যদিও শ্রবণসঙ্গীত শুধু শ্রবণেন্দ্রিয় নির্ভর।
কিন্তু বাস্তবে সঙ্গীতের রস গ্রহণে পূর্ণতা আসে শ্রবণ-দর্শনে। তাই বেতারে গানের
চেয়ে টেলিভিশনে গানে মানুষের বেশি আকৃষ্ট হয়।
দর্শনযোগ্য সঙ্গীত : এই জাতীয় সঙ্গীতে
দেখাটাই প্রধান। এর বড় উদাহরণ নৃত্য। শব্দ ছাড়া শুধু নৃত্য ভঙ্গিমা দর্শককে
তৃপ্ত করতে পারে। দৃশ্যমান দেহভঙ্গিমা নৃত্যে একটি মৌলিক উপাদান। নৃত্যের
ছন্দকে ধ্বনিহীন দশায় উপস্থাপন করা যায় বটে। কিন্তু ছন্দের পূর্ণরূপ প্রকাশ পায়
তাল যন্ত্রের ধ্বনির সহায়তায়। তাই শেষ পর্যন্ত নৃত্য শুধু দর্শনযোগ্য হয়ে উঠে
না। বর্তমান সময়ে সকল সঙ্গীতই শ্রবণ-দর্শনের সমন্বয়ে উপভোগ্য করে তোলার চেষ্টা
করা হয়।
মিশ্র সঙ্গীত : আধুনিক নৃত্য মানেই
হলো ধ্বনি ও দেহভঙ্গিমার যুগপৎ পরিবেশনা। কিন্তু নৃত্যে দেখার ব্যাপারটা প্রধান
হলেও, যেন অসম্পূর্ণ মনে হয়ে। সঙ্গীতোপোযোগী ধ্বনির ছন্দের
সাথে ছন্দ মিলেই নৃত্যের পূর্ণবিকাশ ঘটে।
নৃত্য: শ্রবণযোগ্য সুরকে বাদ দিলে দেহের যে
দৃশ্যমান নান্দনিক ভঙ্গি থাকে, ভারতীয় নৃত্যশাস্ত্রে তার নাম পাওয়া যায় না।
কিন্তু নাচের এটি একটি মৌলিক উপাদান। নাচ হতে পারে কণ্ঠসঙ্গীতের সাথে বা যন্ত্রসঙ্গীতের সাথে। এর
সবচেয়ে সফল উপস্থাপনা হলো নৃত্যনাট্য বা গীতিনাট্য। এর সকল ক্ষেত্রেই অভিনয়টা
প্রধান হয়ে উঠে। কোনো বিশেষ কাহিনীর অভিনয় যখন নৃত্যের লীলায়িত ভঙ্গিতে
পরিবেশিত হয়ে উঠে, তখন তা নৃত্যনাট্য। আর সাধারণ অভিনয়টা হয় শুধু কণ্ঠসঙ্গীতের
সাথে তখন তাকে বলা হয় গীতিনাট্য। আবার নাটকের প্রয়োজনে যে গান ব্যবহৃত হয়, তাকে
বলে নাটকের গান। গীতিনাট্য হলো গানের সূত্রে গাঁথা নাটক। আর নাটকের গান হলো‒
নাটকের সূত্রে গাঁথা গান।
সঙ্গীত জগতে নৃত্যসঙ্গীত শব্দটি
সাধারণত ব্যবহৃত হয় না। সঙ্গীতের অংশভাগী হওয়া সত্বেও নৃত্য স্বনামেই পরিচিত।
দেহের ছন্দে ভিতর দিয়েই নৃত্যের প্রকাশ। দেহভঙ্গিমা প্রধান হলেও শব্দসঙ্গ বা
সুরের সঙ্গ না পেলে নৃত্য সর্বাঙ্গসুন্দর হয়ে উঠে না। এই বিচারে নাচ হলো গীত, বাদ্য ও দেহভঙ্গিমার সমন্বিত নান্দনিক রূপ।