্চল ও চর এবং চট্টগ্রাম, বরিশাল, পটুয়াখালী ও
নোয়াখালী জেলার ওপর দিয়ে এ দুই দিনে ১১০ কিলোমিটার/ঘণ্টা বেগে এবং খুলনায় ৯০
কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যায়। এ ঝড়ে ১৪ জন মারা গেলেও ৯৭২ বর্গ কিলোমিটার
ধানের ক্ষেত ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
- ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দ
২৪-২৫ মে
:
চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজারের সন্দ্বীপ, হাতিয়া, উড়িরচরে ঝড়টি হয়।
চট্টগ্রামে ১৫৪ কিলোমিটার/ঘণ্টা বেগে, সন্দ্বীপে ১৪০ কিলোমিটার/ঘণ্টা, কক্সবাজারে ১০০
কিলোমিটার/ঘণ্টা বেগে ঝড় হয়। ৩ থেকে ৬ মিটার উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসে সম্পদের ক্ষতির
সঙ্গে মানুষ মারা যায় ১১ হাজার ৬৯ জন, এক লাখ ৩৬ হাজার গবাদিপশুও মারা যায়।
- ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দ
৫-৯ নভেম্বর : চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, সেন্টমার্টিন, টেকনাফ,
উখিয়া, সোনাদিয়া, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী জেলার ওপর দিয়ে ১৩৬
কিলোমিটার/ঘণ্টা বেগে ঝড়টি বয়ে যায়। জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ১.৫২ মিটার। মানুষ মারা যায় ৩০০।
- ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দ
: ১৪-১৫ অক্টোবর : চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে। বাতাসের
গতি ছিল ১২২ কিলোমিটার/ঘণ্টা। মৃত্যু হয়েছিল ১৫০ জন।
- ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দ ৯-১২ মে:
খুলনা, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, বরিশাল ও চট্টগ্রামে আঘাত হানে। বাতাসের গতি ছিল
প্রায় ১১৩ কিলোমিটার/ঘণ্টা। ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত বিবরণ জানা যায় নাই।
- ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দ ৯-১২ মে: ভোলা,
কক্সবাজার ও খুলনায় আঘাত হানে। বাতাসের গতি ছিল প্রায় ৯৬-১১২ কিলোমিটার/ঘণ্টা।
প্রায় ১০ জন লোক মারা যায়।
- ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দ ২৪-২৮ নভেম্বর:
কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে আঘাত হানে। বাতাসের গতি ছিল প্রায় ১৬১ কিলোমিটার/ঘণ্টা।
জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ৩-৫ মিটার। প্রায় ২০০ লোক মারা যায়।
- ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দ ১৩-১৫ আগষ্ট: খুলনায়
আঘাত হানে। বাতাসের গতি ছিল প্রায় ৮৫.৪ কিলোমিটার.ঘণ্টা। প্রায় ৬০০ লোক মারা
যায়।
- ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ৫-৬ ডিসেম্বর :
সুন্দরবন অঞ্চলের আঘাত হানে। জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা
যায় নি।
- ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৮-৩০ নভেম্বর :
সুন্দরবন অঞ্চলের আঘাত হানে। বাতাসের গতি ছিল ৯৭-১১৩ কিলোমিটার/ঘণ্টা।
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায় নি।
- ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৫-৬ নভেম্বর :
চট্টগ্রামে আঘাত হানে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায় নি।
- ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৭-১৩ নভেম্বর :
একে বলা হয় গ্রেড ভোলা সাইক্লোন। প্রাণহানি ঘটেছিল ৫ লক্ষ।
চট্টগ্রাম, ভোলা,
চরফ্যাসন, মনপুরা, সন্দ্বীপ, বরগুনা, খেপুপাড়া, পটুয়াখালী, বোরহানুদ্দিন, চর
তজুমদ্দিন, দক্ষিণ মাঈজদী, হারিয়াঘাটা এলাকার ওপর দিয়ে এ সময় ২০৫ কিলোমিটার/ঘণ্টা
বেগে ঝড় হয়েছিল। জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল প্রায় ১০.৫ মিটার। ২০ হাজার জেলে নৌকা নিখোঁজ হয়েছিল। ১০ লক্ষাধিক গবাদিপশু
মারা গিয়েছিল অথবা হারিয়ে গিয়েছিল জলোচ্ছ্বাসে। বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছিল চার
লাখের বেশি। এ ঝড়পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলা, ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সহায়তা
অপ্রতুলতা ইত্যাদি নিয়ে তখন পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছিল।
- ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দ
১
অক্টোবর : সন্দ্বীপ, বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা জেলার
ওপর দিয়ে ১৪৬ কিলোমিটার/ঘণ্টা বেগে ঝড়টি বয়ে যায়। জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল পাঁচ থেকে ৯
মিটার উচ্চতায়। মারা গিয়েছিল ৮৫০ জন এবং গবাদিপশু মারা যায় প্রায় ৬৫ হাজার।
- ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দের
১৪-১৫ ডিসেম্বর : কক্সবাজার এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে আঘাত হানে। বাতাসের গতি ছিল
২১০ কিলোমিটার/ঘণ্টা।
জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল প্রায় ৬ মিটার। প্রায় ৯০০ মানুষ মারা যায়।
- ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দের
১১-১২ মে : বরিশাল, পটুয়াখালী জেলায় আঘাত হানে। বাতাসের গতি ছিল ১৬২
কিলোমিটার/ঘণ্টা। প্রায় ২০ হাজার মানুষ মারা যায়।
- ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দ
২৮-২৯ মে:
চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার, সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, হাতিয়া, মহেশখালী
আঘাত হানে । বাতাসের গতি ছিল ২০৩ কিলোমিটার/ঘণ্টা।
জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল প্রায় ৫ মিটার। প্রায় ১২ হাজার মানুষ মারা যায়।
৩২ হাজারের বেশি গবাদিপশু
মারা যায় তখন।
প্রায় ৫ হাজার বিভিন্ন ধরনের নৌযান ডুবে গিয়েছিল।
- ১৯৬২ ২৬-৩০ অক্টোবর
: ফেনী জেলায় ১৬১ কিলোমিটার/ঘণ্টা বেগে বয়ে যাওয়া ঝড়ে মারা যায় এক হাজার জন।
- ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দ ৯
মে : বাগেরহাট, খুলনা জেলায় ১৬১ কিলোমিটার/ঘণ্টা বেগে ঝড় হয় এবং মারা যায় ১১
হাজার ৪৬৮ জন। নোয়াখালী ও হরিয়ানাপুর পর্যন্ত রেলওয়ে লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা হয়েছিল প্রায় ৩ মিটার।
- ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ
৩০-৩১ অক্টোবর :
২১০ কিলোমিটার/ঘণ্টা বেগে সংঘটিত ঝড়ে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী,
বাকেরগঞ্জ, ফরিদপুর ও পটুয়াখালী জেলায় ১০ হাজার মানুষ মারা যান। এই ঝড়ে প্রায়
৬ মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল। গবাদিপশু
মারা যায় ২৭ হাজার ৭৯৩, পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়, যার ৭০ শতাংশই
হাতিয়ায়। দু’টি বড় সাগরগামী জাহাজ উপকূলে উঠে পড়ে ও পাঁচ-ছয়টি লাইটারেজ
জাহাজ কর্ণফুলীতে ডুবে যায়।
- ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ
৮-৯ অক্টোবর : মেঘনা নদীর খাড়ি অঞ্চল ও নোয়াখালী, বাকেরগঞ্জ, ফরিদপুর,
পটুয়াখালী অঞ্চলের তিন হাজার মানুষ মারা যান। ঝড়ের বেগ ছিল ২০১ কিলোমিটার/ঘণ্টা।
এই ঝড়ের প্রভাবে ৩.০৫ মিটার জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল। ৬২ হাজার ৭২৫টি বাড়িঘরের ক্ষতি হয়।
আর প্রায় ৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
- ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দ
