আমি
বানান বিশ্লেষণ: +ম্+ই।
উচ্চারণ :
a.mi (আ.মি)।

=আ [একাক্ষর আ ধ্বনি]
মি=মি [ইকারযুক্ত ম্ একাক্ষর মি ধ্বনি তৈরি করে]

শব্দ-উৎস: সংস্কৃত অহ্মদ=অহম্>প্রাকৃত অম্মি, অমহি, অমহ>বাংলা আমহে, আমি
পদ:

১. সর্বনাম {(ব্যক্তিবাচক, উত্তম পুরুষ, একবচন, কর্তৃবাচ্য)
      
বহুবচন: আমরা

অর্থ: বক্তা স্বয়ং। প্রত্যেকের ভিতরের অবস্থিত নিয়ন্ত্রকরূপী সত্তার পরিবর্তে 'আমি' শব্দের ব্যবহার করা হয়। এই কারণে 'আমি' সর্বনাম হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। কিন্তু ব্যাকরণে শব্দ প্রতিস্থাপিত রীতিতে 'আমি' সর্বনামের মর্যাদা পায় না।
সমার্থক শব্দাবলি: আমি, আমহে
ইংরেজি:
I

২. বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {  | আত্মা | প্রাণশক্তি | বিমূর্ত ঘটক | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}
অর্থ: আত্মা বিষয়ক
উপপ্রেয়মূলক (hypothetical) ধারণায় বলা বলা হয়, প্রতিটি জীবের অভ্যন্তরে আত্মা রয়েছে। প্রতিটি জীবের নিজসত্তার কেন্দ্রীয় অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতিটি জীব এই কেন্দ্রীয় শক্তিকে 'আমি' হিসেবে প্রতিনিয়ত চিহ্নিত করে থাকে। সেই কারণে যা আমি, তাই আত্মা হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

দেহধারী মানুষ যতদিন জীবিত থাকে, ততদিন কিছু কার্যক্রম চলতে থাকে। সার্বিক বিচারে এর কার্যক্রমকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।

মানুষ তার দেহাঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে সকল ঐচ্ছিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। এই পরিচালন-কার্যক্রম যার দ্বারা সম্পন্ন হয়, সেই হলো 'আমি'। ব্যাকরণের ভাষায় কর্তা, ভিন্নার্থে প্রভু। দেহ কেটেকুটে যার সন্ধান পাওয়া যায় না, কিন্তু তার অস্তিত্ব আছে। ধর্মমতে এই প্রভুই হলো আত্মা। ধর্মমতে তার বিশ্বাসভিত্তিক ব্যাখ্যা আছে, কিন্তু তা বাস্তব বুদ্ধি দিয়ে বিচার করা যায় না। এই কারণে 'আমি' বিমূর্ত সত্তা।

এই 'আমি' ইচ্ছা করে তাই সে শোনে এবং শোনায়, চলাচল করে এবং চালায়,  দেখে এবং দেখায়। এই জাতীয় নানারকম কার্যক্রম 'আমি' পরিচালনা করে। দেহধারী মানুষের 'আমি'র অবস্থান দেহে, তাই দেহকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্বও তার। সে কারণে দেহের ভালোমন্দ নিয়ে তাকে ভাবতে হয়। আমি এক্ষেত্রে কর্তা এবং তাই সে ঘটকের কাজ করে। 'আমি'র ইচ্ছা এবং ইচ্ছাকে কার্যকরী করার মধ্য দিয়ে যে শক্তির প্রকাশ ঘটে, তাকে প্রাণশক্তি বলা যায়। আর এই প্রাণশক্তি যার দ্বারা নিয়ন্ত্রণ হয় তাই ধর্মমতে আত্মা।

আমি'র পছন্দ-অপছন্দ, ইচ্ছা, মানসিক নানান আবেগ ইত্যাদি গড়ে উঠে দেহকোষের জিনঘটিত বৈশিষ্ট্যের বিচারে। মূলত মস্তিষ্কের নানাবিধ ক্রিয়াকলাপের ভিতর দিয়ে আমির সৃষ্টি হয় এক প্রকার শক্তি হিসেবে। এই শক্তি দেহের সমন্বিত কার্যক্রমের সূত্রে সক্রিয় থাকে এবং দেহকে সক্রিয় রাখে। আমি জানে, দেহ নষ্ট হলে, সেও নষ্ট হয়ে যাবে। তাই সে দেহকে সুস্থ ও সচল রাখার জন্য যাবতীয় কর্ম পরিচালনা করে। মানুষের কাম, ক্রোধ, ঈর্ষা, লোভ ইত্যাদি সকল কিছু জিনসঙ্কেত বিন্যস্ত থাকে। এই কারণে সহজাতভাবে আমি কিছু প্রবৃত্তি পায়। দেহের বিকাশের সাথে সাথে তার মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে। আমি ধীরে ধীরে প্রাপ্তমনস্ক হয়ে উঠে দেহের সাথে সামঞ্জস্য রেখে। কখনো এই দুইয়ের বিকাশে অসামঞ্জস্য দেখা দিলে তার প্রভাব পড়ে মনের উপর। তখন আমির আচরণও হয়ে উঠে অস্বাভাবিক। একজন পাগলের 'আমি' প্রভাবিত হয়, তার মস্তিষ্কের সমাঞ্জস্যহীনতার কারণে। একটি শিশুর আচরণ শিশুসুলভ হয়, তার দেহের পূর্ণাঙ্গ বিকাশের প্রাথমিক ধাপে। একজন কবির সহজাত ছন্দোজ্ঞান তার জিনসঙ্কেত থাকে। জিনসঙ্কেতের তাড়নায় কবির মস্তিষ্কে যে উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়, তা আমি'র ইচ্ছায় পরিণত হয়। মস্তিষ্কের কিছু থাকে সহজাত মুখ্য ক্ষমতা। এই ক্ষমতাবলে আমি ওই সকল কাজ সবচেয়ে ভালোভাবে পারে। কিন্তু মস্তিষ্কের কিছু গৌণ ক্ষমতা থাকে। অনেক সময় এই গৌণ ক্ষমতাকে জাগ্রত করার চেষ্টা করা হয়। ধরা যাক, একটি শিশুর ভিতরে ছবি আঁকার সহজাত ক্ষমতা ছিল। শৈশবে তাঁকে ওই বিষয়ে দক্ষ না করে তুলে সঙ্গীত শিল্পী করে গড়ের তোলার চেষ্টা করা হলো। এক্ষেত্রে এই আমি প্রশিক্ষণের দ্বারা সঙ্গীতে দক্ষ হয়ে উঠতে পারে, কিন্তু ছবি আঁকাতে সে যতটা দক্ষতার পরিচয় দিতে পারতো, সঙ্গীতের ক্ষেত্রে সে দক্ষতায় পৌঁছাতে পারবে না। এই কারণে জিনঘটিত কারণে প্রাপ্ত মানুষের সহজাত ক্ষমতার সাথে যদি, তার প্রশিক্ষণ যথাযথ হয়, তবে ওই মানুষ তাঁর শ্রেষ্ট হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হবে।

আমি এবং ইন্দ্রিয়
'
আমি' দেহগত বা দেহের সকল তথ্য সংগ্রহ করে, দেহের কিছু তথ্য সংগ্রাহক, তথ্যসঞ্চালক এবং তথ্য প্রক্রিয়াকরণ উপকরণের সাহায্যে। বহুকাল আগে থেকেই কার্যক্রমের বিচারে এই কার্যক্রমকে পাঁচটি অংশে ভাগ করে ব্যাখ্যা করা হয়ে আসছে। এর প্রতিটি ভাগকে বলা হয় ইন্দ্রিয়। এগুলো হলো

এর বাইরে একটি বিশেষ সঙ্কেতসংবেদী বিষয়ের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করার প্রয়োজন আছে। এই অংশ রয়েছে শরীরের সমগ্র অংশ জুড়ে। এই অংশ মূলত শরীরের আনন্দ-বেদনার সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। যেমন পেটের ব্যথা হলে শরীরে যে বেদনাদায়ক অনুভূতির জন্ম হয়, তা দর্শন, শ্রবণ, ঘ্রাণ, আস্বাদন বা স্পর্শের বিষয় নয়। এই জাতীয় বিষয় শরীরের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় অনুভূত হয়।