ক্রিয়াপদ
Verb
বাংলা ব্যাকরণে প্রথগত পদ-প্রকরণের একটি পদ।
বাক্যের যে সকল শব্দ দ্বারা কোনো কাজ করা বুঝায়, তাকেই ক্রিয়াপদ হিসেবে অভিহিত করা
হয়। এর অপর নাম ধাতু।
বাংলা ভাষার প্রতিটি ক্রিয়াপদ গঠিত হয়-
ক্রিয়ামূল ও ক্রিয়া বিভক্তি
(বিভক্তি)-এর সমন্বয়ে।
ক্রিয়ামূল
থেকে ক্রিয়াপদ তৈরির ক্ষেত্রে
ক্রিয়ামূলের গণ এবং
কাল-পুরুষ-সাধু/চলিত রীতির অভিন্ন সূত্রঅনুসৃত হয়। যেমন,
'
পড়্ একটি
ক্রিয়ামূল। এর সঙ্গে উত্তম পুরুষ ও সাধারণ
বর্তমান কাল অনুযায়ী ‘ই’' প্রত্যয় যুক্ত হয়ে গঠিত হয় ‘পড়ি’ ক্রিয়াপদটি। আবার' মধ্যম
পুরুষের জন্য হবে ‘পড়ো’। নাম পুরুষের জন্য হবে ‘পড়ে’। আবার উত্তম পুরুষের জন্য
ঘটমান বর্তমান কালের জন্য হবে ‘পড়ছি’। সাধারণ অতীত কালের জন্য হবে ‘পড়েছি’।
ক্রিয়া পদ বাক্যের অপরিহার্য অঙ্গ। শুধু ক্রিয়াপদ নিয়ে একটি বাক্য গঠিত হতে পারে। কিন্তু ক্রিয়া পদ ছাড়া কোন বাক্য গঠিত হতে পারে না। তবে মাঝে মাঝে অনেক বাক্যের ক্রিয়াপদটি উহ্য থাকে। যেমন- ‘রমেশ আমার ভাই (হয়)।’ এই বাক্যে ‘হয়’ ক্রিয়াটি উহ্য থাকে, এটি না লিখলেও সবাই বুঝতে পারে। আর তাই এটি লেখাও হয় না।
সামগ্রিকভাবে উৎপন্নের বিচারে ক্রিয়াপদকে ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-
- সিদ্ধ ক্রিয়ামূল-জাত:
এই ক্রিয়াপদ তৈরি হয়
ক্রিয়ামূল ও ক্রিয়া বিভক্তি
(বিভক্তি)-এর সমন্বয়ে।
এই
ক্রিয়ামূল
থেকে ক্রিয়াপদ তৈরির ক্ষেত্রে
ক্রিয়ামূলের গণ এবং
কাল-পুরুষ-সাধু/চলিত রীতির অভিন্ন সূত্র অনুসৃত হয়।
- প্রযোজক ক্রিয়ামূল-জাত:
যখন কোনো শব্দ থেকে উৎপন্ন ক্রিয়ামূল উৎপন্ন হয় এবং এর এই
ক্রিয়ামূল থেকে উৎপন্ন ক্রিয়াপদ কোনো প্রযোজকের দ্বারা
সাধিত হয়।
- নামধাতু-জাত
কোন বিশেষ শব্দ যখন একটি ক্রিয়ামূল হিসাবে নির্ধারিত হয় এবং সাথে
ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত করে একটি ক্রিয়াপদ তৈরি করা হয়।
- সমধাতুজ ক্রিয়াপদ:
বাক্যের ক্রিয়াপদ ও কর্মপদ যদি একই ধাতু বা ক্রিয়ামূল থেকে গঠিত হয়, তবে তাকে
সমধাতুজ কর্মপদ বলে।
ভাব প্রকাশের দিক দিয়ে ক্রিয়াপদকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ দুটি হলো-
- সমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়াপদ বাক্যকে পরিপূর্ণ করে এবং বাক্যের অর্থকে সুস্পষ্ট করে। একটি বাক্যে একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকতেই হয়। এবং একটি বাক্যে একটার বেশি সমাপিকা ক্রিয়া থাকতে পারে না।
যেমন-
- অসমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়াপদ দ্বারা বাক্যের পরিসমাপ্তি ঘটে না, বক্তার কথা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
অসমাপিকা ক্রিয়া ব্যবহারের পরও বাক্যে সমাপিকা ক্রিয়া ব্যবহার করতে হয়। শুধু
অসমাপিকা ক্রিয়া দিয়ে বাক্য গঠিত হয় না। একটি বাক্যে যতোগুলো ইচ্ছা অসমাপিকা
ক্রিয়া ব্যবহার করা যায়। কিন্তু একটি সমাপিকা ক্রিয়া আনতেই হয়। সাধারণত অসমাপিকা ক্রিয়ার শেষে ইয়া, ইলে, ইতে, এ, লে, তে বিভক্তিগুলো যুক্ত থাকে। যেমন-
- ছেলেরা ফুটবল খেলে বাড়ি ফিরছে। এখানে 'ছেলেরা ফুটবল খেলে'- বাক্যটির
শেষ হয় না। এই জন্য 'খেলে শব্দটি অসমাপিকা ক্রিয়া। এরপরে ব্যবহৃত হয়েছে-
বাড়ি ফিরছে।
কর্মের উপর ভিত্তি
ক্রিয়াপদকে বিশেষভাবে বিভাজিত করা হয়। এক্ষেত্রে কর্মপদকে প্রাধান্য হয়। উল্লেখ্য,
যে পদকে আশ্রয় করে ক্রিয়া পদ তার কাজ সম্পাদন বা সংঘটন করে, তাকে কর্ম পদ বলে। অর্থাৎ,
ক্রিয়া পদ কাজ করার জন্য যেই পদকে ব্যবহার করে, তাকে কর্ম পদ বলে। এ সব বিবেচনায়
ক্রিয়াপদকে ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়-
- অকর্মক ক্রিয়া: যে বাক্যে একটিও কর্মপদ থাকে না।
- সকর্মক ক্রিয়া: যে বাক্যে একটি কর্মপদ থাকে।
- দ্বিকর্মক ক্রিয়া: যে বাক্যে দুটি কর্মপদ থাকে।
ক্রিয়াপদের অবস্থানের
- যৌগিক ক্রিয়া: একটি সমাপিকা
ক্রিয়া ও একটি অসমাপিকা ক্রিয়া পাশাপাশি বসে যদি কোন বিশেষ বা সম্প্রসারিত অর্থ
প্রকাশ করে, তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। অর্থাৎ, একটি সমাপিকা ও একটি অসমাপিকা
ক্রিয়া মিলে যদি তাদের সাধারণ অর্থ প্রকাশ না করে কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে,
তখন তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। যেমন- ঘটনাটা শুনে রাখ।
- মিশ্র ক্রিয়া: বিশেষ্য, বিশেষণ ও
ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে কর্, হ্, দে, পা, যা, কাট্, গা, ছাড়্, ধর্, মার্,
প্রভৃতি ধাতু যোগ হয়ে ক্রিয়াপদ গঠন করে কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করলে তাকে মিশ্র
ক্রিয়া বলে।