খামখেয়ালী সভা 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রস্তাবে এই সভা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই সভার প্রথম অধিবেশন হয় ২৪ মাঘ ১৩০৩ বঙ্গাব্দে [শুক্রবার ৫ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দ]। ধারণা করা হয়, এই অধিবেশনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়িতে। অভ্যাগতদের তালিকায় যাদের নাম পাওয়া যায়, তাঁরা হলেন করুণাচন্দ্র সেন, অতুলপ্রসাদ সেন, চিত্তরঞ্জন দাস, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রমুখ।
[সূত্র : রবিজীবনী চতুর্থ খণ্ড। প্রশান্তকুমার পাল। পৃষ্ঠা : ১২৭।]

এই সভাটির উদ্দেশ্য ছিল, আড্ডার ভিতর দিয়ে সাহিত্য ও সংগীত চর্চা। ফলে এই সভার সভ্যরাও ছিলেন এই প্রকৃতির। এই বিষয়টি সম্পর্কে একটি চমৎকার চিত্র পাওয়া যায়, অতুল প্রসাদ সেনের 'আমার কয়েকটি রবীন্দ্র-স্মৃতি' প্রবন্ধে। অবশ্য তিনি এই সভার সন উল্লেখ করেছেন ১৮৯৬ বঙ্গাব্দ। সম্ভবত অতুলপ্রসাদ সেনের উল্লেখিত '১৮৯৬ সাল' সামান্য স্মৃতিবিভ্রাট। অতুলপ্রসাদ সেন লিখেছেন

  "১৮৯৬ সালে তাঁহার [রবীন্দ্রনাথ] নেতৃত্বে 'খামখেয়ালী সভা' নামে একটি সাহিত্য ও সংগীতমণ্ডলী স্থাপিত হয়। আমি এ সভার সর্বকনিষ্ঠ সভ্য ছিলাম। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, মহারাজা জগদীন্দ্রনারায়ণ রায়, বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর, জ্ঞানেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লোকেন্দ্রনাথ পালিত প্রমুখ অনেক সাহিত্যিক ও সুরসিক 'খামখেয়ালী'র সদস্য ছিলেন। এ সভার কার্যপ্রণালী ছিল খামখেয়ালী, নিয়মের কোনো বাঁধাবাঁধি ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল হাস্যরসের উদ্দীপনা করা, সাহিত্যিকে আনন্দে সরস করা, নানাবিধ সংগীতের দ্বারা সভ্যদের চিত্ত আকৃষ্ট করা এবং সভান্তে জঠরের সম্যক তুষ্টি সাধন করা। এ খামখেয়ালীর মজলিশকে মসগুল রাখিতেন পরম হাস্যরসিক দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। তিনি আমাদিগকে হাসির বন্যায় ভাসাইতেন তাঁহার হাসির গান গাহিয়া। আমারা সকলে তাঁহার হাসির গানের কোরাসে যোগ দিতাম, রবীন্দ্রনাথ ছিলেন কোরাসের নেতা। সকলের মুখে হাসি, কণ্ঠে গান, হাসির উচ্চরোলে সভাস্থল কম্পান্বিত হইত। দ্বিজেন্দ্রলাল গাহিতেন- 'হোতে পাত্তেম আমি মস্ত বড় বীর' আর রবীন্দ্রনাথ মাথা নাড়িয়া কোরাস ধরিতেন- 'তা বটেইত, তা বটেইত'। দ্বিজেন্দ্র গাহিতেন 'নন্দলাল একদা করিল ভীষণ পণ'. রবীন্দ্র গাহিতেন 'বাহারে নন্দ বাহারে নন্দলাল'। দ্বিজেন্দ্রলাল আমাদের নাচাইতেন হাসির উদ্বেল তরঙ্গে, রবীন্দ্র আমাদের মুগ্ধ করিতেন তাঁহার অনুপম সূক্ষ্ম হাস্যরসের সৃষ্টি করিয়া। খামখেয়ালীর আসরে বিখ্যত গায়ক রাধিকানাথ গোস্বামী তাঁহার উচ্চাঙ্গের তান লয় মণ্ডিত গান', গাহিয়া আমাদের মনোরঞ্জন করিতেন। রবীন্দ্রনাথের সংগীত প্রতিভা এমন সর্বমুখী যে গোস্বামী মহাশয়ের উপাদেয় সুরে তিনি গান বাঁধিতেন এবং কবির সে নবরচিত গানগুলি রাধিকানাথ খামখেয়ালীর আসরে গাহিয়া শুনাইতেন।'  

 [সূত্র : অতুলপ্রসাদ সমগ্র।  সম্পাদনা সুনীলময় ঘোষ।]

এই সভার সদস্যদের বর্ণানুক্রমিক তালিকা নিচে তুলে ধরা হলো।
অতুলপ্রসাদ সেন
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
করুণাচন্দ্র সেন
চিত্তরঞ্জন দাস

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর