ইন্দ্রজিৎ
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে, এই নামে একাধিক চরিত্র পাওয়া যায়।
১.
দনুপুত্র,
অসুর বিশেষ।
২.
রাবণের পুত্র।
রাবণের প্রধানা মহিষী মন্দোদরীর গর্ভে এঁর জন্ম হয়েছিল।
জন্মকালে ইনি মেঘের মতো গর্জন করেছিলেন বলে- এঁর নাম রাখা হয়েছিল মেঘনাদ।
আর
ইন্দ্রকে জয় করে ইনি ইন্দ্রজিৎ নাম প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
মহামায়ার পূজা করে ইনি মায়াবল লাভ করেছিলেন।
ইনি অগ্নিষ্টোম,
অশ্বমেধ,
রাজসূয়,
গোমেধ,
বৈষ্ণব প্রভৃতি সপ্তযজ্ঞ সম্পন্ন করেছিলেন।
দুঃসাধ্য মহেশ্বর যজ্ঞ করে ইনি
মহাদেব-এর
কাছ থেকে বর লাভ করেছিলেন।
ইনি কামচারী আকাশগামী স্যন্দন,
তামসী,
অক্ষয় তূণ ও শত্রুনাশক অস্ত্রসমূহ লাভ করেছিলেন।
দিগ্বিজয়ের উদ্দেশ্যে ইনি রাবণের সাথে স্বর্গে যান।
সেখানে
ইন্দ্র-এর
পুত্র জয়ন্তকে পরাজিত করেন।
এরপর শিবের দেওয়া বরে অদৃশ্য থেকে ইনি
ইন্দ্র-কে
মায়া ও শরজালে আবদ্ধ করে লঙ্কায়
নিয়ে আসেন।
অন্যান্য দেবতাদের নিয়ে ব্রহ্মা মেঘনাদের কাছে এসে তাঁকে ইন্দ্রজিৎ নামে আখ্যায়িত
করেন।
ব্রহ্মা
ইন্দ্রজিতের কাছে
ইন্দ্র-এর
মুক্তি প্রার্থনা করলে- ইনি
ব্রহ্মার কাছে
অমরত্ব চান।
ব্রহ্মা
উক্ত বর দিতে রাজী না হয়ে অন্য বর প্রার্থনা করতে বললেন।
এরপর ইন্দ্রজিৎ প্রার্থনা করেন যে,
যখন আমি যথাবিধি
অগ্নির পূজা করে যুদ্ধযাত্রা করব,
তখন আমার জন্য অগ্নি থেকে অশ্ব সমেত রথ উত্থিত হবে,
সেই রথে যতক্ষণ অবস্থান করব,
ততক্ষণ আমি যেন অমর হই।
অগ্নি পূজার জপ ও হোম অসমাপ্ত রেখে যুদ্ধযাত্রা করলেই আমি বধ্য হব।
ইন্দ্র-এর
মুক্তির বিনিময়ে
ব্রহ্মা
সেই বরই দান করেন।
রাম-রাবণের যুদ্ধে, রাম তাঁর বানর সৈন্য নিয়ে লঙ্কায় প্রবেশ করলে- ইন্দ্রজিৎ প্রথমে অঙ্গদের কাছে পরাজিত হন। এতে ইনি ক্ষুব্ধ হন এবং যুদ্ধ ক্ষেত্রে উপস্থিত হয়ে রাম-লক্ষণকে নাগপাশে আবদ্ধ করেন। শেষ পর্যন্ত গরুড়ের কৃপায় ইনি রক্ষা পান। এরপর কুম্ভকর্ণ, অতিকায়, ত্রিশিরা প্রভৃতি রাবণ-পক্ষের বীরেরা নিহত হলে, ইনি দ্বিতীয়বার যুদ্ধক্ষেত্রে আসেন। এবারে ইনি শক্তিশেলে লক্ষণকে আঘাত করলে- লক্ষণ অজ্ঞান হয়ে পড়েন। কিন্তু হনুমান ঔষধ এনে তাঁর চেতনা ফিরিয়ে আনেন। এরপর ইনি মায়া-সীতা প্রদর্শন করে কৌশলে রামকে পরাজিত করার পরিকল্পনা নেন। কিন্তু তাতে ইনি ব্যর্থ হন। ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধে অজেয় হওয়ার সঙ্কল্প করে নিকুম্ভিলা যজ্ঞ আরম্ভ করেন। যজ্ঞ শেষ হওয়ার পূর্বেই ইন্দ্রজিতের কাকা বিভীষণের সহায়তায়- লক্ষণ উক্ত যজ্ঞ মন্দিরের দ্বার অবরোধ করেন। এবং লক্ষণ অন্যায়ভাবে নিরস্ত্র অবস্থায় ইন্দ্রজিত্কে হত্যা করেন।