ক্রিয়ামূল
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{ক্রিয়ামূল |
ব্যাকরণগত শ্রেণি |
সমধর্মী সংকলন |
সংকলন |
দল |
বিমূর্তন |
বিমূর্ত-সত্তা |
শব্দার্থের বিচারে 'ক্রিয়াপদের মূল', বা ক্রিয়া-প্রকাশক ধ্বনি-একক। এই মূল থেকে ক্রিয়াপদ ছাড়াও অন্যান্য
পদের উৎপত্তি হয়ে থাকে। যেমন
—
উপরের উদাহরণের যে ক্রিয়ামূলগুলো ব্যবহার করা হয়েছ, তার প্রতিটিই ক্রিয়াশীল ভাব ধারণ করে আছে।
এই কারণেই এগুলোকে ক্রিয়ামূল বলা হয়। ব্যাকরণে এর অপর নাম
ধাতু। এই শব্দের রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ হলো-
√ধা (ধারণ করা) +
তু
ব্যাকরণ কৌমুদী মতে যে প্রকৃতি দ্বারা ক্রিয়া বুঝায়, তাহাকে ধাতু
(Verbal Root)
বলে।
(ভূবাদয়ো ধাতবঃ)। এখানে প্রকৃতি বলতে বুঝানো হয়েছে— অর্থবোধক ধ্বনিমূল।
বাংলা ব্যাকরণে ক্রিয়ামূল ও ধাতু সমার্থ বলে— উভয় পরিভাষাই ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ক্রিয়ামূলের গাঠনিক
শ্রেণিবিন্যাস
ক্রিয়ামূল হলো শব্দের গাঠনিক মৌলিক উপাদান
হিসেবে কাজ করে। কিন্তু এই উপাদন সব সময় আদ্য উপাদান হিসেবে নাও থাকতে পারে। গাঠনিক
বৈশিষ্ট্যের বিচারে ক্রিয়ামূলকে ৪টি ভাগে ভাগ করা যায়। ভাগগুলো হলো
১.সিদ্ধ ক্রিয়ামূল বা সিদ্ধ ধাতু
(Primary Root):
যে সকল ক্রিয়ামূল বিশ্লেষণ করে নূতন কোন ক্রিয়ামূল পাওয়া যায় না। যেমন—
কর্, চল্, খা, কিন্ ইত্যাদি।
২. সাধিত ক্রিয়ামূল (Derivative Root/Secondary):
যে সকল ক্রিয়ামূল অন্য ক্রিয়ামূল থেকে প্রত্যয়যোগে সৃষ্টি হয়। এই জাতীয় ক্রিয়ামূল
যে সকল প্রত্যয়ের সূত্রে তৈরি হয়ে থাকে- তার নামেই এরা পরিচিত হয়ে থাকে। যেমন
—
৩. শব্দান্তর ক্রিয়ামূল: এই জাতীয় ক্রিয়ামূল
শব্দ থেকে উৎপন্ন হয়। শব্দের প্রকৃতি অনুসারে একে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
- নাম-ধাতু: কোন বিশেষ শব্দ যখন একটি ক্রিয়ামূল হিসাবে নির্ধারিত
হয় এবং সাথে ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত করে একটি ক্রিয়াপদ তৈরি করা হয়। যেমন―
মূল শব্দ আরম্ভ>ক্রিয়ামূল
√
আরম্ভ্
+ইল= আরম্ভিল (ক্রিয়াপদ)
[দেখুন: নামধাতু]
-
প্রযোজক ক্রিয়ামূল:
যখন কোনো শব্দ থেকে উৎপন্ন ক্রিয়ামূল উৎপন্ন হয় এবং এর এই
ক্রিয়ামূল থেকে উৎপন্ন ক্রিয়াপদ কোনো প্রযোজকের দ্বারা
সাধিত হয়। যেমন- আমি পড়াই। এখানে 'আমি' প্রযোজক। 'আমি'
পড়ানোর কাজটি করেন, আর পড়ার কাজটি করেন শিক্ষার্থী।
[দেখুন:
প্রযোজক ক্রিয়ামূল]
৪. সংযোজক-মূলক ক্রিয়ামূল
(Compound
):
যখন কোনো শব্দের সাথে কোনো
