পরাশর
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { পৌরাণিক সত্তা | কাল্পনিকসত্তা | কল্পনা | সৃজনশীলতা | দক্ষতা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক বিষয় | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}

হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে, ঋষি বিশেষ। বেদের অনেক মন্ত্রের রচয়িতা এঁর রচিত সংহিতা 'পরাশর-সংহিতা' নামে খ্যাত

বশিষ্ঠ মুনির পুত্র শক্ত্রির ঔরসে ও অদৃশ্যন্তীর গর্ভে এঁর জন্ম হয় বিশ্বামিত্রের সাথে দ্বন্দ্বের সূত্রে, বশিষ্ঠ তাঁর সকল পুত্র হারান। উল্লেখ্য, বিশ্বামিত্রের আদেশে কিংকর নামক এক রাক্ষসের আত্মা কল্মাষপাদের শরীরে প্রবেশ করে এই রাক্ষস বশিষ্ঠের একশত পুত্রের সকলকেই হত্যা করে খেয়ে ফেলেসকল পুত্র হারিয়ে বশিষ্ঠ আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন এরপর তিনি বিভিন্ন দেশে ভবঘুরের মত ঘুরে বেড়ান এইভাবে কিছুদিন কাটিয়ে ইনি দেশের দিকে রওনা দেন চলার পথে পিছনে বেদ পাঠ শুনতে পেয়ে, পিছন ফিরে তাঁর পুত্রবধূকে (শক্ত্রির স্ত্রী) দেখতে পান তিনি অবিলম্বে জানতে পারেন যে পুত্রবধূর গর্ভস্থ শিশু এই বেদমন্ত্র উচ্চারণ করছেন এরপর তিনি খুশি মনে পুত্রবধূকে সাথে নিয়ে আশ্রমের পথে রওনা হন পরে যথাসময়ে পুত্রবধুর সন্তান প্রসব করলে, তিনি এর নাম রাখেন পরাশর বশিষ্ঠ নিজের জীবন 'পরাশু' অর্থাৎ বিসর্জন দিতে কৃতসংকল্প ছিলেন বলে এঁর নাম রাখা হয় পরাশর।  

বড় হয়ে একদিন তিনি বশিষ্ঠকে পিতা বলে ডাকলে, অদৃশ্যদন্তী পরাশরকে তাঁর জন্ম বৃত্তান্ত ও পিতার পরিচয় দেন
পিতার মৃত্যুর কারণ রাক্ষস জেনে, তিনি রাক্ষসদের ধ্বংসের জন্য একটি রাক্ষস-সত্র যজ্ঞের আয়োজন করেন উক্ত যজ্ঞে একে একে বিভিন্ন রাক্ষসরা ধ্বংস হতে থাকলে অত্রি, পুলস্ত্য, ক্রতু ও অন্যান্য ঋষিরা রাক্ষসদের জীবন রক্ষার জন্য যজ্ঞস্থলে উপস্থিত হন তাঁরা পরাশরকে বলেন যে, যেহেতু এই সকল রাক্ষসরা তোমার পিতার মৃত্যু সম্পর্কে কিছু জানেন না, সুতরাং সেই কারণে সকল রাক্ষস ধ্বংস করা অনুচিত এরপর পরাশর এই যজ্ঞ সমাপ্ত করেন

এর কিছুদিন পর পরাশর তীর্থ শেষ করে যমুনা তীরে আসেন
যমুনানদীতে খেয়া নৌকার ভিতর পরাশর মুনি সত্যবতীর (মৎস্যগন্ধা) সাথে মিলিত হলে, সত্যবতী গর্ভবতী হন পরে যমুনা'র একটি দ্বীপে সত্যবতী একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন। এই সন্তানের গায়ের রঙ কালো এবং যমুনার দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন বলে এর নাম রাখা হয় কৃষ্ণ-দ্বৈপায়ন
            [সূত্র :
মহাভারতআদিপর্ব। ত্রিষষ্টিতম অধ্যায়। ব্যাসের জন্মবৃত্তান্ত]