সর্বনাম

সর্বের নাম/ষষ্ঠী তপুরুষ সমাস সাধারণ অর্থ  সবার নাম বা সবার সংজ্ঞা প্রচলিত ব্যাকরণে এটি একটি পদ হিসাবে স্বীকৃত

পাণিনির মতে  সর্বনাম হলো সব কিছুর নাম বা সংজ্ঞা এই সংজ্ঞা দ্বারা সর্বনামের প্রকৃত অর্থ পাওয়া যায়সর্বনামের সার্বিক প্রকৃতি বুঝতে হলে; কিন্তু পাণিনিকৃত সর্বনামের প্রকরণগুলো অনুধাবন করা প্রয়োজনপাণিনি সর্বনামগুলোকে ৫টি ভাগে ভাগ করেছেনএই প্রকার ৫টি হলো  সব্বাদি, অন্যাদি, পূব্বাদি, যদাদি ও ইদিমাদিএই ভাগগুলোরও রয়েছে একাধিক উপবিভাগ এই সকল ভাগ ও উপভাগের বিচারে সর্বনামের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে মোট ৪১টিএর ভিতরে প্রাথমিক বিচারে সর্বনাম সংখ্যা ৩৩টিএগুলো হলো- সব্ব, বিশ্ব, উভ, উভয়, অন্য, অন্যতর, ইতর, ত্বত্, ত্ব, নেম, সম, সিম, পূব্ব, পর, অবর, দক্ষিণ, উত্তর, অপর, অধর, স্ব, অন্তর, ত্যদ্ তদ্, যদ্, এতদ্, ইদম, অদস্, এক, দ্বি, যুষ্মদ, অষ্মদ, ভবত্ ও ও কিম্এছাড়া কিম্, যদ্, তদ্ ও এক শব্দের পরে ডতর ও ডতম প্রত্যয় করলে মোট আটটি পদ পাওয়া যায়  এই পদগুলো হলো- কতর, কতম, যতর, যতম, ততর, ততম, একতর, একতম[সূত্র : ব্যাকরণ কৌমুদী/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ডিসেম্বর ২০০৩]

যদিও আদিতে বাংলা ব্যাকরণের সর্বনাম নামক পদের সংজ্ঞা নির্ধারিত হয়েছিল  সংস্কৃত তথা পাণিনির ব্যাকরণ অনুসারেকিন্তু পাণিনির নির্ধারিত সংজ্ঞা ও তার উদাহরণ সংস্কৃত ভাষার জন্য উপযুক্ত হলেও, বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে তা সর্বার্থে ব্যবহার করা যায় না

আবার অনেকে ইংরেজির ব্যাকরণ অনুসরণ করে ব্যাখ্যা ও সংজ্ঞা দ্বারা সর্বনামের সংজ্ঞা নির্ধারণের চেষ্টা করেছেন ইংরেজি ব্যাকরণে এর নাম Pronoun উল্লেখ্য ফরাসি ভাষার আদলে ইংরেজি ভাষায় pronom পদটি গৃহীত হয়েছিল আর ফরাসী pronom শব্দটি গৃহীত হয়েছিল ল্যাটিন pronomen শব্দ থেকে যার আক্ষরিক অর্থ ছিল নামের অবস্থান্তরে (in place of a name)  সূত্র : [15th century. Formed from noun on the model of French pronom and its source Latin pronomen , literally “in place of a name,” from nomen “name.”]
            Microsoft® Encarta® Reference Library 2005. © 1993-2004 Microsoft Corporation. All rights reserved.


ইংরেজি Pronoun -এর  শব্দরূপ হলো Pro + noun এখানে Pronoun -এর Pro শব্দটি বিশেষণবাচক অক্সফোর্ড অভিধানের মতে-ফমস. adj. (of an argument or reason) for; in favour. —n. (pl. -s) reason in favour. —prep. in favour of. [Latin, = for, on behalf of]। এই অর্থানুসারে অক্সফোর্ড অভিধানের সংজ্ঞায় pronoun হলো-  word used instead of and to indicate a noun already mentioned or known, esp. to avoid repetition (e.g. we, their, this, ourselves)

মাইক্রোসফট প্রণীত এনকার্টা থেকে এর যে সংজ্ঞা পাওয়া যায়, তা হলো word replacing noun: a word that substitutes for a noun or a noun phrase, such as “I,” “you,” “them,” “it,” “ours,” “who,” “which,” “myself,” and “anybody.”  Pronouns are sometimes distinguished from nouns by having objective form, for example, “her” for “she” and “me” for “I.”

ইংরেজি অভিধান বা ব্যাকরণগুলোতে সর্বনাম সম্পর্কে যে সকল সংজ্ঞা পাওয়া যায়, তার মূল বিষয়কে  আমরা ককেটি শর্তে বিভাজিত করতে পারি যেমন

 কবিশেষ্যর পরিবর্তে যা বসে তাই হলো সর্বনামএটি যথার্থ সংজ্ঞা নয়, কারণ  আমি নামক সর্বনামটি কোন বিশেষ্য পদের পরিবর্তে বসে নাএখানে আমি স্বয়ং সিদ্ধ পদ তর্কের খাতিরে বলা যেতে পারে আমির আড়ালে নামবাচক আমি আছি কিন্তু বাস্তবে এর ব্যাবহরিক মূল্য কোথায়? একটি উদহারণ দেওয়া যাক

             সর্বনামহীন প্রাথমিক রূপ  : সজীব ভালো ছেলেসজীব লেখাপড়া করে
            
সর্বনামযুক্ত রূপ : সজীব ভালো ছেলেসে লেখাপড়া করে

এখানে দ্বিতীয় বাক্যে সে সর্বনাম হিসাবে সজীব শব্দের পরিবর্তে বসেছে, কিন্তু বাক্যের ক্রিয়ারূপ পরিবর্তন করে নাইএবার আমি নামক সর্বনামটির বিচার করা যাকধার যাক, আমার নাম পিন্টু  এবার পিন্টুএবং আমি শব্দ দুটি দিয়ে বাক্য রচনা করলে যা দাঁড়ায় তা হলো

            সর্বনামহীন প্রাথমিক রূপ   : পিন্টু ভালো ছেলেপিন্টু লেখাপড়া করে
           
সর্বনামযুক্ত রূপ যদি আমি  : পিন্টু ভালো ছেলেআমি লেখাপড়া করি

লক্ষ্য করুন, প্রথম দুটি বাক্যের শেষের ক্রিয়াপদ 'করে'কিন্তু  দ্বিতীয় বাক্যের শেষের ক্রিয়াপদ 'করি' এর কারণ হলো পিন্টু নাম পুরুষ কিন্তু আমি উত্তম পুরুষ

সর্বনাম শুধু শব্দের পরিবর্তে বসে না, কোন বিশেষ্য বাচক বাক্য বা বাক্যাংশের (noun phrase) পরিবর্তেও বসেযেমন- গতদিনে তুমি যা বলেছিলে, তা সব ভুলে গেছি এখানে তা সর্বনামটি গতদিনে তুমি যা বলেছিলে -এর পরিবর্তে বসেছে

উপরের এই দুটি ত্রুটি সংশোধন করে সর্বনামের প্রকৃতি যে হিসাবে বিচার করা যায়, তা হলো-উত্তম পুরুষ (আমি, আমরা ইত্যাদি), মধ্যম পুরুষ (তুমি, আপনি ইত্যাদি), বিশেষ্যের পরিবর্তে ব্যবহৃত নাম পুরুষের (সে, তারা ইত্যাদি) পরিবর্তে এবং বাক্য বা বাক্যাংশের পরিবর্তে ব্যবহৃত একক পদ সর্বনাম হবে

সর্বনামের শ্রেণীবিভাজন : সর্বনাম বাক্যের ভিতরে বিভিন্ন নির্দেশনার সূত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে  মূলতঃ বাক্যের ভিতর সর্বনামগুলোর প্রকৃতি কিরূপ হবে, তার উপর ভিত্তি করে সর্বনামকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়এই ভাগগুলো হলো
 


 
ব্যক্তিবাচক
আত্মবাচক

সমীপ্যবাচক
সাকল্যবাচক
প্রশ্নবাচক

অনির্দিষ্টতাজ্ঞাপক
সাপেক্ষ

অন্যাদিবাচক
যৌগিক
সর্বনামধর্মী