ঘূর্ণিঝড়
সমার্থক বাংলা শব্দ : ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন।
ঘূর্ণায়মান ঝড় বিশেষ। এই ঝড়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো−
বাতাস একটি কেন্দ্র তৈরি করে প্রবল বেগে আবর্তিত হয়। এর ফলে সৃষ্ট ঝড়কেই সাধারণভাবে
ঘূর্ণিঝড় নামে অভিহিত করা হয়। কোনো অঞ্চলের বাতাস অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে
উঠলে, ওই অঞ্চলের বাতাস উষ্ণ এবং আর্দ্র অবস্থায় উপরের দিকে উঠে যায়। ফলে ওই স্থানে
বায়ুর শূন্যতার সৃষ্টি। এই শূন্যস্থান পূর্ণের জন্য পার্শ্বর্তী অঞ্চল থেকে শীতল
বাতাস ছুটে আসে। এর ফলে ওই অঞ্চলে একটি বায়ুর ঘূর্ণি তৈরি হয়।
এই বিচারে পৃথিবী এবং বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহেও ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। নেপচুনের এই জাতীয়
ঝড়কে বলা হয় জাদুকরের চোখ
(Wizard's Eye)।
মঙ্গল গ্রহের ঘূর্ণিঝড়কে 'গ্রেট রেড স্পট' বলা হয়। পৃথিবীতে এই ঝড়ের ঘূর্ণন-দিক
গোলার্ধের বিচারে দুই রকম হয়। এই জাতীয় ঘটনা
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সারা বৎসরেই ঘটে। কিন্তু তার অধিকাংশই ঝড়ে পরিণত হয় না।
ঘূর্ণিবায়ুর কেন্দ্রের দেয়াল বরবার যখন বাতাসের গতির যখন ২৫-থেকে বেশি থাকে তখন
তাকে ঝড়ের সৃষ্টি হয়।
কোনো স্থানে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আগে, যখন বাতাস উত্তপ্ত ও আর্দ্র অবস্থায় উপরে দিকে উঠে যায়, তখন উপরের শীতল হয়ে ঘূর্ণায়মান মেঘে পরিণত হয়। এই মেঘকে বলা হয় ঝড়মেঘ (Cumulonimbus cloud)। কোনো অঞ্চলে পর্যাপ্ত বায়ু ঊর্ধমুখে প্রবাহিত হলেও, ঘূর্ণিবায়ু যথেষ্ঠ শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে না। ফলে আকাশের অগ্নিগর্ভ মেঘ জমলেও ভূমির বায়ুস্তরের সাথে তার সংযোগ সৃষ্টি হয় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বে ঝড়মেঘে জলীয় বাষ্পের সাথে ভূপৃষ্ঠের একটি সংযোগ চোঙার জন্ম হয়। এই চোঙা দিয়ে প্রচুর ধূলিকণা মেঘে জমা হতে থাকে। ফলে এই মেঘ থেকে বজ্রবৃষ্টি ততটা হয় না।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রকৃতি নির্ভর করে এর সাথে সম্পর্কিত মেঘ, ভৌগোলিক অবস্থান এবং পার্শবর্তী অঞ্চল থেকে আগত বায়ু প্রবাহের প্রকৃতি। এই বিষয়গুলোর বিচারে ঘূর্ণঝড়কে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ তিনটি হলো−
সাধারণ ঘূর্ণিঝড়
(Gustnado)
কোনো স্থানের বাতাস যখন উত্তপ্ত আর্দ্র হয়ে উপরে দিকে উঠে যায়, তখন উপরের শীতল
হয়ে ঘূর্ণায়মান মেঘে পরিণত হয়। এই মেঘকে বলা হয় ঝড়োমেঘ (Cumulonimbus
cloud)। কোনো অঞ্চলে
পর্যাপ্ত বায়ু ঊর্ধমুখে প্রবাহিত হলেও, ঘূর্ণিবায়ু যথেষ্ঠ শক্তিশালী হয়ে উঠতে
পারে না। ফলে আকাশের অগ্নিগর্ভ মেঘ জমলেও ভূমির বায়ুস্তরের সাথে তার সংযোগ