ক্রিয়ামূল যুক্ত হয়ে একটি ক্রিয়াপদের ভাব ধারণ করে, তখন তাকে সংযোজক-মূলক ক্রিয়ামূল
বলা হয়। যেমন—
সাঁতার √
কাট্।
এই ক্রিয়ামূলজাত ক্রিয়াপদ হতে পারে—
তার কাটে, সাঁতার
কাটলো, সাঁতার কেটেছে ইত্যাদি।
ক্রিয়ামূল থেকে উৎপন্ন যাবতীয় শব্দাবলি
পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, কিছু ক্রিয়াপদ কোনো একটি সুনির্দিষ্ট ক্রিয়ামূল বিশেষ
সূত্র অনুসরণে তৈরি হয়। ক্রিয়াপদের এই সূত্র নির্ভর করে কাল-পুরুষের বিচারে। কাল ও
পুরুষ কি নির্দেশ করে, তার উপর ভিত্তি করে ক্রিয়াবিভক্তি
নির্ধারিত হয়। কিন্তু ক্রিয়াপদ ছাড়া অন্যান্য পদ এরূপ ছকে বাঁধা কোনো সূত্র অনুসরণ
করে না। এই বিচারে ক্রিয়ামূলকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।
এই ভাগ দুটি হলো―
-
ক্রিয়াপদ উৎপাদক
ক্রিয়ামূল : যে সকল ক্রিয়ামূল থেকে কাল-পুরুষের বিধি অনুসারে ক্রিয়াপদ তৈরি
হয়। উল্লেখ্য, ক্রিয়ামূলের সাথে যখন কোন প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ক্রিয়াপদ পদ তৈরি করে,
তখন পদগুলিকে ক্রিয়া পদ
বলে। যেমন―
√
কর +ই= করি।
এখানে ' করি
শব্দটি ক্রিয়াপদ। আর 'ই'
প্রত্যয়টি হবে ক্রিয়াবিভক্তি।
ক্রিয়াপদ-ভিন্ন শব্দ উৎপাদক ক্রিয়ামূল : যে সকল ক্রিয়ামূল থেকে ক্রিয়াপদ ছাড়া অন্যান্য
শব্দ তৈরি করে। যেমন―
কৃদন্ত পদ :
ক্রিয়ামূলের সাথে যখন কোন প্রত্যয় যুক্ত হয়ে সমাপিকা ক্রিয়াপদ ব্যতীত অন্যান্য
পদ তৈরি করে, তখন পদগুলিকে কৃদন্ত বা কৃদন্ত পদ বলে। যেমন―
√
অংশ্
(ভাগ করা) +
অ (অ)=অংশ
এখানে অংশ শব্দটি কৃদন্ত পদ।
আর
অ
(অ)' প্রত্যয়টি হবে কৃৎপ্রত্যয়।
সূত্র :
-
চলন্তিকা। রাজশেখর
বসু। এমসি সরকার অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিঃ। ১৪০৮।
-
বঙ্গীয় শব্দকোষ
(প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড)। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সাহিত্য অকাদেমী। ২০০১।
-
বাংলা একাডেমী
ব্যবহারিক বাংলা অভিধান। মার্চ ২০০৫।
-
বাঙ্গালা ব্যাকরণ।
শক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। মাওলা ব্রাদার্স। ফাল্গুন ১৩৪২
-
বাঙ্গালা ভাষার অভিধান
(প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড)। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস। সাহিত্য সংসদ। নভেম্বর ২০০০।
-
বাঙ্গালা শব্দকোষ।
যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি। ভূর্জপত্র। দোলযাত্রা ১৩৯৭।
-
ভাষাপ্রকাশ বাঙ্গালা
ব্যাকরণ। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। রূপম। মে ১৯৮৯।
-
শব্দবোধ অভিধান।
আশুতোষ দেব। দেব সাহিত্য কুটির। মার্চ ২০০০।