২১-২৪ অক্টোবর: চট্টগ্রামে আঘাত হানে। নিহতের সংখ্যা জানা যায় নি। তবে এই ঝড়ে
লক্ষাধিক লোক গৃহহীন হয়ে পড়েছিল।
- ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দ
১৬-১৯ অক্টোবর: মেঘনা মোহনার পূর্ব ও পশ্চিমাংশ এবং বরিশালের পূর্বাঞ্চল ও
নোয়াখালীতে আঘাত হানে। জলোচ্ছ্বাস ও ঝড়ে প্রায় ৯০০ মানুষের মৃত্যু হয়।
- ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ
১৭-১৯ মে: চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে আঘাত হানে। প্রায় ১২০০ মানুষের মৃত্যু হয়।
- ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দ
অক্টোবর: খুলনা এবং সুন্দরবন অঞ্চলে আঘাত হানে। বহু বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়।
- ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ
মে: মেঘনা মোহনা এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চল প্লাবিত। ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ পাওয়া যায় নাই।
- ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দ
২৪ সেপ্টেম্বর : খুলনায় আঘাত হানে। প্রায় ৫০০ জনের মৃত্যু হয়।
- ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দ
১৬ অক্টোবর: খুলনার নিম্নাঞ্চল অঞ্চল প্লাবিত হয়। প্রায় ৭০০ জনের মৃত্যু হয়।
- ১৯০৪ খ্রিষ্টাবব্দ
নভেম্বর: সোনাদিয়া-তে আঘাত হানে। ১৪৩ জনের মৃত্যু হয় এবং বহু জেলে নৌকা ধ্বংস
হয়ে যায়।
- ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দ
মে : টেকনাফে আঘাত হানে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায় নাই।
- ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দ নভেম্বর : চট্টগ্রাম,
মহেশখালী ও কুতুবদিয়া ঝড়টি আঘাত হেনেছিল। চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি জাহাজ ডুবে
যায়। সাইক্লোন এবং এরপরের মহামারীতে প্রায় ১ লক্ষ ৭৫ হাজার লোকের মৃত্যু হয়।
- ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দ: বরিশাল,
চট্টগ্রাম, মেঘনা মোহনা, নোয়াখালী প্লাবিত হয়। এই ঝড়ে প্রায় ১২.২ মিটার (৪০
ফুট) জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল। প্রায় ২ লক্ষ লোক নিহত হয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় এক
লক্ষ লোক মারা গিয়েছিল, সাইক্লোনের পরে দুর্ভিক্ষ ও মহামারীতে।
- ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দ অক্টোবর। কক্সবাজারে
ঝড়টি আঘাত হানে। ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ পাওয়া যায় নাই।
- ১৮৩১ অক্টোবর: বরিশাল অঞ্চল প্লাবিত
হয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায় নাই।
- ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দ মে: বরিশাল, হাতিয়া
দ্বীপ এবং নোয়াখালিতে আঘাত হানে। ৪০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
- ১৭৯৭ খ্রিষ্টাব্দ নভেম্বর : মৃত্যুর
সংখ্যা ১ লক্ষ ৭৫ হাজার। চট্টগ্রামে ঝড়টি আঘাত হেনেছিল। চট্টগ্রাম বন্দরে
দুটি জাহাজ ডুবে যায়।
- ১৭৩৭ খ্রিষ্টাব্দ: হুগলি রিভার
সাইক্লোন মৃতের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৫০ হাজার)।
- ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দ : বরিশাল ও পটুয়াখালি
অঞ্চলে সাইক্লোন আঘাত হানে। বাতাসের গতিবেগ ছিল ১১৭ ঘণ্টা/কিলোমিটার। প্রবল
জলোচ্ছ্বাসে স্থানীয় প্রায় সকল স্থান প্লাবিত হয়েছিল। প্রাণহানি হয়েছিল ২ লক্ষ।
সূত্র :
http://www.merriam-webster.com/dictionary/cyclone
http://www.primekhobor.com/details.php?id=23163
http://en.wikipedia.org/wiki/Cyclone