সৃষ্টি হয় না। তাছাড়া মেরু অঞ্চলের বায়ু প্রবাহের দ্বারা সৃষ্ট করিওলিস শক্তি
(coriolis force)
থেকে মুক্ত থাকে। ফলে এই ঘূর্ণিবায়ু কোনো ক্ষুদ্র অংশের উপর প্রবল বেগে আবর্তিত
হতে থেকে। ভূমি সংলগ্ন গাছপালা, ঘড়বাড়ি, পাহাড়-টিলা ইত্যাদির দ্বারা
বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সময় অগ্নিগর্ভমেঘ থেকে বজ্রসহ বৃষ্টি
হওয়ার কারণে ওই স্থানের বাতাস শীতল ও ভারি হয়ে পড়ে। ফলে কয়েক ঘণ্টার ভিতর এই ঝড়
থেমে যায়। কিন্তু এই সামান্য সময়ের ভিতরে একটি ক্ষুদ্র ব্যাসের ভিতর ব্যাপক
ক্ষতি করে।
২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে সংঘটিত টর্নেডো |
টর্নেডো
(tornado)
স্প্যানিশ শব্দ
tronada (বজ্রসম্পন্ন
ঝড়)
শব্দ থেকে ইংরেজি ভাষায়
tornado
শব্দটি যুক্ত হয়েছে। বাংলা টর্নেডো এসেছে
ইংরেজি থেকে।
ঘূর্ণায়মান বায়ু প্রবাহের শুরুতে উত্তপ্ত এবং আর্দ্র বাতাস উপরে উঠে গিয়ে
অগ্নিগর্ভমেঘ মেঘের সৃষ্টি করে। এই মেঘের একটি সরু অংশ ভূমি সংলগ্ন হয়ে ঘুরতে
থাকে। ঘূর্ণায়মান এই অংশটি একটি সরু চোঙার মতো মনে হয়। এই চোঙাযুক্ত মেঘকে বলা
হয় চোঙাকৃতির মেঘ (funnel cloud।
এই চোঙা অংশটি ঘুরতে ঘুরতে অগ্রসর হয়। এর ফলে যে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়, তাকে
টর্নেডো বলা হয়। টর্নেডোর প্রকৃতি অনুসারে বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১০০-৪৮০
কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। বাংলাদেশে এই জাতীয় ঘূর্ণিঝর খুব বেশি দেখা
যায় না। প্রকৃত টর্নেডো দেখা যায় এন্টার্কটিকা মহাদেশে এবং মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রে।...
বিস্তারিত
১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের সাইক্লোন 02B -এর ২৯ এপ্রিল, উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি। |
নিম্নচাপজাত ঘূর্ণিঝড় (Depression)
নিম্নচাপের কারণে এই জাতীয় ঘূর্ণিঝড়ের
উৎপত্তি হয়। এই জাতীয় ঘূর্ণিঝড়কে সাধারণভাবে বলা হয় সাইক্লোন।
ইংরেজি
Cyclone। গ্রিক
kyklos
শব্দের অর্থ হলো বৃ্ত্ত। এই শব্দটি থেকে উৎপন্ন
শব্দ হলো kykloun।
এর অর্থ হলো- আবর্তিত হওয়া। এই শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে তৈরি হয়েছে
kyklōma
। এই শব্দের অর্থ হলো- চক্র বা কুণ্ডলিত। ১৮৪৮
খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ-ভারতীয় আবহাওয়াবিদ হেনরী পিডিংটন তাঁর সামুদ্রিক দুর্যোগ
বিষয়ক গ্রন্থ,
The Sailor's Horn-book for the Law of Storms-এতে
Cyclone
শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। বাংলায় সাইক্লোন শব্দটি গৃহীত হয়েছে
ইংরেজি থেকে।
এই জাতীয় ঘূর্ণিঝড়কে সাধারণভাবে বলা হয় সাইক্লোন বলা
হলেও, অনেকদিন থেকে আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে সাইক্লোনকে তিনটি বিশেষ নামে চিহ্নিত
করা হয়।