পূর্ব-পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটি
বাংলা ভাষায় মুসলমান সাহিত্যিকদের জন্য একটি সাহিত্য সংগঠন।

ভারতের মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও তাদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের দাবিতে গঠিত একটি সংগঠন। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে আগস্ট, কলকাতার দৈনিক  আজাদ পত্রিকার অফিসে, মুসলমান সাহিত্যিক ও ছাত্রদের এক ঘরোয়া বৈঠকে এই সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সোসাইটির শুরুরে দিকে ১১জন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। সোসাইটির সভাপতি ছিলেন আবুল কালাম শামসুদ্দীন এবং আহ্বায়ক ছিলেন  মুজীবুর রহমান খাঁ। অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী, মোহাম্মদ খায়রুল আনাম খাঁ প্রমুখ।  

সোসাইটি প্রতিষ্ঠার ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে   লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা থেকে। সোসাইটির অন্যতম লক্ষ্য ছিল সাহিত্যের মাধ্যমে নব্য পাকিস্তানি চেতনাকে উদ্দীপ্ত করা। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে, সোসাইটি বৈঠক, বক্তৃতা, বিতর্ক, রচনাপাঠ, আলোচনা, গবেষণা, পুস্তকাদি প্রচার শুরু করেছিল। এদের রচনাতে আরবি-ফারসি-উর্দু শব্দ মিশ্রিত বাংলার উপর জোর দেওয়া হতো। তবে রেনেসাঁ সোসাইটির প্রবক্তারা পূর্ব-পাকিস্তানকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন।

১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে সোসাইটি ইসলামিয়া কলেজে প্রথম বার্ষিক সম্মেলন করে। এই সম্মেলনে সাহিত্য-সংস্কৃতিবিষয়ক মোট ১১টি শাখায় প্রবন্ধপাঠ ও আলোচনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খাজা নাজিমুদ্দীন, খাজা শাহাবুদ্দীন, হোসেন শহীদ সুহরাওয়ার্দী, হাসান সুহরাওয়ার্দী, নুরুল আমীন, মোহাম্মদ আকরম খাঁ, এ.কে ফজলুল হক, আবুল কাশেম, তমিজুদ্দীন খাঁ, শাহাদৎ হোসেন, গোলাম মোস্তফা, এস ওয়াজেদ আলী, আবু জাফর শামসুদ্দীন, আবুল হোসেন, গোলাম কুদ্দুস, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, গোপাল হালদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সোসাইটির আহবায়ক মুজিবর রহমান খাঁ কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. এম সাদেকের সহযোগিতায় Eastern Pakistan: Its Population, Delimitation and Economics (সেপ্টেম্বর, ১৯৪৪) নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থে তাঁদের কল্পিত স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান রাষ্ট্রের সরকার, অর্থনৈতিক উৎস, জনশক্তি, ভৌগোলিক সীমানা, নিরাপত্তা ইত্যাদি সম্পর্কে বিবরণ ও মানচিত্র প্রকাশ করা হয়েছিল।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত-পাকিস্তানের স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের মর্যাদা পায়। এর ফলে সোসাইটির সদস্যরা হতাশ হয়ে পড়েন এবং ধীরে ধীরে এই সমিতি তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।